- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 407
- Messages
- 5,564
- Reaction score
- 2,009
- Points
- 3,913
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****ট্রায়াল ইন এনিম্যাল ওয়ার্ল্ড*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
বিচার বসেছে । বাদী কাক পরিবার আর বিবাদী কোকিল পরিবার । সমস্ত পশু পক্ষী জগতে এই বিচার নিয়ে তুমুল আগ্রহ । বিচারক এর আসনে বসেছে মোরগ । প্রথমেই বাদী পক্ষকে বলার সুযোগ দেয়া হলো । কাক উঠে দাঁড়িয়ে বলা শুরু করলো;
মহামান্য বিচারক, এই হারামী কোকিলের কারণে আমার সংসারটা ছারখার হয়ে যাচ্ছিলো । এত সাধের, এত কষ্টের সংসার । কত কষ্ট করে ঘর বানালাম, ঝড়ে বৃষ্টিতে সেই ঘরের কোনোই ক্ষতি হয় নাই, অথচ সামান্য কোকিলের লুচ্চামিতে আর একটু হলেই আমার ঘর সংসার সব গেছিলো ।
মহামান্য আদালত আমি লুচ্চা না ।
কোকিল দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলো ।
তুই যে কি সেটা সবাই জানে ।
কাঁকও তীব্র স্বরে বলা শুরু করলো ।
অর্ডার, অর্ডার আমার আদালতে চিল্লা পাল্লা করা যাবে না । যা বলার শান্ত হয়ে বলতে হবে । কাক তুমি তোমার মূল অভিযোগ বলো ।
কি আর বলবো মহামান্য আদালত । এত কষ্টের গড়া সংসারে ছানা আসলো, কত আশা কত আকাংখা মনে । অথচ কয়দিন পরেই দেখি এইটা কোকিল ছানা । আমি তো ভাবলাম আমার পরিবার নিশ্চিত কোকিলের সাথে পিরীত করছে । আমার গলাটা ভালো না, হারামী কোকিল মাল খাইয়া কি সুন্দর গান গায়, আমি নিজে কয়েকদিন দেখেছি আমার পরিবার গভীর আনন্দ নিয়া সেই গান শোনে । তাছাড়া এইটা কলিকাল ঘরে ঘরে এই জিনিষ চলতাছে । ময়না পিরীত করে শালিক এর সাথে, মাছরাঙ্গার খাতির চড়ুই এর সাথে এমনকি মহামান্য বিচারক আপনার হেরেম এর দুই চারটা মুরগিকে মাঝে মাঝেই হাসার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখা যায় ।
কাক এতটুকু বলতেই বাকি পশু-পাখিদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়ে যায় । শালিক ময়নার কান কামড়ে ধরে, মাছরাঙ্গা আর চড়ুই ও হাতাহাতিতে লিপ্ত হয় । অনেক কষ্টে মোরগ পরিস্থিতি সামাল দেয় ।
শোনো কাক আর একবার যদি নিজের অভিযোগ এর বাইরে আর কিছু বলছো তাহলে আমি এই বিচার বাতিল করতে বাধ্য হবো ।
মোরগ শান্ত সমাহিত স্বরে বলে ।
মহামান্য বিচারক অভিযোগ তো জানেন, আমার ঘরে ডিম রাইখা গেলো কোকিল । সেইটা নিয়া আর একটু হইলেই আমাদের ডিভোর্স হইয়া যাইতেছিলো । হবে নাই বা কেনো, হারামী শুধু নিজেদের ডিমই রাখে নাই আমাদের ডিমটাও বাসা থেকে ফেলে দিছে ।
কোকিল তোমার কিছু বলার আছে ।
জি মহামান্য আদালত বলার আছে । আপনারা সবাই জানেন আমি একটু অলস । কষ্ট, মেহনত কইরা কিছু করতে আমার ইচ্ছা করে না । এদিকে পরিবার প্রতিদিন ঘ্যানঘ্যান করে, বাবুই এর মতো না হোক কাক এর মতো একটা বাসাও কি তুমি বানাইতে পারো না । সেদিনও বড় একটা আম গাছের ডালে বইসা ছিলাম । ঐ গাছটাতে আমরা মাঝে মাঝেই যাই ডেটিং এর জন্য । ঢাকা শহরের যা অবস্থা, ডেটিং এর মতো পরিবেশ তো দিনদিন নাই হয়ে যাচ্ছে । যাইহোক আদর-আহ্লাদ শেষে পরিবার শুরু করলো সেই পুরানা ঘ্যানঘ্যান । আমার মেজাজ খারাপ হতে লাগলো; হঠাৎ দেখি বিড়াল ভুড়িটা নড়াতে নড়াতে ছাঁদের কিনারে আসলো । আমরা তো ভয় পেয়ে গেলাম । বিড়াল বড় একটা হাই তুলে বললো, ভয় পাইস না । আমার মালিক আমার জন্য যে খাবার কিনে আনে তার দাম কতো জানোস ? জানলে আর ভয় পাইতি না , তোদের মত সামান্য কোকিল আমার মুখে কোনো স্বাদই দিতে পারবে না ।
আমরা উড়ে না গিয়ে একটু দূরে বসলাম ।
তারপর ?
তারপর বিড়াল আমাদের এই বুদ্ধি দিছে ।
আচ্ছা বিড়ালকে ডেকে আনো । তার মুখ থেকেই শুনি সে কি বুদ্ধি দিছে ।
মোরগ ঘোষনা দিলো ।
মহামান্য আদালত, এই কোকিল হারামীরা প্রতিদিন আমার ঘুমের ব্যাঘাত করে । আরে প্রেম করবি কর, তারপর আবার এইসব ঘ্যানঘ্যান কেনো ।
বিড়াল শুরু করে ।
কোকিলের অবস্থাটা আমি বুঝি । আমিও ওর মতোই একটু অলস তো ।
তোর মতো অলস দুইন্নায় আর একটাও নাই । কুকুর পিছন থেকে বলে ওঠে ।
কুকুরের জলুনি কোথায় আমি জানি । সারাদিন-রাত পাহারা দিয়া ওর কপালে জোটে হাড্ডি, আর আমি সোফায় ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া মাছ মাংস খাই । মহামান্য বিচারক কুকুর যদি বাঁধা দেয় তাইলে আমি কিন্তু আর কিছুই বলবো না ।
অর্ডার, অর্ডার আমার হুকুম ছাড়া কেউ কথা বলবে না । বিড়াল বলো ।
মহামান্য বিচারক, আমি সামান্য বিড়াল আমার মাথায় তো এত বুদ্ধি নাই । আমি যে বাসায় থাকি সেই বাসাটা আসলে খুব ভালো । টাকা পয়সার সমস্যা নাই আর টাকা পয়সার সমস্যা না থাকলে অন্য সমস্যাও তেমন থাকে না । মালিক সকাল হলেই টাকা কামাবার ধান্ধায় বের হয়ে যায়, ফেরে রাত দুপুরে । ফিরে বউকে ক্লান্ত গলায় বলে, এই বয়সে তৃতীয় সন্তান ওর জন্যও তো আর একটা বাড়ি বানাতে হবে । ব্যস এই বলেই ঘুমিয়ে পড়ে । সকালে উঠে সেই বাড়ি বানাবার টাকা রোজগার করতে বেরিয়ে পড়ে ।
বিড়াল, তুমি যে এতো ঘুরাইয়া কথা বলো জানতাম না তো । কিছুই তো বুঝলাম না ।
মহামান্য বিচারক, আমি তো কথাই বলি না । সারাদিন ঘুমাই, আজকে একটু সুযোগ পাইছি তাই বললাম ।
হইছে হইছে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করো ।
কথা বেশি কিছু না মহামান্য বিচারক । মালিক সকালে বের হলেই মালকিন এর বয়ফ্রেন্ড বাসায় ঢোকে । কোকিলকে আমি এই বুদ্ধিটাই দিছিলাম ।
আচ্ছা বুঝলাম, বিড়াল এর বুদ্ধিমতো তুমি এই কাজ করছো । কিন্তু কাকের ডিমটা ফেলে দিলে কেনো কোকিল ?
মহামান্য বিচারক, বিশ্বাস করেন ঐটা নিছক দুর্ঘটনা ।
কোকিলের উত্তরে কাক চেচিয়ে বলে, মিথ্যা কথা ও ইচ্ছা করেই এমন করেছে ।
আবার হট্টগোল লেগে যায় । সমস্ত পশু পাখীরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে যায় । একদল কাকের পক্ষে আর একদল কোকিলের পক্ষে । বিচারক মোরগ অবস্থা সামলাতে হিমসিম খেয়ে যায় । এমন সময় সামনের আসন থেকে শুয়োর দাঁড়িয়ে বলে মহামান্য বিচারক, আমি কিছু বলতে পারি ?
শুয়োরকে আগে এরকম সভায় ডাকা হতো না । ওর গায়ের গন্ধটাই এর প্রধান কারণ ছিলো । কিন্তু শুয়োর এখন শিক্ষিত শুয়োর । বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছে । খাইসলত অনুযায়ী কাঁদা ঘাটাঘাটি করলেও আজকাল সে দুর্গন্ধ ঢাকার কৌশল শিখে গেছে । আজ যেমন চমৎকার একটা ওভারকোট পরে এসেছে । অতএব শিক্ষিত শুয়োরকে কথা বলতে দিতেই হয় ।
আমি বলি কি প্রেম করার অধিকার সবার আছে । পরিশ্রমী কাক এর যেমন আছে , অলস কোকিল এরও আছে । তাই দুইজনকেই ছেড়ে দেয়া হোক ।
আর কোকিল যে কাক এর ডিম ফেলে দিলো ?
বিচারক মোরগ প্রশ্ন করে ।
শুয়োর নিজের দামী চশমা ঠিক করতে করতে বলে, ওটাকে আমরা কোলাটরেল ড্যামেজ বলে মেনে নিলেই হলো ।
সেই থেকে সমাজে শুধুমাত্র শিক্ষিত শুয়োরই নিরপেক্ষ বলে গন্য হতে লাগলো।