Collected ....... এর বেগ - আসিফ রহমান জয়

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,005
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
***** ..... এর বেগ *****

মূল লেখকঃ আসিফ রহমান জয়





টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখাচ্ছে...

আমি পায়ের ওপর পা তুলে, কোমর চেপে ধরে, সিনেমা দেখার চেষ্টা করছি। সিনেমার নাম-“রংগীন মালেকা বানু”। শ্রেষ্ঠাংশে-চম্পা, ইলিয়াস কাঞ্চন এবং আহমেদ শরীফ। ইলিয়াস কাঞ্চন আর চম্পা মনে হয় পালিয়ে ভেগে যাওয়ার চেষ্টা করতে যেয়ে ধরা পড়েছে। চম্পার বাবা আহমেদ শরীফ এই মূহুর্তে তাদের মাটিতে ফেলে চাবুক পেটা করছেন। এই সুযোগে নায়ক-নায়িকা দু’জনেই একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে মাটিতে গড়াগড়ি করছে। অন্য সময় হলে খিক খিক করে হাসা যেতো। কিন্তু এখন হাসি আসছে না। হাসি আসছে না কারণ, আমি বসে আছি একটা ডায়গোনস্টিক ল্যাবে। ডাক্তার বলেছেন আমার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হবে। আমার সিরিয়াল নাম্বার সাত। আমি সকাল নয়টা থেকে খালি পেটে বসে আছি। সাত নাম্বার হিসাবে লাকি হলেও আমার জন্য মনে হয় না লাকি। আসার পর পরই ডাক্তারের মহিলা এসিস্টেন্ট আমার হাতে একটা প্লাস্টিকের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে কর্কশ গলায় বলেছে-
-বেশী করে পানি খান। প্রশ্রাবের চাপ আছে?
আমি এদিক-ওদিক মাথা নাড়লাম।
এসিস্টেন্ট হাত নেড়ে বললো-
-অনেক প্রশ্রাবের চাপ লাগবে। যান পানি খান। ডাক্তার এখনো আসেননি।
আমি আধাঘন্টার মধ্যে প্রায় ৫/৬ গ্লাস পানি খেয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললাম-
-পানি খেয়েছি। ৫ গ্লাস খেয়েছি।
এসিস্ট্যান্ট গভীর মনযোগ দিয়ে সিনেমা দেখছে। টিভি স্ক্রীণ থেকে চোখ না সরিয়েই বললো-
-হাটাহাটি করেন। তাহলে প্রশ্রাবের চাপ হবে। ডাক্তার তো এখনো আসেননি। যান হাটেন।

সিনেমাতে তখন দেখি আহমেদ শরীফ চোখ গরম গরম করে কি সব যেন বলতেই চম্পা ছুটে একটা ঘরে যেয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তারপর থেকেই চিৎকার করে কাঁদছে। খালাম্মা শ্রেনীর কেউ বার বার দরজা ধাক্কাচ্ছে-খোলো মা, দরজা খোলো।
এসিট্যান্ট হা করে এসবই গিলছে।

আমি বেশ কিছু প্রেগন্যান্ট মহিলাদের সাথে হাটতে শুরু করলাম। ওনাদের মতোই গ্লাস ভর্তি করে পানি নিচ্ছি—খাচ্ছি--হাটছি, হাটছি-পানি খাচ্ছি-আবারো পানি নিচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার মধ্যে প্রেগন্যান্ট প্রেগন্যান্ট ভাব চলে এলো। আমার মনে হতে লাগলো, কি জানি আমিও হয়তো প্রেগন্যান্ট! আমি নিজের অজান্তেই ওদের মতো দুলে দুলে হাটতে থাকলাম।

প্রায় ঘন্টাখানেক পরে ডাক্তার এলেন। মাই গড! ডাক্তার তো মারাত্নক সুন্দর থুক্কু সুন্দরী!
ওদিকে ডাক্তার আসার পর এসিস্ট্যান্টের গলার জোর বেড়ে গেলো। সে কিছুক্ষণ পর পরই হুঙ্কার ছাড়ছে-
-হাটেন, পানি খান, প্রশ্রাবের চাপ না হলে কিন্তু সিরিয়াল ঘুরে পিছনে চলে যাবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার প্রশ্রাবের চাপের সাথে আরো অদৃশ্য কিছুর চাপ চলে এলো! আমি পায়ে পা চেপে একটা চেয়ারে বসে পড়লাম।

এদিকে সিনেমায় ইলিয়াস কাঞ্চনকে কারা যেন চাবুক পেটা করছে। ইলিয়াস কাঞ্চন ব্যথায় “উহ-আহ” করে চিৎকার করছে।। সেটা বুঝলাম ঠিক আছে। কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চন মার খাওয়ার সাথে সাথে অন্য জায়গায় বন্ধ রুমের ভেতরে চম্পাও কোনো এক অদৃশ্য ব্যথায় “উহ-আহ” করছে! কিম আশ্চর্য্যম! ছোটবেলায় লাইলী-মজনুর সিনেমায় এই ব্যাপারটা দেখেছিলাম। প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলের একজনকে প্রহার করলে অন্যজন ব্যথা পায়। “রংগীন মালেকা বানু” তেও দেখি একই ব্যাপার!

ডাক্তার চেম্বারে এসে প্রায় আধাঘন্টা পার হয়ে গেছে। এখনো ১ নাম্বার পেশেন্টকে ডাকেনি। আমি ৭ নম্বর। একেকজন গড়ে ১০ মিনিট ধরলেও মিনিমাম আরো ৬০ মিনিট। আমি দুই পা চেপে ধরে প্রায় ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে এসিস্ট্যান্টকে জিজ্ঞেস করলাম-
-আচ্ছা, প্রশ্রাবের বেগ তো অনেক বেশী। প্রশ্রাব কি করে আসবো?
এসিস্ট্যান্ট খুব দুঃখিত মুখে মাথা নাড়লেন। সিনেমার প্রায় শেষ দৃশ্য চলে এসেছে কিন্তু এদিকে যেকোনো সময় ডাক্তার রোগী দেখতে শুরু করে দিলে সিনেমার শেষটুকু তার আর দেখা হবে না। এই দুঃখে এসিস্ট্যানকে খুব চিন্তিত মনে হলো।

আমিও খুব চিন্তিত। কারণ, প্রশ্রাব ও প্রশ্রাবের সাথে যুগপৎ যে জিনিসের বেগে আমি ভেতর থেকে কাঁপছি, তার চাপ ক্রমশঃই বাড়ছে। আল্ট্রাসনোর শুরুতেই ডাক্তারের এসিস্ট্যান্ট ঠান্ডা কোমল জেলির মতো কি যেন জিনিস পেটে ও বুকে মাখিয়ে দেয়। আমার ভয় হচ্ছে, ওই ঠান্ডা জেলি আমার পেটে মাখিয়ে মেশিন নিয়ে চাপাচাপি শুরু করলে যেকোনো রকম দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে! সুন্দরী ডাক্তারের সামনে লজ্জায় আমার কি এক বেহাল অবস্থা হবে এই ভেবে আমি এসির মধ্যেও ঘামতে শুরু করলাম।

আমি মনকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করতে চেষ্টা করলাম। অন্য কিছু নিয়ে ভাবা যাক। ভালো কিছু নিয়ে চিন্তা করি। এমন সময় ধাঁ করে একটা জিনিস মাথায় এলো।
আচ্ছা... লাইলী-মজনু সিনেমায় যেমন দেখিয়েছিলো, বা “রংগীন মালেকা বানু” তে যেটা দেখালো-একজনকে মারলে আরেকজন ব্যথা পায়। আসলেই কি এমন হয়? হুম... কি এক স্বর্গীয় ব্যাপার!
আচ্ছা...
তাহলে কি একজনের মাথা ব্যথা হলে...আরেকজনের ব্যথা হয়?
আচ্ছা...
তাহলে কি একজনের বেগ পেলে...
ছিঃ ছিঃ ...কি সব ভাবছি... ওই যে আমাকে ডাকলো বুঝি...
-সাত নম্বর পেশেন্ট কে… আসেন… প্রশ্রাবের বেগ আছে তো?

আমি রাগে গর গর করতে থাকি।
আয় আইজকা। বেগের দেখছস কি?
 
Back
Top