একজন "হেরো ম্যারাথন"

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,009
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
একজন "হেরো ম্যারাথন"

(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)





FB-IMG-1754196547058.jpg

লোকটার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে চেচিঁয়ে উঠলেন নাৎসি কমান্ডার - "বল, তুই কে ?" লোকটা চুপচাপ মাথা নীচু করে তার পকেট থেকে পাসপোর্ট আর কিছু কাগজপত্র বের করে দিলো। সে সব দেখে নাৎসি কমান্ডার তো অবাক - এই কঙ্কালসার লোকটা অলিম্পিয়ান ? ১৯৩৬-এর বার্লিন অলিম্পিকে ম্যারাথন দৌড়েছিলো এই লোকটা ! আর ওই ছবিটা ? হিটলার স্বয়ং এর সঙ্গে করমর্দন করেছেন ! সে সৌভাগ্যতো তারও কখনো হয়নি !

"ছেড়ে দাও এনাকে" - কমান্ডার হেঁকে বললেন !
১৯৪৩ সাল, গ্রীস তখন নাৎসিদের কব্জায় - এক নাৎসি অফিসারের উপর হামলা চালিয়েছিল একদল গ্রামের লোক কিন্তু কারা সে হামলায় ছিল তা কেউ স্বীকার করেনি। দোষী কে খুঁজে না পেয়ে গ্রামের প্রত্যেকটি পুরুষকে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করেছিল নাৎসিরা । সে গণহত্যা থেকে বেঁচে গেছিলেন শুধু এই একজন।

কিন্তু তারপর অদ্ভুত এক অপরাধবোধ ক্রমশ গ্রাস করলো এই মানুষটাকে। দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়ালো তার বেঁচে থাকা। মাঝে মাঝেই লোকটির মনে হতো কেন তিনি অলিম্পিকের কাগজ দেখাতে গেছিলেন - তিনি তো ম্যারাথন জেতেননি। সে রেসে গ্রীসের নাম ডুবিয়ে তিনি একাদশ স্থান পেয়েছিলেন। গ্রীসের কাগজগুলো তাকে নতুন তকমা দিয়েছিলো - "বিশ্ব হেরো" ! তার মতো দেশের নাম ডোবানো অপদার্থর মরে যাওয়াই ভালো ছিল।

প্রায় দু বছর গুমরে থাকার পরে এই মানুষটি ঠিক করলেন ভাগ্য জোরে যখন বেঁচেই গেছেন তখন দেশের জন্য একটা কিছু তাকে করতেই হবে। বিশ্বযুদ্ধ শেষে গ্রীসে তখন নিদারুন দুর্ভিক্ষ চলছে। না খেতে পেয়ে চোখের সামনে মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, হাজার হাজার শিশু।
চোয়াল শক্ত করে উঠে দাঁড়ালেন এই মানুষটি। মরার আগে একবার তাকে প্রমান করতেই হবে তিনি সত্যিকারের ম্যারাথনার - ফেইডিপ্পিডেসের উত্তরসূরি তিনি আর ফেইডিপ্পিডেস-ও তো বাঁচেননি। ম্যারাথনের যুদ্ধে গ্রীসের জয়লাভের খবর পৌঁছে দিয়ে তিনিও তো মৃত্যুবরণ করেছিলেন - সে মৃত্যু ছিল বীরের মৃত্যু।
ভালো করে খেতে না পাওয়া, ভীষণ গরিব এই মানুষটা চিঠি লিখলেন ১৯৩৬-এর ম্যারাথনে তার এক প্রতিযোগী ও বন্ধু, মার্কিন ম্যারাথনার জন কেলিকে। তিনি জানালেন ১৯৪৬ এর আমেরিকার বস্টন ম্যারাথনে তিনি দৌড়োতে চান। শিউয়ে উঠলেন তার স্ত্রী ! এই অনাহারক্লিষ্ট চেহারায় ম্যারাথনে দৌড়ানো আর আত্মহত্যা যে একই! কোনো কথা শুনলেননা এই মানুষটি। ঘটি-বাটি বেচে তার ১৪ বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকার জাহাজ ধরলেন এই বিশ্ব-হেরো ম্যারাথনার !

ম্যারাথনের দেশ থেকে একজন ম্যারাথনার বস্টন ম্যারাথনে দৌড়োবেন, এ খবরে আমেরিকাতে বেশ হৈচৈ পড়ে গেলো অথচ দৌড়োনোর জন্য প্রয়োজনীয় জুতোও তার ছিলোনা - সেটাও কিনে দিলেন বন্ধু জন কেলি ! কিন্তু এবার বেঁকে বসলেন ডাক্তাররা। তারা ওনাকে আনফিট ঘোষণা করে দিলেন। বন্ধু জন কেলির সাহায্যে, ডাক্তারদের হাতে পায়ে ধরে বস্টন ম্যারাথনে দৌড়োনোর অনুমতি জোগাড় করলেন তিনি। দৌড় শুরুর আগে তার ছেলের পকেটে একটি কাগজ গুঁজে দিলেন । সে কাগজে লেখা ছিল গ্রীক বীরদের শপথ মন্ত্র - "হয় আমি আজ জিতবো, নয়তো বীরের মতো মৃত্যু বরণ করব"!

বস্টন ম্যারাথনে শুরুটা ভালোই করেছিলেন তিনি কিন্তু শেষ এক মাইল বাকি থাকতে দেখা গেলো তার বন্ধু জন কেলি তাকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছেন। আর বোধ হয় আশা নেই ! সেই সময় দর্শকদের মধ্যে থাকা এক গ্রীক তার উদ্দেশে চেঁচিয়ে উঠলেন "রান, রান ফর গ্রীস, ফর আওয়ার চিলড্রেন"। জন কেলি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন সে চিৎকার শোনার পর তার মনে হলো এক পক্ষীরাজ ঘোড়া যেন ডানা মেললো - তাকে পিছনে ফেলে যে লোকটা ঝড়ের গতিতে দৌড়ে গিয়ে ফিনিশিং লাইন ছুঁলো সে যেন মানুষ নয় - ম্যারাথনের জনক, গ্রীক বীর, স্বয়ং ফেইডিপ্পিডেস !
এরকম অলৈকিক ম্যারাথন জয়ের ঘটনা আমেরিকার কাগজগুলোর প্রথম পাতায় স্থান পেলো - তাকে নিয়ে হৈহৈ পড়ে গেলো। তার একটি সাক্ষাৎকারের জন্য তখন মোটা টাকা দিতে রাজি কাগজগুলো। কিন্তু কী আশ্চর্য ! প্রেস কনফারেন্সে এই হতদরিদ্র লোকটি হাত জোড় করে বললেন "আমার কিছুই চাইনা, আপনারা গ্রীসকে বাঁচান !"

মার্কিন কংগ্রেসের কাছেও গ্রীসকে বাঁচানোর আবেদন করলেন মানুষটি এবং অভূতপূর্ব সাড়া পেলেন। তিনটি জাহাজভর্তি খাদ্য, ওষুধপত্র আর তিন লক্ষ মার্কিন ডলার গ্রীসে পাঠিয়ে, দেশে ফেরার বিমানে চড়লেন মানুষটি।
এথেন্স এয়ারপোর্টে পৌঁছনোর পর তার পা মাটি ছুঁলো না। প্রায় এক লক্ষ মানুষ তার জন্য এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলেন। আর তাকে একবার দেখবার জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন আরো ১০ লক্ষ মানুষ - তাদের কাঁধে চড়েই বাড়ি ফিরলেন এই অনাহারক্লিষ্ট গরীব ম্যারাথনার। তার সম্মানে পার্থেননে আবার আলো জ্বালানো হলো - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম বার !
দুর্ভিক্ষ পীড়িত গ্রীস আবার ঘুরে দাঁড়ালো এক "বিশ্ব-হেরো" ম্যারাথনারের হাত ধরে !
৭৭ নম্বর জার্সি পড়ে বস্টন ম্যারাথনে দৌড়েছিলেন, ৭৭ বছর বয়েসেই মারা যান এই ম্যারাথনার ! বস্টন ম্যারাথনের প্রথম মাইল চিহ্নিত করা হয় তার একটি মূর্তি বসিয়ে। সেই মূর্তিটির নাম - "স্পিরিট অফ ম্যারাথন" ! ফেইডিপ্পিডেসের মতোই এই মানুষটি ম্যারাথনের ইতিহাসে অমর হয়ে গেছেন এবং কখনো অলিম্পিক না জিতেই!

এই "বিশ্ব-হেরো" ম্যারাথনারের নাম - স্টালিওস কেরিয়াকেডিস্ (Stylianos Kyriakides) !
 
Back
Top