Collected আরাম - মোস্তাফিজুর রহমান টিটু

dukhopakhidukhopakhi is verified member.

Special Member
Registered
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
407
Messages
5,564
Reaction score
2,005
Points
3,913
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
*****আরাম*****

মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু





ঘ্যাস-ঘ্যাস শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো শাহেদা আলম এর । প্রথমেই চোখ গেলো সিংগাপুর থেকে কেনা দামী দেয়াল ঘড়িটার দিকে । ঘন্টার কাঁটা কাঠবিড়ালিকে পার হয়েছে আর মিনিটের কাঁটাটা ঠিক দোয়েলের উপর । তার মানে সকাল আটটা দশ । শুক্রবারের সকাল হিসাবে বেশ সকাল । সাধারণত সাড়ে নয়টার আগে শাহেদা আলম শুক্রবারে ঘুম থেকে জাগেন না । অতএব চোখ দুটো আবার বন্ধ করেন । কিন্তু আবারও ঘ্যাস-ঘ্যাস শব্দ । অগত্যা বিরক্তি নিয়েই ওঠেন তিনি । শোবার ঘরের লাগোয়া টয়লেটে ঢুকতেই ভীষণ অবাক হয়ে যান । টুকু দাঁত ব্রাশ করছে । প্রায় প্রতি শুক্রবার সকালেই ছয় বছরের টুকু মায়ের বিছানায় চলে আসে । কোনো দিন মায়ের সাথে একসাথে ওঠে কোনো কোনোদিন মায়ের আগেই উঠে পরে, আজ যেমন আগে উঠেছে । এতে তো অবাক হবার কিছু নাই এবং এটা আসলেও অবাক হবার কারণ না । তিনি অবাক হয়েছেন টুকুর দাঁত ব্রাশ করার ধরন দেখে ।

এই বাসার সবাই দাঁত মাজে ব্রাশটা হাতে স্থির রেখে, মাথা সজোরে ডানে-বামে ঘুরিয়ে । এভাবে দাঁত ব্রাশ করলে ঘ্যাস-ঘ্যাস শব্দটা হয় না । এই নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে শাহেদা আলমকে কম কষ্ট করতে হয় নাই । বালতি বালতি চোখের জলের বেয়নেট, কয়েক লক্ষ রাউন্ড কথার গুলি, আর হাজার খানেক হুমকির গ্রেনেড দিয়ে তিনি এই নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন । সতের বছর ধরে তার রাজত্বে সবাই হাত স্থির রেখে মাথা দুদিকে নাড়িয়েই দাঁত ব্রাশ করে এসেছে । আজ টুকুর অন্য রকম দাঁত ব্রাশ করা দেখে তার অবাক হওয়া ছাড়া উপায়ও তো নাই । সতের বছর আগে হলে এখনই কথার ব্রাস ফায়ার শুরু করে দিতেন । সময় তাকে অনেক কিছু ভুলিয়ে দিয়েছে, আবার অনেক কিছু শিখিয়েছেও । যেমন তিনি ভুলে গেছেন মানুষকে যোগ্য সন্মান দিতে, আবার শিখেছেন ধূর্ত কুটবিদ্যা । তিনি নিশ্চিত টুকুর এই পরিবর্তনের পিছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র আছে । সেটা বের করতেই হবে । মিষ্টি হেসে তাই মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন
এমন করে দাঁত ব্রাশ করছো কেনো মামনি ? কে শিখিয়েছে ?
দুইবার কুলি করে টুকু ফোকলা দাতে হেসে বলে, এভাবে দাঁত ব্রাশ করতে আরাম লাগে মা ।
কিছুদিন আগেই টুকুর সামনের দাঁত দুটো পড়ে গেছে; ফোকলা দাঁতের কিউট মেয়েটা মাকে মিউট করে দিয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে চলে গেলো । শাহেদা আলমের ইচ্ছে করলো থাপ্পড় দিয়ে মেয়ের আরো দুইটা দাঁত ফেলে দিতে । কিন্তু অভিজ্ঞতায় জানেন এভাবে করলে এখন হবে না ।

মাথার চাঁদিতে একটু ঠান্ডা পানি দিয়ে এসে তিনি ভাবতে বসলেন কে হতে পারে সেই ষড়যন্ত্রকারী । সন্দেহের প্রথমেই আছে নিচ তলার নিনা ভাবি । গত মাস দেড়েক অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন শাহেদা আলম । অডিট অফিসে চাকুরী করেন । এবারের অডিট ছিলো পুলিশের পারচেজ বিভাগে । আইনের প্রতিষ্ঠান বলেই বে-আইনি কাজ বেশী । অবশ্য তাতে তার অফিসের সবাই খুব খুশী থাকে । কারণ যত অনিয়ম ততই তো অডিট বিভাগের লাভ । তবে সবাই যা ভাবে তা কিন্তু না, এই লাভের জন্য কাজও কম করতে হয় না । প্রতিদিনই অফিস থেকে দেরী করে বাসায় ফিরেছেন, এবং এর মাঝে অনেকদিনই নিচ তলার ছেলে ফিরোজকে দেখেছেন ছোটন এর সাথে ভিডিও গেমস খেলতে । দুই দিন নিনা ভাবীকেও দেখেছেন, শ্বাশুড়ির সাথে গল্প করতে । সে একটি নামকরা স্কুলের শিক্ষিকা এবং অনেক শিক্ষকের মতো সেও মনে করে দুনিয়ার বেশীরভাগ লোকই তার ছাত্র-ছাত্রী । সব চাইতে মেজাজ খারাপ হয় তার সৎ-সৎ সং দেখে । টিউশনি, ছাত্র প্রতি সাত হাজার, নো কনসেসন এসব যে নিজেই বলে আবার সেই হয় সততার বিশিষ্ট রোল মডেল, অসহ্য !!
সন্দেহের দ্বিতীয় জন মাহাবুব সাহেব, সোহেলের মামা । সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছেন বছর তিনেক । নিজের বোন, শাহেদা আলমের শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করতে মাঝে মাঝেই আসেন । আলহামদুলিল্লাহ, সোবহানাল্লাহ, জাজাকাল্লাহ খায়রান এই ধরণের শব্দের সাথে চলে ওয়াজ নসিহত । শাহেদা আলমকে হাসি হাসি মুখ করেই শুনতে হয় । প্রথমত মামা শ্বশুর দ্বিতীয়ত যার ঢাকা শহরে দুইটা ছয়তলা বাড়ি আছে তার কথা হাসি হাসি মুখেই শুনতে হয় , বঙ্গীয় সভ্যতার সুত্র মেনেই । সন্দেহের তালিকায় ছেলে ছোটনের টিউটরও আছে । না কি অন্য কেউ ? যেই হোক ঠান্ডা মাথায় বের করতে হবে ।

দুপুরে খাবারের পরে শোবার ঘরে এসে দেখে সোহেল বিশাল ভুড়িটা আকাশের দিকে তাক করে ৬০ ইঞ্চি এল ই ডি টিভিতে দীপিকা পাডুকনের গান দেখছে । কুৎসিত দৃশ্য । তাও মেজাজ ঠিক রাখলো শাহেদা আলম । বড় কিছু ঠিক রাখতে হলে ছোট কিছু উপেক্ষা করতে হয় ।

এই তুমি কি টুকু কে অন্যভাবে দাঁত ব্রাশ করতে বলেছো । ঠান্ডা মাথায় কথা শুরু করেন ।
অন্যভাবে মানে, এই বাসার সবাই তো একভাবেই ব্রাশ করে । যাই বলো তোমার এই ব্রাশের নিয়মের কারণেই কিন্তু আমার চার বছরে তিন প্রমোশন হলো ।
মানে কি বলতে চাইছো ?
অবাক হচ্ছো কেনো । এটা তো সেদিনও বললাম । এইভাবে ব্রাশ করতে করতে মাথা ঝাঁকানো অভ্যাস হয়ে গেছে । বসরা কিছু বললেই শুধু মাথা ঝাঁকাই । ব্যস প্রমোশন । তবে এত ঝাকাঝাকিতে মাথার ঘিলুর কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না কে জানে । হলে হোক, প্রমোশন হলেই হলো । ঘিলু ছাড়াই যদি বস হওয়া যায় তবে ঘিলুর দরকারই বা কি ?
তোমার ঘিলু কোনো কালেই ছিলো না । মনে মনে বলেন শাহেদা আলম ।

যাক অজ্ঞাত শত্রু সোহেল না, জানা জিনিশটাই নিশ্চিত হওয়াতে একটু স্বস্তি হলো । কিন্তু তাহলে কে ?

রাতের খাবারের পরে উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন শাহেদা আলম । প্রথমেই দেখেন কাজের মেয়ে শেলী টুকুর মতই ঘ্যাস–ঘ্যাস শব্দে দাঁত ব্রাশ করছে ।
এভাবে দাঁত ব্রাশ করছো কেনো ? জানো না এ বাসার নিয়ম ?
বেশ রাগত স্বরেই বললেন তিনি ।
আরাম লাগে, খালাম্মা ।
বলেই হাসি দিয়ে চলে যায় শেলী, মাথায় প্রায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো, অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করেন ।
শোবার ঘরে এসে অবশ্য দেখেন সোহেল মাথা সজোরে ডানে বামে করেই দাঁত ব্রাশ করছে । যাক …

শ্বাশুড়ির ঘরে কালে ভদ্রে আসেন । আজ বিশেষ পরিস্থিতি বলে তাকে আসতেই হয় । এসে দেখেন একই দৃশ্য, মাথা স্থির রেখে হাত সজোরে চালিয়ে দাঁত ব্রাশ করছেন শ্বাশুড়ি ।
আম্মা আপনাকে কে এভাবে দাঁত ব্রাশ করতে বলেছে ?

খুব আরাম লাগে বৌমা ।
উত্তরে বোঝা যায় তার কথা ঠিক ভাবে শোনেন নাই । শ্বাশুড়ি আজকাল কানে অনেক কম শোনেন । মেজাজ খুব খারাপ হয় কিন্তু নিজেকে শান্ত রাখেন শাহেদা আলম ।

কিন্তু চৌদ্দ বছরের ছেলে ছোটনের ঘরে এসে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না ।
বল কে তোদের এসব শিখিয়েছে । তোর নিনা খালাম্মা, মাহাবুব দাদা, নাকি তোর টিউটর । এই সংসারের জন্য কি না করি । এই বাসার বড় টিভি, ফ্রিজ, গাড়ি সব কার জন্য হয়েছে । সবাই মিলে এই তার প্রতিদান । আমার বাসার উন্নতি তো মানুষের সহ্য হবেই না । বল কে শিখিয়েছে । বল ?

ছোটন শান্তভাবে কুলি করে ধবধবে সাদা তোয়ালেতে মুখ মুছে ।

তুমি দেখি বাবার মতো কথা বলছো মা, কিছু হলেই বাবা বলে র, আইএসআই কিংবা সিআইএ ঝামেলা লাগাইছে । তোমার কথা শুনেও আমার মনে হচ্ছে আমাদের বাসাটা হলো সারজাহ ক্রিকেট গ্রাউন্ড । যেখানে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া খেলবে আমরা শুধু হাত তালি দেবো ।
ছোটনের শান্ত স্বরে বলা কথাগুলো শাহেদা আলমের মনকে শান্ত করতে পারে না । তিনি দুই চোখে দুই আগ্নেয়গিরি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন ।

আমিই সবাইকে বলেছি । তুমিও এভাবে ব্রাশ করো মা, খুব আরাম ।
 
Back
Top