- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 407
- Messages
- 5,564
- Reaction score
- 2,005
- Points
- 3,913
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
অদ্ভুতুড়ে
মূল লেখকঃ সোয়েব বাশার
মূল লেখকঃ সোয়েব বাশার
'আমাকে আপু তার ছোট্ট ছেলেটাকে ধরিয়ে দিয়ে বললো, 'দেখি, ধর, দেখবো কেমন বাচ্চা পালতে পারিস তুই। খুব শখ না বাচ্চা পালার? যদি আজকে রাতে আমার ছেলে একবারও কাঁদে, তাহলে খবর আছে তোর।'
মায়ের বাড়িতে এসে আপু হঠাৎ এতো বিধ্বংসী হয়ে উঠবে, ভাবতেই পারিনি। আপুকে আগে অনেক পঁচাতাম, সে একদম বাচ্চা পালতে পারে না বলে। কারণ ছিলো। আপুর ছেলে হয়েছে ছয় মাস হলো। এই ছয়মাস সে এমন একটা দিনও নাই যেদিন ফোন দিয়ে আম্মুর কাছে কান্নাকাটি করে নাই। প্রতিদিন ফোন দিয়ে বলতো, 'আম্মা, ও আম্মা, খুব তো বলতা একটা বাচ্চা নিয়া নে, একটা বাচ্চা নিয়া নে, কোনো সমস্যা হবে না। এখন দেখো মা কি অবস্থা। সারাদিন খাইতে পারি না, শুইতে পারি না। ঘুমাইতে গেলেই উঠে কান্নাকাটি করে দেয়। খাইতে গেলেই দেখি হে*গে মু*তে বিছানা ভাসিয়ে দিয়েছে। আম্মা, ও আম্মা, এখন কি হবে আমার? এতো কষ্ট কেন বাচ্চা পালতে?'
আম্মু বিরক্ত হয়ে বলতো, 'এইগুলা কোনো কথা হলো? একটা বাচ্চা পালতে চিৎকাৎ হয়ে যাচ্ছিস। আগের মানুষ চৌদ্দ পনেরটা বাচ্চা পালতো কেমনে তাইলে?'
আপু বলতো, 'আগের মানুষের পেটে তো মানুষ পয়দা হতো। এখানে তো মানুষ পয়দা হয় নাই। মানুষের পেটে রাক্ষস পয়দা হইসে।'
আম্মু ধমক দিয়ে বলতো, 'চুপ কর। খালি আজেবাজে কথা। নিজের বাচ্চাকে কেউ রাক্ষস বলে?'
আমি ফোড়ন কাটতাম পাশ থেকে, 'আরো কতো কি যে বলে বাচ্চাকে, দেখবা আম্মা। নাচতে না জানলে যেমন উঠান বাঁকা, তেমনি বাচ্চা পালতে না পারলে বাচ্চা রাক্ষস খোক্ষস হয়ে যায়।'
আপু ফোনের ওপাশ থেকে বলতো, 'খুব মজা নিচ্ছিস, তাই না পিংকি? দাঁড়া, এবার বাড়ি আসি, তোরে আমার বাচ্চা পালতে দিবো। দেখি তুই কতো পালতে পারিস।'
পিংকি আপু লম্বা একটা দম নিয়ে বললো, 'বুঝলি তো, আমি তো ভাবছিলাম এগুলা মজা করে বলছে। আমিও বলতাম, 'ঠিক আছে, দিস, বাচ্চাই পালতে দিস, তোর চেয়ে ভালোমতো পালতে পারবো।' সত্যি সত্যি যে বাচ্চা পালতে দিয়ে দিবে আমাকে, এইটা তো একবারও ভাবি নাই।'
আমরা ছয় সাতটা ছেলেমেয়ে আপুর গল্প মনোযোগ দিয়ে শুনছি। হাফসা বললো, 'উফ, গল্পের মাঝখানে ব্রেক দিও না তো আপু, গল্পের মজা চলে যায়। তারপর বলো, কি হলো।'
পিংকি আপু শুরু করলো, 'তারপর আর কি? সারাটাদিন আমার বাচ্চা পালতে হলো। আপু ভুল বলে নাই, এতো বদ বাচ্চাটা, এমন ফাজিল বাচ্চা আমি জীবনে দেখি নাই। বিছানায় শুইয়ে রাখলে হামাগুড়ি দিয়ে বিছানার কিনারে চলে যায়। মেঝেতে রাখলে হামাগুড়ি দিয়ে চলে যায় রান্নাঘরে। শিইইইস শিইইইস করে পে*শাব করানোর চেষ্টা করলে এক ফোঁটাও পে*শাব করে না, বিছানায় বসানোর সাথে সাথেই বিছানায় দেয় মু*তে। মানে এমন শয়*তান টাইপ বাচ্চা জীবনে এই প্রথম দেখলাম।
রাতে তো মনে হলো আপু ওর বাচ্চাকে ওর সাথে নিয়ে শোবে। বাচ্চা আপুর কাছে রাখতে যাচ্ছি, আপু মাথা নেড়ে বলে, 'না না তা হবে না, রাতেও বাচ্চা তোমার সামলানো লাগবে।' আমি করুণ চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু আপুর কথায় সায় দিচ্ছে। রাগে পিত্তি জ্বলে গেলো। আপু বললো, 'আজকে রাতটা তুই বাবুকে নিয়ে থাক। আমি আম্মুর সাথে শোবো। যদি আজকে রাতটা তুই ওকে নিয়ে ঠিকমতো থাকতে পারিস, তাহলে বুঝবো তুই বাচ্চা পালায় ফার্স্ট।'
কি আর করার। বাবুকে নিয়ে আমার ঘরে চলে এলাম। ও নাকি রাতে ঘুমায় না, দু*ষ্টামি করে। বুঝলাম, আজ রাতে আমার ঘুমের বারোটা বেজে গেছে।
কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, ও বিছানায় শোয়ানোর সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লো।
আমি অবশ্য বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা। সারাদিন এতো বদ*মায়েশি করেছে, ছোট্ট বাচ্চাটারও তো একটা রেস্টের দরকার। কি নরম তুলতুলে কিউট লাগছে ওকে দেখতে। আমি ওর গালে আচ্ছা করে কয়েকটা চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার ঘরের লাইট কখনো পুরোপুরি বন্ধ করা হয় না। কমলা রঙের একটা ডিমলাইট সবসময় জ্বলতে থাকে।
মাঝরাত। হঠাৎ না, ঘুম ভেঙে গেলো। প্রথমে বুঝলাম না, কিসের জন্য ঘুম ভেঙেছে। ঘর চুপচাপ, কেবল ঘড়ির টিকটিক শব্দ। আর কিছু নাই। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ একটা কথা মনে পড়তে চোখ খুলে গেলো পুরোপুরিভাবে।
আমার ঘরে তো কোনো ঘড়ি নেই।
তাহলে টিকটিক শব্দটা আসছে কোথা থেকে।
আমি আস্তে আস্তে পাশ ফিরলাম। আমার পাশে বাবু শুয়ে।
আমি দেখলাম, ছ'মাসের ছোট্ট একটা ছেলে, যে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেনি এখন পর্যন্ত, যার কাছে চোখ খোলা মানেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করা, সে চুপচাপ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখদুটো লাল তার। ভীষণ লাল।
আর মুখ দিয়ে শব্দ আসছে, 'টিক টিক, টিক টিক, টিক টিক।'
আমি চিৎকার করে মাকে ডাকতে গেলাম, কিন্তু কোনো শব্দ বেরুলো না আমার গলা থেকে। বাচ্চাটা হঠাৎ টিকটিক শব্দ বাদ দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো।
হাসির শব্দটা একদম ভরাট পুরুষ মানুষের গলা।
আমি আর পারলাম না। ভীষণ জোরে চিৎকার করলাম।
আমার চিৎকারে আপু আর আম্মু দৌড়ে এলো পাশের ঘর থেকে।
আমি তাদের বললাম, কি দেখেছি। আপু আর আম্মু দুজনেই আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকলো।
এরপর আপু যে কথা বললো, তাতে আমিই ভয়ে জমে গেলাম। আপু বললো, সে নাকি রাতে উঠে বাবুকে আমার কাছ থেকে তার ঘরে নিয়ে গেছে।
আমি কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বাবু যদি আপুর ঘরে গিয়ে থাকে, তাহলে আমার ঘরে, আমার পাশে, শুয়ে ছিলো কে?
আমি বিছানার দিকে তাকালাম। বিছানায় কিছু নেই। শুন্য বিছানা।'
আপুর গল্প শেষ হলো। শফিউল বললো, 'আপু, এমনও তো হতে পারে, তুমি স্বপ্ন দেখেছিলা।'
আপু কাঁধ ঝাকালো, 'হতে পারে।' তারপর উঠে ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় বললো, 'তবে এখনো ঘুম ভাঙলে মাঝে মাঝে আমি টিকটিক শব্দটা শুনতে পাই।'
আমরা ভয়ে ভয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালাম। আমরা এখন আপুর রুমে বসে আছি। টিকটিক শব্দটা শুনতে পারছি আমরা। আপুর ঘরে কোনো ঘড়ি নেই। আর বাইরে ভীষণ, ভীষণ অন্ধকার।