- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 407
- Messages
- 5,564
- Reaction score
- 2,011
- Points
- 3,913
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
বনফুল (বলাইচাঁদ) সম্পর্কে কিছু কথা
(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)
(অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত)
কঠিন অস্ত্রোপচার করাতে বনফুল নার্সিং হোমে ভর্তি হবেন শুনে সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী তাঁর স্বামীকে নিয়ে দেখা করতে গিয়েছেন৷ আশাপূর্ণা দেবীর স্বামী বনফুলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন- কী পড়ছেন এত মন দিয়ে? উত্তর শুনে কার্যত স্তম্ভিত হবার জোগাড়!পড়ছিলেন পৃথিবীতে কত প্রজাতির ব্যাঙ আছে তার ইতিবৃত্ত৷ বললেন 'ভারী ইন্টারেস্টিং বই বুঝলে ,যদি নার্সিংহোম থেকে আর ফেরা না হয়,এটা আমার অজানা থেকে যাবে৷ তাই যেটুকু বাকি আছে তাড়াতাড়ি শেষ করছি'৷ এর আগে আশাপূর্ণার স্বামী ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন 'কতদিন আপনাকে বেলভিউতে থাকতে হবে দাদা? বনফুল হেসে বললেন —'বেঁচে ফিরলে সপ্তাহ ছয়,না ফিরলে ওখানেই শেষ৷ না ফিরতেও পারি৷জীবনমরণের ব্যাপার তো!'
সাহিত্যিক বনফুল দীর্ঘকাল ভাতের সঙ্গে মাংস খেতেন,রাতে মাংস, দিনে দু’রকম মাছ না হলে চলত না, পরিমাণ নেহাত খুব কম নয়,খেতে পারতেন খুব ঝালও,নিজের মুখে বলতেন মাংস খাওয়ার পর মিস্টি খাওয়া ভাল৷ শুধু বলা নয় ডায়াবেটিসের রোগী হয়েও রাজভোগ খেতেন নিজের হাতে,আবার নিজের হাতে নিজের ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতেন,ডাক্তার ছিলেন,বিদ্যাটা নিজের উপর চমৎকার ভাবে প্রয়োগ করেছেন৷
সাহিত্যজীবনের প্রথম দিকে বনফুল তাঁর অসমান্য জনপ্রিয়তার ধাক্কা সামলাতে পারছেন না,কারণ ল্যাবরেটরির কাজের জন্য দিনের বেলা লেখার সময় পাচ্ছেন না একদম৷ সেইসময় প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় খেয়ে শুয়ে পড়তেন,ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে উঠতেন ঠিক রাত্রি একটার সময়৷ টানা তিন ঘন্টা লিখে চারটের সময় আবার ঘুমাতে যেতেন উঠতেন বেলা আটটায়৷ সাহিত্যচর্চা করে যে অর্থাগম হবে একথা তিনি ভাবেন নি৷ সেই অর্থ যখন নিজে থেকে আসতে লাগল,বনফুলও লেখার বেগ বাড়িয়ে দিলেন৷ ক্রমেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা ছোটগল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী, তাঁর রচনায় যেমন আছে অতি ক্ষুদ্র গল্প আবার আছে অতি দীর্ঘ উপন্যাস ৷
রসে,বশে,কোমলে,ভোগে,যোগে বাংলা ছোটগল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী বনফুলের জীবনদর্শনের ভঙ্গি বেশ আশ্চর্য রকমের স্বতন্ত্র৷ ডাঃ চারুব্রত রায় শর্ত দিয়েছিলেন কলকাতায় প্র্যাকটিস করা যাবে না৷ বললে হয়ত সত্যের অপলাপ হয় না,ভাগলপুরের অভিজ্ঞতা সাহিত্যিক বনফুল কে যে বৈচিত্র্য দিয়েছে ডাক্তার বাবু কে সেটা দেয় নি৷ ভাগলপুরের অভিজ্ঞতাই তাকে 'বনফুল' করেছে৷
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় সমসাময়িক লেখক,দুজনে ছদ্মনামে লেখা শুরু করেছিলেন৷ অল্প দু'চারটি গল্প লেখার পর তারাশঙ্কর স্বনামে আত্মপ্রকাশ করলেও বলাইচাঁদ সারাজীবন 'বনফুল' ছদ্মনামের অন্তরালে থেকেছেন৷
চলুন বনফুলের জীবনের কয়েকটি ছোট -ছোট ঘটনার কথা শুনি৷ বনফুল তখন সাত বছরের,খুব পশু-পাখি পোষার শখ৷ একঝাঁক পায়রা,শালিক টিয়া,কয়েকটি বেজি ও বিলিতি খরগোশের সঙ্গে বাড়িতে ছিল তিনটি কুকুর তারা বাঘা,কালো আর টম৷ শিশুমনে একসময় মেতে উঠলেন রঙিন মাছ নিয়ে৷ পাড়াগাঁয়ে রঙিন মাছ পাওয়ার কথা নয়,হাটে খলসে মাছের মত মাছ পাওয়া যেত,গায়ে ছিল অস্পষ্ট লাল-নীল রঙ৷ আর ছিল ভোলা মাছের মত একরকম মাছ৷ বনফুল মাছগুলোকে বড়-বড় শিশিতে পুরে রাখতেন,মুড়ি ছিল তাদের খাদ্য,কিন্তু তাদের ওভাবে বাঁচানো যেত না,যেদিন মাছগুলো মরে যেত সেদিন তাঁর শিশুমনে গভীর শোকের ছায়া পড়ত,মনে হত কোনও পরমাত্মীয় চিরকালের মত চলে গেল৷
সাহিত্যপাঠের বিনোদন কে বাদ রেখেও বলা যায় অনেক জীবনকথা আছে যা কাল্পনিক নয় রোমাঞ্চকর,বনফুলের জীবনী পাঠকদের অনেকটা সেই স্বাদের সন্ধান দেয়৷