ঝগড়া নিরসন পরামর্শ কেন্দ্র

dukhopakhi

Well-Known Member
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
128
Messages
1,234
Reaction score
213
Points
1,213
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male

ঝগড়া নিরসন পরামর্শ কেন্দ্র

(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)


খালার বাসায় ঢুকেই বুঝলাম বিশাল বড় ভুল হয়ে গেছে। একেবারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানে পড়ে গিয়েছি, যেখানে খালা স্বৈরাচারী আমেরিকা, খালু ইরাক এবং খালাতো বোন শান্তি নীরব জাতিসংঘের ভূমিকা পালন করছে।

আসলে আমার নিজেরই দোষ। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গেটে এসে দেখি দুই পায়ে দুই ধরণের জুতা পড়ে বেড়িয়েছি। দেখে মেজাজ গরম হলেও কিছু করার নেই, আবার সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পাঁচ তলায় উঠে জুতা চেঞ্জ করে আসতে হলো। তখনই বুঝা উচিত ছিলো যাত্রা অশুভ। কিন্তু আমি আধুনিক যুগের ছেলে, কুসংস্কারে বিশ্বাস করা মানায় না। এখন বুঝতেছি বেশী আধুনিক সাজা ভুল হয়ে গেছে। তখন যদি একটু সাবধান হতাম তাহলে আর এই রনাঙ্গনে প্রবেশ করা লাগতো না।

খালার টেপ রেকর্ডার এক নাগারে বেজেই চলেছে। খালু একটা মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে আছেন। খালার বকর বকর শুনে যা বুঝলাম তা হলো খালুর ডায়াবেটিস পাঁচ এর উপরে হওয়া স্বত্বেও তিনি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাসায় এসেছেন। খালুর অবশ্য দোষ নেই, অফিসে নাকি কি একটা ইনক্রিমেন্ত হয়েছে তাই শুভ সংবাদ খালি হাতে দিলে কেমন দেখায় ভেবে মিষ্টি এনেছেন।

খালা কথা শেষ করলেন এভাবে- ‘এতো এতো ঝামেলা আর ভালো লাগে না, ইচ্ছে করে সব ছেঁড়েছুঁড়ে বনে জঙ্গলে চলে যাই।’

- ‘জ্বি খালা ঠিক বলেছেন, আপনার বনে চলে যাওয়াই ভালো। তাছাড়া বনে কারও ডায়াবেটিস হয়েছে এমন কোন তথ্য নেই!’ মুখ ফসকে কথা গুলো বলেই থমকে দাঁড়ালাম। খালার অগ্নি দৃষ্টি খালুর উপর থেকে আমার উপর নিক্ষেপিত হলো। খালার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো কিছু দিন আগে ‘অগ্নি’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে মাহিয়া মাহি’র জায়গায় খালাকে নিলে খুব একটা খারাপ হতো না।

যে কারণেই হোক, আগ্নেয়গিরিতে হঠাৎ ভাটা পড়লো। খালা এগিয়ে এসে খালুর হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হন হন করে ভেতরে চলে গেলেন।

-- ‘বড় বাঁচা বাঁচালে মুবিন, থ্যাঙ্কস এনিওয়ে।’ খালু এতক্ষনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন।

- তা খালু, বাসায় এতো তাড়াতাড়ি না এলেই পারেন, জানেনই তো সন্ধ্যার সময় খালার মাথা একটু গরম থাকে।

-- বাসায় না এসে কোথায় যাবো? আমার কি আর যাওয়ার জায়গা আছে?

- এক কাজ করা যায়, বাইরে একটা রুম ভাড়া নিই, ওখানে আমরা ছোটরা দিনে আড্ডা দেবো। সন্ধ্যার সময়ে আপনি এসে বিশ্রাম করবেন।

-- আইডিয়া খারাপ না।

- আপনি চাইলে আমরা বেকাররা মিলে একটা ব্যবসাও চালু করতে পারি। আপনি হবেন আমাদের বস!

-- বল কি! কি ব্যবসা?

- এই ধরেন, ঝগড়া নিয়ে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়।

-- ঝগড়া নিয়ে আবার কিসের ব্যবসা, মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।

- ঢুকবে খালু, একটু ভেঙ্গে বলি। তার আগে বলেন তো খালার সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে কতো দিন?

-- পঁচিশ বছর।

- পঁচিশ বছরে আপনারা ঝগড়া ছাড়া থেকেছেন কতো বছর?

-- পঁচিশ দিনও না।

- গ্রেট! এটাই তো চেয়েছিলাম, তা ঝগড়া কিভাবে হতো এগুলো কি মনে আছে?

-- হ্যাঁ, কিছু কিছু তো খুব কমন, বাজার করে এলে মাছের লেজ পচা কেন এটা নিয়ে এক ঘণ্টা, অফিস থেকে দেরী করে এলে দেরী হলো কেন এটা নিয়ে এক ঘণ্টা। এভাবেই শুরু হতো।

- দ্যাটস মাই পয়েন্ট। খালু মন দিয়ে শোনেন, আমরা ব্যবসা করবো। আমাদের ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের নাম হবে- ‘ঝগড়া নিরসন পরামর্শ কেন্দ্র’। এখানে নিরীহ নির্যাতিত স্বামীদের স্বল্প মূল্যে ঝগড়ার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় শেখানো হয়- এরকম একটা সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলে দলে দলে পাড়ার অবহেলিত স্বামীরা আসবে। তখন আপনি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মতো ওদের পরামর্শ দেবেন কোন সময়ে চুপ থাকলে ঝগড়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কখন কি ধরণের অজুহাত দিলে ঝগড়া হবে না...এরকম পরামর্শ দেওয়ার বিনিময়ে কিছু হাদিয়া দিতে হবে। আমি হবো আপনার ম্যানেজার।

এতক্ষণে খালু সাহেবের চোখ চকচক করে উঠলো। বুঝলাম অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। এবার আর কে ঠ্যাকায়! এমন সময় শান্তি বললো- ‘ভাইয়া আমাকে কি তোমাদের ব্যবসার পার্টনার হিসেবে রাখা যাবে? এই ধরো কোন মেয়ে ক্লায়েন্ট এলে আমি ডিল করবো।’

শান্তির কথা শুনে এমনভাবে হাত নাড়লাম যার অর্থ- ‘যা, ভাগ, ছোট মানুষ বড়দের কথার মাঝে নাক গলাতে নেই!’

এক শুভ দিনে খালু আমি আর কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা সাইনবোর্ড নিয়ে মোড়ের একটা ঘর দখল করে বসে পড়লাম। প্রথম দিন আগ্রহী লোকজন উঁকিঝুঁকি দিলেও আসল ক্লায়েন্ট এলো দ্বিতীয় দিন। পাঁচ জন ক্লায়েন্ট লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, আমি সবার নাম লিস্ট করছি, খালু গম্ভীর ভঙ্গিতে মুখের সামনে একটা ফাইল নাড়াচাড়া করছেন। এমন সময় চিৎকার করতে করতে এক মহিলার আগমন। সন্ধ্যার আলো আধারিতে তাকিয়ে দেখি খালা ঝা*ড়ু হাতে আমাদের অফিসের দিকেই আসছেন। এসেই আমার এক বন্ধুকে ধরে ঝা*ড়ু দিয়ে পেটালেন। মুখে খই মুড়ি সব ফুটছে। ‘কই, কোথায় গেলো, তোমাদের পরামর্শদাতা কোথায় গেলো, আমাকে ঝগড়াটে মহিলা সাজিয়ে পরামর্শ-দাতা সেজে বসেছে, দাঁড়াও তোমার পরামর্শ আজ বের করছি, আমাকে ঝগড়াটে বলে এতো বড় সাহস...’। খালার পেছন থেকে শান্তি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। খালার কাছে গোপন তথ্য কে ফাঁস করেছে তা বুঝতে আর বাকী রইলো না। বুঝলেও করার কিছু নেই। প্রতিশোধ পরে নেয়া যাবে আগে জান বাঁচানো ফরজ। খালার হাতে পড়ার আগেই টেবিল টপকে চম্পট দিলাম। খালুর জন্য বুক ভরা সমবেদনা ছাড়া ওই মুহূর্তে দেয়ার আর কিছু ছিলো না।

- আহারে খালু... লোকটা বড্ড ভালো ছিলো!
 
Back
Top