- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 407
- Messages
- 5,564
- Reaction score
- 2,011
- Points
- 3,913
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
বাঘ বিধবা - বেঁচে থাকার লড়াই
(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)
(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)
সেবার সুন্দরবন ঘুরতে গিয়ে , ভোরবেলা বন আর মানুষের সীমানাকে আলাদা করে রাখা নদীর পাশে পাশে চলতে থাকা বাঁধের রাস্তার উপর দিয়ে উদ্দেশ্যেহীন ভাবে বাইক নিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখছিলাম বনের কোল ঘেঁষে মানুষের জীবনকে। বাঁধ বা ভেরির পাশে কোথাও গোলপাতার ঝাঁড় কোথাও ছোট ছোট গরান বন আবার কোথাও কেওড়া বন। এক এক টুকরো সুন্দরবন আর অপরদিকে মানুষের ঘর বাড়ি। সকাল বেলা জেলেরা ছোট ছোট নৌকায় মাছ ধরছেন। কিছু মহিলাকেও দেখলাম মাছ ধরতে।
একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লাম। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সকালের সুন্দরবনের অপরূপ সূধা পান করছি। এমন সময় দেখলাম এক মহিলা আমার পাশে দিয়ে নদীর পাড়ে নেমে যাচ্ছে। নিচে একটা ছোট ডিঙি নৌকা বাঁধা আছে। হাতে বেশ কিছু জিনিস পত্র ছিল। এর মধ্যে একটা বড় টিফিনকারি বাঁটি ছিল। আমি ওনাকে ডাক দিলাম, জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় যাবে ? জঙ্গল করতে যাবে উত্তরে আমাকে জানালেন। আমাকে নিয়ে যেতে অনুরোধ করলাম। কিন্তু রাজী হয় না, কিছুতেই রাজি হয় না। অনেক অনুনয় বিনয় ও কিছুটা বখশিস দেয়ার কথা বলে রাজি করালাম। নৌকায় উঠে বসলাম।
কখন ফিরবেন ? ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হবে। জিজ্ঞেস করলাম এই খাবার কি নিজের জন্য ? বনের মধ্যে কি যেন নাম ঠিক মনে নেই একটা খালে ওর ছেলে কাল রাতে মাছ ধরতে গিয়েছে, তার খাবার। শেষ রাতে গিয়ে জাল পাততে হয়। এখন উনি পৌছোলে দুজন মিলে জাল ওঠাবে। আস্তে আস্তে লোকালয় থেকে দূরে সরে আসতে থাকলাম। এখানে দুপাশেই গভীর জঙ্গল। ওনার সঙ্গে পরিচয় জমিয়ে তুললাম। বয়স ৫০ - ৫২ হবে। কিন্তু দেখতে বেশি বয়সী মনে হয়। জীবন যুদ্ধে বয়সের কাছে পরাজিত হয়েছে। উনি একজন বাঘ বিধবা। আজ থেকে ১৫ বছর আগে স্বামীকে বাঘে খেয়েছিল। তারপর থেকেই শুরু ওর জীবন যুদ্ধ ...
আগে ওর স্বামীর বাঘে ধরার কাহিনী শুনে নিই, তারপর তার জীবন সংগ্রামের গল্পও শুনবো ...
ধরে নেই ওনার নাম মাধুরী (ছদ্মনাম)। তখন মাধুরীর বড় মেয়ের বয়স ছিলো ১০ বছর আর ছোট্ট ছেলেটির বয়স ৫ কি ৬ বছর হবে। নিত্যদিনকার মতো সেদিনও মাধুরীর স্বামী আলো ফোটার আগেই জাল দড়ি নিয়ে চলে যায়। সাথে ছিল পাশের গ্রামের নিরঞ্জন। দুজনে বন্ধু ছিল। অনেক বছর ধরে একসাথে জঙ্গল করে। সেদিন ও শেষ বারের মত গিয়েছিল।
খালটি খুব চাপা ছিল। পারশে আর চিংড়ি পাওয়া যায় এই খালে। পূর্ব দিকে সূর্য তখন উঠে গেছে। বনের ভেতর থেকে অন্ধকার এখনও বিদায় নেয়নি। এমনিতে চাপা খাল, আবছায়া অন্ধকার । কিছুক্ষণের মধ্যেই জল নেমে যাবে ভাটা শুরু হবে। নিরঞ্জন নৌকায় জাল ছাড়াতে থাকে আর মাধুরীর স্বামী খুঁটি পুঁততে নেমেছিল খাল পারে। এমন সময় নিরঞ্জন আবছা আলোয় দেখে জঙ্গলের ভেতর কি একটা ছায়ার মতো নড়াচড়া করছে, মাধুরীর স্বামী যেখানে খুঁটি পুঁতছে তার ঠিক মাথার উপরে ...
ওকে সাবধান করার সময়ও পাওয়া গেল না। ভয়ংকর গর্জন করে এক লাফে মানুষটার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঘের থাবার আঘাতে খালের কিনারা থেকে ছিটকে পড়ে জলেতে। বাঘও টাল সামলাতে না পেরে কাদায় গেঁথে যায় অনেকখানি। এই সুযোগে নিরঞ্জন তার বন্ধুকে বাঁচাতে নৌকার বৈঠা দিয়ে আঘাত করে বাঘের পিঠে। একবার দুবার তিনবার। বাঘ বিপদ দেখে দুই লাফে বনের মধ্যে চলে যায়। নিরঞ্জন তাড়াতাড়ি বন্ধুকে নৌকায় তোলে। রক্তে সারা শরীর ভেসে যাচ্ছে। এক টানে ছিড়ে ফেলে গায়ের জামা আর ভালো করে বেঁধে দেয় ক্ষতস্থান।
কিন্তু সুন্দরবনের বাঘেরা এতো সহজে ছেড়ে দেয় না। তার লব্ধ শিকার তার সামনে থেকে নিয়ে যাবে এটা এতো সহজ নয়। বেকায়দায় পড়ে তখন পালিয়েছিল বটে কিন্তু দৃশ্যপট ছেড়ে যায়নি। দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল। আবারও গর্জন করে লাফিয়ে পড়ে নৌকার পাশে, এবার আর নিরঞ্জনকে অবকাশ দেয় না, সামনের দুই হাতে ভর করে একলাফে উঠে পড়ে নৌকার উপর। উপায়ান্তর না দেখে নিরঞ্জন লাফ দেয় জলেতে। নেতিয়ে পড়ে ছিল নৌকার উপর মাধুরীর স্বামী। তখনও জ্ঞান ছিল। মাজায় কামড়ে ধরে মুখে তুলে নেয়। লাফ দিয়ে নৌকা থেকে নেমে ধীরে ধীরে চলে যায় বনের ভেতর। কোনো তাড়াহুড়ো নেই। কে রুখবে এই বনের ভেতর তাকে !! শুধু নিরঞ্জনের আস্ফালন শোনা যেতে লাগল। একা একা ফিরে এসেছিল সেদিন নিরঞ্জন। মাধুরীর কাছে পৌছে দিয়েছিল রক্ত মাখা শার্টের টুকরো।
দাঁড় বাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মাধুরী। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছিল। এই গল্প এর আগেও অনেকবার তাকে শোনাতে হয়েছে। কিন্তু এর পরের জীবন সম্পর্কে আর কেউ কিছু শুনতে চায় না। আমি তাকে এর পরের জীবন যুদ্ধের কথা বলতে বলি।
শুরু হয় মাধুরীর জীবনের পরের অধ্যায়....
স্বামী মারা যাওয়ার পর মাধুরীর জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। ছোট ছোট দুটি বাচ্চা। দুবেলা দুমঠো খাবার ওদের মুখে তুলে দেয়া মাধুরীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো সহযোগিতা করে না। আরও বলতে থাকে তুই ডাইনি, তুই স্বামীকে খেয়েছিস এবার আমাদেরকে খাবি।
মানুষের বাড়িতে কাজ নেয়। প্রথম দিকে ভালোই চলছিল। বাড়ির গৃহকর্ত্রী ভালো মহিলা। মাধুরীকে যথেষ্ট সাহায্য করে। কিন্তু গৃহকর্তার আচরণ দিন দিন অসভ্য হয়ে ওঠে। একদিন মাধুরীকে একা পেয়ে হাত চেপে ধরে। ওকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে মাধুরী কিন্তু অমানুষটা আরও বেশি অসভ্যতা করতে চেষ্টা করছিল। মাধুরী কষে এক চড় বসিয়ে দেয় ওর গালে। তারপর এক দৌড়ে বেরিয়ে আসে ঐ বাড়ি থেকে। আর কোনোদিন যায়নি।
মানুষের বাসায় কাজের কথা আর কোনোদিন মাথায় আসেনি মাধুরীর। কিন্তু খাবে কি ? কিভাবে মানুষ করবে বাচ্চা দুটিকে। চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যায়। কোনো কূল কিনারা করতে না পেরে গ্রামের মাতব্বরের সাথে দেখা করে। মাতব্বর বাবার বয়সী। সে তাকে আশ্বস্ত করে, সরকার থেকে ভাতা পাইয়ে দেবে। সেদিন গভীর রাতে মাধুরীর ঘরের কড়া নাড়ে মাতব্বর। এতো রাতে মাতব্বর চাচাকে দেখে অবাক হয় মাধুরী। চাচা মাধুরীকে বলে, তার কথা মতো চললে সরকারি সব সুবিধা পাইয়ে দেবে। মাধুরী মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দেয়। সেদিন রাতে মা বনবিবি মাধুরীর স্বপ্নে দেখা দেন ...
সকালে উঠে মাধুরী সিদ্ধান্ত নেয়, আর কোনো মানুষের কাছে সাহায্য চাইবে না। এই বনই ওদেরকে এতো দিন খাইয়েছে, পড়িয়েছে। ঐ বনের কাছেই ও ফিরে যাবে। মা বনবিবি ওকে স্বপ্নে নির্দেশ দেন, বনে ফিরে যেতে। স্বামী হয়তো মার কোনো নির্দেশ পালন করেনি তাই তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে। নৌকা তো ছিলই। নিরঞ্জনের সঙ্গে দেখা করে স্বামীর জাল দড়ি নিয়ে আসে। তারপর থেকেই শুরু হয় মাধুরীর বন্য জীবন ...
প্রথম প্রথম বনের বেশি ভেতরে যেত না। বাড়ির পাশের নদীতে চিংড়ির পোনা ধরতো। এভাবেই যা আয় হচ্ছিল তাই দিয়ে কোনো রকমে চলে যাচ্ছিল। বনই ওদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। খাদ্য দিয়ে, অক্সিজেন দিয়ে, মমতা দিয়ে আগলে রাখছিল ওদের। ছেলেমেয়েরা বড় হতে থাকে পরম মমতায়। ওরা এখন মাকেও সাহায্য করে। একদিন ওরা মাধুরীকে বলে, মা আমরা তো এখন বড় হয়েছি, এখন তো আমরা জঙ্গল থেকে দামী দামী মাছ ধরতে পারি। মাধুরী রাজী হয়ে যায় ...
একদিন সত্যিই ওরা তিনজনে মিলে বড় নদী পার হয়ে ছোট ছোট নদী খাল দিয়ে বনের ভেতর প্রবেশ করে। অবাক বিস্ময়ে দেখছিল সুন্দরবনের সৌন্দর্য। সেদিন জাল পেতেছিল এক খাঁড়ির ভেতর। জাল পেতে বড় নদীতে অপেক্ষা করছিল ভাটার জন্য। খাঁড়িটা দুপাশের গভীর জঙ্গল ভেদ করে ওপারে গিয়ে নদীর সাথে মিলেছে। ভাটার টান শুরু হলে ওরা বড় নদী থেকে খাঁড়ির দিকে আসতে থাকে। যতক্ষণে ওরা খাঁড়ির মুখে ততক্ষণে জল নেমে গেছে। নৌকা নিয়ে আর ঢুকতে পারবে না। খাঁড়ির মাথায় নৌকা নোঙর করে রাখলো। তারপর তিনজনে নেমে পড়ে খাঁড়ির কাদায় ...
খাঁড়িটা সামনে কিছুটা এগিয়ে ডানে বাঁক নিয়ে চলে গেছে বনের গভীরে। ঐ বাঁকের মুখে ওরা জাল পেতেছিল। বাঁক ঘুরতেই একদম চোখাচোখি ...
এর আগে ওদের তিনজনের কেউই বাঘ দেখেনি। আজ দেখছে। একদম চোখের সামনে। কতো বড় জানোয়ার আর কি সুন্দর দেখতে। হলদে ডোরাকাটা পেশীবহুল শরীর। সূর্যের আলোতে চিক চিক করছিল। ওদের মাঝে ১৫ - ২০ হাতের ব্যবধান। দু পক্ষই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। দুজনেই দুজনকে দেখছে। ওদের তিনজনের কাছে লাঠি আছে। কিন্তু সেটা ওঠানোর কথা একবারও মনে হয় নি।
ওদের পাতা জাল থেকে মাছ ধরে খাচ্ছিল। জল নেমে গেলে সব মাছ জালে আটকা পড়েছে। জাল থেকে একটা একটা করে মাছ ধরছে আর মুখে চালান করে দিচ্ছে। কোনো দ্বিধা নেই, সংকোচ নেই। একটু ভয়ও পাচ্ছে না, কেনই বা পাবে, এই বনে কে আছে যে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। ঐ তিনটি মানুষ ? না এতো সাহস ওদের নেই। পেট ভরে গেলে আস্তে আস্তে জঙ্গলের ভেতর দিকে চলে যায়। চলে যায় তবে পলাতকের মতো করে নয়, রাজার মতো করেই প্রস্থান।
মাধুরী দুই ছেলে মেয়েকে দুই হাতে চেপে ধরে থাকে। ফিস ফিস করে বলে "চুপ করে এইকানে দাঁড়িয়ে থাক, নড়বিনে একফোঁটাও। ও আবারও ফিরে আসতি পারে, তোদের বাপজানকে এমন করেই ফিরে এসে নিয়ে গেছিলো।"
তিনজন এক হাতে লাঠি আর এক হাতে একে অন্যকে শক্ত করে ধরে আছে। নিলে ওদেরকে একসঙ্গেই নিতে হবে, এমন একটা ভাব। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে, বনের ভেতর থেকে কোনো নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে না। এবার মাধুরী আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে জাল গোছাতে থাকে। মাছের ভারে জাল টেনে তোলাই মুস্কিল। ছেলেটা জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে খলুইতে রাখতে যাচ্ছিল। তাই দেখে মাধুরী হিস হিস করে ওঠে, "খবরদার অতো বাড়া বারিসনে বাজান। জাল ঔঠে একান থেইকে চল জলদি। শেয়াল বেশি দূর যায়নি গো, লুইকে লুইকে ঠিকই আমাদের দ্যাখছে গো।"
ওরা তাড়াতাড়ি জাল গুছিয়ে নৌকায় ফিরে আসে। মাধুরী নাও ভাসিয়ে দেয় জলে। খাঁড়ির মাথায় থেকে রওনা দিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলেই সামনে আরেকটি খাঁড়ির প্রবেশ মুখ। সেখানেই গলা উচিয়ে ওদের নৌকার দিকে তাকিয়ে আছে বনবিবির বাহন। মাধুরী চিৎকার করে ওঠে, "দেখেচিস আমি বলেছিলাম না ও ঠিকই আমাদের দ্যাখছে। নে, আর ভয় নেই মা বনবিবি ওকে পাঠিয়েচিলো তোদেরকে দেকে রাকার জন্যি। এর পর থেকে মাছ মারতি আসলি পারে কয়টা মাছ ওর জন্যি থুয়ে যাবি"।
নৌকাটা একটা খালের মুখে দাঁড়িয়ে গেল। দূরে খালের ভেতর একটা নৌকা দেখা যায়। মাধুরীর দিকে তাকালাম, মায়ের মমতা নিয়ে তাকিয়ে আছে দূরের নৌকার দিকে। নৌকাটা এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। মাধুরী বললো, মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি, ও, ভালোই আছে, জামাই চাকরি করে। নৌকাটা আমাদের নৌকার পাশে এসে দাঁড়াল। বছর বিশেকের সুঠাম দেহের যুবক। মাধুরী আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, তোর এই ভাই আমাদের নিয়ে গল্প নিখবেন। তোর বাপের মতন যাদের বাঘে খেয়েছে তাদের নিয়ে নেখেন।
চোখ মুছতে মুছতে আমাকে বললেন, "বাবারে তোমার এই নেকা (লেখা) হয়তো অনেক মানুষ পড়বে, কিন্তু আমাদের জীবনডা তো এমনিই থ্যাইকা যাবে। তা থাকুক, তাও বাবা তুমি নিকবা আমাদের কথা। আর বেশি করে নিকবা ঐ জঙ্গলের কতা। এই জঙ্গলই আমাদের বাপ-মা। ওরে ছাড়া আমরা বাচিনে। ঐ বড় শেয়ালের (বাঘ) কতাটা নিকতে ভুলো না। মা বনবিবির আশীর্বাদে ঐ আগলে নেখেছে এই জঙ্গলটাকে। ও না থাকলি পারে এই জঙ্গলটা আর থাকপি নারে বাবা" ...
সমাপ্ত