Collected তলার দেশের অতল কথা - মোস্তাফিজুর রহমান টিটু

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,005
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
*****তলার দেশের অতল কথা*****

মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু






গল্প লেখার কথা ছিলো, একটা লিখেছিও । সারাদিন বাসায় বসে থাকি, কাজের ফাঁকে ফাঁকে বারবার ফ্রিজ খুলি । ভয়ে ভয়ে ওজন মাপি । নাহ ওজন তো একটুও বাড়ে নাই । শক্তির নিত্যতা সুত্রের মত মনে হয় পুষ্টিরও নিত্যতা সুত্র আছে । তাই বাড়তি পুষ্টির কারণেই গল্পটা নাদুস নুদুস হয়ে গেছে । এতটাই বড় যে জুকার মামা মাইন্ড করতে পারে । তাহলে কি করা, একটা সত্যি গল্পই লিখি । সংগত কারণে গল্পের চরিত্রগুলোর নাম বদলে দিয়েছি ।

একই শিরোনামে আগেও একটা গল্প লিখেছিলাম । তখন একজন প্রশ্ন করেছিলেন তলার দেশ কেনো লিখেছি । কারণটা আসলে খুব সাধারণ । বিশ্ব মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখবেন অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটা একটু নিচের দিকে ঝুলে আছে । সেই জন্যই একে অনেকেই Down Under বলে । সেটারই সহজ অনুবাদ ‘তলার দেশ’ ।

মেলা গীত গাওয়া হয়েছে । এবার আসল গল্পে আসি । আমার দীর্ঘ পেশা জীবনে সবচাইতে বড় সফটওয়্যার প্রজেক্টে কাজ করি তখন । টাকার অংকে যেমন বৃহৎ, লোকবলও অনেক; বিয়াল্লিশ জন । প্রজেক্টটা সরকারী প্রজেক্ট । ওপেন টেন্ডার এর মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠান কাজ পায় । প্রজেক্ট এর সর্বমোট মূল্য এখন আর মনে নাই । কিন্তু বোনাসটা মনে আছে । বলতে গেলে আমাকে সহ আরো অনেককেই মনে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে । ঠিক সময়ে প্রজেক্ট শেষ করতে পারলে ২ মিলিয়ন ডলার বোনাস পাবে প্রতিষ্ঠান । প্রজেক্ট শুরুর পর থেকেই এইটাই হাজারবার শুনতে হয়েছে । সব খানেই মনে হয় আসলের চাইতে সুদ বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয় ।

যাহোক প্রথম প্রজেক্ট ম্যানেজার লিন হাসি খুশী মানুষ । সকালে একবার বোনাসের কথা বলে, বিকালে একবার বোনাসের কথা মনে করিয়ে দেয় । আমরা ঠাট্টা করে বলি, ঐটা তো কোম্পানি পাবে আমরা কি পাবো সেটা বলো । জবাবে রাজনৈতিক নেতার মত নানা প্রতিশ্রুতি দেয় লিন, এবং নেতার মত কথা বলেই সেটা কেউই বিশ্বাস করে না । কিছুদিন পরেই প্রথম ফেজ এর আলফা রিলিজ হবার কথা । লিন এর আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও ডেডলাইন মিস হয় । দুই সপ্তাহ পরেই এক সকালে দেখি নতুন প্রজেক্ট ম্যানেজার । স্কট নাম, লিনের মতই হাসি খুশী লিনের মতই মাথার চুল পাতলা, তবে লিন ছিলো হালকা পাতলা আর স্কট দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশালাকার । মনে মনে ভাবি এই লোক তো ধারে না কাটলেও ভারে কাটার চেষ্টা করবে । প্রথম দিনেই সে মুখ হাসি হাসি করে বলে, আমি এগারো বছর সফটওয়্যার ডেভেলপার ছিলাম এবং আমার অধিকাংশ প্রজেক্টই ব্যর্থ ছিলো । সে হিসাবে আমাকে ব্যর্থ প্রোগ্রামার বলতেই পারো ।

শুনে সবাই হাসে । আমি মনে মনে ভাবি, ব্যর্থ খেলোয়াড় হয় সফল কোচ, ব্যর্থ সমাজ সেবক হয় সফল নেতা এবং ব্যর্থ প্রেমিক হয় সফল স্বামী । বাক্যের শেষ অংশটুকু আমার কথা না, আমার বন্ধুর কথা ...বুঝতেই পারছেন আমারও আপনার মতই একটা সংসার আছে । অতএব, সুতরাং এসব কথা বন্ধুর মুখ দিয়ে বলানোই নিয়ম । এই ব্যর্থতার সুত্র যদি ঠিক থাকে তাহলে স্কটের সফল প্রজেক্ট ম্যানেজার হবারই কথা ।

স্কটের প্রথম কাজটাই তাকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তুললো । সে ঘোষণা দিলো শুক্রবার লাঞ্চের পরে কোনো কাজ হবে না, কোম্পানির খরচে পিজা এবং বিয়ার খাওয়ানো হবে । চাইলে কেউ বাসায়ও চলে যেতে পারে । আমি স্কটের সূক্ষ্ম বুদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । কেনো সূক্ষ্ম বুদ্ধি বলছি তার কারণটা ব্যাখ্যা করি । অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ চাকুরীতে অসুস্থতার জন্য ছুটি দেয়া হয় এবং পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৭০ ভাগ অসুস্থজনিত ছুটি শুক্রবারেই নেয়া হয় । আমিও যেদিন অসুস্থ হই সেদিনটা কিভাবে কিভাবে যেনো শুক্রবারই হয় । আর অস্ট্রেলিয়ার বিয়ার সংস্কৃতি তো জগত বিখ্যাত । এর আগে প্রতি শুক্রবারেই ৪/৫ জন অসুস্থ থাকতো । এরপর থেকে শুক্রবারে আমি ছাড়া আর কেউই অসুস্থ হয় নাই ।

আমি অবশ্য শুক্রবার দুপুরে বাসায় চলে আসতাম । তিতকুটে বিয়ার না হোক পিজা খাবার জন্য হলেও থাকা যেতো । কিন্তু এখানকার কলিগরা বিয়ারের বোতল হাতে যে ধরনের আলাপে মেতে ওঠে তাতে এতকাল পরেও অভ্যস্ত হতে পারি নাই । উদাহরণ দেই । এড এর দুই যমজ মেয়ে, বয়স পনের । এডের সব রসিকতা এই দুই মেয়ের বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে । সেই সব রসিকতার অনেকটাই পদ্মার পলিমাটি দিয়ে তৈরী আমার কান ঠিক নিতে পারে নাই; এখনো পারে না । কি আর করা, আমার তো আর দোষ না, সব দোষ পলিমাটির ।

শুক্রবার দুপুরে অফিস থেকে বের হচ্ছি, পিছনে দেখি ভিন্সও আসছে । ভিন্স অন্য একটা টিমে কাজ করে যাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ খুব কম । ভিন্স বসেও ভিন্ন ফ্লোরে । আমি তিন তলায়, ভিন্স চার তলায় । ফোলা ফোলা গোলগোল চোখ, পরিপাটি পোশাক, শান্ত সমাহিত মুখ, কথা খুব কম বলে ।
-তুমি দুপুরের পার্টিতে থাকবা না । আমি জিজ্ঞেস করি ।
-নাহ । আমি ড্রিংক করি না ।
উত্তর শুনে একটু অবাক হলেও মুখে কিছু বলি না । হেটে হেটে বাস স্টপে আসি । ভিন্স এর বাসার দিকে তিন চারটা বাস রুট । এর মাঝে একটা আমার বাসার দিকেও যায় । ভিন্স অন্য দুইটা বাস ছেড়ে দিয়ে আমার সাথে আমার বাসেই ওঠে । এবং বাসে বসেই শান্ত সমাহিত মুখে চরম আপত্তিকর কথাটা বলে ফেলে ।
-তুমি তো মুসলিম ?
-হ্যা ।
আমি উত্তর দেই ।
-তোমার ধর্ম কিন্তু জিহাদকে সমর্থন করে ।
-মানে ?
-অন্যভাবে নিও না । আমি নিজে ধর্ম খুব ভালোবাসি । নিজের ধর্মের বাইরেও অন্য ধর্ম নিয়ে আমার আগ্রহ আছে । তোমাদের কোরানেই জিহাদের পক্ষে এই এই বলা আছে ।
বলে কোরানের কিছু আয়াতের কথা বলে ভিন্স । আমি ভীষণ বিরক্ত হই । প্রথমত আমি আসলে এসব আয়াত সম্বন্ধে একদমই জানতাম না, তার উপর এসব নিয়ে একজন অমুসলিম কলিগের সাথে আলাপের কোনো মানেই হয় না । তাই আমি এড়িয়ে যেতে চাই । কিন্তু নাছোড়বান্দার মত ভিন্স আমার মতামত জানতে চায় । আর একদিন বলবো বলে সেদিনের মত এড়িয়ে যাই । বাসায় এসে ইন্টারনেট ঘেটে প্রস্তুত হই । পরবর্তী দুই/তিন সপ্তাহ এসব নিয়েই যুক্তি তর্ক হয় ভিন্সের সাথে ।

ইচ্ছা করেই সেসব যুক্তি তর্ক বলছি না । একটা কারণ একজন মুসলিম হিসাবেই অন্য ধর্মের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে । তার চাইতেও বড় কারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে তর্ক করার মত আহাম্মকি দুনিয়ায় খুব কম আছে । ভিন্স এর সাথে নিতান্ত বাধ্য হয়েই অল্প কিছু তর্কে লিপ্ত হতে হয়েছিলো ।

তবে প্রথম দুই/তিন সপ্তাহের পরে আমাদের এ নিয়ে আর কোনো কথা হয় নাই । প্রতি শুক্রবারে নিয়ম করে আমরা দুজন একসাথে অফিস থেকে বের হতাম । হাটা পথে আর বাসে অনেক কথা হতো । এরকম কথায় কথায় জানতে পারি ভিন্স পালক বাবা মায়ের কাছে বড় হয়েছে । ভিন্স এর আসল বাবা মা ছিলো মাদকাসক্ত । তার বয়স যখন দেড় বছর তখন সরকার থেকেই ভিন্সকে তার মা বাবার কাছ থেকে সরিয়ে পালক বাবা মায়ের কাছে দেয়া হয় ।
-তোমার আসল বাবা মায়ের সাথে তোমার কখনো দেখা হয় নাই ।
আমি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করি ।
-হয়েছে, দুইবার । নোংরা লোকজন ।
ভাবলেশহীনভাবে উত্তর দেয় ভিন্স ।
-আমি আমার পালক বাবা মাকেই আসল বাবা মা বলে বিশ্বাস করি । জানো তো বাবা মা কিন্তু আসলে একটা বিশ্বাসেরই নাম । অনেকটা ঈশ্বরের মতই ।
-মানে ?
-মানে তো খুব সহজ । তোমার বাবা মা যে তোমারই বাবা মা সেটা তো আর তুমি পরীক্ষা করে জানো নাই । ছোটবেলা থেকে শুনেছো সেটাই বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছে । আমার পালক বাবা মা না বললে আমারও তো একই বিশ্বাস থাকতো । থাকতো না ?

কথায় কথায় আরো অনেক চমকপ্রদ ব্যাপার জানতে পারি ভিন্স সম্পর্কে । ভিন্স প্রবল ধর্মপরায়ন সেটা আগে থেকেই জানি । কোনো রবিবারেই চার্চে যাওয়া মিস হয় না । ভিন্স এর ছয় ছেলেমেয়ে । ঈশ্বরের নিষেধ বলে সে পরিবার পরিকল্পনায়ও বিশ্বাস করে না । তবে এর চাইতেও অবাক হয়েছি অন্য কারণে । ভিন্স এর ছয় ছেলেমেয়ের কাউকেই টিকা দেয় নাই এবং কেউই স্কুলে যায় না । টিকার ব্যাপারটা নিয়ে কৌতুহলী হয়ে আলাপ করি ।
-তুমি যে টিকা দেও নাই এতে তো তোমার ছেলেমেয়ের অসুখ হতে পারে ।
-দেখো টিকা হয়তো ঐ অসুখটার হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে কিন্তু অন্য অসুখের জন্য দরজা খুলে দেয় ।
-কিন্তু তারপরও এটা তো বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত ।
আমি যুক্তি দেই ।
-দাড়াও তোমাকে কিছু লিঙ্ক দেই । এগুলি পড়ে দেখো ।
মজার ব্যাপার হলো ভিন্সের দেয়া লিংকগুলোতে আসলে কিছু ডাক্তারই টিকার অপকারিতার কথা বলেছে ।


এর মাঝেই অফিসের অনেকের কাছেই ভিন্স একটা মজার চরিত্র । মাঝে মাঝে আমরা কয়েকজন মিলে একসাথে লাঞ্চ করি । ভিন্স উপস্থিত থাকলে সবার লক্ষ্য হয় ভিন্স । সবচাইতে বেশী জ্বালাতন করে টিম ।
-আচ্ছা ভিন্স, তুমি যে বাচ্চাদের স্কুলে দেও না । তুমি নিজে তো স্কুলে গেছো ইউনিতে গেছো । তাহলে ?
টিম প্রশ্ন করে ।
-আমি গিয়েছি বলেই তো খারাপটা জানি ।
-কিন্তু স্কুলে না গেলে শিখবে কিভাবে ?
-কেনো হোম স্কুল । আমার বাচ্চারা নিয়ম করে হোম স্কুলে ক্লাস করে ।
-কিন্তু তারপরও সোস্যাল স্কিল, আরো অনেক কিছু জানার থাকে বাচ্চাদের ।
টিম চেষ্টা করতেই থাকে ভিন্সকে কোণঠাসা করতে । আমরা বাকি কয়জন নীরবে শুনতে থাকি । শুনেছিলাম ধার্মিক লোকেরা ধৈর্যশীল হয় । কিন্তু এতটা জানা ছিলো না । টিম যখন আরো উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে তখন এক পর্যায়ে ভিন্স হার মেনে নেয় ।
-আচ্ছা টিম মেনে নিলাম আমার বাচ্চাদের শিক্ষা ঠিক মতো হচ্ছে না ।
-তাহলে তাদেরকে স্কুলে পাঠাবে তো ?
উল্লসিতভাবে বলে টিম ।
-নাহ । কারণ কুশিক্ষার চাইতে অশিক্ষা ভালো ।
বলে টেবিল থেকে উঠে যায় ভিন্স ।

এক একদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় টিম ।
-তুমি তো এবরশনের বিরুদ্ধে ভিন্স ।
-আমি না ঈশ্বর এর বিরুদ্ধে ।
-ঐ হলো । তোমার মেয়ের বয়স তো এগারো । আর চার পাঁচ বছর পরে তো তোমার মেয়ের বয়ফ্রেন্ড হবে । খবরদার মেয়ের ব্যাগে কন্ডোম রাখতে ভুলে যেও না । এটা পিতা হিসাবে তোমার পবিত্র দায়িত্ব ।
বিশাল রসিকতা করেছে মনে করে হো হো করে হাসে টিম । শান্ত সমাহিত মুখ করে নির্বিকারভাবেই হজম করে ভিন্স ।


এর মাঝেই আমাদের দেশে একটা ঘূর্ণিঝড় হয় । পরদিন ভিন্সকে খুব অস্থির দেখি । আমাকে বলে, সে কিছু করতে চায় । আমি বলি,রেডক্রস কিংবা অন্য কোথাও দান করতে ।
-তুমি জানো রেডক্রসে দেওয়া ১০ ডলারের মাঝে মাত্র ২ ডলার আসল মানুষের কাছে পৌছে । ঈশ্বরের তৈরী এত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে ।
অস্থিরভাবে বলে সে । কয়েকদিন পরে বলে সে কিভাবে যেনো এক হাজার ডলার পাঠাতে পেরেছে ।

দিন যায় । আমেরিকার নির্বাচন সামনে রেখে মাঝে মাঝে রাজনৈতিক আলোচনাও হয় । ভিন্স ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক । সেটা নিয়েও সে অনেক ঠাট্টা হজম করে । এইটা নিয়ে সব চেয়ে বেশী ঠাট্টা করে আমাদের ভারতীয় কলিগ নিহাল । নিহাল কলকাতার ছেলে, প্রবল প্রগতিশীল এবং রবীন্দ্র সংগীতের একনিষ্ঠ ভক্ত । প্রসঙ্গক্রমে বলি এর কিছুকাল পরে জানতে পারি নিহাল মোদীর বিশাল ভক্ত । আমি অবাক হয়ে কারণ জিজ্ঞেস করেছিলাম । নিহালের উত্তরটা আমার এখনো মনে আছে ।

“বাইরের লোকরা যাই মনে করুক, ভারতকে আমরা হিন্দুস্থানই মনে করি আর মোদী সেই হিন্দুস্থানের আসল রক্ষক ।“

আরো দিন যায় । প্রজেক্ট সফলভাবে শেষ হয় । মেইন্টেন্যান্স ফেজ শুরু হয় । তখন অবশ্য লোক কমে যায় অনেক । মাত্র ছয়জন । আমি এবং ভিন্স দুইজনেই থাকি সেই টিমে । এর মাঝে ভিন্স উগান্ডায় যায় চ্যারিটি করতে তিন মাসের অবৈতনিক ছুটি নিয়ে । ভিন্স উগান্ডা থেকে ফেরার কিছুদিন পরেই আমি ঐ চাকুরী ছেড়ে দেই ।

আরো অনেকদিন পরে হঠাৎ একদিন ভিন্সের সাথে দেখা হয় । তখন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল ইলেকশন । অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি তিন বছর পরপর ইলেকশন হয় । টিভি ছাড়া ইলেকশনের খবর আগে থাকতে তেমন পাওয়া যায় না । এইবার নতুন একজনের খবর প্রায়ই টিভিতে আসছে । পলিন হ্যানসন নামের এক মহিলা । মহিলার নীতি একটাই, দেশে যত সমস্য তার একমাত্র কারণ বাইরের লোক । তাই ইমিগ্রেশন বন্ধ, বিশেষ করে মুসলিম ইমিগ্রেশন বন্ধ করলেই অস্ট্রেলিয়ার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।

ইলেকশনের তিন/চারদিন আগে । গাড়ি পার্ক করে ট্রেন স্টেশনের দিকে হাটতে থাকি । স্টেশনে ঢোকার মুখেই ভিন্সের সাথে দেখা । ভোটের প্রচারপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । অবশ্যই পলিন হ্যানসন জন্য । প্রাথমিক কুশলাদির পরে ভিন্স বলে, একটু দাঁড়াও এক কাপ কফি খেয়ে যাও ।
-এখানে কফি পাবে কই ।
-দাঁড়াও একজন ফ্লাস্ক নিয়ে আসছে । তুমি তাকে চেনো । তোমার জন্য একটু চমকই হবে ।
একটু পরেই কফির ফ্লাস্ক নিয়ে যে আসলো তাকে দেখে আসলেও চমকে গেলাম । টিম । তিনজনে মিলে কফি খেলাম ।
বিদায় নেবার সময় টিম বললো, তাহলে ওয়ান ন্যাশনকে (পলিন হ্যানসনের দলের নাম) ভোটটা দিও ।
আমি একটু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এই দলের মেনিফেস্টো যুক্তি দিয়ে মানো নাকি বিশ্বাস দিয়ে মানো ।
অবশ্যই বিশ্বাস থেকে মানি । জোর দিয়ে বলে টিম ।

এই অন্ধ সময়ে দেশে দেশে রাজনীতি এখন এরকম বিশ্বাসই । আর মানুষের বিশ্বাস নিয়ে তর্ক করা স্রেফ আহাম্মকি...
 
Back
Top