Collected আরব্য রজনীর গল্প - মোস্তাফিজুর রহমান টিটু

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,009
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
*****আরব্য রজনীর গল্প*****

মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু






শেহেরজাদ পুরানো দিনের কিসসা বহুত শুনছি । এবার ভবিষ্যতের কিসসা শুনাও ।
জি হুকুম জাহাঁপনা, আমি আপনাকে আমেরিকা নামক দেশের ভবিষ্যতের গল্প বলি ।
কোন দেশ বললে আমেরিকা, যে দেশ ব্রিটিশ পরবর্তী যুগে পৃথিবীর মোড়ল হবে ; যারা হবে বৃটিশদের চাইতেও বেশী চালাক, কোনো দেশ দখল করবে না কিন্তু মোড়লগিরী করবে সব জায়গায়; আমাদের আরবদের তেল নিয়ে আমাদের চাইতেও বেশী ব্যবসা করবে; ইসরায়েল নামক এক দেশ তৈরী করে আমাদের এই অঞ্চলে এক চলমান সমস্যা তৈরী করে রাখবে ।
জি জনাব, সেই দেশ । তবে এসব তো রাজনৈতিক গল্প । আমি আপনাকে অন্য গল্প বলবো ।
সেটাই ভালো, রাজনীতি মানে তো এ ওর পিছে কাঠি নাড়ানাড়ি করা । সারাদিন এসব তো আমাকেও করতে হয় । ওসব কিসসা শোনার কোনো মানে হয় না । দেখি তুমি অন্য কি গল্প শোনাতে পারো । বাবুর্চি আজকে আবার বঙ্গদেশের খিচুড়ি খাওয়াইছে; দারুণ স্বাদ । অদ্ভুত দেশ, শুধু চাল ডাল মিশাইয়াই যে এমন খাবার তৈরী করা যায় জানা ছিলো না । অন্য আর একদিন আমাকে বঙ্গদেশের গল্প শোনাইও ।

জি হুজুর শোনাবো ।

যখনকার গল্প বলছি তখন মানুষের আর তেমন কাজ করার দরকার হয় না । যন্ত্রই বেশীরভাগ কাজ করে দেয় । জিনিষটা প্রবলভাবে শুরু হয় আমেরিকা থেকেই । কম্পিউটার, এ, আই রোবট এসব আবিস্কার করে মানুষের কাজের পরিমান অনেকটাই কমিয়ে ফেলা হয় । এছাড়া বিশ্বজুড়েই লোকদেখানো যুগ প্রায় শেষ হতে চলেছে ।

লোকদেখানো যুগ, সেটা আবার কি যুগ ?

আলমপনা সে এক অদ্ভুত কাল । জানি না আপনাকে ভালোভাবে বুঝাতে পারবো কি না । ছোট একটা উদাহরণ দেই, ঐকালে সবার জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী এমনকি ব্রেক আপ দিনও ঘটা করে পালন করা হতো ।

তার মানে কি সবাই তখন রাজা ছিলো ? আমি যেমন আমার জন্মদিন সব প্রজাদের খাওয়া দাওয়া উপহার দিয়ে উদযাপন করি তেমন ?

না জাহাঁপনা, আপনি যেভাবে আপনার জন্মদিন প্রজাদের সাথে পালন করেন, তেমন না । তখন একজন উৎসব করবে; খাওয়া দাওয়া করবে আর সেসবের ছবি সবাইকে দেখাবে আর সবাই সেটা দেখেই খুশীতে হাততালি দিবে ।
কি বলো না খেয়ে খাবারের ছবি দেখেই খুশী । অদ্ভুত গর্দভ যুগ তো ।

সে জন্যই বলেছিলাম জাহাঁপনা এসব ঠিক বোঝাতে পারবো না, তাছাড়া আমার গল্প এই কালের শেষ প্রান্তের গল্প ।

আমেরিকার জন্ম যেভাবেই হোক না কেনো তারা সব সময় গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা । বিচার ব্যবস্থা সেই গণতন্ত্রের এক বড় খাম্বা । সমস্যা শুরু হলো এই খাম্বা নিয়ে ।

কি সমস্যা ?

আগেই বলেছি, কালটা হবে যন্ত্রের কাল ।

রোবটরা মানুষের প্রায় সব কাজ করে দিচ্ছে । আমেরিকা হলো বেনিয়াদের দেশ এরা আবার এর একটা গালভরা নামও দিয়েছে ; ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটি । তো এই ক্যাপিটাল লুটে পুটে নিতে সবাই ব্যস্ত । আমেরিকার অধিকাংশ মামলার মূল উদ্দেশ্য হলো টাকা পয়সার ভাগ বাটোয়ারা ; যন্ত্রের কালে সেটা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক । ধরেন রাস্তায় উষ্ঠা খেয়ে কেউ ব্যথা পেলো; সাথে সাথে মোবাইলে দরাদরি-১৫ কিংবা আইনাদিমু-১০ থেকে ফোন আসবে । আপনি তাড়াতাড়ি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন । আসেন মামলা করেন; যা টাকা পাবেন তার অর্ধেক আপনার অর্ধেক আমাদের; শুধু তাই না পরের মামলায় পাবেন পচাত্তর ভাগ এছাড়া এখন চলছে ক্রিসমাস অফার, আপনি মামলা করলে পরিবারের যে কেউ পরবর্তী মামলায় দশ ভাগ বেশী টাকা পাবেন ।

দরাদরি-১৫, আইনাদিমু-১০ এগুলি কি ?

জাহাঁপনা এগুলো আমিও ভালো বুঝি না । ঐ কালে এগুলিকে এ আই বট বলে ডাকা হবে । যা বলছিলাম মামলায় মামলায় দেশ ছাড়খার । সরকার কোনোভাবেই সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না । বেনিয়া দেশ ব্যবসা তো বন্ধ করতে পারে না আবার এরকম অবস্থাও চলতে পারে না । বাধ্য হয়ে সরকার একটা নতুন বিভাগ চালু করলো, মামলা নিরীক্ষণ বিভাগ । বিভাগের কাজ হলো কোন মামলা কোর্টে যাবে, কোন মামলা সরাসরি নাকচ আর কোন মামলা বিচার ছাড়াই সাজা হবে তা ঠিক করা । তো এই বিভাগেই চাকরি হলো এক বঙ্গ সন্তানের । নাম আইজুদ্দিন । এই লোকের পূর্ব পুরুষ একদা ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে চিকা মারতো
“অপেক্ষায় আছি , আইজুদ্দিন “
কিসের অপেক্ষায় আছে কেনো অপেক্ষায় আছে সেটা নিয়ে গোটা শহরের মানুষ ভাবতো । আহারে আর কতকাল আইজুদ্দিন অপেক্ষায় থাকবে ।

পরবর্তীকালে “সুবোধ তুই পালিয়ে যা” এরকম চিকা নিয়েও ঢাকা শহরের মানুষ ভাবিত হবে । কি কথায় কি বলছি ।

বলো বলো । তোমার কাজই তো গল্প বলা । তবে গল্প শুরু করার আগে বঙ্গদেশের চুন সুপারি আর মিষ্টি জর্দা দিয়ে একটা পান দেও তো ।

শেহেরজাদ পান তৈরী করে আবার গল্প শুরু করে ।

যা বলছিলাম আইজুদ্দিনের বসের নাম হলো রাবিশ ট্রাম্প । প্রথম তিনটা মামলা দেখেই আইজুদ্দিন উত্তেজিত হয়ে বসের কাছে গেলো ।

স্যার এই মামলার বিবাদী নিশ্চিতভাবেই দোষী । সে ইচ্ছা করে বিবাদীকে কম দামী মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স নিতে বাধ্য করেছে । আরো আছে …
থামো থামো । বাদীর ক্রেডিট রেটিং কতো । মিঃ রাবিশ আইজুদ্দিনকে থামায় ।
৫৯০ স্যার ।
আর বিবাদীর ।
৮৪২ স্যার ।
তুমি কি পাগল আইজুদ্দিন, এই মামলা নিয়ে আসছো । মামলা ডিসমিস । আসামী বেকসুর খালাস ।

কিন্তু স্যার অভিযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ আর সাক্ষ্য প্রমাণও আছে ।
যত কিছুই থাক এই মামলা ডিসমিস ।
কিন্তু স্যার ।
আবারও কিন্তু । আচ্ছা আইজুদ্দিন বলো তো ঈশ্বরের ক্রেডিট স্কোর কতো ?
ঈশ্বরেরও কি ক্রেডিট স্কোর আছে নাকি স্যার ?
তুমি না আমেরিকায় পড়াশুনা করেছো । ক্যাপিটালিস্ট থিওরির প্রথম কথাই তো হলো সব কিছুর একটা দাম আছে । সব কিছুর যদি দাম থাকে তাহলে ঈশ্বরেরও ক্রেডিট স্কোর আছে । ঈশ্বরের ক্রেডিট স্কোর হলো ৮৫০ । যেটা ক্রেডিট স্কোর এর সর্বোচ্চ মান । তোমার বিবাদী ক্রেডিট স্কোর এর দিক দিয়ে প্রায় ঈশ্বরের সমতুল্য । ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কি মামলা দেয়া যায় ! তাছাড়া আইনে ডিপ পকেট বলে একটা তত্ত্বই আছে । এই লোক এই কোর্ট সেই কোর্ট ঘুরে ঠিকই নির্দোষ প্রমানিত হবে । আমাদের কাজ ঝামেলা কমানো, বাড়ানো না । তোমার হাতে আরো দুইটা ফাইল দেখছি । ঝটপট বলে ফেলো ওগুলোতে কি আছে ।

জি স্যার এটা একটা জালিয়াতির মামলা । কাহিনী হলো ?
থামো থামো, এত কাহিনী শোনার সময় নাই । বাদী-বিবাদীর ক্রেডিট স্কোর কতো । স্যার একজনের ৬৮০ আর একজনের ৬৯৫ ।

হুম, পিওর মিডল ক্লাস হিপোক্রেট । শুধু আমেরিকায় না এরা সারা দুনিয়ায় একইরকম । বউরে হানি ডাকে যে হাসি দিয়ে সেই একই হাসি দিয়ে গার্লফ্রেন্ডকে বলে বেবি । এদের কেস কোর্টে চালান দেও । পরেরটা বলো ।

স্যার এই কেসটা খুব মানবিক । বিবাদীকে পরিস্কার ফাঁসানো হয়েছে । বিবাদী খুব সৎ লোক, বিধবা মায়ের একমাত্র ছেলে, কঠোর পরিশ্রমী । কেসটা একটু বলি স্যার ।

আইজুদ্দিন একদিন পরেই হ্যালুইন পার্টি । তুমি যখন বলছো তখন কেসটা আমি মনো্যোগ দিয়েই শুনবো । কিন্তু তার আগে বলো বাদী আর বিবাদীর ক্রেডিট স্কোর কতো ।

স্যার বাদীর ৭০৫ আর বিবাদীর কোনো ক্রেডিট স্কোর নাই ।

কি বললা ক্রেডিট স্কোর নাই আর সেই ফাইল তুমি পড়তেছো । এই লোককে এখনই জেলে ভরো ।
কিন্তু স্যার ।
আবারও কিন্তু । এই দেশে ক্রেডিট স্কোর ছাড়া একজন লোক গাড়ি কিনতে পারবে না, বাসা ভাড়া নিতে অসুবিধা হবে, পানির লাইন, গ্যাসের লাইন পাইতে অসুবিধা হবে এমনকি একটা মোবাইল ফোন নিতেও কষ্ট হবে । তোমার কথা মতো সে যদি ভালো লোকও হয় সেই ভালো কেমন জানো ?

প্রশ্ন করলেও আইজুদ্দিন মাথা নিচু করে কোনো উত্তর দেয় না ।

মিঃ রাবিশ নিজেই উত্তর দেন । ধরো এক লোক এক জনমানবহীন দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা ছিলো । এখন সে যদি বলে আমি চরিত্রবান সেই কথার কি কোনো মানে আছে । আমরা তো আর দ্বীপের পশু পাখিদের কাছে তার চরিত্রের সার্টিফিকেট নিতে যাবো না । এই লোকের ক্রেডিট হিস্টোরি নাই মানে “হি ইজ নো বডি টু আস, সো হি শুড রিমেইন ইন জেইল” ।

শোনো আইজুদ্দিন । আমাদের পুর্ব পুরুষরা এই ক্রেডিট হিস্টোরী নামক চমৎকার এক ব্যবস্থা চালু করে দিয়ে গেছেন । আমার তো মনে হয় পরলোকে ঈশ্বরও এই ক্রেডিট হিস্টোরী দেখেই আমেরিকানদের বিচার করবেন । তুমি একটু ব্যাপারগুলো বোঝার চেষ্টা করো । আইজুদ্দিন বিষন্ন মুখে অফিস থেকে বের হয়ে নিউইয়র্কের দেয়ালে চিকা লিখলো ।

“অপেক্ষায় আছি, আইজুদ্দিন ।“

আইজুদ্দিন কিসের অপেক্ষায় আছে, কেনো অপেক্ষায় আছে কোনো কোনো উদাস নিউইয়র্কবাসীর মনে রংধ্নুর মতো মাঝে মাঝেই উদিত হয় ।
 
Back
Top