Collected দেবী - হুমায়ূন আহমেদ

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,011
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
দেবী

মুল লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ






পর্ব - ১
মাঝরাতের দিকে রানুর ঘুম ভেঙে গেল।
তার মনে হল ছাদে কে যেন হাঁটছে। সাধারণ মানুষের হাঁটা নয়, পা টেনে-টেনে হাঁটা। সে ভয়ার্ত গলায় ডাকল, ‘এই, এই।’ আনিসের ঘুম ভাঙল না। বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। অল্প-অল্প বাতাস। বাতাসে জামগাছের পাতায় অদ্ভুত এক রকমের শব্দ উঠছে। রানু আবার ডাকল, ‘এই, একটু ওঠ না। এই।’
‘কী হয়েছে?’
‘কে যেন ছাদে হাঁটছে।’
‘কী যে বল! কে আবার ছাদে হাঁটবে? ঘুমাও তো।’
‘প্লীজ, একটু উঠে বস। আমার বড় ভয় লাগছে।’
আনিস উঠে বসল। প্রবল বর্ষণ শুরু হল এই সময়। ঝমঝম করে বৃষ্টি। জানালার পর্দা বাতাসে পতপত করে উড়তে লাগল। রানু হঠাৎ দেখল, জানালার শিক ধরে খালিগায়ে একটি রোগামতো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মানুষটির দু’টি হাতই অসম্ভব লম্বা। রানু ফিসফিস করে বলল, ‘ওখানে কে?’
‘কোথায় কে?’
‘ঐ যে জানালায়।’
‘আহ্, কী যে ঝামেলা কর! নারকেল গাছের ছায়া পড়েছে।’
‘একটু বাতিটা জ্বালাও না।’
‘রানু, তুমি ঘুমোও তো।’
আনিস শোবার উপক্রম করতেই ছাদে বেশ কয়েক বার থপথপ শব্দ হল। যেন কেউ-একজন ছাদে লাফাচ্ছে।
রানু চমকে উঠে বলল, ‘কিসের শব্দ হচ্ছে?’
‘বানর। এ জায়গায় বানর আছে। কালই তো দেখলে ছাদে লাফালাফি করছিল।‘
‘আমার বড় ভয় করছে। একটু উঠে গিয়ে বাতি জ্বালাও না। পায়ে পড়ি তোমার।’
আনিস বাতি জ্বালাল। ঘড়িতে বাজে দেড়টা। ছাদে আর কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। তবু রানুর ভয় কমল না। সে কেঁপে-কেঁপে উঠতে লাগল। আনিস বিরক্ত স্বরে বলল, ‘এ-রকম করছ কেন?’
কেন জানি অন্য রকম লাগছে আমার। একটা খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।’
‘কী স্বপ্ন?’
‘দেখলাম আমি যেন …
কথার মাঝখানে হঠাৎ রানু থেমে গেল। কে যেন হাসছে। ভারি গলায় হাসছে। রানু কাঁপা স্বরে বলল, ‘হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছ? কে যেন হাসছে।’
কে আবার হাসবে! বানরের শব্দ। কিংবা কেউ হয়তো জেগে উঠেছে দোতলায়।’ আনিস লক্ষ করল, রানু খুব ঘামছে। চোখ-মুখ রক্তশূন্য। বালিশের নিচ থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। দেশলাই জ্বালাতে-জ্বালাতে বলল, ‘কী স্বপ্ন জ্বালাতে-জ্বালাতে দেখছিলে?’
‘দিনের বেলা বলব।’
‘কী যে সব কুসংস্কার তোমাদের। এখনো ভয় লাগছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘ভয়টা কিসের? চোর-ডাকাতের, না ভূতের?
‘বুঝতে পারছি না।’
‘ঠিক আছে, বাতি জ্বালানোই থাক। বাতি জ্বালিয়েই ঘুমাব আজকে। এখন বল দেখি, কী স্বপ্ন দেখলে।’
‘দিনের বেলা বলব।’
‘আহ্, বল না! বললেই ভয় কেটে যাবে।‘
রানু আনিসের বাঁ হাত শক্ত করে চেপে ধরল। থেমে থেমে বলল, ‘দেখলাম, একটা ঘরে আমি শুয়ে আছি। একটা বেঁটে লোক এসে ঢুকল। তারপর দেখলাম, সে আমার শাড়ি টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করছে।’
আনিস শব্দ করে হাসল।
রানু বলল, ‘হাসছ কেন?’
‘হাসব না? এটা কি একটা ভয় পাওয়ার স্বপ্ন?’
‘তুমি তো সবটা শোন নি।’
‘সবটা শুনতে হবে না। পরে কী হবে তা আমার জানা। তুমি যা দেখেছ তা হচ্ছে একটা সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি। যুবক-যুবতীরা এ-রকম স্বপ্ন প্রায়ই দেখে।’
‘আমি দেখি না।’
‘তুমিও দেখ। মনে থাকে না তোমার।’
‘আমি স্বপ্ন খুব কম দেখি। যা দেখি তা সব সময় সত্যি হয়। তোমাকে তো বলেছি অনেক বার।’
আনিস চুপ করে রইল। রানু এই কথাটি প্রায়ই বলে। বিয়ের রাতে প্রথম বার বলেছিল। আনিস সেবারও হেসেছে। রানু অবাক হয়ে বলেছে, ‘আপনি আমার কথা
বিশ্বাস করলেন না, না?’
‘নাহ্।’
‘আমি আপনার গা ছুঁয়ে বলছি, বিশ্বাস করুন আমার কথা।’
রানু এমনভাবে বলল, যেন আনিসের বিশ্বাসের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আনিস শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে বলল, ‘ঠিক আছে বিশ্বাস করলাম, এখন দয়া করে আপনি-আপনি করবে না।’ রানু ফিসফিস করে বলল, ‘আপনার সঙ্গে যে আমার বিয়ে হবে, সেটাও আমি জানতাম।‘
‘এটাও স্বপ্নে দেখেছিলে?’
‘হুঁ। দেখলাম, একটি লোক খালিগায়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পেটের কাছে একটা মস্ত কাটা দাগ। লোকটিকে দেখেই মনে হল, এর সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। আমি তাকে বললাম, কেটেছে কীভাবে? আপনি বললেন, ‘সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলাম।’
আনিস সে-রাতে দীর্ঘক্ষণ কোনো কথা বলতে পারে নি। তার পেটে একটা কাটা দাগ সত্যি-সত্যি আছে, এই মেয়েটির সেটা জানার কথা নয়। তবে সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে কাটে নি। জামগাছ থেকে পিছলে পড়ে কেটেছে। ব্যাপারটা কাকতালীয়, বলাই বাহুল্য। মাঝে-মাঝে এমন দু’-একটা জিনিস খুব মিলে যায়। তবুও কোথায় যেন একটা ক্ষীণ অস্বস্তি থাকে।
বাইরে বৃষ্টি খুব বাড়ছে। ঝড়ড় হবে বোধহয়। শোঁ-শোঁ আওয়াজ হচ্ছে জানালায়। একটি কাঁচ ভাঙা। প্রচুর পানি আসছে ভাঙা জানালা দিয়ে, শীত-শীত করছে।
‘রানু, চল ঘুমিয়ে পড়ি।’
‘সিগারেট শেষ হয়েছে?’
‘হ্যাঁ।’
বিছানায় ওঠামাত্র প্রবল শব্দে বিদ্যুৎ চমকাল। বাতি চলে গেল সঙ্গে-সঙ্গে। শুধু এ-অঞ্চল নয়, সমস্ত ঢাকাই বোধ করি অন্ধকার হয়ে গেল। আনিস বলল, ‘ভয় লাগছে রানু?’
‘হ্যাঁ।’
‘আচ্ছা, হাসির গল্পটল্প কর। এতে ভয় কমে যায়। বল একটা গল্প।’
‘তুমি বল।’
আনিস দীর্ঘ সময় নিয়ে এক জন পাদ্রী ও তিনটি ইহুদি ও তিনটি মেয়ের গল্প বলল। গল্পের এক পর্যায়ে শ্রোতাকে জিজ্ঞেস করতে হয়–পাদ্রী তখন কী বলল? এর উত্তরটি হচ্ছে পাঞ্চ লাইন। কিন্তু কিচ্ছু জিজ্ঞেস করল না রানু। সে কি শুনছে না? আনিস ডাকল, ‘এই রানু, এই!’ রানু কথা বলল না। বাতাসের ঝাপ্টায় সশব্দে জানালার একটি পাল্লা খুলে গেল। আনিস বন্ধ করবার জন্যে উঠে দাঁড়াতেই রানু তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপা গলায় বলল, ‘তুমি যেও না। খবরদার, যেও না!’
‘কী আশ্চর্য, কেন?’
‘একটা-কিছু জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে।’
‘কী যে বল!’
‘প্লীজ, প্লীজ।’
রানু কেঁদে ফেলল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ‘তুমি গন্ধ পাচ্ছ না?’
‘কিসের গন্ধ?’
‘কর্পূরের গন্ধের মতো গন্ধ।‘
এটা কি মনের ভুল? সূক্ষ্ম একটা গন্ধ যেন পাওয়া যাচ্ছে ঘরে। ঝন্‌ঝন্ করে আরেকটা কাঁচ ভাঙল। রানু বলল, ‘ঐ জিনিসটা হাসছে। শুনতে পাচ্ছ না?’ বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আনিস কিছু শুনতে পেল না।
‘তুমি বস তো। আমি হারিকেন জ্বালাচ্ছি।’
‘না, তুমি আমাকে ধরে বসে থাক।’
আনিস অস্বস্তির সঙ্গে বলল, ‘তুমি ঐ জানালাটার দিকে আর তাকিও না তো!’
আনিস লক্ষ করল, রানু থরথর করে কাঁপছে, ওর গায়ের উত্তাপও বাড়ছে। রানুকে সাহস দেবার জন্যে সে বলল, ‘কোনো দোয়া-টোয়া পড়লে লাভ হবে? আয়াতুল কুর্সি জানি আমি। আয়াতুল কুর্সি পড়ব?’
রানু জবাব দিল না। তার চোখ বড়-বড় হয়ে উঠেছে। মুখ দিয়ে ফেনা ভাঙছে নাকি? শ্বাস ফেলছে টেনে-টেনে।
‘এই রানু, এই।’
কোনোই সাড়া নেই। আনিস হারিকেন জ্বালাল। রান্নাঘর থেকে খুটখুট শব্দ আসছে। ইঁদুর, এতে সন্দেহ নেই। তবু কেন জানি ভালো লাগছে না। আনিস বারান্দায় এসে ডাকল, ‘রহমান সাহেব, ও রহমান সাহেব।’ রহমান সাহেব বোধহয় জেগেই ছিলেন। সঙ্গে-সঙ্গে বেরুলেন।
‘কী ব্যাপার?’
‘আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’
কী হয়েছে?’
‘বুঝতে পারছি না।’
‘হাসপাতালে নিতে হবে নাকি?’
‘বুঝতে পারছি না।’
‘আপনি যান, আমি আসছি। এক্ষুণি আসছি।’
আনিস ঘরে ফিরে গেল। মনের ভুল, নিঃসন্দেহে মনের ভুল। আনিসের মনে হল, সে ঘরের ভেতর গিয়ে দাঁড়ানোমাত্র কেউ-একজন যেন দরজার আড়ালে সরে পড়ল। রোগা, লম্বা একটি মানুষ। আনিস ডাকল, ‘রানু।’ রানু তৎক্ষণাৎ সাড়া দিল, ‘কি?’
ইলেকট্রিসিটি চলে এল তখনই। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই রহমান সাহেব এসে উপস্থিত হলেন। উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন, ‘এখন কেমন অবস্থা?’ রানু অবাক হয়ে বলল, ‘কিসের অবস্থা? কী হয়েছে?’
রহমান সাহেব অবাক হয়ে তাকালেন। আনিস বলল, ‘তোমার শরীর খারাপ করেছিল, তাই ওঁকে ডেকেছিলাম। এখন কেমন লাগছে?’
‘ভালো।’
রানু উঠে বসল। রহমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল, ‘এখন আমি ভালো।’
রহমান সাহেব তবুও মিনিট দশেক বসলেন। আনিস বলল, ‘আপনি কি ছাদে দাপাদাপি শুনেছেন?’
‘সে তো রোজই শুনি। বাঁদরের উৎপাত।‘
‘আমিও তাই ভাবছিলাম।’
‘খুব জ্বালাতন করে। দিনে-দুপুরে ঘর থেকে খাবারদাবার নিয়ে যায়।’
‘তাই নাকি?’
‘জ্বি। নতুন এসেছেন তো! কয়েক দিন যাক, টের পাবেন। বাড়িঅলাকে বলেছিলাম গ্রিল দিতে। তা দেবে না। আপনার সঙ্গে দেখা হলে আপনিও বলবেন। সবাই মিলে চেপে ধরতে হবে।’
‘জ্বি, আমি বলব। আপনি কি চা খাবেন নাকি এক কাপ?’
‘আরে না না। এই রাত আড়াইটার সময় চা খাব নাকি, কী যে বলেন! উঠি ভাই। কোনো অসুবিধা দেখলে ডাকবেন।’
ভদ্রলোক উঠে পড়লেন। রানু চাপা স্বরে বলল, ‘এই রাত-দুপুরে ভদ্রলোককে ডেকে আনলে কেন? কী মনে করলেন উনি।’
‘তুমি যা শুরু করেছিলে! ভয় পেয়েই ভদ্রলোককে ডাকলাম।’
‘কী করেছিলাম আমি?’
‘অনেক কাণ্ড করেছ। এখন তুমি কেমন, সেটা বল।‘
‘ভালো।’
‘কী রকম ভালো?’
বেশ ভালো।’
‘ভয় লাগছে না আর?’
‘নাহ্।’
রানু বিছানা থেকে নেমে পড়ল। সে বেশ সহজ ও স্বাভাবিক। ভয়ের কোনো চিহ্নও নেই চোখে-মুখে। শাড়ি কোমরে জড়িয়ে ঘরের পানি সরাবার ব্যবস্থা করছে।
‘সকালে যা করবার করবে। এখন এসব রাখ তো।’
‘ইস্, কী অবস্থা হয়েছে দেখ না!’
‘হোক, এস তো এদিকে।‘
রানু হাসি-হাসি মুখে এগিয়ে এল।
‘এখন আর তোমার ভয় লাগছে না?’
‘না।’
‘জানালার পাশে কে যেন দাঁড়িয়ে ছিল বলেছিলে?’
‘এখন কেউ নেই। আর থাকলেও কিছু যায় আসে না।’
আনিস দ্বিতীয় সিগারেটটা ধরাল। হালকা গলায় বলল, ‘এক কাপ চা করতে পারবে?’
‘চা, এত রাতে!’
‘এখন আর ঘুম আসবে না, কর দেখি এক কাপ।’
রানু চা বানাতে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই পানি ফোটার শব্দ হল। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে ঝমঝম করে। রানু একা-একা রান্নাঘরে। কে বলবে এই মেয়েটিই অল্প কিছুক্ষণ আগে ভয়ে অস্থির হয়ে গিয়েছিল! ছাদে আবার ঝুপঝুপ শব্দ হচ্ছে। এই বৃষ্টির মধ্যে বানর এসেছে নাকি? আনিস উঠে গিয়ে রান্নাঘরে উকি দিল। হালকা গলায় বলল, ‘ছাদে বড় ধুপধাপ শব্দ হচ্ছে।’ রানু জবাব দিল না।
আনিস বলল, ‘এই বাড়িটা ছেড়ে দেব।’
‘সস্তায় এ-রকম বাড়ি আর পাবে না।’
‘দেখি পাই কি না।’
‘চায়ে চিনি হয়েছে তোমার?’
‘হয়েছে। তুমি নিলে না?’
‘নাহ্, রাত-দুপুরে চা খেলে আমার আর ঘুম হবে না।’
রানু হাই তুলল। আনিস বলল, ‘এখন বল তো তোমার স্বপ্ন-বৃত্তান্ত।’
‘কোন স্বপ্নের কথা?’
‘ঐ যে স্বপ্ন দেখলে! একটা বেঁটে লোক।’
‘কখন আবার এই স্বপ্ন দেখলাম? কী যে তুমি বল।’
আনিস আর কিছু বলল না। চা শেষ করে ঘুমুতে গেল। শীত-শীত করছিল। রানু পা গুটিয়ে বাচ্চা মেয়ের মতো শুয়েছে। একটি হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে আনিসকে। তার ভারি নিঃশ্বাস পড়ছে। ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। জানালায় নারকেল গাছের ছায়া পড়েছে। মানুষের মতোই লাগছে ছায়াটাকে। বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে। মনে হচ্ছে মানুষটি হাত নাড়ছে। ঘরের ভেতর মিষ্টি একটা গন্ধ। মিষ্টি, কিন্তু অচেনা।
আনিস রানুকে কাছে টেনে আনল। রানুর মুখে আলো এসে পড়েছে। কী যে মায়াবতী লাগছে! আনিস ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল। ওদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ছ’ মাস আনিস এখনো অভ্যস্ত হয়ে ওঠে নি। প্রতি রাতেই রানুর মুখ তার কাছে অচেনা লাগে। অপরূপ রূপবতী একটি বালিকার মুখ, যাকে কখনো পুরোপুরি চেনা যায় না। আনিস ডাকল, ‘রানু, রানু।’ কোনো জবাব পাওয়া গেল না। গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন রানু। আনিসের ঘুম এল না। শুয়ে শুয়ে ঠিক করে ফেলল, রানুকে ভালো এক জন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অফিসের কমলেন্দুবাবু এক ভদ্রলোকের কথা প্রায়ই বলেন, খুব নাকি গুণী লোক। মিসির সাহেব। দেখালে হয় এক বার মিসির সাহেবকে।
রানু ঘুমের ঘোরে খিলখিল করে হেসে উঠল। অপ্রকৃতিস্থ মানুষের হাসি শুনতে ভালো লাগে না, গা ছমছম করে।
 
Back
Top