Collected বাজারের ফর্দ

Joined
Jun 14, 2016
Threads
1,313
Messages
101,428
Reaction score
1,659
Points
2,663
Age
45
Gender
Male
Whats-App-Image-2025-10-21-at-22-30-50-b03494fe.jpg

এই যে ধরুন, রবিবারের সকাল। এক প্রকার বাধ্যতামূলক ছুটি। চায়ের কাপ নিয়ে বসে আছি, যদিও জানি একটু পরেই কপালে কী আছে। কপালে বলতে, টেবিলের ওপর পড়ে থাকা ভাঁজ করা একটা চিরকুট, যাতে স্ত্রীর হাতের লেখা — ‘বাজারের ফর্দ’।
আমি বিবাহ করেছি— এ আমার এক ধরনের ব্যর্থতা। বিবাহ করলেই কেন যেন পুরুষকে বাজারে যেতে হয়, এটা কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র নয়, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা অত্যন্ত প্রামাণ্য।

ফর্দটি খুললাম। প্রথমে লেখা আছে: ‘পাঁচটা আলু। কিন্তু যেন বড়ো না হয়। আবার খুব ছোটও না। মাঝারি হলে আপত্তি নেই। কিন্তু মাঝারি যেন ঠিক মাঝারিই হয়।’

আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবি। এই যে আলু, এই যে জীবনের এক অনিবার্য খাদ্য, এর সাইজ নিয়ে এত দার্শনিক চিন্তা কেন? আমি না হয় পাঁচখানা আলু চাইলাম। চাইতেই পারি ! কিন্তু এর সঙ্গে আকার-আকৃতির শর্ত কেন? আমি তো কোনোদিন স্ত্রীকে বলিনি, "তোমার এই হাসিটা এত বাঁকা কেনো? সরল হাসি কেনো হাসো না? এর চেয়ে একটু কম বা বেশি অমুক তমুক হলে চলবে না।"
কি মুশকিল !

তার নিচে আবার লেখা: ‘মাছ চাই। টাটকা। একদম যেন লাফায়। লাফালে বুঝব টাটকা। আর মাছের চোখ যেন আমার চোখের মতো সরল হয়, কোনো চালাকি যেন না থাকে।’

আমি মাছের বাজারে গিয়ে কোনো মাছওয়ালাকে কোনোদিন বলতে পারব না, "দাদা, তোমার এই মাছটার চোখ কি আমার স্ত্রীর চোখের মতো সরল?" বললে নির্ঘাত লোকে আমাকে চাঁদা তুলে মারবে, তারপর শ্রীঘরে পাঠাবে।

এগুলো সবই বিবাহের ফলাফল ! কী সাংঘাতিক চক্রান্ত ! আমাকে লাফানো মাছ খুঁজতে হবে, আর লাফানো মাছ মানেই তো দাম বেশি। দাম বেশি মানেই আমার পকেটের ওপর আরেক ধরনের অনিবার্য আক্রমণ।
উফফ! কি বিরক্তিকর!
তবু গেলাম। গেছি আমি বহুবার। আজ প্রথম নয়। জীবনে এমন অনেক কাজ করতে হয়, যা করার কোনো মানে হয় না, তবুও আমরা করি।

যাইহোক বাজারে গিয়ে দেখি, আলু সব বড়ো, অথবা সব ছোট। মাঝারি মাপের আলুগুলো কেউ যেন কায়দা করে সরিয়ে রেখেছে। শেষে এক আলুওয়ালার ওপর রাগ করে বললাম, “এই নাও পঁচিশ টাকা, তোমার সব মাঝারি মাপের আলু আমাকে দিয়ে দাও।”

মাছের বাজারে গিয়ে দেখি, সব মাছই চুপচাপ। কেউ লাফায় না। তারাও জানে, এই ভরা বাজারে লাফানোটা নিতান্তই এক প্রকার বোকামি।

শেষে একটি না লাফানো মাছ কিনেই বাড়ি ফিরলাম।

স্ত্রী দেখলেন বাজার।

স্ত্রী (শান্ত গলায়): আলু?

আমি (ক্লান্ত স্বরে): মাঝারি।

স্ত্রী: কিন্তু এই যে একটা আলু, এর সাইজ কি ঠিক মাঝারি মনে হচ্ছে তোমার? এটা কি একটু বড়ো হয়ে যায়নি?

আমি: হতেই পারে। এই সামান্য আকারের তারতম্য নিয়ে কেন এত দুশ্চিন্তা? জীবন তো নিজেই একটা বড়ো আকারের ভুল।

স্ত্রী (মাছের দিকে তাকিয়ে): এই মাছ এনেছো! এ তো বাসি!

আমি( থতমত হয়ে) : না না আগে লাফিয়েছিল, কিন্তু এখন আর লাফাচ্ছে না । না, মানে আমি এর চোখ দেখেই এনেছি, তোমার মতোই সহজ সরল । এর মধ্যে কোনো ছলনা নেই। জীবনে স্থির থাকাটাও এক ধরনের কঠিন সততা। তুমি তো জীবনভরের সততা চেয়েছিলে, তাই স্থির মাছ এনেছি।

স্ত্রী (দীর্ঘশ্বাস ফেলে): তোমার সঙ্গে কথা বলা আর এই শুকনো মাছের মধ্যে তাজা প্রাণ খোঁজা— দুটোই সমান অর্থহীন।

আমিও বললাম, "ঠিক তেমনই বাজার করা আর সংসার করা— দুটোই এক প্রকার অর্থহীন প্রচেষ্টা।এইটা যে তুমি কবে বুঝবে....!"

এইভাবেই, আলু, মাছ এবং কিছু অপ্রয়োজনীয় বাগ্‌বিতণ্ডার মাধ্যমে বিবাহ নামক দীর্ঘ, নমনীয় ও রঙিন সরল সুতোয় বাঁধা আমাদের দাম্পত্য জীবনটি ধীরে ধীরে গড়িয়ে চলেছে। এটাই নিয়ম।
 
Back
Top