- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 363
- Messages
- 4,913
- Reaction score
- 1,265
- Points
- 3,863
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
জান্নাতুল বাকি
সংগৃহীত
সংগৃহীত
শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে ধ্বংস করা হয়েছিল এমন এক স্থান, যা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার, সাহাবা এবং অন্যান্য প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্বদের চিরনিদ্রার সেই স্থান, জান্নাতুল বাকি।
জান্নাতুল বাকির সূচনা হয় বিশ্বনবীর নিজের হাতে। মদিনায় অবস্থানকালে তাঁর দুধ ভাই হযরত উসমান ইবনে মাজুন (রা.) ইন্তেকাল করলে আল্লাহর নির্দেশে তাঁকে বাকিউল গারকাদ নামক স্থানে দাফন করা হয়। তখন থেকেই এই স্থানকে পবিত্র কবরস্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
তথ্যমতে, এখানে শুয়ে আছেন প্রিয় নবীর স্ত্রীগণ, কন্যা হযরত ফাতেমা (রা.), পুত্র হযরত ইব্রাহিম (রা.), চাচা হযরত আব্বাস (রা.), সাহাবীগণ, হযরত ওসমান (রা.), হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) সহ প্রায় ১০,০০০ সাহাবী। এছাড়া হাদীস অনুযায়ী কিয়ামতের দিন এখান থেকেই প্রথম মানুষ পুনর্জীবিত হবেন।
জান্নাতুল বাকিতে একসময় ছিলো অসংখ্য গম্বুজ, সমাধি ও নামফলক। উসমানীয় শাসনামলে এখানে ৫৫টি মসজিদ, মাজার ও ধর্মীয় ভবন ছিল। তবে ১৯২৫ সালে ওয়াহাবি মতাদর্শের অনুসারী সৌদি শাসকগোষ্ঠী এসব স্থাপনা ধ্বং*স করে দেয়। এর আগেও, ১৮০৬ সালে প্রথম দফায় এই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়।
স্মরণীয় বিষয় হলো, এই ধ্বং*সযজ্ঞ কোনও অমুসলিম জাতি করেনি; বরং মুসলিমদের একটি অংশ, ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসী গোষ্ঠী, তাদের ফতোয়ার ভিত্তিতে একে "বিদআত" বলে দাবি করে পবিত্র স্থানসমূহ ধ্বং*স করে।
ধ্বং*সযজ্ঞের পর সৌদি সরকার দু’দফা সংস্কার করেছে জান্নাতুল বাকি। প্রথম সংস্কার হয় বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজের শাসনামলে এবং দ্বিতীয়টি বাদশাহ ফাহাদের আমলে। পুরো কবরস্থান ঘিরে ১৭২৪ মিটার দৈর্ঘ্যের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে, লাগানো হয়েছে মর্মর পাথর। দাফনের জন্য গোসল ও কাফনের ব্যবস্থাও রয়েছে।
প্রতিদিন ফজর ও আসর নামাজের পর সীমিত সময়ের জন্য জান্নাতুল বাকি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হয়। প্রবেশের জন্য লাইন ধরতে হয় এবং সিকিউরিটির কড়া নজরদারিতে একবারে গুচ্ছ গুচ্ছ করে মানুষকে প্রবেশ করানো হয়।
সেখানে কোনো সমাধি বা নামফলক নেই। আলাদা বাউন্ডারিতে থাকা কিছু কবর বিশেষ নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই কবরগুলোতে শায়িত আছেন হযরত ফাতেমা (রা.), ইমাম হাসান (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.), আকিল ইবনে আবু তালিব (রা.) সহ নবী পরিবারের সদস্যরা।
একজন জিয়ারতকারীর ভাষায়, “জিয়ারত শেষে বেরিয়ে আসার পথে মনটা ভার হয়ে আসে। একপাশে রাসূলের রওজা মোবারক, আরেক পাশে জান্নাতুল বাকি। হাঁটতে হাঁটতে শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলাম, তিনি যেন আমাকেও এই সৌভাগ্যবানদের কাতারে স্থান দেন।”
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, শত বছর পরেও, মুসলমানরা তাকিয়ে থাকে জান্নাতুল বাকির গেটের দিকে, আশায়, ভালবাসায়, শ্রদ্ধায়।