Collected লবঙ্গির জঙ্গলে - বুদ্ধদেব গুহ

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,005
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
লবঙ্গির জঙ্গলে

মূল লেখকঃ বুদ্ধদেব গুহ






পর্ব - ১
অফিস থেকে ফিরেই টেবিলে একটা পোস্টকার্ড দেখলাম।
জামা-জুতো না খুলেই চেয়ারে বসে পোস্টকার্ডটা তুলে নিলাম। অত্যন্ত খারাপ হস্তাক্ষরে ও খারাপ ইংরিজিতে লেখা একটা চিঠি। কোন পোস্ট-অফিসের ছাপ পড়েছে তাতে তাও বোঝা গেল না।
চিঠিটা এই রকম :
ভাই,
আমি বিড়িগড়ের চন্দনী। সেই যে চন্দ্রকান্ত ও আমাকে তুমি মহানদীর বুকে ভেলায় ভাসিয়ে বিদায় দিয়েছিলে তারপর তোমার কোনোই খোঁজ জানি না। তোমাকে আমার খুব দরকার। ভীষণ বিপদ আমার। যদি একবার আসতে পারো তাহলে বড় ভালো হয়। এলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আমি টিকড়পাড়ায় এসে রয়েছি। যত তাড়াতাড়ি পারো এসো। কিন্তু তুমি কি আর আসবে?
ইতি—তোমার চন্দনী
চিঠিটা পড়ে প্রথমে রাগ হল; জঙ্গল-পাহাড়ের এরা কি ভাবে? আমরা কি কোলকাতায় ভেরাণ্ডা ভাজি যে, এসো বললেই আসতে পারি? তার উপর একটি যুবতী মেয়ে, যার সঙ্গে দশপাল্লা রাজ্যের খন্দমালের বিড়িগড়ের পাহাড়ে আমার অল্পদিনের পরিচয়—সে কোন সুবাদে আমাকে এমন চিঠি লেখে। যেন আমার ভরসাতেই সে চন্দ্রকান্তকে বিয়ে করেছিল, আমার ভরসাতেই ঘর পাততে গেছিল তার সঙ্গে।
ভাবছিলাম, চিঠিটাই বা কাকে দিয়ে লেখাল? ইংরিজি তো দূরস্থান, ওড়িয়াও লিখতে পারে বলে জানি না। কিন্তু অক্ষর পরিচয় না থাকলেও তাকে অশিক্ষিত বলতে পারি না। চন্দনীর একট সহজাত এবং অভিজাত শিক্ষা ছিল, বনপাহাড়ের রাজকুমারীর মতো।
চন্দ্রকান্ত ঘরে থাকার লোক নয়, যে জানে, সেই-ই জানে। তবুও জেনে-শুনে কেন চন্দনী আগুন নিয়ে খেলতে গেল? যদি খেললই তা আমাকে এতদিন পরে তার সঙ্গে জড়াল কেন?
এও মনে পড়ল, মেয়েটি আমাকে ভাই পাতিয়েছিল। ওর বিয়ের সময় আমি ছিলাম। তেমন কোনো বিপদে না পড়লে সে আমার কোলকাতার ঠিকানা জোগাড় করে অন্যকে দিয়ে চিঠি লেখাত না।
কিন্তু টিকড়পাড়া যেতে হলে তো দিন পনেরোর ছুটি না হলে নয়। ছুটি পাওনা আছে বটে, কিন্তু ছুটির দরকারও কম নয়। সেজদি-জামাইবাবু জব্বলপুরে বদলী হয়ে যাওয়ার পর থেকে দু-বছর হল লিখছে যাওয়ার জন্যে। জামাইবাবুর একটা মাইল্ড অ্যাটাক হয়ে গেছে। যাওয়া কর্তব্য। মাকে নিয়ে দক্ষিণ ভারত দেখিয়ে আনার কথা বহুদিন থেকে ভাবছি। এর মধ্যে চন্দনীর ভূমিকা কি? সে আমার কে?
বিরক্ত হয়ে পোস্টকার্ডটা ছিঁড়ে ফেললাম।
রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর রোজই ঘণ্টা দুয়েক কিছু পড়ি বা লিখি। পড়া-লেখা কিছুই হল না। মনটা কেবলই ছেঁড়া কাগজের ঝুড়িতে ছিঁড়ে-ফেলা পোস্টকার্ডটার টুকরোগুলোর মতো পাখার হাওয়ায় বিক্ষিপ্ত হতে লাগল।
আস্তে আস্তে অনেক কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল চন্দনী ও চন্দ্রকান্তকে নতুন করে। চন্দনীর কালো চিকণ সমৰ্পণী চোখ দুটি মনের চোখে চক্‌চক্ করে উঠল।
হঠাৎ নিজেকে বললাম, এ-জীবনে ক-টা কর্তব্যই-বা তুমি করেছ? মা-বাবার প্রতি, ভাই-বোনের প্রতি? বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি? আর যাকেই মানাক তোমাকে কর্তব্যের দোহাই মানায় না; মেয়েটি নিশ্চয়ই বড় বিপদে পড়েছে। নইলে এমন করে ডাকে না কেউ কাউকে।
ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঠিক করলাম, কাল সকালে গিয়েই বড় সাহেবের সঙ্গে দেখা করে ছুটির দরখাস্ত করব।
পরদিন ছুটি পেয়েও গেলাম আশাতীতভাবে। আমার ছোট অফিসের বড় সাহেব বললেন, পনেরো দিন কেন, তুমি কুড়িদিনই নাও না কেন? পরে বরং আর ছুটি পাবে না। তোমাকে বোম্বে পাঠাব তিনমাসের জন্যে। ফিরে এলেই।
বড় সাহেবের ছোট ছেলে স্টেটস-এর হুস্টনে খুব ভালো চাকরি পেয়েছে। ছেলেটিও ব্রিলিয়ান্ট। খবর এসেছে গতকাল। সাহেবের আজ মেজাজ শরিফ্। আমার কপাল। চন্দনীরও।
ছুটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সৌমেনবাবুকে একটা ট্রাঙ্ককল বুক করে দিলাম। আগামী রবিবার পুরী এক্সপ্রেসে ভুবনেশ্বর পৌঁছব তারপর ওদের বাড়ি খাওয়া- দাওয়া করে বেরিয়ে যাব। আমাকে একটা জিপ দিতে হবে দিন পনেরোর জন্যে। একটু পর ট্রাঙ্কঅপারেটর জানাল, লাইন আউট অফ অর্ডার। তাই ফোনোগ্রামই করে দিলাম।
 
Back
Top