তৃষ্ণা

dukhopakhi

Special Member
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
176
Messages
2,063
Reaction score
377
Points
3,733
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
তৃষ্ণা

মূল লেখকঃ জহির রায়হান





পর্ব - ১

একটি সুন্দর সকাল
বুড়ো রাত বিদায় নেবার আগে বৃষ্টি থেমে গেছে। তবু তার শেষ চিহ্নটুকু এখানে সেখানে ছড়ানো। চিকন ঘাসের ডগায় দু একটি পানির ফোঁটা সূর্যের সোনালি আভায় চিকচিক করছে।
চারপাশে রবিশস্যের ক্ষেত। হলদে ফুলে ভরা। তারপর এক পূর্ণ-যৌবনা নদী। ওপাড়ে তার কাশবন। এপাড়ে অসংখ্য খড়ের গাদা।
ছেলেটির বুকে মুখ রেখে, খড়ের কোলে দেহটা এলিয়ে দিয়ে, মেয়েটি ঘুমোচ্ছে। ওর মুখে কোন অভিব্যক্তি নেই। ঠোঁটের শেষ সীমানায় শুধু একটুখানি হাসি চিবুকের কাছে এসে হারিয়ে গেছে। ওর হাত ছেলেটির হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে রাখা। দুজনে ঘুমোচ্ছে ওরা।
ছেলেটিও ঘুমিয়ে।
তার মুখে দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি। মনে হয় অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছিলো ওরা। চুলের প্রান্তে এখনো তার কিছু রেশ জড়ানো রয়েছে।
সহসা গাছের ডালে বুনো পাখির পাখা ঝাপটানোর শব্দ শোনা গেলো। মটরশুটির ক্ষেত থেকে একটা সাদা ধবধবে খরগোশের বাচ্চা ছুটে পালিয়ে গেলো কাছের অরণ্যের দিকে।
খড়ের কোলে জেগে উঠলো অনেকগুলো পায়ের ঐক্যতান। সমতালে এগিয়ে এলো ওরা। যেখানে ছেলেটি আর মেয়েটি এই পৃথিবীর অনেক চড়াই উৎরাই আর অসংখ্য পথ মাড়িয়ে এসে অবশেষে এই স্নিগ্ধ সকালের সোনা-রোদে পরস্পরের কাছে অঙ্গীকার করে ছিলো।
ভালোবাসি।
বলেছিলো। এই রাত যদি চিরকালের মতো এমনি থাকে। এই রাত যদি আর কোনদিন ভোর না হয় আমি খুশি হব।
বলেছিলো। ওই যে দূরের তারাগুলো, যারা মিটিমিটি জ্বলছে তারা যদি হঠাৎ ভুল করে নিভে যেতো, তাহলে খুব ভালো হতো।
আমরা অন্ধকারে দুজনে দুজনকে দেখতাম।
বলেছিলো। হয়তো কিছুই বলে নি ওরা।
শুধু শুয়েছিলো।
আঠার জোড়া আইনের পা ধীরে ধীরে চারপাশ থেকে এসে বৃত্তাকারে ঘিরে দাঁড়ালো ওদের।
ওরা তখনো ঘুমুচ্ছে।
তারপর।
আমার কোন জাত নেই।
মাংসল হাতজোড়া ভেজা টেবিলের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে বুড়ো আহমদ হোসেন বললো। আমার কোন জাত নেই। আমি না হিন্দু, না মুসলমান, না ইহুদি, না খৃষ্টান। আমার জাত তুলে কেউ ডেকেছে কি এক ঘুষিতে নাক ভেঙ্গে দেবো বলে দিলাম।
আশেপাশের টেবিলে যারা ছিলো তারা বিরক্তির সঙ্গে এক নজর তাকালো ওর দিকে।
ছোকরা গোছের একজন দূর থেকে চিৎকার করে বললো, বুড়ো ব্যাটার ভীমরতি হয়েছে। রোজ এক কথা। বলি এ পর্যন্ত কটা লোকের নাক ভেঙ্গেছো শুনি?
আহমদ হোসেনের কানে সে কথা পৌঁছলো না। কপালে জেগে ওঠা ঘামের ফোঁটাগুলো বাঁ হাতে মুছে নিয়ে সে আবার বলতে লাগলো। আমি কিছু জানি না। না জাত না ধর্ম। না তোমাদের আইন-কানুন। এর সবটুকুই ফাঁকি। চোখে ধুলো মেরে মানুষ ঠকানোর কারসাজি। শুনতে যদি ভালো না লাগে, নিষেধ করে দাও তোমাদের এই আস্তাকুঁড়ে আর আসবো না। এখানে চা খেতে না এলেও আমার দিন কাটবে।
আহা চটছেন কেন, আমি কি আপনাকে আসতে বারণ করেছি কোন দিন। না, করছি। চা-খানার মালিক নওশের আলী তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
কিন্তু, বুড়ো চুপ করলো না।
কাপ থেকে খানিকটা চা পিরিচে ঢেলে নিয়ে মুখের কাছে এনে আবার পিরিচটা নামিয়ে রাখলো সে। হয়েছে, ওসব মিষ্টি কথায় মন ভোলাতে চেও না। ছেলেটাকে যখন কুড়ি বছর ইকে দিলো তখন কোথায় ছিলে সব? পাঁচটা নয়, দশটা নয়, একটি মাত্র ছেলে আমার। কোর্ট শুদ্ধ লোক বললো, বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে, আর হাকিম কিনা সাজা দিয়ে দিলে আঁ।
পনের বছর আগে সাজা পাওয়া এবং একমাত্র ছেলের চিন্তায় আহমদ হোসেনের চোখজোড়া সজল হয়ে এলো। বার্ধক্যের চাপে কুঞ্চিত মাংসের বেষ্টনী ভেদ করে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পড়লো। বাদামি চায়ের ঈষৎ উষ্ণ লিকারে।
বুড়ো কাঁদছে।
শওকত তার চেয়ারে নড়েচড়ে বসলো। ওর ইচ্ছে হলো এ মুহূর্তে একবার বুড়ো আহমদ হোসেনের পাশে বসতে। চায়ের কাপটা এক পাশে সরিয়ে দিয়ে দুটো কথা বলতে ওর সঙ্গে।
কিন্তু থাক।
যে কাঁদছে সে কাঁদুক। কান্নার সাগরে সান্ত্বনার সীমা খুঁজে নেবে বুড়ো আহমদ হোসেন।
শওকত জানে, এই দিন যখন শেষ হয়ে যাবে, যখন কালো বোরখায় ঢাকা রাত আসবে, তখন আর এমনি করে কাঁদবে না আহমদ হোসেন। তখন এই শহরের প্লাস্টার ঝরা সরু আঁকাবাঁকা গলিতে নামহীন অসংখ্য ছেলেমেয়ের জন্ম-মৃত্যুর হিসেব লিখে বেড়াবে সে।
কত হলো?
একান্ন লক্ষ বত্রিশ হাজার চুরানব্বই জন।
কোনো রাতে সহসা কোনো রাস্তার মোড়ে দেখা হয়ে গেলে বুক পকেট থেকে হিসেবের খাতাটা বের করে বলবে। একান্ন লক্ষ বত্রিশ হাজার চুরানব্বই জন ক্ষয়ে যাওয়া গুটিকয় কালচে দাঁতের ফাঁকে বিকৃত এক হাসির আমেজ ছড়িয়ে সে বলবে। যাবে একদিন। চলো না কাল রাতে।
না।
ভয় হচ্ছে বুঝি? ওখানে গেলে কেউ তোমাকে চিনে ফেলবে।
বদনামের ভয়, তাই না? কিন্তু কি জানো, ওখানে যারা যায় তারা কারো কথা মনে রাখে না! এটাই ও জায়গায় বিশেষত্ব। আজ পনেরো বছর ধরে দেখে আসছি। আগে আর যায়। বামুন কায়েখ বলো, আর মোল্লা মৌলভী বলো, সব বাটাকে চিনে রেখেছি। দিনের বেলা কোট-প্যান্ট পরে সাহেব সেজে অফিসে যায় আর যেই না সন্ধে হলো, অমনি বাবু মুখে রুমাল খুঁজে চট করে ঢুকে পড়ে গলিতে! বলে আবার হাসবে আহমদ হোসেন। একটা আধপোড়া বিড়িতে আগুন ধরিয়ে নিয়ে আবার সে শুরু করবে, এই শহরের নাম না জানা অসংখ্য দেহপসারিণীয় গল্প।
দিন যত যাচ্ছে পিঁপড়ের মতো বাড়ছে ওরা বুঝলে? বাদামতলীর নাম শুনলে তো নাক সিটকাও। আর এই যে নিওন বাতির শহর রমনা ভাবছো এটা একেবারে পিঁপড়ে শূন্য তাই না? খোদার কছম বলছি এখানকার পিঁপড়েগুলো আরো বেশি পাজী। শালার সাহেবের বাচ্চারা ওদের গা গার্ল বলে ডাকে। যেন, নাম পাল্টে দিলেই ধর্ম পাল্টে গেলো আর কি? বলে বিকট শব্দে হেসে উঠবে বুড়ো আহমদ হোসেন। তারপর হিসেবের খাতাটা বুক পকেটে রেখে দিয়ে আর কোন কথা নাবলৈ হঠাৎ সে আবার চলতে শুরু করবে। এক পথ থেকে আরেক পথ। অন্য পথের মোড়ে।
বুড়ো আহমদ হোসেন তখনো কাঁদছে।
চায়ের দাম চুকিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ পরে বাইরে বেরিয়ে এলো শওকত।
লম্বা দেহ। ছিপছিপে শরীর। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বাতাসের ভার সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু কাছে এসে একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, শুকনো শরীরের মাংসপেশীগুলো অত্যন্ত সবল এবং সজীব। ময়লা রঙের চামড়ার গায়ে সংবা লোমের অরণ্য। হাতে-পায়ে, বুকে এবং কণ্ঠনালীর সীমানা পর্যন্ত সে অরণ্যের বিস্তৃতি। রুক্ষ হাতের তালু। খসখসে। অগুনিত রেখায় ভরী। চোখজোড়া বড় বড়। মণির রঙ বাদামি। কিন্তু তার মধ্যে কোন মাধুর্য নেই। আছে এক তীক্ষ্ণ তীব্র জ্বালা! মণির চারপাশে যে সাদা অংশটুকু রয়েছে তার মাঝে ছিটেফোঁটা লাল ছড়ানো। কখনো সেটা বাড়ে। কখনো কমে। চোখের খুব কাছাকাছি ভ্রূ-জোড়ার অবস্থিতি। মোটা। মিশকালো। ধনুর মতো বাঁকা কিন্তু লম্বায় ছোট চলতে চলতে হঠাৎ যেন থেমে গেছে ওটা। সহসা দেখলে মনে হয়, সারা মুখে কোথাও কোন লাবণ্য নেই। কিন্তু সন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে যাচাই করলে ধীরে ধীরে একটা অজ্ঞ সৌন্দর্য ধরা পড়ে। যার সঙ্গে আর কারো তুলনা করা যেতে পারে না। মাঝারি নাক। মাংসল। আর ঠিক নাকের মাঝখানটায় একটা কাটা দাগ। চওড়া কপাল বয়সের সঙ্গে তাল রেখে সামনের অনেকখানি চুল ঝরে পড়ায় সেটাকে আরো প্রশস্ত দেখায়। মুখের গড়নটা ডিম্বাকৃক্তি পুরু ঠোঁট জামের মুতো কালো। তেমনি মসৃণ আর তেলতেলে। যখন ও হাসে, তখন মুক্তোর মতো দাঁতগুলো ঝলমল করে উঠে। চিবুকের হাড়জোড় সুস্পষ্টভাবে উঁচু আর তার নিচের অংশটুকু হঠাৎ যেন একটা খাদের মধ্যে নেমে গেছে। খাদের শেষ প্রান্তে একটা বড় তিল। মার্থাভরা একরাশ ঘন চুল। অমসৃণ এবং অনাদৃত। রাস্তায় বেরিয়ে এসে আকাশের দিকে তাকালো শওকত? একখানা যাত্রীবাহী বিমান প্রচণ্ড শব্দ করে উড়ে চলেছে পোতাশ্রয়ের দিকে। এক্ষুণি নামবে। তার মা বিলীন হয়ে যাওয়ার আগেই কে যেন পাশ থেকে ডাকলো। বাড়ি যাবেন নাকি?
শওকত চেয়ে দেখলো, মার্থা গ্রাহাম!
মার্থা একটা রিক্সায় বসে। শওকতকে দেখে ওটা ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়েছে সে। ওর হাতে একটা পাউরুটি আর ছোট একটা চায়ের পাকেট।
মার্থা ডাকলো, ব্যাপার কি, এই রাস্তার ওপরে একঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাসায় যাবেন শা, আসুন।
শওকত সহসা হেসে উঠলো। আশ্চর্য!
কি?
মনে হচ্ছে আমাকে বাসায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে রোজ আপনি এখানে রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
লজ্জায় মার্থার কালো মুখখানা বেগুনি হয়ে গেলো। কিন্তু মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে সে বললো, আমিও কিন্তু এর উল্টোটি বলতে পারতাম। কিন্তু বলবো না। তাহলে আপনি রাগ করবেন। মার্থার গলার স্বরে কোথায় যেন এক টুকরো ব্যথা ঈষৎ উঁকি দিয়ে গেলো।
শওকত ততক্ষণে উঠে বসেছে রিক্সায়।
গলির মোড়ে কামারের দোকানের সামনে কয়েকটা লম্বা টুলের ওপরে যারা হাত-পা ছড়িয়ে বসেছিলো, তারা দেখলো। আজও একখানা রিক্সা থেকে নামলো আধা আর শওকত।
আড়চোখে একবার ওদের দিকে তাকালো শওকত। ওরা দেখছে। ইশারায় দেখাচ্ছে অন্যদের। যাক, ভালোই হলো। আজ রাতটার জন্যেও কিছু মুখরোচক খোরাক পেলো ওরা। তাসের আড়া কথার কাকলিতে ভরে উঠবে। উষ্ণ চায়ের লিকার আর নয়া পয়সায় কেলা নোনতা বিস্কিটের সঙ্গে জমবে ভালো। মার্থা গ্রাহামকে নিয়ে অনেক রাত পর্যন্তু গল্প করবে ওরা।
কিন্তু কেন? আমি তো ওদের সাতপাঁচে থাকিনে? আমি তো সেই সকালে কাজে বেরিয়ে যাই, আবার রাতে ফিরি। আমি তো কাউকে নিয়ে মার্থা ঘামাইনে! কারো পাকা ধানে মই দেইনে। তবু কেন ওরা আমাকে নিয়ে অত হল্লা করে?
বলতে গিয়ে ওর নিকৃষ্ট কালো চোখের মণি জোড়ায় দুফোঁটা পানি ছলছল করে উঠেছিলো। সপ্রশ্ন দৃষ্টি মেলে শওকতের দিকে তাকিয়েছিলো মার্থা গ্রাহাম।
সহসা কোন উত্তর দিতে পারে নি শওকত। ওর শুধু বুড়ো আহমদ হোসেনের কথা বার বার মনে পড়ছিলো। মার্থা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে একদিন বলেছিলো, ওটা একটা রোগ। ওটাও এক রকমের ক্ষুধা, বুঝলে? আজ পনেরো বছর ধরে এই শহরের অলিতে গলিতে পইপই করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ওদের খুব ভালো করে চেনা আছে আমার। বাদামতলীর ঘাট বলো, ছক্কু মিয়ার চা-খানা কিম্বা খান সাহেবের কাফে হংকং বলল আর তোমাদের ওই বিলেতি ঢঙের যত দিশি ক্লাব সব ব্যাটার ধর্ম এক, বুঝলে। সবাই এক রোগে ভুগছে, এক ক্ষুধায় জ্বলছে। শোন, কাছে এসো, কানে কানে একটা মোক্ষম কথা বলে রাখি তোমায়, বয়সকালে কাজে দেবে। শোন, কোনদিন যদি কোনখানে কোন ছেলে কিম্বা বুড়োকে দেখো কোন মেয়ের নামে বদনাম রটাচ্ছে, তাহলে জানবে এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোন কিন্তু রয়েছে। বলতে গিয়ে বিকট শব্দে হেসে উঠেছিলো বুড়ো আহমদ হোসেন। দাড়ির জঙ্গলে আঙুলের চিরুনি বুলিয়ে নিয়ে পরক্ষণে আবার বলেছিলো। সেই ছেলে কিম্বা বুড়ো বুঝলে? তারা যদি কোনদিন একান্ত নিরালায় সে মেয়েটিকে হঠাৎ কাছে পেয়ে যায়, তাহলে কিন্তু জিহ্বা দিয়ে চেটে চেটে তার পায়ের গোড়ালি জোড়ায় ব্যথা ধরিয়ে দেবে। গুলতানী নয় বাবা, নিজ চোখে দেখা সব। এই শহরের কোন্ বুড়ো কোন্ মেয়েকে নিয়ে কোন রেস্তোরাঁয় যায় আর কোন মাঠে হাওয়া খায়, সব জানা আছে আমার। বলতে গিয়ে একরাশ থুথু ছিটিয়েছে আহমদ হোসেন।
মার্থাকে নিয়ে রিক্সা থেকে নামলো শওকত। পকেটে হাত দিতে যেতে মার্থা থামিয়ে দিয়ে বললো। দাঁড়ান, আমি দিচ্ছি।
বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ছোট্ট ব্যাগটা থেকে কয়েক আনা খুচরা পয়সা বের করলো মার্থা। সামনের লাল রকটার ওপরে একটা কুষ্ঠ রোগী কবে এসে ঠাঁই নিয়েছে কেউ জানে না। হাত পায়ের নখগুলো তার ঝরে গেছে অনেক আগে। সারা গায়ে দগদগে ঘা। চোয়াল। জোড়া ফুটো হয়ে সরে গেছে ভেতরে। আর সেই ছিদ্র বেয়ে লাবাস্রোত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে। কাঁধে। বুকে। উরুতে। চারপাশে অসংখ্য মাছির বাসা। ভনভন করে উড়ছে। বসছে। আবার উড়ছে।
রিক্সা বিদায় দিয়ে মার্থা আর শওকত ভেতরে এলো। দেড় হাত চওড়া অপরিসর বারান্দার মুখে কে যেন একটা কয়লার চুলো জ্বালিয়ে রেখেছে। তার ধুয়োয় চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আছে। স্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে ওদের। সহসা দুজন মহিলা দুপাশের করিডোর থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে করতে উঠোনের দিকে এগিয়ে গেলো।
আরে, মেরে ফেললো তো।
ক্যায়া হুঁয়া?
কি অইছে আঁ?
মার, মার। মার না।
আরে ছাড়, ছেড়ে দে বলছি, নইলে মেরে হাড্ডি মাংস গুঁড়ো করে দেবো বলে দিলাম।
আরে আয়ি বড়ি মারনে ওয়ালী।
 
Back
Top