- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 363
- Messages
- 4,913
- Reaction score
- 1,265
- Points
- 3,863
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
সুষুপ্ত পাঠক
(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)
মুখ বন্ধঃ ইহা একটি কাল্পনিক সাক্ষাৎকার ধর্মী লেখা। বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই। কারো সাথে মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার।
(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)
মুখ বন্ধঃ ইহা একটি কাল্পনিক সাক্ষাৎকার ধর্মী লেখা। বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই। কারো সাথে মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার।
-কমরেড সিরাজ সিকদার আপনাকে স্বাগত জানাই।
-আপনাকেও স্বাগত জানাই।
-মাত্র ৩১ বছর বেঁচে ছিলেন। তার মধ্যে গোটা বাংলাদেশ তোলপাড় করে ফেলেছিলেন। আপনার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে নানামুখী অবস্থান থেকে কথা বলতে হবে। কোন একটি জায়গায় থেকে সিদ্ধান্ত নিলে ভুল হবে। আমি সেভাবেই এগুতে চাই...
-স্বাগত জানাই...
-সামন্ত মানসিকতার ধনী একটি পরিবারের সন্তান আপনি। সেকালে বুয়েটে পড়া গ্রামের ছেলে আর ক’জন দেখা যেতো। আপনি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দারুণ একটি জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু সেটি না করে মাও সে তুং আপনাকে পাগল করে তুললো।
-এভাবে বলা ঠিক না। আমি বাংলার বঞ্চিত মানুষের অধিকার বা তাদের স্বরাজের জন্য এই জীবন বেছে নিয়ে ছিলাম।
-যাদের কথা বললেন, সর্বহারা, তাদের সঙ্গে আপনাদের না ছিলো জানাশোনা না ছিলো সম্পর্ক। কৃষক শ্রমিকরা তো আপনাদের কথাই বুঝতো না। মার্কসবাদের তত্ত্বকথা ইন্টেলেকচুয়াল সমাজে মানায় মাঠের শ্রমিক কৃষকদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়। আপনি একটি দরিদ্র গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন কোন এক ঈদের দিন। সেই বিয়েটি ছিলো আপনার সামন্তবাদী পরিবারের ‘বড়লোক ছোটলোক’ শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ। আপনার স্ত্রী আপনাদের বাড়িতে কাজ করত।
-হ্যাঁ, বিয়েটা সেরকমই ছিলো।
-অথচ একজন নারী পুরুষ একসঙ্গে থাকার জন্য এটা কি শক্ত কোন বাঁধন হতে পারে? এরকম রোমান্টিক বিপ্লবের ফসল আপনার প্রথম স্ত্রী রওশনকে পরিত্যাগ করেছিলেন এই বলে যে, একজন স্বামী অনুগত স্ত্রীর চাইতে বিপ্লবী স্ত্রী বেশি শ্রেয়তর। এই বলে জাহানারা নামের একজন বিবাহিত নারীকে বিয়ে করে ফেললেন। অসহায় রওশনের কি হবে একবার ভাবলেন না। সে ঘরে আপনার এক ছেলে এক মেয়ে। জাহানারা অন্যের স্ত্রী ছিলো। তার ছেলেমেয়ে ছিলো। তারপরও বিপ্লবের নামে বিয়েকে জায়েজ করাটা কি ঠিক হয়েছিলো?
-আপনি কি আমার যৌন জীবন নিয়ে আলাপ করতে এসেছেন?
-না, তবে এটাও আলোচনার দাবী রাখে। আচ্ছা, অন্য আলোচনা শুর করি। আপনাদের ‘পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন’ পরে যার নাম হয় ‘পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি’ তারাই সর্বপ্রথম বাংলাদেশ স্বাধীন করার দাবী করে?
-হ্যাঁ। ১৯৬৮ সালে পার্টির থিসিসে এটা প্রধান লক্ষ্য বলা হয়। আরো একটা জিনিস, আমরাই একমাত্র দল যারা বাংলায় দলের নাম রেখেছি। এমনকি কখনোই ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দটি সচেতনভাবে বসাইনি। অথচ আওয়ামী লীগ বা অন্য কমিউনিস্ট ছাত্র সংগঠনগুলির নামের আগে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ বসানোর সেকি উচ্ছ্বাস। ১৯৫৬ সালের আগে পাকিস্তান সরকার পূর্ব অংশকে সাংবিধানিকভাবে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ ঘোষণা করেনি কিন্তু তারা নিজেরাই পূর্ব পাকিস্তান লিখে বসে আছে!
-আপনারাই সর্বপ্রথম পূর্ববঙ্গকে পাকিস্তানের উপনিবেশ বলেছিলেন। আপনাদের পার্টির দলিল তাই বলছে।
-হ্যাঁ। আওয়ামী লীগ যখন স্বায়ত্ত্বশাসন চায় আমরা তখন স্বাধীনতা চাই।
-দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে সে-ই আপনারাই যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এককভাবে একটি মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করলেন তারাই ১৯৭৪ সালে মুজিব সরকারকে ফেলে দিতে জুলফিকার আলী ভূট্ট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিলেন!
-এটা কে বলেছে?
-আপনার ডানহাত রানা। মহিউদ্দিন আহমদের বইতে এটা আছে। উনার বই আছে আপনাকে নিয়ে ‘লাল সন্ত্রাস’।
-আমার খুব নিন্দা করেছে বুঝি?
-নিন্দা যেমন করেছে প্রশংসাও করেছে। যাই হোক, বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে আমরা যে ইতিহাস জানি দেখা যাচ্ছে সেটি একটি অংশ- এর বাইরে আসল ইতিহাস চাপা পড়ে গেছে। বাংলাদেশের যে পতাকা আমরা এখন দেখি সেটি আপনার দলের একজন অবাঙালি বিহারী ছেলে সামিউল্লাহ আজমী নকশা করেছিলেন।
-হ্যাঁ, এটা আমরা করি ১৯৭০ সালে। জাপানের পতাকাটা ওরা থিম হিসেবে নিয়েছিলো। বাংলাদেশের সবুজ অংশ হচ্ছে গ্রাম-বাংলা আর লাল বৃত্তটা আসলে কমিউনিস্টদের লাল রঙ। চিন্তা করুন অবাঙালি একটি ছেলে বাড়ি ভারতের হায়দরাবাদে, সে এদেশের মুক্তির জন্য জান দিয়ে লড়াই করে গেছে।
-২ মার্চ তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পতাকা উত্তোলন হলো সেটাও দেখতে হুবহু আপনাদের নকশা করা পতাকার মত হলো কি করে?
-ছাত্র নেতাদের নামগুলো দেখুন- এরা বাম ঘেঁষা ছাত্রনেতা। আমাদের দল তো ছিলো আন্ডারগ্রাউন্ডের দল। আমাদের প্রচারপত্র লিফলেট বা পতাকার নকশা এসব সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছাতো না। তবে রাজনৈতিক দলগুলো কাছে এসে যেতো। সেভাবেই হয়ত...
-সাধারণ জনগণের কাছে না পৌঁছানোটা কি একটা বড় ভুল ছিলো না?
-ছিলো। সেটা একদম অন্তিমে গিয়ে বুঝেছিলাম। তখন আর ফেরার পথ ছিলো না।
-বাংলাদেশের স্বাধীনতা কি এদেশের রাজনৈতিক সচেতন অসেচতন উভয় পক্ষের মানুষ চেয়েছিলো?
-দেখুন আমরা যখন ঢাকায় ‘পাকিস্তান কাউন্সিল’ বোমা হামলা চালাই তখন পাকিস্তানের চেতনার উপর হামলার জন্য ‘ইত্তেফাক’ আমাদের তুমুল সমালোচনা করে এবং দেশ বিরোধী এই চক্রকে ধরে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার দাবী জানায়। ইত্তেফাক ছিলো তখন পূর্ববঙ্গ রাজনৈতিক সচেতন জনগণের প্রিয় পত্রিকা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে যারা মারা গেছেন এক হিসেবে তারা ভাগ্যবান। কারণ তাদের কারা যে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে থাকতেন আর কারা যে বিপক্ষে থাকতেন বলা মুশকিল। একটা কথা বলেন, ৭০ সালের নির্বাচন ইয়াহিয়া মেনে নিলে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা চাইত? চাইতো না। কিন্তু আমাদের পার্টি কিন্তু মনে করত বাংলাদেশকে স্বাধীন করা হচ্ছে প্রথম লক্ষ্য।
-পার্টিতে চাওয়া আর বাস্তবায়ন এক জিনিস না। পেয়ারা বাগানে গেরিলা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা যেতো না। এখানে ভারতের মত দেশের প্রত্যক্ষ সহায়তা না হলে কি করে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো? কি করে তাজউদ্দিন ভারতে গিয়ে ভারতের স্বীকৃতি নিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেকবের ভূমিকা, র’ যেভাবে পাকিস্তানের আকাশ সীমা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছিলো বিমান হাইজ্যাক নাটক সাজিয়ে- ইন্দিরা গান্ধির কুটনৈতিক যুদ্ধ- এগুলো ছাড়া কি করে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো? আওয়ামী লীগের মত জনসমর্থিত বড় দল চাইলেও হতো না।
-এগুলো নিয়ে কেবল তর্কই করা যাবে কোন লাভ হবে না...
-ঠিক আছে, বুঝলাম। আচ্ছা সামিউল আজমী যিনি পতাকার নকশা করেছেন জানলাম, তাকে হত্যা করা হয়েছিলো যুদ্ধের সময়ই?
-হ্যাঁ। বরিশালের পেয়ারা বাগানে আমরা এককভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ করি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। পরে টিকতে না পেরে সরে আসি। তেমন এক সময় আওয়ামী লীগের গেসু চেয়ারম্যান আলোচনার কথা বলে ডেকে নিয়ে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলে আজমীকে। নজরুল নামের আরেক কমরেডকে কাদের সিদ্দিকী ‘নকশাল’ বলে নির্মমভাবে খুন করে। মুক্তিযুদ্ধ মানেই আওয়ামী ন্যারেটিভ। তারা যে ইতিহাস বলছে সেটাই সব নয়।
-আজমীর হত্যার প্রতিশোধ আপনি নেননি এমনকি পার্টিতে তাকে নিয়ে জোড়ালো কোন আলাপও হয়নি। যদিও তার বোনকে একটা আবেগঘন চিঠি লিখেছিলেন। এই দেশের জন্য প্রাণ দেয়া এক তরুণকে তাই এই জাতি চিনতে পারলো না। তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসের মার্জিনের বাইরে! আজমীর কথা আসলে তার স্ত্রী খালেদা ওরফে বুলুর কথা আসবেই...
-সে এখনো বেঁচে আছে?
-হ্যাঁ। তিনি ভারতে তার বাবার বাড়িতেই আছেন। পরবর্তীতে বিয়ে করেছেন। তিরিশ বছরের তার একটি ছেলে আছে। তিনি শিক্ষকতা করেন আর সময় পেলে সেই ফেলে আসা সময়গুলিতে হারিয়ে যান। তিনি কিছু ভয়াবহ অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে করেছেন মহিউদ্দিন আহমেদের কাছে। আপনি তাকে তার স্বামী আজমীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। আজমীর মৃত্যুর পর তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তবে তার আগে পরীক্ষামূলকভাবে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের দাবী করেছিলেন। আপনাকে বিয়ে করতে তিনি অস্বীকার করেন তবে পার্টির স্বার্থে শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি হোন। আপনার বাড়িতে তাকে ঝি-চাকরের মত আচরণ করতেন। আপনি ছিলেন চরিত্রে বুর্জোয়া। পার্টির ছেলেরা এতকষ্ট করে জীবন কাটাতো, তাদের ডাকাতি করে আনা টাকায় আপনি বিলাশপূর্ণ জীবন কাটাতেন। সেই ৭৪ সালে দুইশো টাকার কলম ব্যবহার করা নিশ্চিয় বিলাসিতা। অথচ আপনার দলের ছেলেরা পাহাড়ে খাদ্যের অভাবে, টাকার অভাবে অজগর সাপের মাংস পর্যন্ত খেয়েছে!
-বুলু সত্য বলছে তার প্রমাণ কি?
-সে এগুলো পার্টির কাছে লিখিত আকারে জমা দিয়েছে। আচ্ছা বাদ দেই, অন্য প্রসঙ্গ বলি। স্বাধীনতার পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলি। আপনারা তখন বলা শুরু করলেন, বাংলাদেশ আসলে স্বাধীন হয়নি, এটা ভারতের উপনিবেশ হয়েছে। শেখ মুজিব হচ্ছে সেই উপনিবেশের ভারতীয় প্রভূদের প্রতিনিধি। এটা কতখানি বস্তুনিষ্ঠ ছিলো?
-তখন আমরা সেরকমই মনে করতাম। শেখ মুজিব নিজেও মনে হয় ভারতকে হুমকি মনে করতো। আসলে এখন নির্মোহভাবে কথা বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হয়।
-আসলে তো এটা ভারতীয় উপনিবেশ ছিলো না। শেখ মুজিব ভারতকে তখন আপদ মনে করত। ভারত তার কাঁধে হাত দিয়ে রাখলে আরব দেশের ভ্রাতৃত্ব পাবেন না, পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক যেটা আরবদের খুশী করবে-সেটা তিনি চাইছিলেন। যদি ভারতের বলয়ে তখন মুজিব সরকার থাকতো তাহলে তো তাকে মরতে হয় না?
-না। কারণ র’ তাকে সতর্ক করেছিলো তার বিরুদ্ধে ক্যু হতে যাচ্ছে। তিনি শুনেননি। তিনি জুলফিকার আলী ভুট্টুকে বন্ধু বলছেন এদিকে ভুট্ট আমাদের পঞ্চাশ হাজার টাকা দিচ্ছে তাকে উত্খাত করতে। মীজানুর রহমান শেলী যার নাগরিত্ব বাতিল হয়েছিলো পাকিস্তানী আমলাদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় যোগাযোগ থাকার কারণে। তার নাগরিত্ব মুজিব ফিরিয়ে দিলেন আর সে আমাদের সঙ্গে গোপন মিটিং করলেন। তখন আমরা মুজিব সরকারের জন্য এক আতংক। মুজিব মানুষকে বিশ্বাস করেই শেষ হয়েছেন।
-তাহলে দেখা যাচ্ছে ‘ভারতীয় আগ্রাসন’ একটি জাতীয় মিথ ছিলো, আছে, থাকবে?
-আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।
-আপনার ভারত বিরোধীতার মূল কারণ চীন। মাওয়ের চীন ভারতের শত্রু। ফলে অটোমেটিকভাবে ভারত আপনার শত্রু। আপনি মাওকে নকল করতেন। তার লেখাগুলো হুবহু কপি করে পার্টির নির্দেশনা, আদর্শ বানাতেন। চারু মজুমদারের মত।
-সর্বহারা দেশের নাম করলে তখন চীন ছাড়া আর কে ছিলো? সোভিয়েতরা তো সংশোধনবাদী...
-কিন্তু কমিউনিজম তো ধর্ম হয়ে গেলো পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে। মাও সে তুং, লেনিন দুজন পয়গম্বর তুল্য তাদের কোন ভুল নেই। তাদের দেখানো পথেই চলতে হবে। মানবজাতি জন্য একমাত্র সঠিক পথ হচ্ছে মাওবাদ-লেনিনবাদ। তাদের সমালোচনা মানেই সে সংশোধবাদী তাকে খতম করতে হবে। তাদেরকে সুন্নতের মত করে অনুসরণ করতে হবে। অথচ চীন বা ভিয়েতনামের কমরেডরা আপনাদের কোনদিন পুছেও নাই। বার্মার কমরেডদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন।
-আমরা আদর্শের জন্য বেঁচে ছিলাম। কে চিনলো কে চিনলো না তার কোন দাম নেই।
-এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই আপনাদের দেশপ্রেম ছিলো খাঁটি। আপনাদের আদর্শের প্রতি যে ত্যাগ সেটি মুখের কথা নয়। প্রায় সবাই সচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিলো। সেসব ফেলে এই অনিশ্চিত জীবনে চলে আসা মুখের কথা নয়।
-এই ছেলেগুলোকে বিরোধীরা নির্মমভাবে খুন করেছে।
-জ্বি, এটা সত্য তারা আদর্শের জন্য বলি হয়েছে। কিন্তু এই আদর্শের জন্য ঘর ছাড়া ছেলেমেয়েগুলিকে যখন পার্টি তুচ্ছ কারণে খতম করলো? আপনি হচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ‘ক্রসফায়ারের’ শিকার। কিন্তু আপনি অতি তুচ্ছ কারণে হত্যা করেছিলেন পার্টি সদস্যদের। সামান্য অর্থ চুরি, পরীক্ষায় ফেল করে বাড়ি ফিরতে না চেয়ে দলের সর্বাক্ষনিক সদস্য হতে চাওয়া কিশোর সদস্যদের ‘দলের জন্য সমস্যা’ আখ্যা দিয়ে খতম করা হয়। কবি হুমায়ুন কবীরকে খুন করে কি লাভ হয়েছিলো? তার নাবালক সন্তান, স্ত্রীর কি হবে সেটা ভাবা হয়নি। হুমায়ুন কবীর তো পার্টির জন্য অনেক করেছে। একবার বরিশালে রাশেদ খান মেনন পার্টি লাইনের বাইরে কথা বলায় তাকে ছুরি মারতে উদ্যত হয়েছিলেন তিনি! তিনিই সর্বহারা দলের সঙ্গে মূলধারার বুদ্ধিজীবীদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। এতে আপনাদের প্রতি বুদ্ধিভিত্তিক শ্রেণীর সহানুভূতি তৈরি হয়েছিলো। অথচ একটি কবিতা লেখার কারণে তাকে হত্যা করলেন।
-এগুলো পার্টির জন্য ভুল ছিলো।
-হুমায়ুন কবীরের বিধবা স্ত্রী যিনি নিজেও দলের কমরেড ছিলেন তার অসহায়ত্ব দেখে নির্মল সেন শেখ মুজিবের কাছে দুই হাজার টাকার চেক আদায় করেছিলেন। সিরাজ সিকদারের দলের লোক জেনেও মুজিব চেকে সই দিয়েছিলেন হাসতে হাসতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হুমায়ুন কবীরের স্ত্রীর চাকরিও হয়। এটা মুজিব সরকারের কি প্রশংসা প্রাপ্য ছিলো না।
-স্বীকার করছি মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের বসা উচিত ছিলো। সেরনিয়াবাদ তো আমাদের দলের গোপন সদস্যই বলা চলে। ফলে মুজিবের সঙ্গে বসা সহজ ছিলো।
-কিন্তু ভারতীয় উপনিবেশ মিথ ও বিপ্লবের রোমান্টিকতা...
-আমাদের কার্যক্রমকে এভাবে হালকা চালে এই শতাব্দীতে বসে উড়িয়ে দেয়া হয়ত খুব সহজ...
-দেখুন সিরাজ সিকদার, আপনাদের দলে যত মেধাবী ছেলেরা জড়ো হয়েছিলো তেমনটা এই উপমহাদেশে কেবল নকশালদের সঙ্গেই তুলনা করা চলে। কিন্তু এই মেধাগুলি অপচয় হয়ে গেছে বিপ্লবের রোমান্টিকতা যা এদেশে মাও নামের এক স্বপ্নলোকের মানুষের হাতছানিতে। এটা অনেকটা মুসলমানদের আরব দেশে না দেখা পয়গম্বরের নামে যে রাজনৈতিক আবেগ বয়ে আনে তার মত। ভেবে দেখুন যে বাম সেক্যুলার বিপ্লবী যুব সমাজ আপনার দলে জুটে ছিলো তাদের ছিঁটেফোঁটা এই দেশের সমাজ জীবনে প্রভাবিত করতে পারেনি। চরম মূর্খ ধর্মান্ধ একটি সমাজ তৈরী হয়েছে। কারণ আপনাদের তাত্ত্বিক পান্ডিত্যের অহংকার, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা, সবাইকে শ্রেণীশত্রু দাগানো এসব মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ফলে খোদ আপনি আজ এক বিস্মৃত নাম এই দেশে...
-আজ আর তাতে আমার কিছু যায় আসে না...
-কিন্তু দেখুন এই দেশের এখন ঠিক আপনাদের মতই ফ্রন্টের জন্ম হয়েছে- কিন্তু পরিচয় ভিন্ন। তারা ইসলামিক জঙ্গিবাদ। ‘হিযরত’ করতে ঘর ছাড়ছে শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা। তারা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ এটাই একমাত্র সমাধান। তাদের পার্টি লাইন হুবহু আপনাদের মত। দলে তাদের একাধিক নাম যেমনটা আপনারা রাখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামকে গেরিলা যুদ্ধে ট্রেনিংয়ের জন্য আপনারা বেছে নিয়েছিলেন তারাও নিয়েছে। ইসলাম ও কমিউনিজম কাল্ট রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যে ফরহাদ মজহার আপনাদের সাপোর্টার ছিলেন এখন সে-ই ইসলামিক জঙ্গিবাদের জাস্টিফাই করে বক্তব্য রাখেন। ছফা বেঁচে থাকলেও সেটাই করত। ছফা তো আপনাদের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রাখতো। আবার লিবিয়ার ইসলামিক সমাজতন্ত্রের প্রচারক বনে ছিলো। সব মিলিয়ে আপনাদের প্রভাব যুব সমাজে কেন থাকলো না বলে মনে করেন?
-দেখেন মাঠ পর্যায়ে আমাদের দলের পৃষ্ঠপোষক, সহানুভূতিশীল সাধারণ জনগণের ৭০ ভাগ ছিলেন হিন্দু সম্পদায়ের মানুষ। এটা আমার দলের এখনো যারা বেঁচে আছেন তাদের জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। বরিশালের পেয়ারা বাগানের প্রতিরোধ যুদ্ধে বড় ভূমিকা রেখেছিলো হিন্দু গ্রামবাসীরা। সেখানে যে গ্রামগুলি ছিলো সেখানে হিন্দুরাই বাস করতো। মুসলমানরা তো ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম লীগ। এগুলো পর্যালোচনা করতে হবে...
-ভারতে নকশালদের নিয়ে উপন্যাস সিনেমা বানিয়ে তাদের হিরো বানানো হয়েছে। আর এখানে আপনাদের নামই কেউ মুখে নেয় না। এর কারণও কি মুসলমানদের সহজাত কমিউনিস্টদের প্রতি বৈরী মনোভাব?
-হতে পারে। আমি জানি না।
-আপনার হত্যার জন্য শেখ মুজিবকে দায়ী মনে করেন?
-আপনার কি মত?
-যতগুলো সোর্স পাওয়া যায়, এমনকি আপনাদের পার্টি থেকেও, কেউ মনে করে না শেখ মুজিব আপনাকে গ্রেফতারের পর মেরে ফেলতে বলেছেন। বরং তিনি ক্ষুব্ধু ছিলেন আপনার মৃত্যুর কথা শুনে।
-এটা তাহলে তার অগোচরে হয়েছিলো?
-আপনার নামে সাধারণ ডাকাতরাও ডাকাতী করে ‘সিরাজ সিকদার জিন্দাবাদ’ বলতো। জাসদও রাহাজানি করে আপনার নামে জিন্দাবাদ বলতো। এতে অবশ্য আপনি শ্লেঘা অনুভব করতেন শুনেছি। কাজেই মুজিব সরকারের ভেতরে থাকা মুজিব বিরোধী অংশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সহিংসতা করে আপনার নামে জিন্দাবাদ দিতো। আপনি বেঁচে থাকলে তাদের পরিচয় বেরিয়ে পড়তে পারে। ফলে...
-সংসদে দম্ভ করে আমার হত্যার কথা বলেছিলেন মুজিব...
-এটা মিসকোট ছিলো। উনি বলেছিলেন, সিরাজ সিকদারের মত চৌকশ বিপ্লবীকে যদি ধরা সম্ভব হয় তাহলে যারা মজুদদার, চোরাকারবারি তাদের কেন ধরা যাবে না। সেটাকে বানানো হয়েছে- কোথায় এখন সিরাজ সিকদার...
-আপনি কি আওয়ামী লীগ করেন?
-আমাকে আওয়ামী লীগাররা সহ্য করতে পারে না। আমি মনে করি, বাংলাদেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, নামে ভিন্ন হতে পারে কিন্তু সকলেই ‘মুসলিম লীগের’ রাজনীতিই বহন করে চলে। কাজেই...
-আপনি কমিউনিস্ট?
-মাওবাদ লেনিনবাদকে আমি ভ্রান্ত মনে করি। ইসলামী কাল্টের মতই এক রাজনৈতিক মতবাদ মনে করি। নকশাল ও আপনার দলের তরুণদের আমি নিদারুণ অপচয় হয়েছে বলে মনে করি...
-হুম...
-আপনাকে ধন্যবাদ সিরাজ সিকদার।
-আপনাকেও ধন্যবাদ।