- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 407
- Messages
- 5,564
- Reaction score
- 2,005
- Points
- 3,913
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****ফের দেখা*****
মূল লেখকঃ মনিকা খাতুন
মূল লেখকঃ মনিকা খাতুন
পর্ব- ১
হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি, এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও দাড়ানোর জায়গা না পেয়ে পাশেই একটা চায়ের দোকানের সামনে এসে দাড়ালো তানিয়া। ব্যাগে ছাতা নেই, কয়েকদিন আগে কি কারণে যেন ছাতাটা বের করা হয়েছিল.. আর নেয়া হয়নি।একটা রিক্সাও দেখা যাচ্ছে না।ছাতা থাকলে মাথাটা বাঁচিয়ে হেটেই চলে যাওয়া যেতো।যদিও সাইনাসের সমস্যা টা বেড়ে যেত তবুও জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখে চা খাওয়াটা মিস হতো না।
বৃষ্টির যা ধরন তাতে কখন থামবে তা বোঝা যাচ্ছে না।
: আপা বসেন,চা দিমু?
: দিবে? দাও, রং চা দাও।
: আপা দুধচা দেই? ইসপেশাল কইরা বানায়া দেই, ভালো লাগবো।
: আচ্ছা দাও,নাম কি তোমার?
: আমার নাম সুজন,এই তো বাস্তুহারা থাকি।( একটু থেমে)আপা আপনে বড় অফিসে চাকরি করেন তাই না?
: ( মুচকি হেসে) এই তো, কেন?
: আপনের চেহারার মধ্যে বড় অফিসারের একটা ভাব আছে। আপনে প্রতিদিন দুকানের সামনে দিয়া যান, আহেন আমি আপনেরে দেহি,খুব ভাল্লাগে।
এবার তানিয়া না হেসে পারল না
:তাহলে তুমি আমাকে প্রতিদিন ফলো করো?
: হ, আমার ইচ্ছা আমার মাইয়ারে আপনের মত অফিসার বানামু...


বাড়িত যাইয়া কইলাম , বাপে দিল ঠাটায়্যা চর।বয়স হয়নাই,কামাই রোজগার করে না, বিয়া করব!!!
হে ও সৎমায়ের যন্ত্রণা থেইক্যা বাচবার চাইল..
কয়দিন পরেই তারে লইয়া ঢাকা আইলাম।এক বন্ধুর সাহায্য নিয়া, বয়স লুকাইয়া কাজী অফিসে বিয়া করলাম।উঠলাম বাস্তুহারা র একটা ঘরে।এই যে ৫ বছর শেষ হইল।মাইয়ার বয়স ৩ বছর।মাশাল্লাহ খুব মিষ্টি হইছে মাইয়ার চেহারা ডা,একদম মায়ের মতন।দোয়া করবেন আপা,অরে যেন্ ঠিক মত পড়ালেখা করাইতে পারি।
: অবশ্যই,চেষ্টা করলে অবশ্যই পারবে।
চা টা খেতে সত্যিই খুব ভালো লাগল তানিয়ার।অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে এখনও।বৃষ্টির ছিটেফোঁটা এসে পা টা ভিজে গেছে, অনেকদিন পর বাইরে বসে বৃষ্টি দেখতেও ভালোই লাগলো তানিয়ার।
সাথে এমন একটা জীবনের গল্প শোনা সবমিলিয়ে অন্য রকম অনুভূতি । জানালায় বসে চা খাওয়ার চেয়ে খারাপ লাগছে না।
চা শেষ করে কাপটা দিতে গিয়ে খেয়াল করল চুলার পাশে একটা ফুলের তোরা।ফুল বেশি না, কয়েকটা গোলাপ আর রজনীগন্ধা,সাথে কিছু ঘাস ফুল দিয়ে তোরা বানানো।
: ফুলের তোরাটা কার?
: ওওওও এইটা? আমার,কালক্যা উনার (বৌ)জন্মদিন, তাই কিনলাম , ১২ ডা ১ মিনিটে দিমু।যদিও পয়সা খরচ করনের লাইগা রাগ করবো.. কিন্তু কিছু দিতে না পারলে আমারই ভাল্লাগে না।তাই যতই রাগ করুক কয়ডা ফুল নিয়াই যাই।জানেন আপা হেরে খুব সম্মান করতে মন চায়।কিন্তু সামর্থের কারণে পারি না। আমারে খুব যত্ন করে,কোনদিন কথার অবাদ্য হয়নাই।তয় ইচ্ছা আছে আল্লায় যদি দিন দেয় হের লেইগা কিছু একটা করুম।হের খুব শখ নিজের বাড়িতে থাকার, এই জন্য হেয় দর্জির কাম কইরা ট্যাকা জমায়তাছে। এইদিকে আমি হের শখ পূরনের লাইগ্যা ডি পি এস করছি দুইডা.. আল্লাহ বাচাইলে দশ বছর হইলে যে টেকা পামু তা দিয়া গ্রামে নিজের একটা বাড়ি করন যাইব।এইডা আবার উনারে জানাই নাই। নিয়ত আছে বাড়ি কইরা তারপর জানামু।তাইলে বেশি খুশি হইবো।
কথা গুলো শুনে তানিয়ার মনের কোথাও যেন অন্য রকম কিছু অনুভব করল।সত্যিকারের ভালবাসা বুঝি এমনই হয়!! এই লুকানো ভালবাসা আছে বলেই মনে হয় পৃথিবী এত সুন্দর! এই পবিত্র ভালবাসা কয়জনে পায়? সত্যি মেয়েটা ভাগ্যবতী। সম্রাট শাহজাহান মমতাজের জন্য তাজমহল গড়েছিলেন যা ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন।কিন্তু তানিয়ার মনে হচ্ছে শাহজাহান যা করেছেন তা করার সামর্থ্য তার ছিল কিন্তু সামর্থ্যের বাইরে প্রিয়জনকে ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টা কয়জনের আছে?
সুজন চায়ের দাম রাখল না।বিনিময়ে তাদের ভালো থাকার দোয়া চাইল।ও জানেনা ওদের ভালো থাকার জন্য যে উপকরণ গুলো প্রয়োজন সব গুলোই তাদের আছে। ভালো থাকার জন্য বিশ্বাস, সম্মান, একে অপরকে ভালো রাখার চেষ্টা কোনোটারই কমতি নেই। ওরা নিজেরাই নিজেদের জন্য দোয়া।
: আপা বিষ্টি কমছে,এইবার যাইতে পারবেন।খুব ভালো লাগতাছে আপনেরে এককাপ চা খাওয়াইতে পারছি। মাঝে মাঝে চা খাইতে আইসেন আপা খুব খুশি হমু।
: ঠিক আছে আসবো... বলে তানিয়া পা বাড়ায়।
রিকশায় উঠতে ইচ্ছে করছে না তাই হেটেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তানিয়া।বেশি দূরে না বাসা, হেটে পনেরো মিনিটের পথ।
হাটতে হাটতে কেমন যেন সব এলো মেলো লাগছে।একটা অস্থিরতা কাজ করছে তানিয়ার মনে।তবে কি সেও চেয়েছিল এমন সুন্দর একটা সংসার? পায়নি বলেই কি এই অস্থিরতা? হ্যাঁ সে তো চেয়েছিলই মামুন কে নিয়ে সুখী হতে। সুন্দর একটা সংসার গড়তে,সারা জীবন একসাথে পথ চলতে,দুজন দুজনার সুখ দুঃখের সাথি হতে,তাইতো পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্কের মধুর ইতি টেনেছিল বিয়ের মাধ্যমে......