Collected প্রোগ্রেস রিপোর্ট - ইফতেখার হোসেন

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,011
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
প্রগ্রেস রিপোর্ট

মূল লেখকঃ ইফতেখার হোসেন








সুমি ক্লাস টেস্টে ইংরেজি ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করলো। তাতে সুমি বা তার ফ্রেন্ডদের কিছু যেতো আসতো না। তারা বরং ইংরেজিতেও কেন ফেল করে ভিকারুন্নেসার ইতিহাসে রেকর্ড করলো না এই জন্য সুমিকে কতক্ষন বকাবকি করলো। কিন্তু প্রিন্সিপাল ম্যাডাম যখন বললেন যে গার্জিয়ানকে এসে প্রগ্রেস রিপোর্ট নিতে হবে তখন তাদের টনক নড়লো। সুমির মা যদি টের পান তার এসএসসি তে জিপিএ ৫ পাওয়া মেয়ে ইন্টারমিডিএটে ক্লাস টেস্টে ফেল, তাহলে তিনি যে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলে সুমি প্রেমে পড়েছে তা ধরে ফেলবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। সুমিকে বিয়েও দিয়ে দিতে পারেন। কাজেই সেদিন ক্লাসের ব্রেকে সারা, সুমি, কনক আর নীলা ভিকারুন্নিসার মাঠে জরুরি মিটিঙে বসলো। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলো যেহেতু প্রিন্সিপাল ম্যাডাম সুমির মাকে চেনেন না, কাজেই সুমির প্রগ্রেস রিপোর্ট কালেক্ট করার জন্য একজন মা হায়ার করতে হবে। হাতে সাতদিন আছে। শুরু হলো অপারেশন মা খোঁজা অভিযান।

কোচিং সেন্টারের এক বন্ধু বললো ঢাকা কলেজের দুই ভাইকে সে চিনে, তাদের মা মাঝে মাঝে এসব ব্যাপারে হেল্প করেন। ঠিকানা দিল। চারজন খুঁজে খুঁজে সেই বাসায় হাজির। যিনি মা হতে রাজি দেখা গেল উনি এক কলেজের বাংলার টিচার। মাঝে মাঝে ছাত্র ছাত্রীদেরকে হেল্প করেন কারণ নিজের ছেলেদের আর ছাত্র ছাত্রীদের অবস্থা দেখে তার বেশ মায়া হয়। কিন্তু সুমি বাংলায় ফেল করায় তিনি বেঁকে বসলেন। ইংরেজিতে পাস্ কিন্তু বাংলায় ফেল তিনি মানতে পারলেন না। তারপর আবার ইংরেজি ছাড়া সব সাবজেক্টে ফেল। বললেন, মা আমি পারবোনা। এক সাবজেক্ট হলে কথা ছিল। তোমার মাকে নিয়ে যাও। তাহলে পরে আর এই ভুল করবা না।

একজন এসে বললো তাদের বুয়া দেখতে শুনতে ভালো। বোরখা পরে যাবে। টের পাবে না। গেল সবাই বুয়াকে দেখতে। আসলেই ভালো, ভদ্র চেহারা। কিন্তু কথায় পুরা নোয়াখালীর টান। আই উঁই ছাড়া কথা বলতে পারে না। এদিকে সুমি যে বরিশালের এটা ম্যাডাম জানেন। দুই দিন তারা চেষ্টা করলো বুয়ার কথার টোন কাটানোর জন্য। অবাক হয়ে দেখলো বুয়ার কোন উন্নতি হচ্ছেনা, উল্টা তারা আই উঁই করতেছে। নোয়াখালীর টোন বড়ই ছোয়াচে। বুয়া প্রজেক্ট বাদ পড়লো।

একজন বললো তোমাদের অন্য কোনো একজনের মাকে রাজি করাও। সারা তার মাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করলো। ভাগ্গিস তার মা সুমির মাকে চেনেন না। একদিন সারাকে ঘরে আটকে রাখা হলো. এবং সারার ড্রাইভারকে বলে দেয়া হলো সে যেন সারাক্ষন ভিকারুন্নিসার গেইটে দাঁড়িয়ে থাকে।

কনক একজনকে ম্যানেজ করলো কিন্ত সে ৫০০০ টাকা চায়। তখন ৫০০০ অনেক টাকা। তারপরও সবাই মিলে ৫০০০ টাকা ম্যানেজ করে দেয়ার পর সেই মহিলা হাওয়া হয়ে গেল।

আর যখন মাত্র এক দিন বাকি, তখন অন্য এক বান্ধবীর মা রাজি হলেন, তিনি বোরখা পরে যাবেন। সুমি সাথে যাবে। কিন্তু সুমিকে কথা দিতে হবে পরেরবার সে সব বিষয়ে পাস্ করবে। নাহলে তিনি সুমির মাকে বলে দিবেন।

সবাই হাঁপ ছাড়লো। পরেরটা পরে দেখা যাবে। প্ল্যান অনুযায়ী সুমির পাতানো মা ভিকারুননিসার গেইটে এসে সুমিকে নিয়ে ভেতরে রওয়ানা হলেন। বাকি সবাই গেইটের কাছে ফুল আর ছোট একটা ওয়াল পেইন্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে। সুমি আর পাতানো মা প্রগ্রেস রিপোর্ট নিয়ে আসলে পাতানো মাকে দেয়া হবে। কে জানে, ভবিষ্যতেও লাগতে পারে।

হঠাৎ চেনা গলা শুনে সবাই পেছনে তাকালো। সুমির আসল মা, তাদের আন্টি।
- এই তোমরা এখানে? সুমি কৈ? তোমরা কলেজে চলে আসার পর অফিস থেকে ফোন করলো কলেজে এসে প্রগ্রেস রিপোর্ট নিয়ে যেতে। কি হয়েছে? সুমি সব হাইয়েস্ট পেয়েছে?

সবাই বললো সুমির সাথে তাদের গত কিছুদিন ভালো সম্পর্ক না। ঠিক মতো কথা বলে না। আজকে তারা সুমিকে দেখ নাই। দেখতেও চায়না। গম্ভীর মুখে একেকজন একেক দিকে চলে গেল।
 
Back
Top