- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 407
- Messages
- 5,564
- Reaction score
- 2,005
- Points
- 3,913
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
রুমালী
মূল লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
পর্ব - ১মূল লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
বকু তুই রোদে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আমি পাশ ফিরে মাকে দেখলাম। মা কোন ফাঁকে আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বিড়ালের চেয়েও নিঃশব্দে হাঁটতে পারেন। আশে পাশে কেউ নেই, আমি হয়ত নিজের মনে গল্পের বই পড়ছি। এক সময় হঠাৎ দেখব মায়ের মাথাটা আমার ঘাড়ের পাশে। তিনি আমাকে চমকে দিয়ে বলবেন, কী পড়ছিস? আমি যদি বলি গল্পের বই মা বলবেন, আজে বাজে গল্প নাতো? দেখি বইটা। মা বইটা হাতে নেবেন। বই এর নাম পড়বেন। নামের মধ্যে প্রেম ভালবাসা জাতীয় কিছু থাকলে তার ভুরু কুঁচকে যাবে। আমি যে পাতাটা পড়ছি সেই পাতাটা পড়ে দেখবেন। এই হচ্ছে আমার মা–সাবিহা বেগম। বয়স আটত্রিশ। সেই বয়স তিনি নানান ভাবে কমানোর চেষ্টা করছেন। মুখের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। সেই ভাঁজ দূর করার অনেক চেষ্টা চলছে। তিনি কোত্থেকে একটা বই জোগাড় করেছেন। নজিবুর রহমান নামের এক ভদ্রলোকের লেখা—যৌবন ধরে রাখুন। সেই বই-এ মুখের চামড়ার ভাঁজ দূর করার যে সব প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা আছে তার কিছু কিছু প্রয়োগ করছেন। তেমন লাভ হচ্ছে না। আমার ধারণা খানিকটা ক্ষতি হচ্ছে। মার চোখ দুটা ভিতরে ঢুকে চেহারায় খানিকটা ইঁদুর ভাব চলে এসেছে।বাংলা বই
এখন বাজছে সকাল নটা এর মধ্যেই মা গোসল করে ফেলেছেন। চোখে কাজল দিয়েছেন। ম্যাচ করে শাড়ি ব্লাউজ পরেছেন। হাতে একটা ভ্যানিটি ব্যাগও অছে। সেই ব্যাগের রঙও শাড়ির রঙের সঙ্গে মেলানো সবুজ। মা বললেন, কিরে বন্ধু রোদে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বাংলা বই
মার গলায় প্রবল উৎকণ্ঠা—যেন রোদে দাঁড়ানোর কারণে আমার শরীরে কিছুক্ষণের মধ্যে ফোসকা পড়ে যাবে। অথচ আমি মোটেই রোদে দাঁড়িয়ে নেই। আমি দাড়িয়ে আছি বিশাল একটা শিমুল গাছের নীচে। শিমুল গাছে কোন পাতা নেই— শুধুই থোকা থোকা ফুল। এমন কড়া লাল রঙ যে–তাকালে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মনে হয় গাছে আগুন ধরে গেছে। এই যে আমি দাঁড়িয়ে আছি, আমার মনে হচ্ছে আমার মাথার উপর আগুন জ্বলছে। দাঁড়িয়ে থাকতেই ভাল লাগছে! গাছে হেলান দিতে পারলে আরো ভাল হত— কিন্তু হেলান দেবার উপায় নেই–গাছ ভর্তি বড় বড় কাটা। আমি মার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলাম। এই মিষ্টি হাসি হচ্ছে নকল মিষ্টি! অভিনয়ের মিষ্টি হাসি। আমি যখন তখন এই হাসি হাসতে পারি। মা আবারো বললেন, কিরে কথা বলছি জবাব দিচ্ছিস না কেন?
আমি বললাম, মা তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
মা এই প্রশংসাতেও উললেন না। প্রায় ধমকের গলায় বললেন–শুধু শুধু এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
কারণ আছে বলেই দাঁড়িয়ে আছি।
কারণটা কী?
কারণটাতো মা তোমাকে বলা যাবে না।
ফাজলামি করবি না।
আমাকে ডিরেক্টর সাহেব থাকতে বলেছেন।
সঙ্গে সঙ্গে মার মুখে তৃপ্তির হাসি দেখা গেল। মা খুশি : ডিরেক্টর সাহেব থাকতে বললেতো থাকতেই হবে। এই মুহূর্তে তিনিই সব কিছু আমাদের সম্রাট। সম্রাটের প্রতিটি কথা পালন করতে হবে। তাকে খুশি রাখতে হবে। মার এখন প্রধান কাজ হয়ে দাড়িয়েছে সম্রাটকে খুশি রাখা। তার আশেপাশে থাকা। সম্রাটের সস্তা ধরনের রসিকতায় হা হা হি হি করে হাসা আমাদের এই সম্রাটের ধারণা তিনি খুব রসিক মানুষ। ডিরেক্টর সাহেবের নাম মঈন খান। বয়স ঠিক কত এখনো জানি না— চল্লিশের উপরতো বটেই। রোগা পাতলা মানুষ। ভদ্রলোকের মধ্যে একটা বহুরূপী ব্যাপার আছে। একেক দিন তাকে একেক রকম দেখা যায়। আমার মনে হয় ব্যাপারটা ঘটে তার চশমার কারণে। ভদ্রলোকের অনেকগুলি চশমা। একেক দিন একেক রকমের চশমা পরেন। চশমার সঙ্গে মিলিয়ে চুল আচড়ানোর মধ্যেও কিছু একটা নিশ্চয়ই করেন। তাঁর চেহারা পাল্টে যায়। চেহারার সঙ্গে সঙ্গে ভাবভঙ্গি পাল্টে যায়। আজ তিনি সোনালী ফ্রেমের চশমা পরেছেন।
মা বললেন, মঈন ভাই তোকে এখানে থাকতে বলেছেন?
হ্যাঁ।
কেন?
কাজ দেখতে বলেছেন।
তাতো বটেই–কাজ না দেখলে কাজ শিখবি কীভাবে?
মা লম্বা লম্বা পা ফেলে ডিরেক্টর সাহেবের দিকে এগুচ্ছেন। আমি শংকিত বোধ করছি। কারণ ডিরেক্টর সাহেব আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন নি। শিমুল গাছটা দেখে আমার এত ভাল লেগেছে যে আমি ইচ্ছা করে এখানে এসে নড়য়েছি। শুটিং এর কাজ হচ্ছে রাস্তার ঐ পাশে। নদশ বছরের একটা মেয়ে এবং চার পাঁচ বছরের একটা ছেলেকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সেই সকাল থেকে। মেয়েটার পরণে ফ্রক। ছেলেটা সম্পূর্ণ নগ্ন। শুধু তার কোমরে কালো সুতা বাঁধা। সুতার সঙ্গে তিনটা শাদা কড়ি।
যে দৃশ্যটা এখন নেয়া হবে সেই দৃশ্যটা এরকম—এই দুই ভাই-বোন পানিতে ঝাপাঝাপি করছিল। হঠাৎ দেখতে পেল শহুরে কিছু মানুষ চারটা গরুর গাড়িতে করে যাচ্ছে। শহুরে মানুষদের গায়ে ঝলমলে পোষাক, তারা আনন্দ করতে করতে যাচ্ছে। এই দেখেই দুই ভাই-বোন পানি থেকে উঠে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়াবে। কৌতূহলী চোখে গরুর গাড়ির ভেতরের মানুষগুলিকে দেখতে চেষ্টা করবে। গরুর গাড়ির ভেতরে সাব্বির নামের এক ভদ্রলোক ক্যামেরায় তাদের ছবি তুলতে যাবেন—ওমি মেয়েটা হেসে ফেলবে, আর ছেলেটা দু হাতে তার নেংটো ঢেকে ফেলবে।
খুব সহজ দৃশ্য। অন্য কেউ হলে ফট করে নিয়ে নিত। কিন্তু আমাদের ডিরেক্টর সাহেব এই দৃশ্যটাকে যথেষ্ট জটিল করে ফেলেছেন। রাস্তার পাশে ট্রলী পেতেছেন। দৃশ্যটা নেয়া হবে ট্রলীতে। রিফ্লেক্টর বোর্ড হাতে তিনজন লাইটম্যান দাঁড়িয়ে আছে। এরা একটু পরপর ধমক খাচ্ছে। ট্রলীও বোধ হয় ঠিকমত বসছে না— ক্যামেরা কাঁপছে। কোদাল দিয়ে রাস্তাটা সমান করে ট্রলী বসানো হয়েছে। তারপরেও বোধ হয় রাস্তা সমান হয় নি! ডিরেক্টর সাহেবের কাছ থেকে ক্যামেরাম্যানও ছোট্ট একটা ধমক খেলেন।
বাচ্চা দুটি পুকুর থেকে উঠে এসেছে বলে তাদের গা ভেজা থাকার কথা। রোদে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের গা শুকিয়ে যাচ্ছে। তখন তাদের মাথায় বালতি ভর্তি পানি ঢালা হচ্ছে। এই কাজটিতে এরা দুজনই খুব মজা পাচ্ছে। মনে হচ্ছে তাদের জীবনে এমন আনন্দময় মুহূর্ত আর আসে নি।
আমি লক্ষ্য করলাম মা ছুটতে ছুটতে যাচ্ছেন। আমি মার মুখ দেখতে পাচ্ছি না–কিন্তু আমি জানি তার মুখ ভর্তি হাসি।
আজকের পরিস্থিতি মোটেই ভাল না। এখনো ক্যামেরা ওপেন হয় নি। এই অবস্থায় মা গিয়ে কী না কী বলবে কে জানে! তাদের কথাবার্তা এরকম হতে পারে। মা বলবেন, মঈন ভাই আমাদের কাজ কেমন হচ্ছে? (আপনার কাজ কেমন হচ্ছে, না-জিজ্ঞেস করে মা বলবেন—–আমাদের কাজ কেমন হচ্ছে। মা প্রমাণ করতে চাইবেন যে উনার কাজটাকে মা নিজের কাজ ভাবছেন।)
মঈন সাহেব মার কথার জবাবে কোন কথা বলবেন না, একটু হয়ত হাসবেন। মেজাজ ভাল থাকলে অবশ্যি মার সঙ্গে রসিকতা করে কিছু বলবেন। আজ মেজাজ ভাল নেই। মা তা ধরতে পারবেন না। কারণ মা অন্যের মেজাজ মর্জি কিচ্ছু বুঝতে পারেন না। নিজের মনে ছড়বড় করে কথা বলে যান।
আমার ধারণা মা এক পর্যায়ে বলবেন—মঈন ভাই, আমার মেয়ে আপনাকে কী চোখে যে দেখে–আপনি যা বলেন তাই তার কাছে একমাত্র সত্য? আপনি তাকে কাজ দেখতে বলেছেন–ঐ দেখুন সে রোদে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি তাকে ছায়ায় দাঁড়াতে বলুনতো। আপনি না বললে যাবে না। আশ্চর্য মেয়ে। কী সমস্যায় যে ভাই মেয়েটাকে নিয়ে আছি।
মঈন সাহেব তখন ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকাবেন। কী হচ্ছে বুঝতে চেষ্টা করবেন। তিনি বলে ফেলতে পারেন–কই আপনার মেয়ের সঙ্গেতো আজ আমার কোন কথা হয় নি। তখন অবস্থাটা কী হবে! ডিরেক্টর সাহেবের কাছে মার ছুটে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে আমার কথা যাচাই করে নেয়া। মার স্বভাব হচ্ছে–যে যাই বলুক না যাচাই করে নেবেন।
মা কাউকেই বিশ্বাস করেন না। কোন ফেরেশতা এসে যদি মাকে বলে–আপা শুনুন, আপনার মেয়েকে দেখলাম একা একা রিকশায় করে নিউ মার্কেটে যাচ্ছে। মা সঙ্গে সঙ্গে বলবেন, ও কী রঙের সালোয়ার পরেছে বলুনতো?
আমার খুব অস্বস্থি লাগছে। কী বিশ্রী ব্যাপার হল। ডিরেক্টর সাহেব যখন বিরক্ত গলায় বলবেন, কই আমিতো আপনার কন্যাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলি নি। তখন কী হবে! তিনি হয়ত হাত উঁচিয়ে আমাকে ডাকবেন।
এত দূর থেকেও হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমার মা হেসে হেসে কী যেন বলছেন। মঈন সাহেব মায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন তার মুখে হাসি নেই, তবে বিরক্তিও নেই। শুধু পাপিয়া ম্যাডাম বিরক্ত মুখে তাকিয়ে আছেন। বেশির ভাগ সময়ই তিনি বিরক্ত হয়ে থাকেন।
পাপিয়া ম্যাডাম বসে আছেন মঈন সাহেবের পাশে। তাঁর হাতে বড় একটা গ্লাসে হলুদ রঙের কী একটা জিনিস। তিনি চুক চুক করে খাচ্ছেন। মার অকারণ হাসিতে সম্ভবত তার মাথা ধরে যাচ্ছে। পাপিয়া ম্যাডামের সব সময় মাথা ধরে থাকে।
পাপিয়া ম্যাডাম আমাদের এই ছবির নায়িকা। আমি এত সুন্দর মেয়ে আমার জীবনে দেখি নি। মোমের পুতুল বললেও কম বলা হবে। তার ঠোঁট সুন্দর, চোখ সুন্দর, নাক সুন্দর, দাঁত সুন্দর। লম্বা সিল্কি চুল যা দেখলেই হাত নিয়ে ছুঁতে ইচ্ছে করে। এবং কেঁচি দিয়ে এক গোছা চুল কেটে বাড়ির দেয়ালে সাজিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। তাকে দেখলে প্রথম যে কথাটা মনে হয় তা হচ্ছে——মানুষ এত সুন্দর হয় কী করে? হেলেন অব ট্রয় কিংবা ক্লিওপেট্রা এরা কি তার চেয়েও সুন্দর ছিল? মনে হয় না।
মা তর তর করে ছুটে আসছেন। তাঁর মুখ হাসি হাসি। মনে হচ্ছে জটিল কোন মিশন সম্পন্ন করে ফিরছেন। মিশনের ফলাফল তার পক্ষে।
বকু, তোকে বেলের সরবত দিয়েছে?
আমি কিছু বললাম না। মা হড়বড় করে বললেন, ইউনিটের সবাইকে বেলের সরবত দিয়েছে তোকে দিচ্ছে না কেন? তুইতো ফেলনা না, তুই এই ছবির দুই নম্বর নায়িকা।
মা চুপ করতো!
চুপ করব কেন? মঈন ভাইয়ের কানে আমি এক সময় কথাটা তুলব। সবাইকে সব কিছু সেধে সেধে দেয়া হয়–তোর বেলায় চেয়ে চেয়ে নিতে হয়। কেন তুই কি বন্যার জলে ভেসে এসেছিস? নাকি বৃষ্টির ফোঁটার সঙ্গে আকাশ থেকে পড়েছিস?
উফ মা— চুপ কর।
সব সময় চুপ করে থাকলে হয় না। জায়গা মত কথা বলতে হয়। নিজের জিনিস আদায় করে নিতে হয়। বুদ্ধি খেলাতে হয়। তুই বুদ্ধি খেলাতে পারিস না। সবার মেয়ে হয় বুদ্ধিমতী, আর তুই হয়েছিস বোকামতী।
মা চলে যাচ্ছেন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, তবে নিশ্চিত হতে পারলাম। মা সহজে কিছু ছেড়ে দেন না। বেলের সরবত প্রসঙ্গ এই খানেই চাপা পড়বে বলে মনে হয় না। যথাসময়ে ডিরেক্টর সাহেবের কানে উঠবে।
মার কথাগুলি মনে পড়ে এখন একটু হাসি পাচ্ছে— কেমন চোখ মুখ শক্ত করে বলছিলো–সব সময় চুপ করে থাকলে হয় না। জায়গা মত কথা বলতে হয়। নিজের জিনিস আদায় করে নিতে হয়। ভাবটা এ রকম যেন মা সব সময় নিজের জিনিস নিজে আদায় করে নিয়েছেন। আসলে তিনি কিছুই নিতে পারেন নি। বরং তার নিজের যা সব ছেড়ে ছুঁড়ে দিতে হয়েছে।
আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমার বাবা আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান। আমার বুদ্ধিমতী মা একেবারে হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেন নি–এরকম একটা ব্যাপার ঘটতে পারে। তিনি নানান ধরনের পাগলামী করার চেষ্টা করেন। গোলাপ গাছে স্প্রে করে দেয়ার যে বিষ ঘরে ছিল সেটা খাওয়ার চেষ্টা করেন, খানিকটা মুখে নিয়ে গু করে ফেলে দেন। এতেই তার মুখে ঘা-টা হয়ে একাকার। একবার পঞ্চাশটার মত ঘুমের অষুধ খান। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বমি হয়ে যাওয়ায় সেই অষুধে টানা আঠারো ঘন্টা ঘুম ছাড়া তার আর কিছুই হয় না। তারপর উঠে-পড়ে লাগেন, গুণ্ডা লাগিয়ে বাবাকে মারার ব্যবস্থা করবেন। সেই নিয়ে দিনরাত আমার সঙ্গে পরামর্শ— বুঝলি বকু এমন মারের ব্যবস্থা করব যে প্রাণে মরবে না তবে হাত পা ভেঙ্গে লুলা হয়ে বিছানায় পড়ে থাকবে। পিশাব পায়খানা বিছানায় করবে। আমাকে চিনে না? আমি তার বাপদাদা চৌদ্দগুষ্ঠির নাম ভুলিয়ে দেব। পাতলা পায়খানা করিয়ে ছাড়ব। কলসি ভর্তি ওরস্যালাইন খেয়েও কূল কিনারা পাবে না।
ভাড়াটে গুন্ডার পরিকল্পনা এক সময় বাতিল হয়— মা বিপুল উৎসাহে উকিলের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। দিনে উকিলের সঙ্গে কথা রাতে আমার সঙ্গে পরামর্শ বুঝলি বকু হুজুরকে আমি শ্রীঘরে নিয়ে ছাড়ব। আমার বিনা অনুমতিতে বিয়ে! সাত বৎসর শ্রীঘরে বসে ইট ভাঙ্গতে হবে। ইট ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে হাতে কড়া পড়ে যাবে। আমি সহজ জিনিস না। তুই শুধু দেখ— কী হয়।
শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না। মা কাঁদতে কাঁদতে আগামসি লেনে তার বাবা-মার সঙ্গে থাকতে আসেন। আর আমার বাবা তার অফিস সেক্রেটারীকে বিয়ে করে ফেলেন। আমার ধারণা তাদের এখন বেশ সুখের সংসার। দুটা ছেলেমেয়ে আছে। বাবা থাকেন এলিফেন্ট রোড়ে একটা কেনা ফ্ল্যাটে। তাদের একটা মেরুন কালারের গাড়িও আছে। একদিন দেখি নতুন মা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবা তার পাশে বসে হাসি হাসি মুখে কী যেন বলছেন। নতুন মার মুখেও হাসি। বাবা বেশ সুখেই আছেন। তবে মার ধারণা বাবা আছেন হাবিয়া দোজখে। কারণ যে মহিলাকে বিয়ে করেছেন—তিনি পর্বতের মত। বসলে উঠে দাঁড়াতে পারেন না। টেনে তুলতে হয়।
বুঝলি বকু, সারা গায়ে শুধু থলথলা চর্বি। পুতুল পুতুল দেখে তোর বাবা মজে গিয়ে বিয়ে করেছিল–সেই পুতুল এখন মৈনাক পর্বত। ট্রাকে তুললে ট্রাকের চাকার হাওয়া চলে যায় এই অবস্থা। আর মাগীর মেজাজ কী! সারাক্ষণ খ্যাক খ্যাক করে।
সবই মার বানানো কথা। মহিলা একটু মোটার দিকে। কিন্তু খুবই মায়াকাড়া চেহারা। মৃদুভাষি। কথা বলার সময় ঠোঁট টিপে টিপে হাসেন— দেখতে ভাল লাগে। আমার সঙ্গে তাঁর এই পর্যন্ত তিনবার দেখা হয়েছে। তিনবারই তিনি খুব ভদ্র ব্যবহার করেছেন। আমাদের এই দেখা হবার খবর জানেন না। খবর জানলে আবারো গোলাপ ফুলে দেয়ার কীটনাশক অষুধ খেয়ে ফেলতেন।
তবে এখন আর আমাদের গোলাপ গাছ নেই। এবং গাছে দেয়ার অষুধও নেই। নাজানের দোতলা বাড়ির একটা অংশে আমরা থাকি। দোতলার অর্ধেকটা এবং একতলার পুরোটা ভাড়া দেয়া হয়। এই ভাড়ার টাকায় আমাদের এবং আমার মামার সংসার চলে। মামার বয়স পঞ্চাশ-— এখনো বিয়ে করেন নি। আমার বুদ্ধি হবার পর থেকে শুনে আসছি তিনি বিয়ে করছেন। সব ঠিকঠাক। সেই বিয়ে এখনো হয় নি। এতে অবশ্যি আমার মা খুশি। কারণ বিয়ে কলেই দোতলার অর্ধেকটা আর ভাড়া দেয়া যাবে না। মামা সেখানে তাঁর সংসার পাতবেন। বাড়ি ভাড়া থেকে আয় অর্ধেক হয়ে যাবে। সংসারের খরচও যাবে বেড়ে। মামাকে তখন আর সামান্য হাত খরচ দিয়ে মানানো যাবে না। নিতেই মামা কিছুদিন পর পর গম্ভীর গলায় মাকে ডেকে বলেন–সাবিহা শোন তোর ভালর জন্যে বলছি। তোর মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। এখন দেখে নে একটা বিয়ে দিয়ে দে। তারপর তুই মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে উঠে যা। বরণ এই বাড়ি আমার। বাড়ি ভেঙ্গে আমি ফ্লাট বানাব। এক তলায় দোকান, উপরে ফ্লাট। মুফতে অনেক দিন থেকে গেলি। তোর কাছে থেকে এক পয়সা ড়ি ভাড়া নেই নি। আর কত? সারাজীবন তোদের পালব এমন কথাতো না। মতো আর হাজি মোহাম্মদ মোহসিন না। আমি হলাম গিয়ে পাজি মোহাম্মদ কাসেম।
নানাজানের এই বাড়ি যে শুধু মামার একার তা না। মার অবশ্যই তাতে অংশ আছে। মা মামার সঙ্গে ঐ লাইনে কোন কথা বলেন না। মা কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন-ভাইজান এই বাড়ি অবশ্যই আপনার। আপনি যেদিন বলবেন সেদিনই চলে যাব। আজ বললে আজ যাব। বিপদের সময় আপনি যে আমাকে থাকতে দিয়েছেন এই যথেষ্ট। আমার আর আমার মেয়ের চামড়া দিয়ে জুতা। নালেও আপনার ঋণ শোধ হবে না ভাইজান। ……
বলতে বলতে মার গলা ধরে যেত, তিনি বাক্য শেষ করতে না পেরে কেঁদে অস্থির হতেন। এতেই আমার কাসেম মামা বিচলিত হয়ে বলতেন—আরে কী শুরু করলি? তোদের আমি ফেলে দেব নাকি? আমার একটা বিচার আছে না? আমিতো নর-পিশাচ না। আমি নর-মানব। আমি যতদিন থাকব তোরাও থাকবি। চোখ মুছ।
চোখ মোছার বদলে মা আরো ব্যাকুল হয়ে কেঁদে উঠতেন। মামা হতেন চেলিত আমি আমার মায়ের অভিনয় প্রতিভায় হতাম মুগ্ধ।
মা অবশ্যই বুদ্ধিমতী। বাবার চলে যাওয়াকে এক সময় তিনি সহজ ভাবে নিয়ে নিলেন এবং বাস্তব স্বীকার করে বাঁচার চেষ্টা চালালেন। বাবার কাছে কান্নাকাটি করে তিনি মাসিক একটা বরাদ্দের ব্যবস্থা করলেন। এ ছাড়াও প্রায়ই বকুলের শরীর খারাপ চিকিৎসা করাতে হবে, বকুলের কলেজে ভর্তি হবার খরচ, এইসব বলে বলে টাকা আদায় করতে লাগলেন। সেই টাকার একটা পয়সাও খরচ করলেন না। ব্যাংকে জমা করতে লাগলেন। বাড়ি ভাড়া বাবদ যে টাকা পেতেন তার পুরোটাও মা খরচ করতেন না। একটা অংশ ব্যাংকে জমা করতেন। ছোটাছুটি করার ব্যাপারে মা একজন এক্সপার্ট। নিজের জীবনের দুঃখের কাহিনী বলার ব্যাপারেও এক্সপার্ট। স্কুলে আমাকে কখনো বেতন দিতে হয় নি। ফ্রী শিপের জন্যে মা দরখাস্ত করতেন। যেখানে লেখা থাকত–
আমি স্বামী পরিত্যক্ত একজন মহিলা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমার বর্তমানে কোন সহায় সম্বল নাই, আশ্রয় নাই। দুইবেলা অন্ন সংস্থানের পথ নাই। আমি তারপরও মানুষের মত বেঁচে থাকতে চাই। তার পরেও আমি আমার কন্যা মালিহা রুমালীকে (বকুল) সুশিক্ষিত করতে চাই। আমার এই কন্যা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ছেলেমেয়ে সবার মধ্যে তৃতীয় স্থান দখল করেছিল। অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় সে মেধা তালিকায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং ছেলেমেয়েদের মধ্যে চতুর্থ হয়েছিল। আপনার দয়ার উপর আমি নির্ভর করছি। এই কঠিন জীবন সংগ্রামে আপনি আমাকে সাহায্য করুন। মালিহা রুমালীর বৃত্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের খবর পত্রিকায় ছাপা হয়। আপনার অবগতির জন্যে পেপার কার্টিং এর ফটোকপি পাঠাইলাম।
বিনীতা
মালিহা রুমালীর দুর্ভাগা মাতা
সাবিহা বেগম মুক্তা।
মার এই জাতীয় দরখাস্তে কাজ হত। তিনি নানান ধরনের মহিলা সমিতিতেও ঘুরতেন। এক মহিলা সমিতি তাঁকে পায়ে চালানো একটি সেলাই মেশিন দিয়েছিল। তিনি মেশিন বিক্রি করে সেই টাকাও ব্যাংকে জমা করে রেখেছিলেন। এক এনজিওর কাছ থেকে তিনি আমার জন্যে একটা বৃত্তিও জোগাড় করেন। মাসে পাঁচশ টাকা। এই টাকা নেবার জন্যে প্রতি মাসের তিন তারিখে আমাকে মার সঙ্গে এনজিওর অফিসে যেতে হত এবং দীর্ঘ সময় করুণ মুখ করে একটা ঘরে বসে গরমে ঘামতে হত। সেই ঘরে ফ্যান ছিল, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার বনবন করে ফ্যান ঘুরলেও সেই ফ্যানে কোন বাতাস হত না।
মার ভিক্ষাবৃত্তিমূলক কর্মকান্ড শুরুতে অসহ্য লাগলেও শেষে সয়ে গিয়েছিল। মানুষের দয়া এবং করুণা পাবার নিত্য নতুন কলাকৌশল মা আবিষ্কার করতেন–আমি সে সব দেখতাম, এবং অবাক হতাম। মার কারণেই আমি প্রথম টিভি নাটকে সুযোগ পেলাম। নাটকের প্রযোজকের বাসার ঠিকানা বের করে তিনি একদিন আমাকে নিয়ে তাঁর বাসায় উপস্থিত। প্রযোজকের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে তিনি নিজের দুর্ভাগ্যের কথা বলতে বলতে যে কান্না শুরু করলেন—সেই কান্নায় পাথর গলে প্রযোজকের স্ত্রীতো গলবেনই। ভদ্রমহিলাও চোখ মুছতে লাগলেন। সেই মহিলার কল্যাণে আমি জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে নড়ালাম। নাটকের নাম স্বপ্ন সায়র। স্বপ্ন সায়র নাটকে আমার অভিনয় নিশ্চয়ই খুব ভাল হয়েছিল— কারণ আমার মাকে তারপর আর কখনো কোন প্রযোজকের বাসায় গিয়ে তাদের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে হয় নি। বছরের শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী হিসেবে আমি দুবার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেলাম। আমাদের বসার ঘরে দুটা ছবি বড় করে বাঁধাই করা আছে। একটাতে আমি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবের হাত থেকে পদক নিচ্ছি, অন্যটায় প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের হাত থেকে পদক নিচ্ছি। এরশাদ সাহেবের একটা হাত আমার মাথায় রাখা। মা আমাকে গান শেখার ব্যবস্থা করলেন, নাচ শেখার ব্যবস্থা করলেন, সবই বিনা পয়সায়। একজন স্বামী পরিত্যক্তা আশ্রয়হীনা মহিলার প্রতি দয়া বশতই গানের এবং নাচের টিচার রাজি হলেন।
সোহরাব চাচা আমার দিকে আসছেন। তার হাতে বড় একটা কাচের গ্লাস। সোহরাব চাচা হচ্ছেন কথাকলি ফিল্মসের প্রডাকশন ম্যানেজার। রোগা টিং টিং-এ একজন মানুষ। সব সময় হলুদ পাঞ্জাবি পরেন এবং ক্রমাগত পান খান। ভাত খাবার আগেও তাঁর মুখ ভর্তি পান থাকে। ভাতের নলা মাখার সময় থু করে পান ফেলে কুলি করে নেন। অসাধারণ একজন মানুষ। মাছির যেমন হাজার হাজার চোখ থাকে তারও তেমনি হাজার হাজার চোখ। চারপাশে কোথায় কী হচ্ছে তিনি সব জানেন। সমস্যা, তা যত জটিলই হোক— তাঁর কাছে সমাধান আছে। সমস্যার সমাধান তিনি এমন ভাবে করেন যে কেউ বুঝতেই পারে না—সমাধানটা তিনি করেছেন। রাগ বলে কোন বস্তু তার ভেতর নেই। চব্বিশ ঘন্টা কাজ করতে পারেন। তবে কাজের ফাঁকে গল্প করতেও খুব পছন্দ করেন। বিশেষ বিশেষ মানুষের সঙ্গে যে গল্প করেন তা না— সবার সঙ্গে গল্প। যার সঙ্গে গল্প করেন মনে হয় সেই তার প্রাণের বন্ধু, তিনি আমাকে ডাকেন রুমাল।
রুমালের খবর কী?
খবর ভাল। আপনি কেমন আছেন চাচা?
আমি খুবই ভাল আছি— এই নাও তোমার বেলের সরবত।
বেলের সরবততে আমি খাব না।
সেকি তোমার মা যে বলল তুমি বেলের সরবত খেতে চাচ্ছ?
চাচ্ছি না।
আচ্ছা না চাইলেও খেয়ে ফেল। জিনিসটা ভাল। আরেকটা কথা শোন—যদি কিছু খেতে ইচ্ছে করে আমাকে বলবে! পুরোদস্তুর নায়িকা যখন হবে তখন আর বলতে হবে না। আপনাতেই সব হয়ে যাবে।
চাচা আমি কি নায়িকা হতে পারব?
সেটা আমি বলতে পারব না। অভিনয় প্রতিভা কার কেমন তা জানি না, বুঝিও না। আমি হলাম যোগানদার। যার যা লাগবে—আমাকে বলবে আমি উপস্থিত করব।
আপনাকে যা আনতে বলা হবে নিয়ে আসবেন?
তুমি বললে আনব না। তবে ডিরেক্টর সাহেব বললে জোগাড় করব।
উনি যা বলবেন তাই এনে দেবেন?
এনে দেব। ফিল্ম লাইনের প্রডাকশন ম্যানেজার হতে হলে চাহিবা মাত্র উপস্থিত বিদ্যায় পারদর্শী হতে হয়। তবে শোন মিস রুমাল— উদ্ভট কিছু কোন ডিরেক্টর চায় না। ডিরেক্টরও জানে কী জোগাড় করা যাবে কী যাবে না।
মঈন সাহেবকে আপনি খুব পছন্দ করেন তাই না চাচা?
হ্যাঁ।
কেন করেন?
তুমি যে কারণে কর–আমিও সেই কারণে করি।
কই আমিতো পছন্দ করি না।
পছন্দ না করাই ভাল। বেলের সরবতটা কেমন লাগলগো মা?
ভাল।
রেসিপি লাগবে? রেসিপি লাগলে বল–আমি রেসিপি দিয়ে দিচ্ছি। কাগজে লেখা আছে। এই নাও।
আমি অবাক হয়ে দেখি সত্যি একটা কাগজে-বেলের সরবতের রেসিপি লেখা। সোহরাব চাচার হাত থেকে আমি কাগজটা নিলাম—
বেলের সরবত
পাকা বেল ১টি
ঠাণ্ডা পানি ৩ কাপ
দৈ ১/২ কাপ
চিনি ১ কাপ
গোলাপজল ১ টেবিল চামচ
১. বেলের আঠা ও বীচি ফেলে ১ কাপ পানিতে ভেজাতে হবে মোটা চালুনীতে ছেঁকে নিতে হবে।
২. চালবার পর ১ কাপ চিনি মেশাতে হবে।
৩. দৈ ফেটে মেশাতে হবে। গোলাপ জল এবং বরফের কুচি দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। চিনির বদলে ক্যারামেল সিরাপ দেয়া যেতে পারে।
আমি বললাম, চাচা আপনি রেসিপি নিয়ে ঘুরছেন কেন?
সোহরাব চাচা গলার স্বর নিচু করে বললেন, পাপিয়া ম্যাডামের জন্যে। ম্যাডামের এই সরবত এত পছন্দ হয়েছে যে রেসিপি চেয়েছেন। রেসিপি যখন লিখতেই হচ্ছে কার্বন পেপার দিয়ে তিন কপি করে ফেললাম–ছোট নায়িকা হিসেবে তুমি এক কপি রেখে দাও।
থ্যাংক য়্যু।
সোহরাব চাচা চলে গেলেন। এতক্ষণে শুটিং শুরু হল। তিনটা টেক নেয়া হল। টেক মনে হয় ভাল হয়েছে। ডিরেক্টর সাহেবকে খুশি খুশি দেখাচ্ছে। তিনি সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দিচ্ছেন। আনন্দের সময় তিনি ফস করে সিগারেট ধরান–লম্বা লম্বা কয়েকটা টান দিয়ে জ্বলন্ত সিগারেট দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেন। সেই সিগারেট কুড়িয়ে তুলে নেবার ব্যাপারে সমবেত জনতার মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ দেখা যায়। এখানেও তাই হচ্ছে।