Collected মা - ম্যাক্সিম গোর্কি

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,011
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
মা

মূল লেখকঃ ম্যাক্সিম গোর্কি (অনুবাদ:বিমল সেন)






পর্ব - ১
রোজ ভোরে কারখানার বাঁশি বেজে ওঠে তীক্ষ্ণ তীব্র ধ্বনিতে মজুর-পল্লির ধূম্র-পঙ্কিল আর্দ্র বাতাস কম্পিত হয়, আর ছোট ছোট কুঠরি থেকে অবিচ্ছিন্ন ধারায় বেরিয়ে আসে দলে দলে মজুর। অপ্রচুর নিদ্রায় আড়ষ্ট দেহ, কালো মুখ। ঊষার কনে হাওয়া…সংকীর্ণ মেটো পথ…তারই মধ্য দিয়ে চলে তারা গিয়ে ঢুকে পড়ে সেই উঁচু পাথরের খাচাটার মধ্যে, যেটা তাদের গ্রাস করবার জন্য কাদা-ভরা পথের দিকে চেয়ে আছে শত শত হদে তৈলাক্ত চক্ষু বিস্তার করে। পায়ের তলায় কাদা চট চট করতে থাকে কাদাও যেন তাদের ভাগ্য নিয়ে বিদ্রুপ করছে; কানে আসে নিদ্রাজড়িত কণ্ঠের কর্কশ ধ্বনি, ক্রুদ্ধ তিক্ত গালাগালির শব্দ…তারপর সে-সব ডুবে যায় কলের গম্ভীর ধ্বনিতে, বাষ্পের অসন্তোষ-ভরা গর্জনে। কালে কঠিন চিনি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় পল্লির বহু ঊর্ধ্বে। সন্ধ্যায় কারখানা তাদের ছেড়ে দেয় দগ্ধ-সর্বস্ব ছাইয়ের মতো। আবার তারা পথ বেয়ে চলে…ধোয়া-মলিন মুখ… মেশিন-তেলের বোটকা গন্ধ: ক্ষুধার্ত সাদা দাঁত কিন্তু সজীব, আনন্দপূর্ণ কণ্ঠ। সেদিনকার মতো কঠিন শ্রম-দাসত্ব হ’তে তারা মুক্তি পেয়েছে, এখন শুধু বাড়ি ফেরা, খাওয়া এবং ঘুম।
গোটা দিনটা হজম করে ওই কারখানা। কল মানুষকে ইচ্ছামতো শোষণ করে জীবন থেকে একটা দিন সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়…মানুষ অজ্ঞাতসারে এগোয় তার কবরের দিকে। তবু তারা খুশি… তাড়ি আছে, আমোদ আছে।…আর কি চাই।
ছুটির দিনে মজুরেরা ঘুমোয় দশটা তক…তারপর উঠে সব চেয়ে পছন্দসই পোশাকটি পরে গিজায় যায়…যাবার আগে ধর্ম-বিমুখতার জন্য ছোটদের একচোট ব’কে নেয়। ফিরে এসে পিরগ খায়; তারপর সন্ধ্যাতক ঘুমোয়। সন্ধ্যায় পথের ওপর আনন্দের মেলা বসে। পথ শুকনো হ’ক, তবু ওভার- যাদের আছে পরে বেরোয়…বর্ষা না থাকলেও ছাতা নিয়ে পথে নামে! যার যা আছে তাই নিয়ে সে স্যাঙ্গাতদের ছাড়িয়ে উঠতে চায়। পরস্পর দেখা হলে কল-কাৰখানার কথাই বলে, ফোরম্যানকে গালি দেয়, কল-সংক্রান্ত কথা নিয়েই মাথা ঘামায়। ঘরে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে কলহ করে, মাঝে মাঝে তাদের নির্মমভাবে মারে। যুবকেরা মদ খায়, এর-ওর বাড়ি আড্ডা দিয়ে ফিরে, অশ্লীল গান গায়, নাচে, কুৎসিৎ কথা উচ্চারণ করে। অনেক রাতে বাড়ি ফিরে আসে… নোংরা গ, ছেঁড়া পোশাক, ছিন্ন মুখ…কাকে মেরেছে তারই বড়াই, কার কাছে পিটুনী খেয়েছে তারই অপমানের কান্না। কখনো কখনো বাপমা-ই তাদের তুলে আনেন এথ কিংবা তাড়িখানা থেকে, মাতাল অবস্থায়। কটুকণ্ঠে গালমন্দ করেন…স্পঞ্জের মতো মদসিক্ত শরীরে দু’দশ ঘা বসান…তারপর রীতিমতো শুইয়ে দেন…পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙিয়ে কাজে পাঠান।
বহু বছর ব্যাপী অবসাদের ফলে ক্ষুধা-শক্তি তাদের লোপ পেয়েছে… ক্ষুধা উদ্রেক করার জন্য তারা গ্লাসের পর গ্লাস মদ চালায়। ক্রমে মদের মাত্রা চড়ে যায় প্রত্যেকের প্রাণেই মাথা তুলে দাঁড়ায় একটা অবোধ্য পীড়াদারক অসন্তুষ্টি, যা ভাষায় ফুটলতে চায়। এই অশান্তিকর উদ্বেগের
বোঝা হালকা করার জন্যই তারা তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়টি নিয়েও হানাহানি করে হিংস্র পশুর মতো…কখনো আহতাঙ্গ হয়, কখনো মরে। এই প্রচ্ছন্ন হিংস্রতা ধীরে ধীরে বেড়ে চলে জীবনে। তারা জন্মে আত্মার এই পীড়া নিয়ে। এ তাদের পিতৃধন। কালো ছায়ার মতো কবর পর্যন্ত লেগে থাকবে সঙ্গে…জীবনকে করবে উদ্দেশ্যহীন, নিষ্ঠুরতা এবং … পাশবিক উত্তেজনায় কলঙ্কিত!
চিরকাল বছরের পর বছর…জীবন-নদী বয়ে এসেছে এমনি ধারায়। মন্থর, একঘেয়ে তার গতি-পঙ্কিল তার স্রোত। দিনের পর দিন তারা একই কাজ করে চলে রুটিনের মতো জীবনের এ ধারা বদলাবার ইচ্ছে বা অবসর যেন কারো নেই।
নতুন কেউ যখন পল্লিতে আসে, নতুন বলেই দু’চারদিন সে তাদের কৌতুহল উদ্রেক করে। তার কাছে ভিন্মুলুকের গল্প শোনে, সবাই বোঝে, সর্বত্রই মজুরের ঐ এক অবস্থা। নবাগতের ওপর আর কোন আকর্ষণ থাকে না।
মাঝে মাঝে কোন নয়া লোক এসে এমন-সব অদ্ভুত কথা বলে যা’ মজুর-পল্লিতে কেউ কখনো শোনেনি। তারা তার কথা কান পেতে শোনে…বিশ্বাসও করে না, তর্কও করে না। কারো মধ্যে জেগে ওঠে অন্ধ বিক্ষোভ, কেউ হয় ভীত বিব্রত, কেউ হয়ে ওঠে এক অজানা লাভের ক্ষীণ সম্ভাবনায় চঞ্চল। তারা পানের মাত্রা চড়িয়ে দেয়, যাতে এই অনাবশ্যক বিরক্তিকর উত্তেজনা ঝেড়ে ফেলতে পারে। নবাগতকে যেন তারা ভয়ের চোখে দেখে…সে হয়তো তাদের মধ্যে এমন-কিছু এনে ফেলবে যা তাদের সহজ জীবন-স্রোতে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি করবে। তারা আশাই করেনা যে তাদের অবস্থার ও আবার উন্নতি হতে পারে। প্রত্যেক সংস্কারকে তারা সংশয়ের চোখে দেখে…ভাবে, শেষপর্যন্ত এ শুধু তাদের বোঝা বাড়াবে মাত্র। তাই তারা নবাগতদের এড়িয়ে চলে।
এমনি করে মজুরদের পঞ্চাশ বছরের জীবন কেটে যায়।
.
কামার মাইকেল ভ্লাশভের জীবনও কেটে যায় এমনি ধারায়। গম্ভীর কালো মুখ, সন্দেহ-তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, ছোট ছোট চোখ, অবিশ্বাস-ভরা হাসি, উদ্ধত ব্যবহার, কারখানার ফোরম্যান এবং সুপারিন্টেণ্ডেন্টকেও কেয়ার করে না, কাজেই কামায় কম। ফি ছুটির দিনে কাউকে মারা চাই; কাজেই পাড়ার সবাই তাকে ভয় করে, অপছন্দ করে। মারতে গিয়েও ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসে। শত্রুর সাড়া পেলেই ভ্লাশভ হাতের কাছে গাছ, পাথর, লোহা যা পায় তাই নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। সব চেয়ে ভয়ানক তার চোখদুটো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে যেন লোহার শলাকার মতো শত্রুকে বিদ্ধ করে…সে চোখের সামনাসামনি যে পড়ে সেই বোঝে কী এক হিংস্র ভয়-ডরহীন নিষ্ঠুর জল্লাদের কবলে সে পড়েছে। মুখের ওপরে-এসে-পড়া ঘন চুলের ফাঁকে ফাঁকে তার হলদে দাঁত ভয়ংকরভাবে কম করতে থাকে। দুরহ নারকী কীট-বলে সে তর্জন করে ওঠে…শত্রুদল চকিতে রণে ভঙ্গ দিয়ে গালি দিতে দিতে পালায়। মাথা খাড়া করে সঁতের মধ্যে ছোট গোটা একটা চুরুট চেপে সে তাদের পিছু নেয়, আর চ্যালেঞ্জ করে, কোন্ ব্যাটা মরতে চাস, আয়। কেউ চায়না।
এমনি সে খুব কম কথা বলে, শুধু ‘নারকী কীট’ এই কথাটা তার মুখে লেগেই আছে। কারখানার কর্তাদের থেকে শুরু করে পুলিসদের পর্যন্ত সে ঐ বলে ডাকে। বাড়িতে গিয়ে বউকে পর্যন্ত বলে, ‘নারী কীট’ আমার পোশাক যে ছিঁড়ে গেলো দেখতে পাস না?
তাঁর ছেলে পেভেলের বয়স যখন চৌদ্দ, তখন একদিন তার চুল ধরে টানতে গেলো। পেভেল পলকে একটা হাতুড়ি তুলে নিয়ে বললো, দুয়োনা বলছি।
কী!-পিতা কৈফিয়ৎ তলবের সুরে গর্জে উঠলো।
পেডেল অবিচলিত কণ্ঠে বললো, যথেষ্ট হয়েছে, আর আমি পড়ে পড়ে মার খাচ্ছি না। বলে হাতুড়িটা সে একবার সদর্পে মাথার ওপর ঘোরালো।
পিতা তার দিকে চাইলেন, তারপর লোমবহুল হাত দু’খানা ছেলের পিঠে রেখে হেসে বললেন, বহুৎ আচ্ছা! ধীরে ধীরে তার বুক ভেঙে একটা দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো, বলে উঠলেন, নারকী কীট…
…এর কিছুকাল পরে বউকে একদিন ডেকে বললেন, আমার কাছে আর টাকা চেয়োনা, ছেলেই এবার থেকে তোমায় খাওয়াবে।
স্ত্রী সাহস করে প্রশ্ন করলো, আর তুমি বুঝি মদ খেয়ে সব ওড়াবে?
সে কথায় তোর কাজ কি, ‘নারকী কীট’ কোথাকার!
সেই থেকে মরণ অবধি তিন বছর ছেলেকে সে চোখ চেয়ে দেখেনি, ছেলের সঙ্গে কথা বলেনি।
মরলো সে ভীষণ যন্ত্রণা পেয়ে। পাঁচদিন ধরে বিছানায় গড়াচ্ছে… সমস্ত অঙ্গ কালো হয়ে গেছে দাঁত কটমট করছে…চোখ বোজা! মাঝে মাঝে ব্যথা যখন বড়ই অসহ হয়, বউকে ডেকে বলে, আর্সেনিক দাও, বিষ খাও।
বউ ডাক্তার ডাকলো। ডাক্তার পুলটিশের ব্যবস্থা করলেন, বললেন, অচিরে একে হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্র করা দরকার।
মাইকেল গর্জে উঠলো, গোল্লায় যাও। আমি নিজে নিজেই মরতে পারব ‘নারকী কীট’ কোথাকার।
ডাক্তার চলে গেলে বউ সজল চোখে জেদ করতে লাগলো, অস্ত্র করাও।
সে হাতখানা মুষ্টিবদ্ধ করে বউকে ভয় দেখিয়ে বললো, কোন্ সাহসে ওকথা বলি; জানিস, আমি ভালো হয়ে উঠলে তোর বিপদ।
ভোরে কারখানার বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সে মারা গেলো। বউ একটু কঁদলো, ছেলে মোটেই না। পাড়া-পড়শীরা বললো, বউটার হাড় জুড়িয়েছে, মাইকেল মরেছে। একজন বলে উঠলো, মরেনি, পশুর মতো পচতে পচতে জীবনপাত করেছে।
গোর দিয়ে যে যার ঘরে চলে গেলো… দীর্ঘকাল বসে রইলো শুধু মাইকেলের কুকুরটা…কবরের তাজা মাটির ওপর বসে নীরবে সে কার স্নেহ-কোমল পরশের অপেক্ষা করে।
.
১.০২
দু’হপ্তা পরে এক রবিবারে পেভেল বাড়ি ফিরলো মাতাল হয়ে…টলতে টলতে পড়লে গিয়ে ঘরের এক কোনায়-পিতার মতো
টেবিলের ওপর ঘুষি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, মা, খাবার।
মা উঠে গিয়ে তার পাশটিতে বসলেন, হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ছেলের মাথাটা বুকে টেনে নিলেন। ছেলে মাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো, জৰি খাবার!
‘বোকা ছেলে!’ দুঃখ-ভরা মেহ-সজল কণ্ঠে মা তাকে সঙ্গত করার চেষ্টা করতে লাগলেন।
কোনো মতে জিভটাকে টেনে জড়িতস্বরে পেভেল বললো, আমি তামাক খাবো, বাবার পাইপটা এনে দাও।
এই প্রথম সে মাতাল হয়েছে। মদে তার শরীর নিস্তেজ হয়েছে কিন্তু জ্ঞান লোপ পায়নি। বারে বারে একটা প্রশ্ন তার মগজে এসে ঘা খেতে লাগলো, ‘মাতাল? মাতাল?…মা যত আদর করেন, তত তার অস্থিরতা বাড়ে…মায়ের করুণ দৃষ্টি তাকে ব্যথা দেয়…সে কাঁদতে চায় কিন্তু পারে না।…মাতলামি দিয়ে উদ্যত ক্রন্দনকে রোধ করতে যায়। মা তার চুলে হাত বুলোতে বুলোতে ধীরে ধীরে বলেন, কেন এ কাজ করিস্ বাবা? এ তো তোর কর্তব্য নয়!
সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, বমি করে মা তাকে বিছানায় শুইয়ে দেন… ভিজে তোয়ালে দিয়ে উষ্ণ কপাল ঢেকে দেন। সে একটু সুস্থ হয়… কিন্তু তার চারপাশে সব-কিছু যেন দুলছে…তার চোখের পাতা ভারি… মুখে নোংরা টক আস্বাদ। চোখের পাতার মধ্য দিয়ে মায়ের বড় মুখখানির দিকে চায় আর এলোমেলো চিন্তা করে, হয়তো আমার এখনো মদ খাবার বয়স হয়নি। অন্য সবাই খায়, তাদের তো কিছু হয় না… আমি শুধু ভুগি।
দূরে কোনো স্থান থেকে মায়ের কোমল কণ্ঠ ভেসে আসে, তুই মাতাল হলে তোর এ বুড়ো মাকে কি করে খেতে দিবি, বাবা?
চোখ বুজে সে বলে, সবাই তো খায়।
মা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন। ছেলে মিথ্যে বলেনি। তিনি নিজেই জানেন, শুঁড়িখানা ছাড়া আর কোনো স্থান জোটেনা মজুরদের আনন্দ করার…মদ ছাড়া আর কোনো বিলাসিতা তাদের কপালে নেই…তবু বলেন, খানি, খানি, বাবা! তোর বাবা মদ খেয়ে আমাকে জীবন-তোর দুঃখ-দুর্দশায় ডুবিয়ে রেখে গেছেন…তুই তোর মায়ের ওপর দয়া কর। করবিনি, বাবা?
পেভেল মায়ের কোমল-কাতর কথাগুলি কান পেতে শোনে। পিতার জীবদ্দশায় মা ছিলেন নির্যাতিত, উপেক্ষিত, ভীতা…সে কথা মনে পড়ে। পিতার ভয়ে বাইরে বাইরেই ঘুরতো বলে মা যেন তার কাছে প্রায় অপরিচিতই রয়ে গেছেন। আজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চাইলো। লম্বা, ঈষৎ নম্র দেহ দীর্ঘবর্ষব্যাপী শ্রমে এবং স্বামীর নির্যাতনে তা যেন ভেঙে পড়েছে…চলেন নিঃশব্দে, একদিকে ঈষৎ হেলে সর্বদা যেন কোন কিছু থেকে আঘাত পাবার ভয়। প্রশস্ত গোলগাল মুখ…কপালে চিন্তার রেখা…বাধক্যে চর্ম লোল…এক জোড় কালো চোখ উদ্বেগ এবং বিষাদে ভরা…ডান ভুরুতে একটা গভীর কাটা দাগ, ফলে ভুরুটা যেন একটু উঁচুতে ঠেলে উঠেছে… ডান কানটাও একটু লম্বা বাম কানটার চাইতে দেখলে মনে হয়, কান যেন কি শুনবে এই আতঙ্কে উন্মুখ! গভীর কালো চুলের মাঝে মাঝে সাদা সাদা গুচ্ছ, যেন সেগুলি আঘাতের চিহ্ন। কোমল, করুণ বাধ্য…এই মা। দু’চোখ দিয়ে তার জল গড়ায় ধীরে ধীরে।
ছেলে কোমল অনুনয়-ভরা কণ্ঠে বললো, চুপ কর, মা, কেঁদোনা, আমায় জল দাও।
মা উঠলেন, বললেন, বরফজল এনে দিচ্ছি।
কিন্তু মা যখন ফিরলেন তখন সে নিদ্রিত।
পান-পাত্র টেবিলের ওপর রেখে মা নীরবে প্রার্থনা করতে লাগলেন।
বাইরে মজুরদের মাতলামি-ভরা সঙ্গীত, গালাগালি এবং চীৎকার।
আবার দিন বয়ে চললো তেমনি একটানা সুরের মতো…শুধু এ বাড়ি থেকে আগের সে মাতলামি, সে অশান্তি লোপ পেতে লাগলো। পল্লির অন্যান্য বাড়ি থেকে একটু স্বতন্ত্র হয়ে উঠলো।
বাড়িখানি পন্সির এক-প্রান্তে, একটু ঢালু জায়গায়। তিনটি কামরা, …একটি রান্নাঘর, একটি ছোট কুঠরি…মায়ের শোবার ঘর, রান্নাঘর থেকে একটি ছাদ পর্যন্ত উঁচু পার্টিশনে ভিন্ন করা…ঘরের মাত্র এক তৃতীয়াংশ জুড়ে এই দুটো কামরা। বাকিটা একটা চৌকো কামর, তাতে দু’খানা জানালা, কোনায় পেভেলের বিছানা, তার সামনে একটা টেবিল, দু’খানা বেঞ্চি, কয়েকখানা চেয়ার, একটা ছোট আরশিওয়ালা হাত-পোয়র পাত্র, একটা ট্রাঙ্ক, একটা ঘড়ি এবং দু’টো আইকন।
অন্যান্য সবাই যেমন দিন কাটায়, পেভেলও চেষ্টা করেছিলো তেমনি ভাবে দিন কাটাতে। একজন যুবক যা’ করে থাকে, সব-কিছু সে করলো…একটা বেহালা কিনলো, সার্ট, রঙীন নেকটাই, জুতো, ছড়ি-কোন কিছুই আর তার বাদ রইলো না। বাহ্যত সে সমবয়সী অন্যান্য ছেলেদেরই তো…সান্ধ্যভোজে যায় …নাচে…মদ খায়, তারপর মাথার যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে, বুক জ্বলে, মুখ-চোখ মলিন হয়, আবার মা প্রশ্ন করেন, কালকের দিন ভালো কাটলো, বাবা?
ক্ষুব্ধ বিরক্ত হয়ে সে বলে ওঠে, ও গোরস্থানের মতো নীরস সবাই যেন এক-একটা মেশিন…তার চেয়ে মাছ ধরতে কি শিকার করতে যাবো।
কিন্তু তার মাছ ধরাও হয়ে উঠলোনা, শিকার করাও হয়ে উঠলো না।
ধীরে ধীরে সে সকলের চলা-পথ ত্যাগ করে অন্য এক পথে এসে দাঁড়ালো। মজলিসে যাওয়া তার ক্রমশ কমে এলো। ছুটির দিন যদিও সে কোথাও বেরিয়ে যায়, কিন্তু আর কখনো মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে না। মা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে লক্ষ্য করেন, ছেলের চোখ-মুখ যেন কি একটা অনুপ্রেরণায় ক্রমশ গম্ভীর, কঠিন, তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে যেন সবসময়ই তার মন জ্বলছে কোনো কিছুর ওপর ক্রোধে …অথবা যেন একটা গোপন ক্ষত অহর্নিশ তাকে খোঁচাচ্ছে। বন্ধুরা আসতো প্রথম প্রথম…কিন্তু কোনোদিন তাকে বাড়ি না পেয়ে আসা ছেড়ে দিলো। মা ছেলের এই স্বাতন্ত্র দেখে খুশিও হলেন, শঙ্কিতও হলেন। ছেলে এদিকেও টলছে না, ওদিকেও টলছে না, রুটিন-বাঁধা জীবনও তার নয় সে চলেছে দৃঢ় নিষ্ঠায়, অটুট সংকল্পে কোন এক গোপন পথে…তাই মায়ের শঙ্কা।
বাড়িতে সে বই নিয়ে আসতে লাগলো। প্রথম প্রথম সে লুকিয়ে পড়তো, পড়ে লুকিয়ে রাখতো… মাঝে মাঝে বই থেকে অংশবিশেষ কাগজে নকল করে কাগজখানাও লুকিয়ে ফেলতো। মা-ছেলেতে কথাবার্তা বড় একটা হত না। দিনের কাজের শেষে সন্ধ্যায় হাত-মুখধুয়ে খাওয়া শেষ করে ছেলে বই নিয়ে বসতে, অনেক রাত পর্যন্ত পড়া চলতে। ছুটির দিনে ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতো, ফিরতে অনেক রাতে। তার ভাষা মার্জিত হতে লাগলো, মা তার মুখে নতুন অজানা শব্দ শুনে অবাক হয়ে যেতেন। মায়ের শঙ্কা বাড়তো। ছেলে বই আনে, ছবি আনে, ঘর সাজায়, ফিটফাট হয়ে থাকে। মাতলামি নেই, গালাগালি নেই। ছেলে কি সন্ন্যাসী হল?…খুব সম্ভব শহরের কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছে। তাই বা কি করে হবে? তাতে তো মা টাকা দরকার…ছেলে প্রায় সব টাকাই তো এনে মায়ের হাতে দেয়।…
এমনি করে দু বছর কাটলো।
.
একদিন সান্ধ্যভোজের পর পেভেল ঘরের এক কোনে বসে পড়ছে… মাথার ওপর কেরোসিনের ল্যাম্প ঝুলছে…রান্নাঘরের বাসন-পত্র মুক্ত করে মা সন্তর্পণে ছেলের কাছে এসে দাঁড়ালেন। ছেলে মাথা তুলে নিঃশব্দে প্রশ্ন-ভরা দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চাইলো।
কিছু না পাশা! এমনি এলুম,-তাড়াতাড়ি চলে গেলেন না এই কথা বলে, কিন্তু চোখে তার উদ্বেগের সুস্পষ্ট ছাপ। এক মুহূর্ত রান্নাঘরে স্থির, চিন্তামগ্ন, অভিনিবিষ্টভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হাতমুখ ধুয়ে ফেলে আবার ছেলের কাছে এলেন, বললেন মৃদু-কোমল সুরে, একটা কথা জিগ্যেস করতে চাই, বাবা, দিনরাত সব সময় কেবল পড়িস কেন?
বইথানা একপাশে সরিয়ে রেখে পেভেল বললো, মা, বোসো। মা ছেলের পাশে বসলেন তার দেহ ঋজু হয়ে উঠলো, ভীষণ একটা-কিছু শোনার বেদনাময় উৎকণ্ঠায়। তার দিকে না চেয়েই পেভেল ধীরে কিন্তু দৃঢ়তা-মাখনো সুরে বলতে লাগলো, আমি নিষিদ্ধ বই পড়ছি। এ বই নিষিদ্ধ-কারণ এতে মজুর-জীবনের খাটি ছবি আঁকা। এ বই ছাপা হয় গোপনে…আর আমার কাছে এ বই আছে, এ যদি প্রকাশ পায়, তাহলে আমার জেল হবে—আমার জেল হবে আমি সত্যি জানতে চাই এই অপরাধে।
মার যেন নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে এলো বড় বড় চোখ মেলে ছেলের দিকে তিনি চাইলেন…মনে হল, এ যেন সে ছেলে নয়, এ নতুন… অপরিচিত। ছেলের জন্য দরদে তাঁর বুক ভরে উঠলো, কেন এমন কাজ করিস, বাবা?
মার দিকে চেয়ে শান্ত, গম্ভীর কণ্ঠে পেভেল বললো, আমি সত্য জানতে চাই, মা।
ছেলের শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠস্বরে রহস্য-সংকুল ভীষণ কি একটা সংকল্পের সাড়া পেয়ে মা কি বলবেন ভেবে পেলেন না। তার চোখে নীরব অশ্রু দেখা দিলো।
কেঁদোনা মা।-পেভেলের মৃদু দরদ-ভরা কণ্ঠ মার কানে এসে ঠেকলো বিদায়-বাণীর মতো। পেভেল বলতে লাগলো, মা, ভেবে দেখ দেখি, এ কি জীবন কাটাচ্ছ তুমি! তোমার বয়স চল্লিশ বছর…কিন্তু বাঁচার মতে বাঁচা কি একটা দিনও বেঁচেছ তুমি? বাবা তোমাকে মারতেন। আমি আজ বুঝি, তাঁর জীবন-ভরা দুঃখের ঝাল ঝাড়তেন তোমার গায়ে…দুঃখ তাকে পিষ্ট করে ফেলতো, কিন্তু সে দুঃখের মুল কি, তা তিনি জানতেন না। তিরিশ বছর খেটে গেছেন। কারখানায় যখন সবেমাত্র দু’টি দালান, তখন থেকে তিনি খাটতে শুরু করেন… এখন সেখানে সাত-সাতটা দালান। কল সমৃদ্ধ হয়, কিন্তু মানুষ মরে…কলের জন্য খাটতে খাটতে মরে।…
আতঙ্ক এবং আগ্রহে উন্মুখ হয়ে মা শুতে লাগলেন। ছেলের চোখ জ্বলছে এক অপরূপ সুন্দর দীপ্তিতে। টেবিলের ওপর ঝুকে পড়ে, মার আরো কাছে মুখ নিয়ে তাঁর সজল চোখের দিকে চেয়ে বললো, আনন্দ তুমি কি পেয়েছে জীবনে? তোমার অতীত জীবন মনে রাখার মতো কতটুকু ছিল তাতে?
মা করুণভাবে ঘাড় নাড়তে লাগলেন…দুঃখ এবং আনন্দ মেশানো এক অজ্ঞাত নতুন ভাব তার ব্যথিত উদ্বিগ্ন অন্তরের ওপর ছড়িয়ে পড়লো শান্তি-প্রলেপের মতো। নিজের সম্বন্ধে, নিজ জীবন সম্পর্কে এমন কথা এই প্রথম কানে এলে তাঁর। যৌবনে তার মনেও একদিন আকাঙ্ক্ষা, অতৃপ্তি, বিদ্রোহ ধূমায়িত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু তা বহুদিন হল নিঃশেষে চাপা পড়ে গেছে। আজ যেন সেই আগুন নতুন করে উসকে উঠছে। চিরদিন তারা শুধু দুঃখের অভিযোগই করে এসেছে কিন্তু এ দুঃখের কারণ কি, প্রতিকারই বা কি…তা’ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় নি। আজ সে সমস্যার সমাধান করবার মহৎ সংকল্প নিয়ে দাঁড়িয়েছে তার ছেলে… গৌরবে, আনন্দে তাঁর বুক ভরে উঠলো…ছেলের বক্তৃতার মাঝখানে বলে উঠলেন, তা, কি করতে চাও তুমি?
পাঠ করতে হবে এবং পড়ে অন্যকে শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের মজুরদের পাঠ করা অত্যন্ত দরকার আমাদের শিক্ষা করতে হবে, বুঝতে হবে, জীবন কেন আমাদের পক্ষে এত দুর্বহ।
মার বলতে ইচ্ছা হ’ল বাছা, তুমি কি করবে? ওরা যে তোমায় পিষে ফেলবে! তোমার প্রাণ যাবে। কিন্তু ছেলের আনন্দের উচ্ছ্বাসে বাধা দিতে সাহস হল না। ছেলে অগ্নিগর্ভ ভাষায় মনের জ্বালা ব্যক্ত করে যায়, মা সচকিত হয়ে নিম্নস্বরে সুধোন, তাই নাকি, পাশা?
হাঁ, মা-ছেলে দৃঢ়স্বরে জবাব দেয়। তারপর মাকে সে বলে সেই সব লোকের কথা, যারা চান শুধু মানুষের মঙ্গল, যারা চান শুধু মানুষের … অন্তরে সত্যের বীজ বপন করতে…এবং এই অপরাধে তারা পশুর মতো হত হন…জেলে যান, নির্বাসন-দণ্ড ভোগ করেন, সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন…মানুষের দুশমন যারা তাদের হাতে। আবেগের সঙ্গে বলে, এমন সব লোক আমি দেখেছি, মা…এঁরা দুনিয়ার সেরা লোক।
মা আবার বলতে যান, তাই নাকি, পাশা? কিন্তু বলা হয় না। তার ছেলেকে এমন সব বিপজ্জনক কথা বলতে শিখিয়েছে যারা, তাদের গল্প শুনে শঙ্কিত হতে থাকেন। ছেলে মার হাত ধরে প্রগাঢ় স্বরে ডাকে, ‘মা!’ মা বিচলিত হন। বলেন, আমি কিছু করবনা বাছা, শুধু তুই সাবধানে থাকিস…সাবধানে থাকি।
কিন্তু কি হতে সাবধানে থাকবে, তা খুঁজে না পেয়ে বলে ফেলেন, তুই বড় রোগা হয়ে যাচ্ছিল। তারপর তার স্নেহ-ভরা দৃষ্টি দিয়ে পুত্রের সুগঠিত দেহখানি যেন আলিঙ্গন করে বলেন, তুই যেমন খুশি চল, আমি বাধা দেবো না, বাবা। শুধু একটা কথা মনে রাখিস আমার, অসতর্ক হয়ে কথা বলিস না…লোকদের নজরে নজরে রাখিস …ওরা সবাই পরস্পরকে ঘৃণা করে অন্যের অনিষ্ট করে খুশি হয়…নিছক আমোদর লোভে মানুষকে পীড়া দেয় যেই তাদের দোষ দিতে যাবি, বিচার করবি, অনি তারা তোকে ঘৃণা করবে,তোর সর্বনাশ করবে।…
দুয়ারের গোড়ায় দাঁড়িয়ে পেভেল মায়ের এই বেদনাময় অভিজ্ঞতার উপদেশ শুনলো। তারপর মার কথা শেষ হলে বললো, জানি, মা, কী শশাচনীয় এই মানুষের দল! কিন্তু যেদিন উপলব্ধি করলুম, পৃথিবীতে একটা সত্য আছে, মানুষ আমার চোখে নতুনতর, সুন্দরতর শ্রীতে দেখা দিলো। শৈশবে আমি মানুষকে শিখেছিলুম ভয় করতে, একটু বড় হয়ে করেছি ঘৃণা…আজ নতুন চোখে দেখছি সবাইকে…সবার জন্যই আজ আমি দুঃখিত। কেন জানিনা, আমার হৃদয় কোমল হয়ে এলো যখন আমি বুঝলুম, মানুষের ভিতর একটা সত্য আছে, পাপ এবং পঙ্কিলতার জন্য সকল মানুষই দায়ী নয়।…
বলতে বলতে পেভেলের কণ্ঠ নীরব হয়… কান পেতে যেন শোনে প্রাণের ভিতরের কি এক অস্ফুট বাণী, তারপর চিন্তা-মন্থর কণ্ঠে বলে ওঠে…এমনি করেই সত্য বেঁচে থাকে।
পেভেল ঘুমোয়, মা তাকে আশীর্বাদ করে নিজের ঘরে চলে যান।
.
১.০৩
মাঝ হপ্তায় এক ছুটির দিনে বেরিয়ে যাওয়ার আগে পেভেল মাকে বলে, মা, শনিবার জনকয়েক লোক আসার কথা আছে এখানে।
কারা?
দু’চারজন এ পল্লিরই লোক…বাকি আসবে শহর থেকে।
শহর থেকে? মাথা নেড়ে মা বললেন, পরক্ষণেই তিনি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
পেভেল ব্যথিত হয়ে বললো, এ কি মা, কাঁদছ কেন? কি হয়েছে?
জামার হাতায় ছোখ মুছে মা বললেন, জানি না, কান্না পাচ্ছে।
ঘরের এদিক-ওদিক পায়চারি করে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে পেভেল প্রশ্ন করলো, ভয় পাচ্ছ, মা?
মা ঘাড় নাড়লেন, শহরের লোক, কে জানে কেমন!…
পেভেল নীচু হয়ে মার দিকে চাইলো, তারপর ঈষৎ আহত এবং ক্রুদ্ধভাবে বললো, এই ভয়ই আমাদের সর্বনাশের মুল যারা কর্তা তারা এই ভয়কে ষোলো-আনা কাজে লাগায়…আমাদের উত্তরোত্তর ভীত করে তোলে। শোন, মা…মানুষ যতদিন ভয়ে কাঁপবে, ততদিন তাকে পচে পচে মরতে হবে…আমাদের সাহসী হতে হবে, আজ সেদিন এসেছে।
তারপর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললো, ভয় খাও, আর যা কর, তারা আসবেই।
মা করুণভাবে বললেন, রাগ করিসনি বাবা, কি করে ভয় না পেয়ে থাকি বল…চিরটা জনম আমার ভয়ে ভয়েই কেটেছে।
ছেলে আরও নরম হয়ে বলে, ক্ষমা কন, মা, কিন্তু আমি বন্দোবস্ত বদলাতে পারব না।
.
তিনদিন ধরে মার প্রাণে কাঁপুনি…ভাবেন, যারা আসছে বাড়িতে, না জানি তারা কী ভয়ংকর লোক…তার গা শিউরে ওঠে।
শেষে শনিবার এলো। রাত্রে পেভেল মাকে বললো, মা, আমি একটু কাজে বেরুচ্ছি, ওরা এলে বসিয়ে, বলল, এক্ষুণি আসছি। আর ভয় খেয়ো না; তারাও অন্য সবারই মতো মানুষ।
মা প্রায় মূর্ছিত হয়ে চেয়ারে বসে পড়েন।
 
Back
Top