Collected কমলালেবুর অক্ষরেখায় সরলরৈখিক ভ্রমণ - মোস্তাফিজুর রহমান টিটু

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,009
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
***কমলালেবুর অক্ষরেখায় সরলরৈখিক ভ্রমণ***

মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু






আমার বাবা গতকাল রাতে ইন্তেকাল করেছেন ।
এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করি-ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন ।
আমার মা আজ দুপুরে ইন্তেকাল করেছেন ।
এই পোস্টের নিচেও আমার একই মন্তব্য-ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন ।
খালা চলে গেলেন ।
আবারো আমার একই মন্তব্য ।

সকালে ফেসবুক খুলেই আমার ওয়ালে প্রথম তিনটা পোস্ট ছিলো এরকম । আমি আর নিতে পারলাম না । পারবোই বা কিভাবে আমি তো সেই মানুষ...

আব্বা গরু কোরবানির সময় তার চার পুত্রকেই আশেপাশে দেখতে চায় । ছাঁদে লুকিয়ে শুনতে পাচ্ছি সবাই আমাকে ডাকাডাকি করছে । কিন্তু গরু জবাই যে আমি দেখতে পারি না । অথচ একটু পরেই নিথর গরুটার চামড়া ছিলতে কিংবা মাংস কাটতে আমার একটুও হাত কাপবে না । আর গরুর মাংস খাওয়ার সময় জিভের আগায় থাকবে লোভ । এরকম হাজারো দ্বিচারিতা নিয়েই তো দিব্যি কেটে যাচ্ছে জীবন । কিন্তু জীবন কেটে গেলেও আমি জানি আমার সাহসের অভাব আছে ।

একদম ছেলেবেলায় একই খেলার মাঠে কয়েকশ ছেলে খেলার চেষ্টা করতো । আমরা তখন তিন নম্বর বল দিয়ে মাঠের এক কোনায় খেলি । হঠাৎ সেখানে বাগড়া দিতে আসলো আমাদের চাইতে বয়সে অনেক বড় এক গ্রুপ । হাতি আসলে পিঁপড়াকে পথ ছেড়েই দিতে হয় । আমরা সবাই যখন বিমর্ষভাবে মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছি তখন আমাদের মধ্যে সবচাইতে লিকলিকে হারু ঘাড় গোজ করে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলো । বড় একজন এসে ওকে ধাক্কা দিয়েও সরাতে পারলো না । এক কথায় দুই কথায় শুরু হয়ে গেলো মারামারি । অতটুকু শরীর নিয়ে হারু টিকতে পারলো না, চড়, ঘুষিতে ঠোঁট কেটে গেলো, কপাল ফুলে বড় মার্বেল এর আকার নিলো কিন্তু তারপরও চোখে মুখে বোধহীন সাহস নিয়ে হারু লড়াইটা চালিয়েই গেলো । এই অদম্য সাহসের কারণেই পরে হারু বখাটে হয়ে গেলো । আর আমার মতো অনেকেই শুধুমাত্র সাহসের অভাবেই সুশীল হয়ে গেলাম ।

সাহসের অভাবে কত কিছুই করা হলো না ।

মসজিদ কমিটির প্রধান করা হলো সবচাইতে বড় ঘুষখোরকে । সাহসের অভাবেই হাত কচলিয়ে তারই গুণগান গাইলাম ।

অনেকদিন পরে বইমেলায় গেলাম । এক সাহিত্য বোদ্ধা নাক উঁচিয়ে বললেন, এই মেলা হচ্ছে আসলে সুন্দরবন ধ্বংসের অন্যতম কারণ ?
কিভাবে ?
আমি আগ্রহীস্বরে জিজ্ঞেস করলাম ।

এই যে হাজার হাজার ফালতু বই বের হচ্ছে । এর কাগজের যোগান দিতে গিয়েই তো সুন্দরবন ধবংস হয়ে যাচ্ছে । লিখলে ক্লাসিক লেখা উচিৎ, না লিখলে নাই ।

জিহ্বার আগায় একটা জবাব চলে এসেছিলো, তখন সাহসের অভাবে বলতে পারি নাই । ফেসবুকে তো সবাই বীরপুরুষ, আমিই বা বাদ থাকি কেনো, তাই বলেই ফেলি ।

ভাই আপনার অবস্থা তো ঐরকম, “মহামানব জন্ম দেবার জন্যই সঙ্গম করা উচিৎ” । কিন্তু এই টেনশনেই না জন্ম হয় মহামানবের না পান সঙ্গমের আনন্দ ।

যাই হোক আবার ছেলেবেলায় ফিরি । এক সময় আমাদের কয়েকজন বেশ নামাজী হয়ে গেলাম । গুরুজনরা অবাক হয়ে দেখেন আসরের নামাজের পিছনের কাতারে কিছু ছোট পোলাপান দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে । এদের অবশ্য অন্য কোনো ওয়াক্তে দেখা যায় না । শুধু আসরের নামাজের সময়েই এরা লাইন ধরে আসে । নামাজ শেষের মিলাদেও থাকে এদের উপস্থিতি । সব ভালোভাবেই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন বিপত্তি ঘটলো । সেদিন নিয়মের ব্যতিক্রম হয়ে নামাজের আগেই মিলাদ হলো । মিলাদ শেষের প্যাকেটটা অসাধু ব্যবসায়ীর ভুড়ির মতো যথেষ্ট মোটাসোটা । আমরা ইয়া নবী সালামালাইকা শেষ করে অপেক্ষা করছি সেই প্যাকেটের । কিন্তু আমাদের কাছে আসার আগেই শেষ হয়ে গেলো সব প্যাকেট । “বড়লোকের আহার মিটলেই ছোটলোকেরা কিছু পায়” জগতের স্বতঃসিদ্ধ এই নিয়মের কারণে আমাদের ভাগ্যে আর কিছু জোটে না । মিলাদ শেষে নামাজ শুরু হয় । সবাই যার যার প্যাকেট সেজদা বরাবর রেখে নামাজ শুরু করেন । প্রথম রাকাতে সবাই সেজদায় যেতেই আনু উঠে দাঁড়ায় দেখাদেখি আমরা আরো কয়েকজন । নির্দ্বিধায় সেজদার পাশে রাখা প্যাকেটগুলো নিয়ে দিলাম ভোদৌড় । নামাজ পড়তে থাকা মুসল্লিরা চোখের সামনেই দেখলো এই কান্ড ।

শবে বরাতের রাতে বাইরে থাকার পারিবারিক অনুমতি ছিলো । না থাক এইসব গল্প বেশী বলা ঠিক না । আমার সন্মান না থাকতে পারে, আমার বন্ধুদের অনেকেই এখন যথেষ্ট সন্মানীয় ব্যক্তি, আদর্শ পিতা । আমার এক বন্ধু আমার সামনেই সামান্য একটা শোপিস ভাঙ্গার জন্য ছেলেকে কষে চড় দিলো ।

হায় এই পিতা গাড়ির কাঁচ, জানালার কাঁচ এমনকি গোটা দশেক তরুণী হৃদয় খানখান করে ভেঙ্গে ফেলে তারপর বাবা হয়েছে ।

কষে পরিপূর্ণ মুচি যেমন বড় হয়ে রসালো কাঠাল হয় বেয়াদব বালক ঠিক তেমনি বড় হয়ে আদর্শ পিতা হয় ।

দুইমাস অনলাইন থেকে দূরে ছিলাম । কারণটা প্রথমেই বলেছি । এখনো মহামারীকাল শেষ হয় নাই বরং আমাদের এখানে আবার নতুন করে প্রকোপ শুরু হয়েছে । কিন্তু তারপরও মানসিকভাবে এখন একটু শক্ত আছি । কারণ বাংলাদেশের অবস্থা এখন আগের চাইতে অনেক ভালো । যেখানেই থাকি না কেনো জগতের ঐ জায়গাটা ভালো থাকলেই আমিও ভালো থাকি ।

হযবরল এই লেখার একটা কঠিন শিরোনাম ইচ্ছে করেই দেয়া ।
 
Back
Top