Collected অচেনা অসুখ - হায়দার আলী

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,005
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
*****অচেনা অসুখ*****

মূল লেখকঃ হায়দার আলী





পর্ব ১

১৯৭৭ সাল। আমার স্মৃতির পাতার সূচনালগ্ন বলা যায়। দাদার একান্নবর্তি কৃষক পরিবার। এই পরিবারে আমার দাদা দাদি, আমার আব্বা আম্মা আমার বড় ভাই আমি এবং চার বছরের ছোট বোন বেলী, দুই কাকু, পাঁচ ফুফু, আমার দাদার স্থায়ী সহকারী রুক্কু এবং দাদুর কতিপয় মহিলা সহকারী, গরু ছাগল, হাস মুরগি সব মিলিয়ে লোকে লোকারণ্য এক প্রাণবন্ত কৃষক পরিবার।

আমার মেঝো কাকু পরিবারের একমাত্র উচ্চশিক্ষিত মেট্রিক ফেইল জ্ঞানী ব্যাক্তিত্ব। তার সৌর্যদীপ্ত চৌকস চেহারা, জ্ঞানগর্ভ সাবলিল বাচনভংগি এবং সাহসী মনোভাবের জন্য পরিবারের তথা গ্রামের সকলের শ্রদ্ধা, স্নেহ এবং সম্মানের পাত্র।

ছোট কাকু রিপন, আমার বড় ভাই টিপু এবং ফুফাত ভাই লিটন এই তিনজন সমবয়সী নব্য স্কুলগামী ছাত্র। আদর্শলিপির অনেক আদর্শবাক্য তোতা পাখীর ন্যায় মূখস্ত করা তাদের জন্য ইতিমধ্যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।, যেমন আলস্য দারিদ্র আনে, সত সংগে স্বর্গবাস, অসত সংগে সর্বনাস ইত্যাদি।, আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তখনও শুরু হয়নি তবে শুনে শুনে এরকম অনেক বাক্যই আমি তখন মূখস্ত করেছিলাম যা এখন ভুলে গেছি।

আমার মেঝো কাকুর কঠোর শাসন, একটুতেই কাকুর হাতের কানমলা, চিকন জিংলার বারি, কাকুর আনকমন প্রশ্ন ইত্যাদির ভয়ে আমরা বাছকিনার দল সর্বদায় ত্রঠস্থ থাকতাম। সন্ধায় সূর্য্য ডুবার সাথে সাথে পাটি বিছিয়ে কুপি অথবা হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসা ছিল বাধ্যতামূলক। আমি তখন স্কুলে না গেলেও সন্ধ্যাকালে সবার সাথে পড়তে বসা ছিল আমার জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। পাটকাটির কলম বানিয়ে বড় বড় স্বর্বণের উপর হাত ঘুরানো শুরু করেছিলাম তখন। কোন কারনে কোন অজুহাতে আমি যদি পড়তে না বসতাম এবং কাকু সেটা বুঝতে পারতেন তবে সেদিন আমার রাতের খাবার নিষিদ্ধ ছিলো। একমাত্র আব্বা ছাড়া আর কারো ক্ষমতা নেই আমার রাতের খাবার অনুমোদন দেয়। কাজেই রাত যতই হোক আব্বা বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত আমার উপোস থাকা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা।

বেলী আমার পিঠেপিঠি ছোট বোন। বয়স চার বছর। পরিবারের প্রথম মেয়ে শিশু। সকলের নয়নের মনি। তার কোন কাজ নেই। সদ্য ফুটন্ত বেলী ফুলের মত সৌরভ বিলানোই তার কাজ। সারাদিন শিশুসুলভ কলকাকলি আর একোল ওকোল ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আর তেমন কোন কাজ নেই।

চৈত্রের কোন এক পরন্ত বিকেল। বড়রা যে যার কাজে ব্যস্ত। আমরা পাড়ার শিশুরা খেলার মাঠে বৈকালিক ছুটোছুটিতে ব্যস্ত। বাড়িতে বেলী একা। হয়ত কাওকে কাছে না পেয়ে সে বাড়ির পিছনে একাকি চলে গেছে কিছুটা নির্জন জংলের ভিতর। এই সুযোগে কোন এক অচেনা আততায়ী হানা দেয় তার উপর। তারপর সদ্য ফুটন্ত বেলী ফুলটি ঝরে পড়ে ভিতর বাড়ির নির্জন আংগিনায়।

বেলীর নিষ্প্রাণ দেহটি যখন আবিস্কৃত হয় তখন বাড়িতে বিলাপের মাতম। আমি খেলার মাঠ থেকে ফিরে গোধুলির ঝাপ্সা আলোয় ঝাপ্সা চোখে দেখছি বেলী নেই। তার ফুটফুটে নিথর দেহটি কোল বদলে বিলাপের মাথম চলছে। আমি নির্বাক বিশ্বয়ে অপলক দেখছি আর ভাবছি কি হল? কেউ বলছে থাপা খাইছে। অর্থাত কোন এক অশরীরী আত্মা অথবা প্রেতাত্মার রোষানলের শিকার সে। আমি বুঝিনি কিছুই।

এখন ২০২০ সাল। এক অচেনা অসুখে সারা পৃথিবী আজ অসুস্থ। এই অচেনা অসুখের ভয়ে ঘরে বন্দি জীবন যাপন করছি আর ভাবছি, কি ছিলো সেই অচেনা অসুখ যার ছোবলে বেলী চলে গিয়েছিলো পৃথিবী ছেড়ে? আধুনিক বিজ্ঞানের এর ডিজিটাল যুগ পারবে কি দিতে সেই প্রশ্নের উত্তর?
 
Back
Top