Collected বটগাছ - মোস্তাফিজুর রহমান টিটু

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,005
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
*****বটগাছ*****

মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু






জহির সরকারী কলেজের ইংরেজীর শিক্ষক । মফশ্বল শহরের ছোট কলেজ । জেলা শহর থেকে খুব বেশী দূরে না হলেও যোগাযোগ অপ্রতুলতার কারণে এলাকাটাকে প্রত্যন্ত অঞ্চল বলা-ই যায় । কলেজটাও ছিমছাম নিরিবিলি । ছাত্র শিক্ষক সবাই সবাইকে চেনে জানে । ছাত্র রাজনীতি আছে ঠিকই তবে এখনও সেরকম বিষময় হয়ে ওঠেনি । এমন সময়েই রসায়নের শিক্ষক হিসাবে তানভীর এলো । “এই ছেলে এখানে কেনো?”- তানভীরকে প্রথম দেখে জহিরের এটাই মনে হলো । এর তো থাকার কথা সিনেমা-টেলিভিশনের পর্দায় নতুবা কর্পোরেট বস এর চেয়ারে । আজকাল তো কর্পোরেট বস-রাও বিরাট সেলিব্রেটি । এক কথায় আদ্যন্ত সুপুরুষ তানভীরকে এই মফশ্বল কলেজে বেমানানই লাগে ।

সময় যায় । দেখা গেলো তানভীর শুধু দেখতেই সুদর্শন না তার গুনের পাল্লাও বেশ ভারী । চমৎকার পড়ায়, দারুন গান গায় । আবার কলেজের ছেলেদের সাথে যখন ব্যাডমিণ্টন কিংবা ভলিবল খেলে তখন বোঝা যায় খেলাধুলায়ও সে বেশ ভালো । অল্প দিনেই শুধু কলেজ না গোটা শহরেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তানভীর । বয়সের মিল থাকায় জহিরের সাথে একটা সম্পর্কও তৈরী হয় । সম্পর্কটা তানভীরের দিক থেকে যতটা সহজ খোলামেলা বন্ধুত্বের, জহিরের দিক থেকে ততটা নয় । হবেই বা কিভাবে । অনেকখানি শ্রদ্ধা, ঈষৎ ঈর্ষা, আর কিঞ্চিৎ হীনমন্যতা মিশে থাকলে কি বন্ধুত্ব হয় । জহির ব্যাপারটা বোঝে, মেনেও নেয় ।

কলেজের টিচার্স রুমে জহির আরো কয়েকজন শিক্ষকের সাথে গল্প করছিলো । স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল নওয়াজ সাহেব আসেন । সোজা জহিরের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলেন “এদিকে আসো একটু জহির । তোমার সাথে জরুরী কথা আছে ।“ কেউ কোনো কৌতুহল দেখায় না । সবাই জানে নওয়াজ সাহেব এমনই । পৃথিবীর সব চাইতে তুচ্ছ জিনিষও ওনার কাছে জরুরী ; আর সেটা বলতে হয় ফিসফিস করে । কে জানে আজকে হয়তো ফিসফিস করে বলবেন-“দেখেছো জহির কি গরমটাই পড়েছে । দেশ তো মরুভুমি হয়ে গেলো । “ জহির নওয়াজ সাহেবের সাথে যায় ।
“তোমার বন্ধু তানভীর তো মনে হয় অবিবাহিত ।“ ফিসফিস করে জরুরী কথা শুরু করেন নওয়াজ সাহেব ।
-জি ঠিক জানি না ।
“কি বলো এইটাই এখনও জানো না ।“
-জি মানে কখনও জিজ্ঞেস করা হয় নাই ।
“শোনো তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করে আমাকে জানাও । প্রিন্সিপ্যাল সাহেব জানতে চেয়েছেন । তার বড় মেয়ের ব্যাপারে ...” নওয়াজ সাহেব আরো ক্ষীণস্বরে ফিসফিস করতে থাকেন ।
-ঠিক আছে ।
সেদিন বিকেলেই তানভীরের সাথে অনেকক্ষণ আড্ডা হয় জহিরের । কিন্তু কথাটা জিজ্ঞেস করা হয় না । এর কয়েকদিন পরে নওয়াজ সাহেবের সাথে আবার দেখা হয় জহিরের ।
“তোমার বন্ধু তো বিবাহিত । “ ফিসফিস করে বলেন নওয়াজ সাহেব ।
-তাই নাকি ?
“হুমম । আজকালকার পোলাপান দেখি সব রহিম বাদশা হয়ে গেছে । দাড়ি গোফ ওঠার আগেই বিয়ে ।“ বিরক্তির সাথে বলেন নওয়াজ সাহেব ।
আরো সময় যায় । ছোট শহরে তানভীরের পরিচিতি-জনপ্রিয়তা বাড়ে । জহিরের সাথে বন্ধুত্বও বাড়ে । তানভীরের অদেখা স্ত্রী সম্বন্ধেও কৌতুহল বাড়ে- বিশেষ করে নারী মহলে ।
“ভাইয়া তানভীর স্যারের বউ নাকি দারুন সুন্দরী ?” জহিরের কলেজ পড়ুয়া ছোট বোন মিতু জিজ্ঞেস করে ।
-কে বললো তোকে ?
“সবাই তো তাই বলে ।“
-আর কি বলে ?
“অনেক বড়লোকের মেয়ে । ঢাকার গুলশানে নাকি বিরাট বাড়ি ।“
-আচ্ছা । এত খবর জানিস । ওদের বাসার কুকুরটার নামও নিশ্চয়ই জানিস ।
“ফালতু কথা বলবি না ভাইয়া । স্যারের বউ এখানে এলে অবশ্যই আমাদের বাসায় দাওয়াত করবি । “
-কেন ?
“কেন আবার তুই তানভীর স্যারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু । এটা সবাই জানে । আমার বান্ধবীদের বলবো । সবার আগ্রহ স্যারের বউ এর সাথে পরিচিত হবার জন্য ।“

জহিরের আবারও ভালো লাগা, ঈর্ষা, হীনমন্যতা মেশানো মিশ্র অনুভূতি হলো । তানভীরের ব্যাপারে যেমন হয় সব সময় । সেদিনই কলেজের টিচার্স রুমে আড্ডার সময় প্রসঙ্গ আসে ।
“এখানে ফার্নিচার এর দোকান কোথায় আছে জহির ?”
-কেনো ?
“তোমার ভাবী আসবে । মাস দুয়েক থাকবে । একটা ড্রেসিং টেবিল আর ছোটো একটা সোফা দরকার । “
-ঠিক আছে কলেজ শেষে তোমাকে নিয়ে যাবো ।
উত্তর দিয়ে দেখে তানভীর স্মিত চোখে তাকিয়ে আছে ।
-এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো ?
“এই যে তোমার সাথে এতদিনের পরিচয়-বন্ধুত্ব । তুমি কখনো আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে কৌতুহল দেখাও নাই । এটা আমার খুব ভালো লাগে ।“ মৃদু হেসে তানভীর উত্তর দেয় ।
-তুমি তো নক্ষত্র । এত দুরের নক্ষত্র নিয়ে কৌতুহল দেখিয়ে লাভ কি ? জহির মনে মনে বলে ।

রোজা আর ঈদের বড় ছুটির পরে তানভীর সস্ত্রীক আসে । বাস স্টপেজে জহির যায় । বন্ধুপত্নীকে প্রথম দেখাতে ধাক্কার মত খায় জহির । উচু কপাল, উচু দাত – এরকম মুখকেই মনে হয় ঘোড়ামুখী বলে । গায়ের রংটাও ময়লার দিকে । সব চাইতে যেটা চোখে পড়ে তা হলো চেহারায় লাবন্যর অভাব । তানভীর পরিচয় করিয়ে দেয় তার স্ত্রীর সাথে । নাম রুমু । গলার স্বরটা বেশ মিষ্টি কিন্তু তাও আবার আঞ্চলিকতার দোষে দুষিত । মনের গোপন গভীরে কেমন যেন স্বস্থি অনুভব করে জহির । যাক বিধাতা তাহলে একজনকে সব কিছু দেন না ।

কলেজ শুরু হবার পরে আরো অনেকের সাথেই তানভীরের স্ত্রীর পরিচয় হয় । সবার মাঝেই একইরকম অনুভূতি হয় । না হয়ে উপায়ও নেই । তানভীরের পাশে সত্যিই খুব বেমানান লাগে রুমুকে ।
“ভাইয়া তোর বন্ধু তানভীর স্যার তো মহা ধড়িবাজ ।“ মিতু বলে একদিন ।
-কেন সে আবার কি করলো ?
“কি আবার করবে । বিশাল যৌতুক নিয়ে শাঁকচুন্নি বিয়ে করেছে ।“
-তুই জানলি কিভাবে ?
“এতো সবাই জানে । দেখিস তুইও আবার বন্ধুর মত...”
-ফালতু ভ্যাজর ভ্যাজর না করে নিজের কাজে যা । জহির তেমন পাত্তা দেয় না ।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই নওয়াজ সাহেব ফিসফিস করে বলেন –
“তোমার বন্ধু তো জাত খেলোয়াড় ।“
-মানে কি ?
“এই যে বিয়ে করেই বড়লোক ।“
জহির চুপ করে থাকে ।
“শুনলাম এক কোটি টাকা আর একটা বাড়ী পেয়েছে তোমার বন্ধু ।“ আবার ফিসফিস করে বলেন নওয়াজ সাহেব ।
-আপনি এত কিছু জানেন কিভাবে ?
“এত সবাই জানে । যাই বলো শ্বশুরের টাকা উড়াবার মজাই আলাদা । নিজের টাকা তো কষ্টের টাকা । উড়াইয়া মজা নাই । “
-তাই ?
“হুমম । তোমার তো সময় আছে । বন্ধুর কাছে বিদ্যাটা শিখে নাও । লাভ হবে ।“ বলেই খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকেন নওয়াজ সাহেব । জহির বিরক্ত হয় । কথা যে এত আস্তে বলে সে এতো জোরে হাসে কিভাবে কে জানে ।

দুমাস পরে রুমা ঢাকা চলে যায় । কলেজে শহরে তানভীরকে নিয়ে ফিসফাস বাড়ে-জনপ্রিয়তা কমে । কিন্তু তানভীরের এ নিয়ে কোনো হেলদোল নাই ।

“সন্ধ্যার পরে বাসায় চলে এসো ।“ কলেজে জহিরকে বলে তানভীর ।
-কেনো? কোনো দরকার ?
“না । নতুন একটা মুভি এনেছি । একা একা দেখতে ভালো লাগে না । আর ছবির নায়কও তোমার প্রিয় নায়ক ।“
সন্ধ্যার পরে জহির যায় । মুভি দেখতে দেখতেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হয় ।
“আজকে তোমার আর বাসায় ফেরার দরকার নাই । গরুর মাংস আছে , নান্টুকে বলি খিচুরি রাধতে । আর নান্টু যাবার পথে তোমার বাসায় খবর দিয়ে যাবে ।“ তানভীর বলে । এরকম আগেও হয়েছে । তাই আপত্তি করে না জহির । তাছাড়া মুভিটাও ভালো । কিন্তু অল্প সময় পরেই বিদ্যুৎ চলে যায় । মোমের আলোয় খাওয়া শুরু হয় ।
-ভাবী আবার কবে আসবে ? জহির জিজ্ঞেস করে ।
“ওতো পিজি হাসপাতালে এম ফিল করছে । খুব ব্যস্ত । তাড়াতাড়ি আসার সম্ভাবনা নাই । “
জহির একটু অবাক হয় । রুমু তাহলে একজন ডাক্তার ।
- তোমার শ্বশুর বাড়ী তো ঢাকাতেই । তাই না ?
“না তো ? আমার শ্বশুর বাড়ী কুমিল্লার এক প্রত্যন্ত গ্রামে ।“
-তাই । লোকে যে বলে... জহির মৃদু কন্ঠে বলে ।
“লোকে কি বলে ?”
-না মানে । ইয়ে...
“ও বুঝেছি । রুমু অনেক বড়লোকের মেয়ে, অনেক যৌতুকের বিনিময়ে আমি রুমুকে বিয়ে করেছি । এইসব তো ।“ তানভীর হাসতে হাসতে বলে ।
-না মানে...হ্যা ।
“তোমাকে এত ইতস্তত করতে হবে না জহির । আমি এতে অভ্যস্ত । আসলে আমরা দুজনেই অভ্যস্ত । বলতে পারো আমরা এসব এখন একটু উপভোগই করি । তাই রুমুর বিস্তারিত পরিচয় কাছের লোক ছাড়া বলি না । আমাদের বিয়েটাও কিন্তু দীর্ঘ পরিচয়ের পরে ।“ তানভীর বলে ।
-তাই নাকি ? জহির বিস্ময়বোধ কন্ঠে লুকিয়ে রাখতে পারে না ।
“হ্যা । তবে সেসব কথা বলতে ইচ্ছে করছে না । তোমাকে অন্য এক গল্প বলি । দাড়াও তার আগে দুকাপ চা বানিয়ে আনি ।“ অভ্যস্ত হাতে কেরোসিনের স্টোভে দ্রুত দুকাপ চা বানিয়ে ফেলে তানভীর ।

বিয়ের দুবছরের মাথায় আমার মেয়ে রুনুর জন্ম হয় । বারান্দার অন্ধকারে তানভীর বলা শুরু করে । রুমুর মেয়ে রুনু । নামটা আমিই রাখি । তখন আমার খুব ব্যস্ত জীবন । বেসরকারী অফিসে চাকুরী, টিউশনি আর বিদেশে স্কলারশিপের চেষ্টায় টোফেল, জিআরই । তবে এত ব্যস্ততার পরে বাসায় ফিরে রুনুকে কোলে নিলেই সব ক্লান্তি উধাও হয়ে যেত । আর মেয়েও যেন আমার অপেক্ষাতেই থাকতো । কোলে নেয়া মাত্রই চোখ বড় বড় করে তাকাবে । তিন মাস বয়সেই সে শব্দ করে হাসতো । কি যে মায়া, কি যে ভালো লাগা ।
এতটুকু বলে একটু চুপ থাকে তানভীর । জহিরও কোনো কথা বলে না ।

ম্যাটারনিটি লিভ শেষে রুমু চাকুরীতে যোগ দেয় । তানভীর আবার বলা শুরু করে । আমাদের ব্যস্ততা আরো বাড়ে । রুনুর বয়স তখন ৫ মাস । অফিসে বসের সাথে কঠিন এক ঝগড়া হলো । ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরে রুনুকে কোলে নিলাম । গত দুইদিন যাবত রুনুর একটু জ্বর । এখনও জ্বর আছে । কিন্তু কোলে নিতেই দুস্টুমিভরা এক হাসি দিলো । একটু পরেই চা এর কাপ হাতে রুমু এসে বললো
“শোনো আমার মনে হয় রুনুকে একবার হাসপাতালে নেয়া উচিত । জ্বরটা কমছে না । বুকেও কেমন ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে ।“
-ধুর । তোমাদের ডাক্তারদের এই সমস্যা সামান্য সর্দি জ্বরকেও বড় মনে করো । আমার মেয়ের কিছুই হয় নাই ।
আমার কথা সত্যি প্রমান করতেই যেন রুনু খলবল করে হেসে উঠল । পরদিন যথারীতি ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরে শুনি রুমু রুনুকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে ঘণ্টা দুয়েক আগে । বুকটা কেপে ওঠে । হাসপাতালে ছুটে যাই । রুমুকে পাই আরো দুজন ডাক্তারের সাথে । কেমন উদভ্রান্ত লাগে ওকে । “তুই নিজে ডাক্তার হয়েও কিভাবে এত বড় ভুল করলি । একিউট নিউমোনিয়া । ২৪ ঘণ্টা আগে চিকিৎসা শুরু হলেও একটা সম্ভাবনা ছিলো । “ রুমুর সহকর্মী রিতা আপা বলে । রুমু কিছু বলে না । আমার দিকে এক পলক তাকায় শুধু । “এখন আল্লাহ আল্লাহ কর “ বলেই রিতা আপা দ্রুত সরে যান ।

এতটুকু বলেই আবার চুপ করে যায় তানভীর । টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ । জহির ধৈর্য রাখতে পারে না । জিজ্ঞেস করে – তারপর কি হলো ?
তারপর আর কি । রুনু মারা যায় রাত এগারোটায় আমারই কোলে । তুমি বিশ্বাস করবে না জহির মারা যাবার পাঁচ মিনিট আগেও রুনু আমার দিকে তাকিয়ে সেই দুষ্টু মিষ্টি হাসিটা হেসেছিলো । শেষ বাক্যটা বলতে গিয়ে তানভীরের গলা ধরে আসে । জহির কিছু বলে না । তানভীরের কষ্ট সত্যিকার ভাবে উপলব্দি করে বলেই মনে হয় কিছু বলতে পারে না । বেশ কিছুক্ষণ পরে জহির বলে- চলো এখন ঘুমাতে যাই । রাত অনেক হলো ।

আর একটু বসো । তোমাকে আসল কথাটাই বলা হয় নাই । আবার শুরু করে তানভীর । রুনু মারা যাবার পরে আমার একধরনের মানসিক বিপর্যয় হলো । মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় । আর ঘুমাতে পারি না । সবকিছু অর্থহীন ফাকা মনে হয় । চাকুরী টিউশনি সব ছেড়ে দিলাম । রুমুকে কিছুই বললাম না । কিন্তু যতই স্বাভাবিক থাকার ভান করি না কেনো রুমু ঠিকই টের পেলো । আমি ডাক্তার হিসেবেই বলছি । ২৪ ঘণ্টা আগে চিকিৎসা শুরু হলেও রুনু হয়তো মারা যেতো । রুনু জন্মেছিলো দুর্বল ফুসফুস নিয়ে – জোর দিয়ে বলে রুমু । আমি কিছু বলি না । শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি । এরপর থেকে রুমু অফিসের সময়টুকু বাদে সারাক্ষণ আমায় আগলে রাখতো । প্রতি বিকেলে নিয়ম করে রুমু আমাকে কোনো না কোনো বন্ধু বা আত্মীয় বাড়ি নিয়ে যেতো । আর প্রতি শুক্রবার রাতে বন্ধুরা আসতো আমাদের বাসায় । এভাবে মাস দুয়েক গেলো । আমি একটু স্বাভাবিক হলাম । হঠাৎ একদিন মার্কেটে রিতা আপার সাথে দেখা ।

“কেমন আছো তানভীর ?”
-এই তো আছি ।
“তোমাকে আমি মনে মনে খুজছিলাম ।“
-কেনো রিতা আপা ?
“রুমুর ব্যাপারে । রুনুর শোকটা ও ভুলতে পারে নাই । হাসপাতালে মাঝে মাঝেই খুব কান্নাকাটি করে । তুমি ওকে একটু দেখো ভাই ।“
আমি স্তব্দ হয়ে শুনি । আমার সামনে ভুলেও রুনুর কথা বলে না রুমু । আমি জানি অন্য সবাইকেও সে নিষেধ করেছে । রুনুর সব খেলনা কাপড় সব কোথায় যেন সরিয়ে ফেলেছে । অথচ...আবারো তানভীরের ভরাট গলা কেমন আর্দ্র শোনায় ।

“ঝড়ে উপড়ে পড়া পুরোনো কোনো বটগাছ দেখেছো জহির ?” হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে তানভীর জিজ্ঞেস করে ।
-নাহ ।
“আমি একবার দেখেছিলাম । আমাদের এলাকার সব চাইতে পুরোনো বটগাছ এক রাতের প্রবল ঝড়ে উপড়ে পরল । সকালে গেলাম দেখতে । বিশাল গাছটা পড়ে আছে । কিন্তু অবাক হয়ে দেখি গাছের মাঝে পাখির বাসাটা অক্ষত । মা পাখিটা দুটো বাচ্চাসহ সহি সালামতেই আছে বাসাটাতে । মাঝে মাঝেই ভাবি রুপ-রসের এই দুনিয়াতে মানুষের ভালোবাসাও কি বটগাছের মত ? নিজে ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু পরম মমতায় ভালোবাসাকে আগলে রাখবে ।“

ঝড়ের বেগ বাড়ে । বারান্দার অন্ধকারে দুই যুবক চুপচাপ বসে ঝড় দেখতে থাকে ।
 
Back
Top