Collected কাঁদো নদী কাঁদো - সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহ

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,011
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
কাঁদো নদী কাঁদো

মূল লেখকঃ সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহ






পর্ব - ১
লোকটিকে যখন দেখতে পাই তখন অপরাহ্ন, হেলে-পড়া সূর্য গা-ঘেঁষাঘেঁষি হয়ে থাকা অসংখ্য যাত্রীর উষ্ণ নিঃশ্বাসে দেহতাপে এমনিতে উত্তপ্ত তৃতীয়শ্রেণীকে আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে। সেজন্যে, এবং রোদ-ঝলসানো দিগন্তবিস্তারিত পানি দেখে-দেখে চোখে শ্রান্তি এসেছিল, তন্দ্রার ভাবও দেখা দিয়েছিল। তারপর কখন নিকটে গোল হয়ে বসে তাস খেলায় মগ্ন একদল যাত্রীর মধ্যে কেউ হঠাৎ চিৎকার করে উঠলে তন্দ্রা ভাঙে, দেখি আমাদের স্টিমার প্রশস্ত নদী ছেড়ে একটি সঙ্কীর্ণ নদীতে প্রবেশ করে বাম পাশের তীরের ধার দিয়ে চলেছে। উঁচু খাড়া তীর, তীরের প্রান্তদেশ ছুঁয়ে ছোট ছোট ছায়াশীতল চালাঘর, এখানে-সেখানে সুপারিগাছের সারি, পেছনে বিস্তীর্ণ মাঠ, আরো দূরে আবার জনপদের চিহ্ন। সে-সব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি এমন সময়ে কী কারণে পাশে দৃষ্টি গেলে সহসা লোকটিকে দেখতে পাই। আগে তাকে দেখিনি; নিঃসন্দেহে এতক্ষণ সে যাত্রী এবং মালপত্রের মধ্যে কেমন নিরাকার হয়ে ড্রিাতিষ্কৃত হয়ে ছিল। বোধহয় সবেমাত্র উঠে বসেছে, ঘুমভারি চোখে এখনো রক্তাক্ত ভাব। তাছাড়া ঈষৎ কৌতূহল ভরে চতুর্দিকে যাত্রীদের-যে-যাত্রীদের কেউ কেউ নাসিকাগজন সহকারে একনাগাড়ে ঘুমায়, কেউ কেউ মনে কোনো গুপ্ত ভাবনা-চিন্তা কেমন ঝিম্ ধরে বসে হয়তো পথ শেষ হবার জন্যে অপেক্ষা করে, কেউ কেউ আবার শূন্য-চোখে অনির্দিষ্টভাবে সুবৃহৎ পাটাতনের এক প্রান্তে সিঁড়িটা বেয়ে ওপর নিচ করে-দেখলেও তার দেহভঙ্গিতে সদ্যজাগা মানুষের নিথর ভাব।
লোকটির বয়স চল্লিশের মতো, বা কিছু বেশি, কারণ কানের ওপর চুলে বেশ চাপ দিয়ে পাক ধরেছে। গা-এর রঙটি এমন যে মনে হয় একদা তা ফর্সা ধরনের ছিল কিন্তু আজ জ্বলে-পুড়ে মলিন হয়ে গিয়েছে। তবু চোখে-মুখে কেমন তারুণ্যের নমনীয়, সুশীল শান্তভাব। পরনের জামাকাপড় পুরাতন, বহু ব্যবহৃত, তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পাশে খুলে রাখা জুতা জোড়ার গোড়ালি ক্ষয়ে গিয়েছে, একটির অগ্রভাবে মেরামতের চিহ্ন, তাছাড়া দীর্ঘদিনের ব্যবহারের ফলে নিজস্ব আকৃতি হারিয়ে দুটি জুতাই মালিকের ঈষৎ বেঢপ ধরনের পায়ের আকৃতি গ্রহণ করেছে, তবু তাতে কালি-বুরুশের জৌলুশ। নিঃসন্দেহে তার স্বভাব বেশ পরিপাটি ধরনের যার প্রমাণ শুধু দেহবস্ত্রের পরিচ্ছন্নতা বা পাদুকার জৌলুশের মধ্যেই নয়, অনেক কিছুতেই ক্রমশ দেখতে পাই। ঘুমের আমেজটি কাটিয়ে ওঠার পর সহসা সে পকেট থেকে ছোট ধরনের কিছু দাঁতভাঙ্গা একটি চিরুনি বের করে আলগোছে কিন্তু ক্ষিপ্রহস্তে চুলটা ঠিক করে, একটু পরে শার্টের গুটানো আস্তিন খুলে আবার সযত্নে কনুইর ওপর পর্যন্ত ভাজ করে নেয়, কিছু মুচড়ে-যাওয়া শার্টের কলারটিও সোজা করে, অবশেষে যে-ধবধবে সাদা চাদরের ওপর বসে ছিল সেটি সজোরে হাত দিয়ে ঝেড়ে সাফ করে। তার পরিপাটি স্বভাবে একটু শৌখিনতার স্পর্শও যেন, কারণ শীঘ্র সে পকেট থেকে একটি ফুলতোলা রুমাল বের করে মুখ-চোখ সযত্নে মোছে যদিও এত গরমেও সেখানে ঘামের চিহ্নমাত্র নজরে পড়ে না। এবার তৃপ্ত সন্তুষ্ট হয়ে সে আসন-পিড়ে হয়ে বসে উরুর ওপর স্থাপিত পাটি দ্রুতভাবে নাড়তে শুরু করে। শীঘ্র তার দৃষ্টি আবার ফিরে যায় যাত্রীদের দিকে। তাদের সে এবার ধীরে-সুস্থে কিন্তু তীক্ষ্ম কৌতূহলের সঙ্গেই নিরীক্ষণ করে, চোখের কোণে ঈষৎ হাসির আভাস।
তারপর লোকটির বিষয়ে বিস্মৃত হয়ে পড়ি, আমার চোখে আবার ঘুমের আমেজ ধরে। অনেকক্ষণ পরে একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পাই-নিম্ন শান্ত কণ্ঠ, কিছু সঙ্কোচের আভাস তাতে। চোখ খুলে দেখি, পরিপাটি স্বভাবের লোকটি কিছু বলছে। ধীরে ধীরে, থেমে থেমেই সে বলে, যেন কি বলবে সে-বিষয়ে মনস্থির করতে পারে নি, শ্রোতাদের সম্বন্ধেও নিশ্চিত নয়। তারপর কখন কী করে কোথায় একটা অদৃশ্য বাধা প্রতিবন্ধক দূর হয়, কী একটা জড়তা কাটে, কণ্ঠস্বর উঁচু না করলেও এবার সে অনর্গলভাবে কথা বলতে শুরু করে। আরো পরে মনে হয় তার মুখ দিয়ে অবলীলাক্রমে যা নিঃসৃত হয় তার ওপর সমস্ত শাসন সে হারিয়েছে, কথার ধারা রোধ করার ইচ্ছা থাকলেও রোধ করার কৌশল তার জানা নেই; বস্তুত তার বাক্যস্রোত রীতিমত একটি নদীর ধারায় পরিণত হয়। তবে এমন একটি ধারা যা মৃদুকণ্ঠে কলতান করে কিন্তু বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ সৃষ্টি করে না, দুর্বারবেগে ছুটে যায় না। সে-ধারা ক্রমশ অজানা মাঠ-প্রান্তর গ্রাম-জনপদ চড়াই-উতরাই দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। অনেক কিছুই সে বলে, যার কিছু কানে আসে কিছু আসে না, কিছু বুঝতে পারি কিছু পারি না; মনটার ওপর তখন তন্দ্রা উড়ন্ত মেঘের মতো থেকে থেকে ছায়াসম্পাত করছিল। অনেকক্ষণ ধরে সে যেন হরতনপুর নামক একটি অখ্যাত গ্রামের মকসুদ জোলা বলে কোন অজানা মানুষের কথা বলে। লোকটি হতভাগ্য-এমনই হতভাগ্য যে এক বছর যদি বিনা বৃষ্টির দরুন তার ফসল ধ্বংস হয় অন্য বছর ধূলিসাৎ হয় শিলাবৃষ্টিতে, এ-বছর তার বাড়িঘর যদি বন্যায় ভেসে যায় অন্য বছর ভস্মীভূত হয় নিদারুণ অগ্নিকাণ্ডে, যার প্রিয়জন একে একে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, যার বিষয় সম্পত্তি হাতছাড়া হয় দুর্বৃত্ত লোকের কারসাজিতে, কাঠ কাটতে গিয়ে কাঠে না পড়ে তার পায়েই কুঠার নেবে আসে নির্মমভাবে, অবশেষে মেঘশূন্য আকাশে বজ্রাঘাতের মতো অকারণেই যেন ভাগ্য-পরাক্রান্ত লোকটি পঙ্গু হয়ে পড়ে। একবার হয়তো চোখ খুলে লোকটির দিকে তাকিয়েছিলাম, কারণ সহসা তন্দ্রাচ্ছন্দ মনে কোথাও কেমন অস্থিরতা দেখা দিয়ে থাকবে; এমন হতভাগ্য মানুষের কাহিনী শুনলে কার মনে অস্থিরতা না জাগে? লোকটির ধীর-স্থির কণ্ঠস্বর শুনতে পাই, তারপর তার শান্ত মুখ, চোখের কোণে ঈষৎ হাসিটি-এসবও নজরে পড়ে, কিছু আশ্বস্ত হই। তবে তখন লোকটি কী কারণে কামারান এবং কাতবিয়ান নামক যে-ফেরেশতা দুটি মানুষের স্কন্ধে বসে তার সুকাজ-কুকাজ লিপিবদ্ধ করে তাদের কথা বলতে শুরু করেছে। তার বর্ণনায় ফেরেশতা দুটির একজন সুপরিচিত হিসাব-নবিশের চেহারা ধারণ করে-ব মেরুদণ্ড শীর্ণদেহ কুটিলমনা কদাকার লোক, কানের পশ্চাতে আধা-খাওয়া বিড়ি, চোখে গোলাকার ঘোলাটে চশমা যার মধ্যে দিয়ে নয়, ওপর বা নিচে দিয়েই কখনো-কখনো সে দুনিয়াটি নিরীক্ষণ করে থাকে। সে কি কাতবিয়ান না কামারান? তন্দ্রাচ্ছন্ন মন বৃথা উত্তর সন্ধান করে। হয়তো অবশেষে আমার মনে দুজনেই হিসাব-নবিশের চেহারা ধারণ করে এবং পরে কী যাদুমন্ত্রে অর্শরোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শুধু যখন আবার ক্ষণকালের জন্যে জেগে উঠি তখন বুঝতে পারি লোকটি মকসুদ নামক হতভাগ্য জোলার বা কামারান-কাতবিয়ান নামক ফেরেশতা দুটির কথা নয়, কী দুর্বোধ্য কারণে অর্শরোগের কথা পেড়েছে। কণ্ঠস্বর পূর্ববৎ অনুচ্চ, ঈষৎ হাসিটি তেমনি চোখের প্রান্তে খেলা করে, কিন্তু অর্শরোগের বিস্তারিত বর্ণনা এবং ভূক্তভোগী কয়েকজন রোগীর নিদারুণ যন্ত্রণার বিশদ বিবরণ দিয়ে ততক্ষণে সে শ্রোতাদের মুখ ফ্যাকাসে করে তুলেছে, শ্রোতারা যেন তাদের দেহেরই বিশেষ অঞ্চলে স্ফীত-হয়ে-ওঠা কোনো শিরার অকথ্য বেদনা অনুভব করতে শুরু করেছে।
তারপর হয়তো কিছুক্ষণ তার কথা শুনি নি, হয়তো সে নীরব হয়ে পড়েছিল। তবে নিশ্চয় বেশিক্ষণের জন্যে নয়। এবার তার কণ্ঠস্বর আমার অর্ধঘুমন্ত কানে এসে পৌঁছালে তা গুঞ্জনের মতো শোনায়, যে-গুঞ্জনে ঈষৎ রহস্যের ভাব, একটু গাম্ভীর্যের আভাস। মনে হয় সে যেন জিজ্ঞাসা করছে কোথা থেকে মানুষ আসে, কোথায় সে ফিরে যাবে। শ্রোতাদের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই না, পরে দূরে কোথাও একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুর কান্নার আওয়াজ জেগে উঠলে তাতে লোকটির গলার শব্দও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ততক্ষণে দিগন্তে হেলে-পড়া সূর্যের ওপর মেঘ উঠেছে, কিছু শীতল হাওয়া বইতে শুরু করেছে, এবং মুখে-চোখে সে-শীতল হাওয়া এসে লাগলে তন্দ্রার ভাবটা বেশ জমে উঠে থাকবে। হাওয়া দেখতে-না-দেখতে প্রবল হয়ে ওঠে এবং আঘাতে ছাদের প্রান্তে গুটানো তেরপলের ঝুলে-পড়া একটি অংশ সশব্দে দুলতে থাকে। কখনো সে-শব্দ, কখনো লোকটির ধীর-মন্থর কণ্ঠস্বর ঢেউয়ের মতো কানে এসে বাজে। তবে আবার তার কণ্ঠস্বর কানে এসে পৌঁছালে বিস্মিত হই, কারণ ছালাম মিঞা নামক জোতদারটির সঙ্গে দর্শনমূলক বিষয়টির যোগসূত্র ঠিক বুঝতে পারি না। যেটুকু বুঝতে সক্ষম হই তা এই যে, জোতদারটি বড় উদ্যোগ আয়োজন করে বহুদিনের বাসনা চরিতার্থ করতে গিয়েছিল মক্কা দেশে কিন্তু কোনো কারণে কাবাশরীফে পৌঁছে আচম্বিত অন্ধ হয়ে পড়ে। কেন? সে কি ঘোর গুনাহগারি যে-গুনাহ মাফ নেই? শীঘ্র একটি কান্না শুনতে পাই। কান্না নয়, আর্তনাদ। হয়তো জোতদারটিই আর্তনাদ করে। হঠাৎ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়া মানুষটির অন্তরে যে-প্রগাঢ় নিশ্চিদ্র অন্ধকার সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে দিশেহারাভাবে সে হয়তো পথ সন্ধান করছে, একটু আলো খুঁজে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কোথাও পথ বা আলো দেখতে পাচ্ছে না। জোতদার আর্তনাদ করে চলে, যে-আর্তনাদ অতল কোনো গহ্বর থেকে উঠে এসে অন্ধকারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে : অন্ধকার অন্ধকারের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়।
হয়তো সে-অন্ধকারেই আমার শ্বাসরোধ হবার উপক্রম হয় বলে হঠাৎ জেগে উঠি। তখন সূর্যের ওপর থেকে মেঘ সরে গিয়েছে, গুমোট গরমটা আবার অসহ্য রূপ গ্রহণ করেছে। সে-গরম যেন শুধু বাইরে নয়, মানুষের বস্ত্রের ভাঁজে-ভাঁজেও আশ্রয় নিয়েছে, অসংখ্য পিপীলিকার মতো তার দেহ বেয়ে ওঠা-নাবা করছে। দূরে কোথাও আবার একটি শিশু কাঁদে। তখন তার কান্নাই কি ছালাম মিঞা নামক জোতদারের আর্তনাদে পরিণত হয়েছিল শিশুটি, এবং তার ঘোমটা দেয়া অল্পবয়স্কা মাকে দেখতে পাই। রেলিং থেকে অনেক দূরে হলেও যেখানে শিশুকোলে মেয়েলোকটি বসেছিল সেখান পর্যন্ত শেষ-অপরাহ্নের সূর্য এসে পৌঁছেছে। রোদের দিকে পিঠ দিয়ে কোলের শিশুটির জন্যে ছায়া সৃষ্টি করে মেয়েটি নত মাথায় মূর্তিবৎ নিশ্চল হয়ে বসে।
লোকটি তখনো থামে নি। সে কি জোতদার মানুষটির কাহিনী শেষ করে নি? তারপর কী হয়েছিল তার? তার গুনাহ্ কি মাফ হয়েছিল, সে কি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছিল কয়েক মুহূর্ত কান পেতে শোনার পর বুঝতে পারি ছালাম মিঞা নামক জোতদারের কাহিনী নয়, বড় কৌতূহলী ধরনের অন্য কোনো মানুষের কথা বলছে সে, এবং তার নাম-ধাম-সাকিনের খবর জানা সম্ভব না হলেও আরেকটু শোনার পর সন্দেহ থাকে না যে কৌতূহলী লোকটি সে নিজেই : অবশেষে সে নিজের কথা বলতে শুরু করেছে। কী কারণে আমার ঘুমতন্দ্রা এবার সম্পূর্ণভাবেই কাটে, চোখ-মন স্বচ্ছ পরিষ্কার হয়ে ওঠে, লোকটির কণ্ঠস্বরও এবার পরিষ্কারভাবে শুনতে পাই।
ছোটবেলায় নাম পড়েছিল পেঁচা। লোকেরা পেঁচা বলত। শ্রোতাদের দৃষ্টি তার খুদে ধরনের চোখের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে দেখে সে আবার বলে, না, চোখের জন্যে নয়, স্বভাবের জন্য।
পূর্ববৎ নিম্নকঠে, হয়তো-বা ঈষৎ লজ্জিতভাবে লোকটি তার কৌতূহলী স্বভাবের কথা বলে। ছোটবেলাতেই লোকটির মধ্যে কৌতূহলটা দেখা দিয়েছিল। তার সমবয়সী ছেলেরা যখন মাঠে-মাঠে খেলা করে গৃহস্থের বাড়ির ফলমূল চুরি করে নদী-পুকুরে সাঁতার কেটে সময় কাটাত তখন সে সবকিছু ভুলে ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষের জীবনযাত্রা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখত।
সে-সময়ে কত দেউড়ি-খিড়কির পথ দিয়ে সে যে ছায়ার মতো আসা-যাওয়া করেছে, এ-বাড়ি সে-বাড়ি গিয়ে কত নরনারীর দৈনন্দিন জীবন-নাটকে মশগুল হয়ে সময় কাটিয়েছে-তার ইয়ত্তা নেই সেজন্যেই চক্ষুসর্বস্ব নিশাচর পাখির নাম পেয়েছিল।
বিচিত্র নেশাটি শুরু হয় এক ভরা গ্রীষ্মে। হয়তো কাঠ-ফাটানো জ্যৈষ্ঠ মাস। তখনো সে বেশ ছোট, বোধহয় পাঁচ, বড়জোর ছয়ে পড়েছে। এ-সময়ে সহসা একটি প্রতিবেশী গৃহস্থের বাড়ির উঠানে প্রতি দুপুরে নিয়মতিভাবে হাজির হতে শুরু করে। সে-বাড়িতে কী যে তাকে এমনভাবে আকৃষ্ট করত আজ তার মনে নেই, তবে খুব সম্ভব আকর্ষণের বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। তাছাড়া যতদূর মনে পড়ে, সে-বাড়ির সাংসারিক কাজকর্মে আত্মমগ্ন মেয়ে-পুরুষেরা তার চোখের সামনে যে-চলচ্চিত্র সৃষ্টি করত সে-চলচ্চিত্রে না ছিল কোনো নায়ক বা নায়িকা, না কোনো কাহিনী। ঢেঁকিশালে ধানভানা, দাওয়ায় চুলবিনুনির পালা, পেছনের পুকুর থেকে সিক্তবসনে মেয়েদের প্রত্যাবর্তন, রান্না-ঘরের সামনে কুলা দিয়ে চাল-ঝাড়ার পর্ব, স্বল্পভাষী পুরুষদের আনাগোনা বা অটুট গাম্ভীর্যে জমাট হয়ে বসে ধূমপান করা-এ-সব গতানুগতিক দৃশ্যই তার কচি মনে মায়াজাল সৃষ্টি করত, নিত্য একই দৃশ্য দেখে তার সাধ মিটত না, মোহ ভাঙত না। আরো পরে, যখন কিছু বুদ্ধি হয়েছে, বুঝবার ক্ষমতা পেয়েছে, তখন পুনঃকৃত প্রাত্যহিক কাজকর্মের মধ্যে সে বৃহত্তর কিছু আবিষ্কার করে। সেদিন থেকে বুঝতে পারে যে-মেয়েমানুষ সকালের দিকে উঠানে বসে চাল ঝাড়ে বা যে-লোক নির্দিষ্ট সময়ে ছাতা মাথায় বাজার অভিমুখে রওনা হয় সে-মেয়েমানুষ বা সে-লোক প্রতিদিন একই কাজ করেও সমগ্র জীবনের সুখ-দুঃখ আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটি সুদীর্ঘ জীবন কাহিনী রচনা করে, পদে-পদে, তিলেতিলে। সেদিন থেকে তার পেঁচা-চোখে আর পলক পড়ে নি।
তবু বহুদিন ধরে সে যেন কেবল দর্শকই ছিল-যে-দর্শক দেখে কিন্তু কিছু অনুভব করে না, যা দেখে তার অর্থ বুঝলেও সে-অর্থ তার হৃদয় স্পর্শ করে না, সহসা চোখে অশ্রুর আভাস দেখা দিলেও সে-অশ্রু চোখ থেকেই নাবে অন্তর থেকে উঠে আসে না। নূতন বধূটির ব্যথায় অকস্মাৎ তার চোখে পানি আসার কথা এখনো তার মনে পড়ে।
দুদু মিঞার বাড়িতে নূতন বউ এসেছে শুনতে পেয়ে সেখানে উপস্থিত হতে তার দেরি হয় নি। টকটকে লাল শাড়ি পরে নূতন বউ সুদৃশ্য একটি চাটাইর ওপর বসে ছিল, মাথায় দীর্ঘ ঘোমটা, গায়ে অলঙ্কার, হাতে-পায়ে মেহেদি। প্রথমে দূর থেকে তাকে চেয়ে-চেয়ে দেখে, কখনো কখনো তার উজ্জ্বল লাল শাড়ি লেলিহান শিখার মতো আচমকা জেগে উঠে তার চোখে ধাঁধা লাগায়। পরে নিকটে এসে মাথা নিচু করে ঘোমটা-ঢাকা মুখের দিকে তাকায়। সে-সময়ে তার চোখে পানি দেখতে পায় : চোখ মুখ নিথর গাল বেয়ে কী ব্যথায় নিঃশব্দে অশ্রুধারা নেবে আসছে। কৌতূহলী দৃষ্টি সম্বন্ধে সজ্ঞান হলে নূতন বউ হঠাৎ লজ্জিত হয়ে ভেঙচি কাটে। তার মুখ-ভেঙচানিতে সে বিব্রত বোধ করে নি, তবে তার চোখে-গালের অশ্রুধারার দিকে তাকিয়ে তার চোখও সহসা অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। অজানা মেয়েটির দুঃখে সে যে বুকে কোথাও ব্যথা বোধ করেছিল তা নয়, মেয়েটির চোখের অশ্রু পুষ্পরেণুর মতো অদৃশ্যভাবে ভেসে এসে তার চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিল কেবল। সে-অশ্রু চোখেরই অশ্রু, হৃদয়ের অশ্রু নয়; হৃদয়ের অশ্রু দেখা দিতে সময় লাগে।
এমনি অনেক বাড়ির উঠানে দাওয়ায় অন্দরমহলে দাঁড়িয়ে বা খাটুমালা হয়ে বসে পেঁচা-চোখ মেলে সে সময় কাটাত, নিঃশব্দে, ছায়ার মতো। কোনো বাড়িতে এন্তেকাল ঘটলে ক্রন্দনরত শোকাকুল পরিবারের অজান্তে অলক্ষিতে সে যেমন সেখানে উপস্থিত হত তেমনি কোথাও নবজাত শিশু আকস্মিক কান্নার সাহায্যে তার আগমন-বার্তা ঘোষণা করতেই তার সান্নিধ্যে হাজির হত। সে দেখত, শুনত-কিছুই তার চোখ-কান এড়াত না। দেখে-দেখে শুনে-শুনে এক সময়ে মানুষের জীবন সম্বন্ধে এমনই পারদর্শী হয়ে পড়ে যে দূর থেকে কেবল মুখভঙ্গি দেখেই বলতে পারত কে ধানের কথা বলছে কে-বা বলছে খাজনার কথা।
বাল্যকালের সে-কৌতূহল বয়ঃপ্রাপ্তির সঙ্গে-সঙ্গে কমে না গিয়ে দিন-দিন বেড়েই চলে। তবে যা বাল্যকালে সম্ভব, পরে সম্ভব নয়; বড় হয়ে উঠলে পেঁচা-চোখ লোকেরা সহ্য করে না। তাই ধীরে ধীরে সে নানাপ্রকার ছলনা-কৌশলের শরণাপন্ন হয়, এবং কীভাবে আলগোছে-অলক্ষিতে মানুষের অন্তরের গভীরতম কক্ষে প্রবেশ করে কেউ কিছু সন্দেহ করার আগেই যা জানবার তা জেনে নিতে হয়-এ-সব কায়দা শিখে নেয়। না নিয়ে উপায় কী? ততদিনে কৌতূহলটি নেশার মতো পেয়ে বসেছে তাকে।
সেজন্যেই জীবনে কিছু হয় নি। পরের জীবনের দিকে তাকিয়ে দিন কাটিয়েছি, নিজের জীবনের কথা ভাবার সময় হয়ে ওঠে নি। হঠাৎ একটু আফসোসের সঙ্গেই যেন লোকটি বলে।
বাল্যকালে সে মেধাবী ছিল। বর্ষান্তের পরীক্ষায় প্রতিবছর প্রথম স্থান দখল করত, প্রাইজ-পুরস্কার পেত। তার পেশকার বাপ আশা করেছিল ছেলে যথাসময়ে ক্ষুদ্র মফস্বল শহরের সঙ্কীর্ণ সীমানা অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় উপস্থিত হবে, পরে জজ হাকিম বা উকিল-ডাক্তার হবে। বাপের প্রতি আদর্শ-বাধ্যতা প্রদর্শন করে স্টিমারে সওয়ার হয়ে একদিন উচ্চশিক্ষার্থে অন্যত্র গিয়েছিল, কিন্তু উচ্চাশার অভাবেই হোক, নিজের ক্ষুদ্র শহরের জীবনধারা থেকে বেশিদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা সম্ভব হয় নি বলেই হোক, স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করতে তার দেরি লাগে নি। বাপকে নয়, বন্ধুবান্ধবকে বলেছিল : গাঁদা-ফুল গাঁদা-ফুলই হয়ে থাকবে, গোলাপ ফুল হবে না কখনো। এই বলে পূর্ণ উদ্যমে তার সুপরিচিত জীবনযাত্রায় আবার পরিপূর্ণভাবে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল, কোনো ক্ষোভ-মনস্তাপ অনুভব করেছিল কিনা সন্দেহ। তবে মানুষকে জীবিকার ব্যবস্থা করতে হয়। তাই বাপের মৃত্যু ঘটলে কিছু তদবির করে প্রথমে স্থানীয় স্টিমারঘাটে টিকেট-কেরানির পদে নিযুক্ত হয়, পরে স্টিমারঘাট বন্ধ হলে কাছারি-আদালতেই ছোটখাটো একটি কলম-ঠেসার কাজ নিয়ে নেয়। বলতে গেলে শ্রদ্ধেয় জন্মদাতার পদাঙ্কানুসরণই করে; তাতে খেদ-দুঃখের কিছু সে দেখতে পায় না। স্টিমারঘাটে চাকুরি নিয়ে একটি বিয়েও করে নিয়েছিল। বউ-এর সন্ধানে নদী পাড়ি দিয়ে হাসনাতপুর নামক একটি গ্রামে চলে গিয়েছিল; হয়তো তার ক্ষুদ্র শহরের সব ঘরের খবর-বৃত্তান্ত তার জানা ছিল বলে বউ খুঁজতে অন্যত্র যাওয়া তার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছিল। তবে তার মনে পড়ে, বিয়ে করতে যাবার সময়ে একটি কথা বুঝতে পেরে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। সেটি এই যে, বয়ঃপ্রাপ্তির পর যে-সব বাড়ির অন্দরমহলে তার গতিবিধি বন্ধ হয়ে পড়েছিল সে-সব অস্পষ্ট-হয়ে-ওঠা অন্দরমহলের অভ্যন্তর তার স্ত্রীর দৃষ্টির সাহায্যে আবার পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবে। তখন বউ সুন্দরী হবে কিনা তা নয়, তার সঙ্গে মন মিলবে কিনা-এই চিন্তায় সে বড় অধীর হয়ে পড়ে। তার চিন্তা দূর হয় তখন যখন সে দেখতে পায় একজোড়া সপ্রতিভ কৌতুকোজ্জ্বল চোখ যে-চোখে নিমিষেই হাসি জেগে ওঠে; সলজ্জ অপ্রস্তুত হাসি নয়, মন-খোলা হাসি, যেন ঘোমটা তোলার রসটি পুরানো বন্ধুর মধ্যে লুকোচুরির খেলা মাত্র। তখনই বুঝেছিল বউ-এর সঙ্গে মন মিলবে। তারপর সব ভালো লেগেছিল। হয়তো প্রচলিত রেওয়াজ একেবারে উপেক্ষা করা উচিত হবে না মনে করে স্ত্রী যখন মান-অভিমানের খেলা করেছিল তখন তাও ভালো লেগেছিল। একবার মনের মিল হলে মান-অভিমানের পালা ফলবৃক্ষে ফলের ওপর ফুলের বাহারের মতো, সুন্দরী নারীর দেহে মণিমুক্তার বিচ্ছুরণের মতো, অপরূপ সূর্যাস্তের সময়ে রঙধনুর বর্ণশোভার মতো উপরিলভ্য; সে-সব ফাউ।
লোকটির কথা মন দিয়ে শুনছিলাম। একবার মনে হয়, তার কথা আমার স্মৃতির পর্দায় কোথায় যেন ঈষৎ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে ধারণাটির কোনো যথার্থ কারণ দেখতে না পেলে ভাবি, অন্যের জীবন সম্বন্ধে গভীরভাবে কৌতূহলী মানুষের প্রতি আমি কি বরাবর কেমন একটা আকর্ষণ বোধ করি না? তেমন মানুষ নিয়ে কত প্রশ্ন জাগে মনে : এই কৌতূহলের পশ্চাতে কী, মানুষের জীবনে কী তারা সন্ধান করে, এবং অবশেষে কীই-বা খুঁজে পায়? নিরন্তর মানুষের মনে নিরাশা দেখে তাদের কৌতূহল কি বালুচরে হারিয়ে-যাওয়া নদীর মতো সহসা অদৃশ্য হয়ে যায় না, মানুষের কুচিন্তা কুকাজের প্রভূত প্রমাণে তাদের মনে কি অবশেষে একটি গভীর বিতৃষ্ণা জাগে না? কখনো-কখনো সহজ এবং সম্ভবত সত্য উত্তরটিই গ্রহণ করি। অন্য মানুষের মনের কথা জানা কিছুতেই সম্ভব নয় তা সন্ধানকারী যতই কৌশলী-কারসাজিবাজ থোক না। কেন, এবং যারা জানে বলে দাবি করে তারা বড়াই করে কেবল। সেজন্যেই মানুষের মধ্যে সমাজের মধ্যে তারা সুস্থ মনে বসবাস করতে পারে, নিশ্চিন্ত মনে রাতে ঘুমাতে পারে, হাসতে পারে, বন্ধুত্ব করতে পারে অন্যের সঙ্গে।
লোকটিও বড়াই করে থাকবে-এ-বিশ্বাস সত্ত্বেও সে কী বলছে তা শুনবার জন্যে আবার সকর্ণ হয়েছি এমন সময়ে বুঝতে পারি সমগ্র স্টিমারময় কেমন নীরবতা নেবেছে। তখন সূর্যাস্ত শুরু হয়েছে। যারা স্টিমারযোগে নিয়মিতভাবে ভ্রমণ করে তারা জানে এ-সময়ে যাত্রীদের মধ্যে তাদের অজান্তেই নীরবতা নেবে আসে, যে-নীরবতার মধ্যে এবার স্টিমারের ঘূর্ণমান মস্ত পাখা দুটির, সে-পাখা দুটির নির্মম আঘাতে ক্ষতবিক্ষত পানির, এবং নিচে জীবন্ত ইঞ্জিনের আওয়াজ হঠাৎ সুস্পষ্টভাবে শোনা যায়। যাত্রীরা সহসা নীরব হয়ে গিয়ে সে-সব আওয়াজ শোনে যেন তা আগে শোনে নি। এ সময়ে যাত্রীরা স্টিমারের দেহের স্পন্দন এবং গতি সম্বন্ধেও যেন সর্বপ্রথম সজ্ঞান হয়, তারপর তাদের দৃষ্টি যায় দূরে তীরের দিকে দিগন্তের দিকে ম্লান নিষ্প্রভ আকাশের দিকে; উন্মুক্ত আকাশের তলে দিন-রাতের সন্ধিক্ষণে যে-বিচিত্র অসীমতা প্রকাশ পায় তারই স্পর্শে তারা বিমূঢ় হয়ে পড়ে। নীরবতা আরো ঘনীভূত হয়। এবার শুধু নিকটের পানির গর্জন নয়, দূরে যে-ঢেউ দীর্ঘশ্বাসের মতো অস্ফুট শব্দ করে ছড়িয়ে পড়ে তার ক্ষীণ শব্দও শুনতে পায়, আরো দূরের ঢেউ-যে-ঢেউ-এর শব্দ শোনা যায় না-সে ঢেউ সহসা দৃষ্টিগোচন হয়, হয়তো-বা ছায়াচ্ছন্ন আকাশে দৃষ্টিহীনভাবে উড়তে থাকা পথ হারা কোনো পাখিও নজরে পড়ে।
তবে শীঘ্ৰ বুঝতে পারি, শুধু সূর্যাস্তের জন্যে নয়, মাঝ-নদীতে স্টিমারটি হঠাৎ ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছ বলেও যেন যাত্রীরা নীরব হয়ে পড়েছে। এ-স্থানে নদীর গভীরতা বেশ কম হবে। স্টিমারটি কিছুক্ষণ গভীরতা মেপে মেপে অতি ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়, তারপর থেমেই পড়ে, যেন আর এগুলে সাহস হয় না। স্টিমারটি আবার যখন চলতে শুরু করে তখন বেশ সাবধানতার সঙ্গে চলে, কখনো এদিক-ওদিক মোড় নিয়ে, কখনো একটু পশ্চাতে হটে, কখনো-বা পুনরায় অল্প সময়ের জন্যে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বাইরে দ্রুতভাবে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসে, যে-অন্ধকারে তেরপলের ঝুলে-পড়া অংশটি সশব্দে আন্দোলিত করে আবার প্রবলবেগে হাওয়া ছুটতে শুরু করে।
একবার লোকটির দিকে দৃষ্টি দেই। ইতিমধ্যে বুঝে ফেলেছি যে বেশিক্ষণ নীরব হয়ে থাকা তার পক্ষে সহজ নয়; কী সে বলে কেনই-বা বলে-তা নিজেও সব সময়ে না বুঝলেও তাকে কথা বলতেই হয়, না বললে হয়তো কেমন নিঃসহায় এবং নিরস্ত্র বোধ করে। কিন্তু এখন সে-লোকের মুখে কথা নেই। মনে হয় গভীর মনোযোগ-সহকারে স্টিমারের সঙ্গে-সঙ্গে সে-ও নিরাপদ পথ খুঁজছে, অনেকটা রুদ্ধশ্বাসে। তার চোখের হাসিটি মিলিয়ে গিয়েছে, দৃষ্টি নদীর দিকে, হাসিশূন্য কথা শূন্য মুখে অপেক্ষার, কিছু আশঙ্কার ভাব।
 
Back
Top