হাগা সমাচার

Joined
Jun 14, 2016
Threads
1,202
Messages
91,035
Reaction score
1,569
Points
2,663
Age
45
Gender
Male
গরীবেরা হা*গতে যায়, মধ্যবিত্তরা টয়লেটে যায় আর বড়লোকেরা ওয়াশরুমে যায়। ইদানিং একটু শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা জাতে উঠার জন্য ওয়াশরুমে যায়। আর বড়লোকেরা এটা সহ্য করতে না পেরে এখন রেস্ট রুমে যায়। এই পায়খানা/টয়লেট/ওয়াশরুম/রেস্ট রুম নিয়ে আমার বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে।

আমার লাইফের টাইমলাইন যদি তিনটা ভাগ করি তবে প্রথমভাগ কেটেছে গ্রামে, দ্বিতীয় ভাগ ঢাকায়, তৃতীয় ভাগ দেশের বাইরে। এই তিনভাগে বিভক্ত জীবনে অনেক কিছু দেখার বুঝার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই আলোকে আজ আমি লিখবো প্রবন্ধ,
টয়লেট- এক প্রেম কথা।

একদম শুরুতে গেলে আমি দেখি গ্রামে আমাদের বাড়ির পশ্চিমদিকে বাঁশঝাড়ের পাশে টিনের বেড়া দেয়া ঢালুর উপরে মাচার মতন করা একটা দুর্বল টয়লেট। যার সামনে চটের বস্তার পর্দা দেয়া। ঢালুতে মাচার উপরে বলতে মাটি থেকে একটা বাঁশের সাঁকো গেছে সেই মাচা পর্যন্ত। মাচাটা আপাত শূন্যে ঝুলে আছে মনে হলেও এটি চারটি বাঁশের খুঁটিতে ভর দিয়ে থাকে। যেটাকে বলে ঝুলন্ত টয়লেট।

যেহেতু টয়লেটে কোন দরজা নেই, সেহেতু কেউ আশেপাশে আসলে বা আসছে মনে হলে টিনের বেড়ায় একটু শব্দ করতে হয় নইলে খুক খুক করে একটু কাশতে হয়।

মাচার দুই কাঠের মাঝে একটা বড় ফাঁকা। সেখান দিয়েই মূলত প্রাকৃতিক কর্ম সাঁই করে নেমে গিয়ে নিচে পড়তো। আপনি টাইম কাউন্ট করলে দেখা যাবে নির্গত হওয়া এবং নিচ থেকে শব্দ রিটার্ন আসার মধ্যে পাঁচ সেকেন্ডের ব্যবধান আছে। এই পদ্ধতিতে সাধারণত শব্দ তরঙ্গ দিয়ে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয়। আমি টয়লেটের গভীরতা মাপছি।

আচ্ছা এই পাঁচ সেকেন্ডের ব্যবধান থেকে আপনারা কি অনুমান করতে পারছেন টয়লেটটির গভীরতা কত ছিলো? আচ্ছা সহজ করে দিচ্ছি, নিচে মাটি থেকে প্রায় বিশ ত্রিশ ফুট উঁচুতে ছিলো টয়লেট। আসলে নিচে মাটি ছিলো না, ছিলো হাজার বছরের এক হলদেটে সমুদ্র।

ভুল বললাম, হাজার বছর না। প্রতিবছর বন্যায় হলদেটে সমুদ্রটা ধুয়ে মুছে যায়। বন্যার সময়টা সুন্দর। দুই কাঠের ঐ ফাঁকটা দিয়ে নিচে তাকালে দেখা যায় পানির স্রোত। আগে কর্মটি নিচে পড়লে যে শব্দ হতো, তেমন শব্দ হয় না। পানিতে টুপ করে একটা শব্দ হয়, তারপর স্রোতে ভেসে যায়। নিচে মাছেরা অপেক্ষা করে কখন আসবে দ্বিতীয় লট। লট আসা মাত্রই মাছেদের কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। আপনি উপরে বসে দিব্যি এই খেলাটি অবলোকন করতে পারবেন।

বন্যার সিজনে প্রতিদিন পানি বাড়ে। পানি কাছাকাছি উঠে আসলে স্রোত বাড়ে। লট পড়া মাত্রই স্রোতে ভেসে যায়, মাছেদের খেলা দেখা যায় না। পানি কাছে থাকায় উলটা ভয় লাগে মাছেরা কখন আবার লট আসতে দেরী হলে ফ্যাক্টরিতে হামলা করে বসে।

পরদিন সকাল বেলায় দেখা যায় টয়লেট ডুবে গেছে পানিতে। সেটা এক দুঃসময়। বাড়ির উঠোনের আশেপাশে অস্থায়ী টয়লেট করা হয়। সেটাও ডুবে গেলে ঘরের পেছনদিকে গিয়ে নীরবে কর্ম সারতে হয়। কেউ কেউ গলা পানিতে নেমেও সেরে ফেলে। তখন কর্মটি নিচে যায় না, টুপ করে ভেসে উঠে।

আমি তখন ছোট। ঐটা ছিলো বড়দের টয়লেট। আমার সেখানে যাবার অনুমতি ছিলো না। দুই কাঠের ফাঁক দিয়ে পড়ে হলদেটে সমুদ্রে ডুবে যাবার সমূহ সম্ভাবনা ছিলো। আমাকে বাড়ির আশেপাশে কোথাও বসিয়ে দেয়া হতো খোলা আকাশের নীচে। কর্ম শেষ হলে দাদা কোদাল দিয়ে চেঁছে কর্মটুক নিয়ে বাড়ির পাশে ঝোপে ফেলে দিতেন।

ঝুলন্ত টয়লেটের আমার তেমন অভিজ্ঞতা নাই। যেটুকু অভিজ্ঞতা গ্রামের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে। আমাদের বাড়িতে আমি ছোট থাকতেই পাকা টয়লেট তৈরী করা হলো। আমাকে খোলা দুনিয়া থেকে জোর করে বদ্ধ ঘরে পাঠানো শুরু হলো।

গ্রামের মানুষের একটু শুচিবাই ছিলো। এরা ঘরের আশেপাশে টয়লেট রাখতো না। শহরে যে ঘরের ভিতরে টয়লেট এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিস্তর হাসাহাসি চলতো। টয়লেট থাকতো বাড়ির শেষ মাথায় ঝোপঝাড়ের দিকে, যেদিকটায় মানুষের আনাগোনা কম। আমাদের পাকা টয়লেটটিও তেমনি বাড়ির পেছনদিকে করা হয়েছিলো।

আমরা রাত হবার আগেই চেষ্টা করতাম কর্ম সাধন করিয়া ফেলিতে। গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলো না। যেদিন রাত্রে দুদ্ধজাত খাবার পেটে পড়তো আর অমানুষিক চাপ অনুভব হইতো সেদিন যেনো মনে হইতো আর রক্ষে নেই। হ্যারিকেন বা কুপি নিয়ে টয়লেটে যাওয়া ছিলো ভয়ানক এক ব্যাপার।

টয়লেটে সাদা চুনকাম করা। দেয়ালে মাকড়সার বাসা করা। তার উপরে থাকতো টিকটিকির উপদ্রব। কর্ম সাধন করিবার মাঝপথে শুনিতাম ঠিকঠিকঠিক। বদমায়েশ এর মধ্যে ঠিক বেঠিক পাইলো কোথায়। তার উপরে ছিলো সাপের ভয়। মনে হইতো এই বুঝি কমোডের পাইপের ভেতর থেকে একটা সাপ এসে ছোবল মেরে দিবে আমার বংশের প্রদীপে।

টয়লেটে যাবার আগেই পড়তো একটা গাবগাছ। গ্রামে কথিত ছিলো গাবগাছে ভূত থাকে। শুনশান নীরব সেই গাব গাছ পার হবার সময় তওবা পড়তে পড়তে যাইতাম। একটা পাতা ঝড়ার আওয়াজ শুনে কলিজা কেঁপে উঠতো। ভয়ে অমানুষিক চাপ উধাও হয়ে যেতো। দেখা গেলো আধাঘন্টা বসে আছি, চাপ আর আসেনা। পরে একপেট কষ্ট নিয়ে উঠে চলে আসলাম। আধাঘন্টা পর সেই গায়েবী চাপ এসে ঠিকই হাজির।

শহরে আসার পরে ভূতের ভয় ছিলো না। তবে তখনও সাপের ভয় ছিলো মনে। বংশ প্রদীপটি আগলে রাখতাম। পরে বুঝতে পারলাম সাপের ভয় নেই আর। তবে বিপত্তি ঘটতো রাত্রে। টয়লেটের পেছনদিকে ভেন্টিলেশনের জানালা ছিলো। মনে হতো কোন একটা কালো পশমী হাত এসে এক্ষুণি ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিবে। কর্ম শেষে দৌড়ে বের হলে মনে হইতো যেন বহু বছর নির্বাসনে থাকিবার পরে আমি সভ্যতায় এসে পৌঁছেছি।

বড় লোকের এক আজিব টয়লেট ছিলো। যেটাকে হাই কমোড বলে। বিশ্বাস করবেন না প্রথমবার হাইকমোড ওয়ালা টয়লেটে যে আমার কি এক অবস্থা হয়েছিলো। ঢাকার অভিজাত এলাকায় এক বড়লোক আত্মীয়র বাড়ি বেড়াতে গেছি। বয়স তখন নয় কি দশ। সেখানে গিয়ে টয়লেটে ঢুকে আমি তো অবাক। টয়লেট এতো সুন্দর হয় আমার ধারণা ছিলো না এর আগে।

আমাদের ঢাকা শহরে মধ্যবিত্তের ঘরে গোসলখানা আর টয়লেট একসাথে। গোসলখানার শেষ মাথায় একটু উঁচুতে কমোড। পাশে একটা কল। নতুন বাড়িতে স্টিলের কল, একটু বয়স্ক বাড়িতে স্টিলেরটা নষ্ট হলে প্লাস্টিকেরটা লাগায়। সেটা বছরের পর বছর বদল হয়ে প্লাস্টিকই লাগানো হয়। তার নিচে থাকে সরু নল ওয়ালা বদনা। আর একদম পেছনের দেয়ালে আরামে হেলান দিয়ে থাকে টয়লেট পরিষ্কার করার একটা ব্রাশ।

বড়লোকের টয়লেটে প্রথমবার গিয়ে দেখি মিষ্টি মিষ্টি ঘ্রাণ। পানি নিতে যেয়ে দেখি কোন বদনা নাই। বড়লোকেরা কি তবে শুটকি ধোয় না?
পড়লাম মহাচিন্তায়। টিস্যু আছে যদিও। কি এক মেহেরবানি ঠিক এমনি সময়ে আমার চোখে পড়লো একটা সরু নলের মতো পাইপ। তার মাথায় একটা কলের মত বসানো। চাপ দিতেই দেখি পানি বের হয়। খুশিতে আমি গদগদ হয়ে গেলাম।

এবার পড়লাম আরেক মহা মুশকিলে। এই হাই কমোডে আসলে কেমনে কি করে? তার উপরে আবার দুইটা ঢাকনা। একটা উঠাইলে আরেকটা ফ্রেমের মত। আমি চিন্তায় পড়ে গেলান এই ফ্রেমের উপরে বসে নাকি ফ্রেম উঠায় বসে নাকি এখানে বসে না?
কূল কিনারা না পেয়ে আমি উঠে দেশী স্টাইলে উঠে গেলাম কমোডের উপরে। ভেবে দেখুন তো, একটা লোক হাই কমোডে দেশী স্টাইলে উঠে বসে আছে।

কোন এক পন্ডিত লিখিয়াছিলেন,“ওহে মহাজ্ঞানী, কর্ম করিয়া ঢালিও পানি।” কর্ম শেষে আমি পানি ঢালিবার উপায় পাই না। এইযে হলদেটে আহাম্মকটি ভাসিতেছে, কেহ যদি আসিয়া তাহাকে দেখিয়া ফেলে এবং হাসিতে হাসিতে সবাইকে বলিয়া দেয় আমার ইজ্জত বলিতে কি কিছু রহিবে?

মাথায় আসলো নিশ্চয়ই কোন ব্যবস্থা আছে। ফ্ল্যাশের বাটন দেখি, কিন্তু চাপতে ভয় লাগে। কিছু একটা হইয়া যায় যদি! বড়লোক আত্মীয় কি আমার ক্ষমা করিবে?
আমি ভয়ে ভয়ে ফ্ল্যাশের হ্যান্ডের চাপি। আস্তে চাপ দেয়ায় ফোঁসফোঁস করে হাওয়া বের হয়। আমি ভয় পাইয়া যাই। পানির কানেকশনের লাইনটা ঘুরাই, কাজ হয় না। এরপরে চোখ বন্ধ করে ফ্ল্যাশে একটু জোড়ে চাপ দিতেই ভুরভুর করে পানি এসে সব নিয়ে গেলো। আমার মুখে সে কী অমলিন হাসি!

এরপরে কত প্রযুক্তির টয়লেট দেখা হলো জীবনে। প্লেনের টয়লেটগুলা যেমন একটা আজব জিনিস। কাজ শেষে সুইচ চাপলে কয়েকসেকেন্ড পরে ভুস করে বাতাস এসে সব নিয়ে যায়। কোন পানির কারবার নাই। এখন আবার নতুন ফ্ল্যাশ আসছে উন্নত দেশগুলায়। সুইচ চাপতে হয় না। সেন্সর করা, কর্ম শেষে সেন্সরে টাচ করলে অটোমেটিক ফ্ল্যাশ হয়ে যায়।

আবার এদেশে (ফ্রান্সে) রাস্তায় বুথের মত পাললিক টয়লেটগুলায় সুইচ চাপলে দরজা খুলে। অটোমেটিক আটকায়। কাজ করবেন। সুচ চেপে দরজা খুলে বেড়িয়ে যাবেন। এরপরে দরজা লাগবে। সমস্ত টয়লেটটা পানি ছেড়ে পরিষ্কার হবে অটোমেটিক। কত মানুষ দেখলাম অপেক্ষা না করে একজন বের হবার সাথে সাথেই ঢুকে যায়। টয়লেট পরিষ্কার হবার টাইম দেয় না। বেকুবেরা গোসল করে বের হয়।

প্রযুক্তি এখন আরও এক কাঠি সরেস। গুগলে Toilet near me লিখে সার্চ করলে আশেপাশের লোকেশনে পাবলিক টয়লেট শো করে। আমার শো করে টয়লেটে যেতে কতটুক পথ, কত মিনিট সময় লাগবে। যুগে যুগে পালটে যাচ্ছে মানুষের ধ্যান ধারণা। উন্নতির ছোঁয়া লাগছে শহর বন্দর গ্রাম সবখানে।

অথচ এখনো আমার একটা শখ আছে। বর্ষাকালে ঝুলন্ত টয়লেটে যাবার শখ। মাছেদের সাথে খেলার শখ। দুর্ভাগ্য আমাদের গ্রামে এখন আর কোন ঝুলন্ত টয়লেট নাই। আশা করি কোন এক বর্ষায় এমন একটা সুযোগ আসবে, স্বপ্ন পূরণ হবে। নইলে আমি হেলানো কোন গাছের ডালে উঠে যাবো। তারপর আমি মাছেদের সাথে খেলবো।
 
Back
Top