বিশ্ব সেরা দু'টি ব্র্যান্ডের জন্মের ইতিহাস

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,011
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
বিশ্ব সেরা দু'টি ব্র্যান্ডের জন্মের ইতিহাস

(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)






পারিবারিক বিরোধে জন্ম নিলো বিশ্বসেরা দুই ব্র্যান্ড


১৯২০ সালের শুরুর দিকে জার্মানির হার্জোগেনোরাখ শহরে জার্মান যুবক অ্যাডলফ ডাজলার গড়ে তোলে স্বল্প পরিসরে এক জুতার ফ্যাক্টরি। মূলত খেলাধুলার জন্যই বিভিন্ন বিভিন্ন জুতা বানাতো তরুণ অ্যাডলফ।
১৯২৪ সালে ভাই রুডলফ ডাজলারও যোগ দেয় তার সাথে। এভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিলো ডাজলার ভ্রাতৃদ্বয়ের জুতার কারখানা "জেব্রুডার ডাজলার শাফাব্রিক" এর।

অল্প কিছুদিনের মাঝেই বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের কাছে জুতার জন্য অর্ডার আসা শুরু হয়, উন্নত হতে থাকে পরিবারের আর্থিক অবস্থাও। এদিকে তারা বিয়ে করে বউ বাচ্চা সহ আনন্দে সংসার কাটাচ্ছিলেন।

কিন্তু আস্তে আস্তে দুই ভাইয়ের বউদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়া শুরু হয় যেটা পরে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
এদিকে ১৯৩৯ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে দুই ভাই যুদ্ধে যোগ দেয়। ফলে ব্যবসায় শনির দশা নেমে আসে, প্রায় বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। নাৎসি পার্টির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিচার হয় দুই ভাইয়েরই।

তবে অ্যাডলফের জুতা বানানোর দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছিলো আমেরিকান কর্তৃপক্ষ। আবার ১৯৩৬ অলিম্পিকের সময় তার জুতা আমেরিকান অ্যাথলেটদের বেশ কাজে এসেছিলো বলেও সুনাম ছিলো তার। তাই মুক্তি পেয়ে যান তিনি।

তবে বিপদে পড়ে যান মেজো ভাই রুডলফ। নাৎসি বাহিনীর সাথে তার দীর্ঘকালীন সম্পৃক্ততা একই সাথে তার এবং তার ফ্যাক্টরির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিচার শেষে রুডলফকে আমেরিকার এক বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়।

সেখানে রুডলফকে কেউ কেউ বলে যে তাকে আসলে কাছের কেউ ফাঁসিয়ে দিয়েছে। রুডলফের নিজের মনেও এমন সন্দেহ কয়েকদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। অন্যদের কথা শুনের তার সেই সন্দেহ আরো জোরদার হলো।

তিনি সবচেয়ে বেশি সন্দেহ করেছিলেন ছোট ভাই অ্যাডলফকে। দাঁড়িয়ে যাওয়া একটি ব্যবসা হাতিয়ে নেয়ার কুমতলবে ভাই এমনটা করেছে বলে ভাবতে লাগলেন তিনি। সেই সাথে ভাইয়ের সহধর্মিনীকেও সন্দেহের তালিকায় রাখলেন তিনি।

রুডলফ ধারণা করেছিলেন যে, অ্যাডলফের উচ্চাভিলাষী স্ত্রীই হয়তো অ্যাডলফকে এমন করতে উৎসাহ যুগিয়েছেন! এজন্য তিনি জেল কর্তৃপক্ষকে জানালেন যে, তাকে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করে রাখা হয়েছে।

এক বছর পর মুক্তি মেলে রুডলফের। মুক্তির পরপরই শুরু হয়ে যায় দুই ভাইয়ের যুদ্ধ। দুজনেই কোম্পানিতে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বিবাদে জড়াতে শুরু করেন। বাড়তে থাকে ভাইদের মাঝে দূরত্ব, সৃষ্টি হয় কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা।

এমতাবস্থায়ই দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাক পড়ে অ্যাডলফের। তখন বড় ভাই রুডলফকে আরো বেশি পরিমাণে সন্দেহ করা শুরু করেন তিনি।
পরিস্থিতি শেষে এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকলো যে, দুই ভাইয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় দাঁড়িয়ে ওঠা এ কোম্পানিকে একসাথে চালানো কোনোভাবেই আর সম্ভব হয়ে উঠছিলো না।

একদিন তাই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারীকে এক জায়গায় জড়ো করলেন রুডলফ। তারপর জানালেন যে, তাদের কোম্পানি কিছুদিনের মাঝেই দুই ভাইয়ের আলাদা অংশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকেও দুই ভাইয়ের যেকোনো এক পক্ষকে বেছে নিয়ে সেই পক্ষে কাজ করতে চলে যেতে হবে।

মালিকপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে গেলো শ্রমিকেরা। তারা কেউই বুঝে উঠতে পারছিলো না যে দুই ভাইয়ের মাঝে এমন কী ঘটলো যা তাদেরকে কোম্পানি ভাগ করে দেয়ার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করলো।

অবশেষে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক, যারা কিনা জুতা তৈরিতে দক্ষ ছিলো, গিয়ে যোগ দিলো অ্যাডলফের সাথে। অন্যদিকে বিক্রয়ের কাজে সিদ্ধহস্ত শ্রমিকেরা বেছে নিলো রুডলফের পক্ষ।

সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে অনেক দর কষাকষির পর শেষ পর্যন্ত ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে তা সম্পন্ন হয়। এর কিছুদিন পরই নিজের কোম্পানির জন্য নাম নিবন্ধন করাতে যান অ্যাডলফ। নিজের নামের দুই অংশ Adolf ও Dassler-কে একত্রিত করে তিনি নাম ঠিক করেন ‘Addas’। কিন্তু এ নামে আগে থেকেই আরেকটি শিশুদের জুতা তৈরির প্রতিষ্ঠানের নাম নিবন্ধন করা ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি ‘Adidas’ নামটিকে বেছে নেন।

ছোট ভাইয়ের দেখাদেখি বসে থাকেন নি রুডলফও। তিনিও ভাইয়ের মতোই নিজের নামের দুই অংশ ‘Rudolf’ ও ‘Dassler’ এক করে নতুন কোম্পানির নাম দেন ‘Ruda’। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এটি পাল্টে নতুন নাম রাখেন ‘Puma’, কারণ পুমা নামটাই তার কাছে বেশি খেলোয়াড়সুলভ মনে হয়েছিলো।

🔴
Adidas কারখানা ও সদর দফতর অবস্থিত Aurach নদীর এক তীরে
🔴
Puma অবস্থিত Aurach নদীর অন্য তীরে

এইভাবে, Aurach নদী দুই ভাইয়ের কোম্পানিকে যেমন ভৌগোলিকভাবে ভাগ করে দেয়, তেমনি প্রতীকীভাবে তাদের সম্পর্কের বিভাজনকেও চিহ্নিত করে।

এই তথ্য এতটাই বিখ্যাত যে স্থানীয় লোকজন একসময় বলতেন:
“এই শহরে নদী শুধু জল বয়ে আনে না, বয়ে আনে গল্প, গর্ব, ও গোপন বিদ্বেষ।”

এভাবেই জন্ম নিলো দুই বিখ্যাত ব্র্যান্ড এডিডাস এবং পুমা।
 
Back
Top