- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 407
- Messages
- 5,564
- Reaction score
- 2,009
- Points
- 3,913
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****জিতু মিয়া এবং হাসান সাহেবের সমস্যা*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
পর্ব-১
বুক ধড়ফড় করতাছে জিতু মিয়ার । এত জোরে যে টিভিটা বন্ধ থাকলে সোফায় বসা খালুজানও মনে হয় হুনতে পাইতো । তিয়াসও পাইছে খুব । তবে এহন ঢকঢক কইরা পানি খাওন যাইব না । সাবধানে থাকতে হইবো, খুব সাবধানে; কেউ যেনো সন্দেহ করবার না পারে ।
“জিতু ড্রয়িং রুম পরিষ্কার হয়েছে ? “
খালাম্মা ডাক দেয় ।
-এই তো করতাছি ।
জবাব দেয় জিতু । এই বাসায় কাজ করতাছে মাস ছয়েক হইলো । বেশীরভাগ সময় পরিষ্কার করার কাজ । এই যে সোফাটা চকচক করতাছে তাও এইডারেই ঝাড়ন দেওন লাগবো । বড়লোকের খেয়াল !
“বাজারে যা একটু । পরে আবার পরিষ্কার করিস ।“
কাজের মাঝেই বলে খালাম্মা । খুশী হয় জিতু । এমনিতেই এইডাই সবচাইতে পছন্দের কাজ । দশ-বিশ টাকা চুরি করা যায় । তবে আজকে খুশী ভিন্ন কারনে । রোজকার মতই সকালবেলা খালুজানের পড়ার রুম পরিষ্কার করতেছিলো । টেবিল থেকে মোটা একটা বই সরাতেই অনেকগুলো ৫০০ টাকার নোট । আটটা পর্যন্ত গুনছে । কয়টা আছে আল্লা মাবুদ জানে । টাকাটা আর একটা বই এর নিচে রেখে রুম থেকে বের হয়ে যায় জিতু । সেই থেকেই বুক ধড়ফড়, টেনশন । এখন বাইরের খোলা বাতাসে আউলা মাথাটাকে একটু ঠাণ্ডা করা যাইবো ।
এরা যেমন বেশুমার বড়লোক, মানুষও তেমন ভালা –বাজারে যেতে যেতে ভাবে জিতু । বুড়া-বুড়ি তিনতলার ফ্লাটে থাকে । নিরিবিলি ভালো মানুষ । আগের বাসার মানুষজনদের মত না । আগের বাসার সাহেব, ম্যাডাম দুইজনই ছিলো রগচটা, বদ, খাচ্চর মানুষ । ছোটোখাটো বিষয় নিয়াই বকাবকি মাইরধোর করতো । অবশ্য মাইরধোর বেশী করতে পারে নাই । কারন তার অভিনয় প্রতিভা । অজ্ঞান হবার অভিনয় সে শাকিব খানের চাইতেও ভালো পারে, অবশ্য শাকিব খান তো করে শুধু প্রেমের অভিনয় তাই তুলনা হয় না । যাই হোক সেই বাসার যন্ত্রনা সহ্য হয় নাই । দুই মাস পরেই এক হাজার টাকা চুরি করে ভাগছে । অবশ্য বেতন দেয় নাই । তাই চুরিও বলা যায় না । ইসস এত টাকা যদি ঐ হারামিদের বাসায় পাইতো; দুইবার ভাবতো না ।
কিন্তু এদের কথা আলাদা । খাওয়া দাওয়া, কাজে কর্মে আরাম, বেতন ভালো, ছোটো খাটো চুরিও করা যায়, কোনো সমস্যা নাই । কিন্তু এতগুলো টাকা...মায়ের পরনের কাপড়টা ছিড়া গেছে, ছোটো ভাইটাও একটা লেংটি পইরা ঘুরে...গেল মাসে বাড়িতে যাইয়া দেখছে । আগে এইসব তেমন খেয়াল হইতো না । গ্রামের গরীব মানুষরা তো এমনই থাকবো । কিন্তু আজকাল কেমন জানি চোখে পড়ে, ভালো লাগে না ।
পরেরদিন সকালে দশ হাজার টাকা চুরি করে পালায় জিতু । গ্রামের বাসে ওঠার আগে মায়ের জন্য শাড়ী, ছোটো ভাইয়ের জন্য প্যান্ট-শার্ট আর গ্রামের বন্ধু হেলাল-সেন্টুদের জন্য একটা ফুটবল কেনে । গ্রামের বাড়ীতে পৌছাতেই মা জিজ্ঞেস করে
“বাজান ছুটি পাইছোস ।“
-হ মা । সাতদিনের ছুটি । আসার সময় তোমগো লাইগা কিছু কেনা কাটাও হরছি ।
“কি হরছোস বাবা । এত টাকা পাইছোস কই ? চুরি ধাড়ি করস নাই তো ?”
-কি যে কও মা । গরীব হইলেও আমি মোল্লা বাড়ীর পোলা ।
“হরে বাবা এইডা ভুলিস না । গরীবের ঈমানই সম্বল । তর মালিকরা মনে হয় ভালা মানুষ ।
-হরে মা । এরা ফেরেশতার মত মানুষ । আর বেশুমার বড়লোক । আমি আওনের সময় অনেক টাকা দিয়া কইলো সবার জন্য কিছু কিনা নিয়া যাইতে ।
“কস কি ? এমন মানুষও আল্লার দুনিয়ায় আছে । মন দিয়া কাম করিস বাবা ।“
-ঠিক আছে মা । এই টাকাটা রাখো আর অহন কিছু খাইতে দেও ।
এভাবেই মায়ের জেরা থেকে মুক্তি পায় জিতু । বিকালে স্কুলের মাঠে যায় বল নিয়া । সেন্টু – হেলালের সাথে দেখা হয় ।
“কিরে কহন আইলি ?” সেন্টু জিজ্ঞেস করে ।
-আইজকাই । তগো লইগা এই বলটা আনছি ।
“ছবিওলা বই আনস নাই এইবার ।“ হেলাল জিজ্ঞেস করে ।
-নারে, আমার এখনকার মালিক খুব ভালো লোক । আগেরটার মত খাচ্চর না ।
“ধুর, কি ফালতু কথা কস, বড়লোক আবার ভালো হয় নাকি । এর চাইতে তোর খাচ্চর মালিকই ভালো ছিলো । আমরা মাথা নষ্ট করা ছবি দেখবার পারতাম ।“ হেলাল আবার বলে ।
-ফালতু প্যাঁচাল বাদ দিয়া চল খেলি । বল নিয়ে মাঠে নেমে যায় জিতু ।
দেখতে দেখতেই সাতদিন কেটে যায় জিতুর । অষ্টম দিনের সকালে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে জিতু ।
“কিরে ঢাকা যাবি না ।? মা এসে জিজ্ঞেস করে ।
-শইলডা খারাপ লাগতাছে মা । আজকে যামু না ।
“কি কস কাল রাইতেও তো ভালো দেখলাম । চোখ মুখ দেইহা মনে হয় না জ্বর আইছে । বাজান মালিক রাগ হইলে কিন্তু বিপদ ।“
-তুমি চিন্তা কইরো না মা । কইলাম না এরা খুব ভালো মানুষ ।
এভাবেই আরো একটা দিন গোজামিল দিয়ে দশ দিনের দিন জিতুকে ঢাকার উদ্দেশ্যে গ্রাম ছাড়তেই হয় ।