ভূত বলে সত্যিই কি কিছু আছে?

WhisperBD

Well-Known Member
Registered
1K Post
Joined
Dec 28, 2024
Threads
107
Messages
1,338
Reaction score
105
Points
63
Age
46
Location
Dhaka
Gender
Male
ভূত আছে কিনা একবার শ্মশানে গিয়ে দেখেন রাত্রে।

ভূত আছে কিনা একবার মাঝনদীতে গিয়ে দেখেন একা রাত্রে।

ভূত আছে কিনা মর্গে একবার একরাত কাটিয়ে আসুন।

মানুষ কলা গাছের ছায়া দেখে ভয় পায়। আর বলে ভূত দেখেছি।

কুকুর দেখে এসে বলে যে আমি ভূত দেখেছি।

ছায়া দেখে ভয় পেয়ে বলে আমি ভূত দেখেছি।

ভূত শব্দটি আসলে অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয় । সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় মানে হচ্ছেঃ
  • ১) অতীতে যার অস্তিত্ব ছিল
  • ২) যার অস্তিত্ব আছে সে সবই
  • ৩) অ ভূত পূর্ব - যা আগে কখনো ঘটে নি
  • ৪) আধুনিক কালে অশরীরী প্রেতাত্মা
এই (ভূত) বিষয়ে দেশে ও বিদেশে অনেক ‘সত্যি’ ভূতের কাহিনী নিয়ে অনেক বই আছে। সেগুলি পড়লে মনে হয়, হয়ত কিছু আছে। আবার অনেক সময় মনে হয়, যুক্তি দিয়ে এসব ঘটনার ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না বলেই, মনে হয়, তিনি (ভূত) আছেন, কিন্তু আসলে কিছুই নয়। কিছু কল্পকাহিনী। একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে বলতে এক বিশাল কল্পকাহিনী। যুগে যুগে বিশাল এক ভূতের গল্প কিছু অসাধু লোক এটাকে একটা ব্যবসার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, সে কারণে মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে যেভাবেই হোক ভূত আছে এটার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করে। ভূত থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু এর ভিতর কুসংস্কার বেশি ঢুকে গেছে ভূতের নামে। তবে অধিকাংশ লোকের মনে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের একটা দোদুল্যমানতা আছে। সেটা একদম অস্বীকার করতে পারা যায় না।

ভূত আছে কিনা তা জানি না, কিন্তু জ্বীন আছে যাকে মানুষ ভূত মনে করে। অনেকেই এটিকে 4th or 5th dimension এর প্রাণী মনে করে। মানুষ জ্বীন দেখে ভয় পেতে পারে, ভূতের চেয়ে জ্বীনের ভয় বেশি আছে মানুষের।

আল কোরআন এ এই বিষয়ে বলা আছে,

"যখন আমি একদল জ্বীনকে আপনার (অর্থাৎ মুহাম্মাদ এর) প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কোরআন পাঠ শুনছিল। তারা যখন কোরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পরস্পর বলল, চুপ থাক। অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে (জ্বীন সম্প্রদায়) সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল।” (সূরা আল-আহক্বাফ, ২৯)

”হে জ্বীন ও মানবকূল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না।” (সূরা আর-রহমান, ৩৩)

কুরআন অনুসারে জ্বীন জাতি মানুষের ন্যায় আল্লাহ্‌ তা'য়ালার সৃষ্ট একটি জাতি। পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই তাদের অস্তিত্ব ছিল; এখনও তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। মানুষের চর্মচক্ষে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তবে জ্বীনরা মানুষকে দেখতে পায়। তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। তাদেরও সমাজ রয়েছে। তারা আয়ু মানুষের চেয়ে অনেক বেশী। উদাহরণস্বরূপ, তারা ৩০০ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ঈমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে জ্বীন জাতি তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে।

ইসলামের মতে জ্বীন জাতি এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরা আল জ্বীন এ শুধু জ্বীনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাস এর শেষ অংশে জ্বীন জাতির উল্লেখ আছে। কুরআনে আরো বলা আছে যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে জ্বীন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আঃ) এর সেনাদলে জ্বীনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে। ইসলামে আরো বলা আছে ‘ইবলিশ’ তথা ‘শয়তান’ প্রকৃতপক্ষে জ্বীন জাতির একজন ছিল। ইসলামের মতে, শয়তান হচ্ছে দুষ্ট জ্বীনদের নেতা। ইবলিশ বা শয়তান ছিল প্রথম জ্বীন যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।

আজকাল অনেকেই জ্বীনের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। তারা মনে করে দুনিয়াতে জ্বীন বলে কিছু নেই। আসলে এটা ভ্রান্ত ধারণা। জ্বীন আছে এবং জ্বীনের অস্তিত্বও বিজ্ঞান সম্মত।

আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান জ্বীন জাতির অস্তিত্ব অস্বিকার করে না। অস্বীকার করার মত কোন যুক্তি বা মতবাদও আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং অ্যান্টি ম্যাটার সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যত বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্বীনের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি ততই প্রগাঢ় হচ্ছে।

পৃথিবীতে যেমন বস্তু রয়েছে। তেমনভাবে অবস্তুও থাকতে পারে। অ্যান্টি ম্যাটার সম্পর্কে উইকিতে যা বলা হয়েছেঃ

‘পার্টিক্যাল ফিজিক্সে অ্যান্টি ম্যাটারেরর ধারণা প্রতিপদার্থের ধারণা রুপ নিয়েছে। ধারণা করা হয়েছে যেভাবে কণা দ্বারা পদার্থ গঠিত হয়, ঠিক তেমনিভাবে প্রতিকণা দ্বারা প্রতিপদার্থ গঠিত হয়। উদাহরণস্বরুপ, একটি প্রতিইলেকট্রন (পজিট্রন) এবং একটি প্রতিপ্রোটন মিলিত হয়ে গঠন করে একটি প্রতিহাইড্রোজেন পরমাণু, যেমন করে একটি ইলকট্রন ও প্রোটন মিলে তৈরি করে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু। উপরন্তু কণা এবং প্রতিকণা মিলিত হলে যেভাবে পূর্ণবিলয়ের মাধ্যমে সকল শক্তি বিমুক্ত হয়, তেমনি পদার্থ এবং প্রতিপদার্থের মিলনে পূর্ণবিলয়ের সৃষ্টি হয় বলে ধারণা করা হয়েছে। এ ধরণের পূর্ণবিলয়ের ফলে প্রকৃতপক্ষে উচ্চ শক্তির ফোটন (গামা রশ্মি) এবং বহু কণা-প্রতিকণা জোড়ার সৃষ্টি হয়। এই পূর্ণবিলয়ে বিমুক্ত কণাগুলোর মধ্যে বিপুল পরিমাণ শক্তি থাকে। এই শক্তির মান পূর্ণবিলয়ের ফলে সৃষ্ট বস্তুসমূহের নিশ্চল ভর এবং মূল পদার্থ-প্রতিপদার্থ জোড়ার অন্তর্ভুক্ত বস্তুসমূহের নিশ্চল ভরের পার্থক্যের সমান।‘

অর্থাৎ আমাদের মহাবিশ্বে যত পার্টিক্যাল আছে ঠিক তত পরিমান অ্যান্টি পার্টিক্যাল আছে, শক্তির নিত্যতা সূত্রানুযায়ী।

অ্যান্টি পার্টিকেল অদৃশ্য। এগুলোর মুভমেন্ট কোন যন্ত্র দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা যায় না। কিন্তু বিজ্ঞান এগুলোর অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারছে না।

পৃথিবীতে ৭৫০ কোটি মানুষ আছে। অ্যান্টি পার্টিকেল থিওরি অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের জন্যে একটি করে প্রতিমানুষ থাকলে সেগুলোর সংখ্যা হবে ৭৫০ কোটি। এগুলো মানুষের মতই কিন্তু অদৃশ্য।

এগুলোকেই জ্বীন বলা হয় যা বিজ্ঞান সম্মত।

এছাড়াও অদ্ভূত, কিম্ভূত, এরা তো আছেনই।

মোদ্দা কথা…ভূত আমাদের কল্পনা।

(তথ্যসূত্র: বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহিত, সংকলিত, পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত)
 
Back
Top