- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 407
- Messages
- 5,564
- Reaction score
- 2,005
- Points
- 3,913
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****আধুনিক পৌরানিক গল্প*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
এক দুষ্টু বালকের অত্যাচারে দেবতাদের রাজত্ত্বে হঠাৎ করেই একটু অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে । এইতো সেদিন জ্ঞানের দেবতা এক সম্মেলনে একটু উল্টাপাল্টা বলাতেই এই বালক সবার সামনেই বলে ফেলল “সত্যি তবে যাহা শুনি – আকাট মূর্খ আমাদের মহাজ্ঞানী “ । দেবতাদের ভুল ত্রুটি নিয়ে হাসি তামাসা । এও কি মানা যায় ? দেবরাজের কাছে নালিস গেলো । দেবরাজ ভাবলেন শত হলেও দেবশিশু । বয়স কম । সময়ের সাথে নিশ্চয় সব ঠিক হয়ে যাবে । সময় যায় । দেববালক যুবক হয় । কিন্তু কিছুই ঠিক হয় না । যোগাযোগের দেবতা একটু খুড়িয়ে হাটেন । মহাবিশ্বের যোগাযোগ ঠিক রাখতে গিয়ে নিজের যোগাযোগে একটু সমস্যা হয়েছে । হতেই পারে । কারো কাছেই এটা তেমন বিসদৃশ মনে হয় না । কিন্তু এই যুবক তাকে দেখলেই এমন ভঙ্গি করে হাটতে থাকে যে আশেপাশের সবাই বেশ আমোদ পায় ।
দেবরানী “পায়রা বানু”র একক নৃত্যানুষ্ঠান । দেব রাজত্ত্বের সবাই উপস্থিত । তিনটা নাচের পরেই এই যুবক নির্দ্বিধায় বলে ফেললো “এই নাচ এই চেহারা – নাম আবার পায়রা “ । আর কি সহ্য করা যায় । দেবরাজ ক্ষিপ্ত হলেন । ভাবলেন একে আমি নিজ হাতে শাস্তি দেব । দেবরাজের খাস কামরায় নিয়ে আশা হলো অপরাধী যুবককে ।
“ তোমাকে আমি কিছু জিনিস দেখাবো । এখানে এসে বসো । “ দেব রাজ বলেন । দেব রাজের হাতের ইশারায় দেওয়াল জুড়ে সিনেমার পর্দা নেমে এল । পর্দা জুড়ে দেখা গেলো ধরাধামের মানুষের ছবি । একটা দুটো নয় হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি কোটি ছবি ।
“কি দেখছ ? “ দেব রাজ জিজ্ঞেস করলেন ।
-- দাঁড়ানো, বসা, শোওয়া , চিত-কাৎ-উপ্তা হওয়া মর্ত্যলোকের মানুষের ছবি দেখছি । কিন্তু এসবের মানে কি দেবরাজ?
“ ধৈর্য্য ধরো । তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে । এখন আরো দেখো । সবই ধরাধামের ।“ দেবরাজ বলেন ।
এক নারীর ছবির পাশে তার স্বামীর মন্তব্য দেখা গেলো । “ তুমি এত্তো এত্তো এত্তো সুইট । আমারতো ডায়াবেটিস হয়েই যাবে জান । “
--এসব কি দেবরাজ ?
“এটা হলো দাম্পত্য প্রেম । “
--তাইতো বউ আবার উত্তর দিয়েছে ‘যাহ দুষ্টু’ । কিন্তু আমিতো জানি দাম্পত্য প্রেম ব্যক্তিগত ব্যাপার দেবরাজ । এখানেতো দেখছি হাজার খানেক লোক মন্তব্য করেছে ।
“ধৈর্য্য ধরো । উত্তর পাবে । “ দেবরাজ বলেন ।
পর্দা জুড়ে এর পরে দেখা যায় এক শিশুর ছবি । ছবির পাশে শিশুর বাবার মন্তব্য “ আমার পাঁচ বছরের ছেলে এভারেস্ট জয় করলো । আলহামদুলিল্লাহ্ । দোয়া করবেন সবাই ।“
--মানে কি দেবরাজ ? এখানে দেখি ছেলের এক আংকেল মন্তব্য করেছে - এভারেস্টের চাইতে বড় কোনো পাহাড়তো নাই । দোয়া করি বড় হয়ে নিজে এভারেস্টের চাইতেও বড় পাহাড় বানিয়ে তারপর সেটা জয় করো । মর্ত্যলোকের মানুষ পারেও ।
“আরো দেখো ।“
--এতো দেখি শুধু খাবারের ছবি । আর নিচে লেখা - আমি ইহা খাইলাম ।
“এরপরে টয়লেটের ছবি দেখো ।“ দেবরাজ বলেন ।
--ইয়াক থুঃ । নিচে আবার লেখা – আমি ইহা ...লাম । আমি না হয় কিছু অপরাধ করেই ফেলেছি দেবরাজ । তাই বলে এসব কি দেখাচ্ছেন ।
“তোমার অপরাধ খুবই গুরুতর । তবে ধৈর্য্য ধরো । শাস্তির আগে তোমাকে সব আমি বলব । আরো দেখো ।“
পর্দা জুড়ে শুধু বিভিন্ন লেখা দেখা যায় । লেখাও খুব বিচিত্র ..."ছি কুতকুত - বড়শিতে ধরলাম ভুত ।“
--এসব কি দেবরাজ ?
“এটা হলো সাহিত্য ।“
--মানে কি? কুতকুত খেলতে খেলতে বড়শি ফেলবে কেনো ? আর ভুত-ই বা বড়শি খাবে কেনো ?
“তোমার এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই । তবে এই কবির অনুসারী সংখ্যা হবে কয়েক লাখ ।“
--দেবরাজ আর নিতে পারতেছি না । শাস্তি দেন আর যাই করেন এইসব দেখানো বন্ধ করেন ।
“আরও অনেক কিছু দেখাবার ছিলো । ঠিক আছে । এইবার তাহলে শোনো । দেবতাদের হাজারো গুনের মাঝে আত্মপ্রেম আর আত্মপুজা নামক দুইটা বদগুণ আছে । দেবতাদের তা মানিয়েও যায় । মর্ত্যলোকের মানুষ দেবতাদের সব দোষ গুনেরই ছিটেফোটা পায় । সেই হিসাবে অল্প কিছু ব্যাতিক্রম বাদ দিলে সব মানুষের মাঝেই অল্প বেশী আত্মপ্রেম –আত্মপুজা আছে । তুমি দেবতাদের উপহাস করেছো । এমনকি দেব রানীও তোমার উপহাসের হাত থেকে রেহাই পায় নাই । তোমার জন্য আছে কঠিন শাস্তি । তোমার আর দেবালয়ে থাকা হবে না । তুমি ধরাধামের সামান্য মানুষ হিসাবে জন্ম নিবে । এখানেই শেষ না । তোমাকে যা দেখানো হলো এবং আরও অনেক যা তুমি দেখতে চাইলে না সব তোমার দ্বারাই প্রকাশিত হবে । আত্মপ্রেম আর আত্মপুজা কি , কত প্রকার তা ধরণীর মানুষ তোমার মাধ্যমেই নতুন করে জানবে । “ দেবরাজ বলেন ।
কথিত আছে এই সাজাপ্রাপ্ত দেব সন্তান ধরাধামে মার্ক জুকারবার্গ নামে খ্যাতি অর্জন করেন ।