- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 115
- Messages
- 1,101
- Reaction score
- 134
- Points
- 1,213
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
আদিম ভারতে সৌরবছর গণনার মেগালিথ, কুম্ভমেলা ও বিভিন্ন পৌষমেলা, মাঘমেলার ইতিহাস।
মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি আসলে একটি আদিম সংস্কৃতিতে (কুড়মালি, জনজাতি, তপশীলি, জৈন) ভারতীয় সৌর বছরের শেষ দিন।
তখনও লেখার চল হয়নি, মানুষ শুধুমাত্র আকাশে সূর্যের অবস্থান, ও রাতে তারামন্ডলের আগমন দেখে সৌর বছরের শেষ-শুরু বুঝত, উচুঁ কোন স্থানে আমাদের পূর্বপুরুষরা দুটো পাথর পুঁতে রাখত, আর যেদিন সূর্য সেই পাথর দুটো ঠিক মাঝে অস্ত যেত, সেদিন হত বছরের শেষ, এটাই পরে মকর সংক্রান্তি হয়। তবে পৃথিবীর "অয়ন চলন বা precessional motion এর কারণে মহাজাগতিক ঘটনা ও নতুন বছরের দিন অনেকটা সরে গেছে।
সৌরবর্ষ গণনার এই রকম পাথর ঘড়ি পুরো ভারত জুড়ে আছে, যেমন একটা ঝাড়খন্ডের হাজারিবাগের কাছে পকড়ি বলে একটা জায়গায় আছে।
মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি আসলে একটি আদিম সংস্কৃতিতে (কুড়মালি, জনজাতি, তপশীলি, জৈন) ভারতীয় সৌর বছরের শেষ দিন। আদি ভারতীয় ক্যালেন্ডারে মাঘ ছিল বছরের প্রথম মাস, বছরের প্রথম দিন ভোরে স্নান দিয়ে শুরু হয়, বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়, যেগুলোকে পৌষমেলা, মাঘমেলা বলা হয়, এই স্মৃতিতেই পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে নূতন বছর হিসাবে উৎসব পালন করা হয়।
কুম্ভমেলা এমনই একটা মেলা থেকেই শুরু।
আমরা যে বৈশাখ মাসে নববর্ষ পালন করি, সেটা অনেক পরে হয়।
হিউয়েন সাঙ লিখেছেন.......
রাজধানীর পূর্ব দিকে দুই নদীর সঙ্গমের মাঝখানে ১০ লি সমান মনোরম উচ্চভূমি, পুরোটাই সূক্ষ্ম বালি দিয়ে ঢাকা। (লি হল প্রাচীন চীনের দূরত্বের একক, প্রায় ৫০০ মিটার) এখানে প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত রাজা এবং ধনী বণিকরা দান বিতরণ করেন, একে “মহাদান মেলা” বলা হয়।
বর্তমান রাজা শিলাদিত্য (হর্ষবর্ধন) তাঁর পাঁচ বছরের সঞ্চিত সম্পদ এখানে পাঁচদিনে বিতরণ করেন।
প্রথম দিন তিনি একটি খুব সুন্দর বুদ্ধের মূর্তি সজ্জিত করেন, তারপর ভগবান বুদ্ধকে সবচেয়ে বহুমূল্য রত্নটি অর্পণ করেন, এর পরের দিন তিনি আবাসিক মঠের শ্রমণ ও ব্রাহ্মণদেরকে দাতব্য অর্পণ করেন; পরে দূর থেকে আসা পুরোহিতদেরকে, এরপরে বিশিষ্ট প্রতিভাসম্পন্ন পুরুষদেরকে, পরবর্তীতে অন্য ধর্মীয়দেরও দান দেন; সবশেষে বিধবা, শোকাহত, অনাথ, পরিত্যক্ত ও দরিদ্রদের দান দেন।
এইভাবে রাজা শিলাদিত্য তাঁর কোষাগার এবং শস্যভান্ডার নিঃশেষ করে দান করেন। শেষে তিনি তাঁর মাথার রত্নখচিত মুকুট এবং গলার রত্নখচিত হারগুলি দিয়ে দেন।
মহাদান মেলার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি কোন অনুশোচনা দেখাননা, শেষ করার পর তিনি আনন্দে কেঁদে ওঠেন এবং বলেন "ভাল হয়েছে, আমার সব অচল সম্পদ এখন সচল হয়ে মানুষের কাজে লাগবে”।
এরপর বিভিন্ন রাজ্যের শাসকরা রাজাকে তাঁদের গহনা ও পোশাক উপহার দেয়, যাতে রাজার কোষাগার আবার পূর্ণ হয়ে যায়। দানস্থলের পূর্বদিকে, দুই নদীর সঙ্গমস্থলে প্রতিদিন শত শত মানুষ স্নান করেন, অনেকেই শীতে মারা যান! এই দেশের মানুষ মনে করেন, যে স্বর্গে জন্ম নিতে হলে একটি চালও না খেয়ে উপবাস করতে হবে, এবং তারপর মহাসঙ্গমের জলে ডুব দিতে হবে, তারা বলেন এই জলে স্নান করলে সব পাপ ধুয়ে যায়, এবং ধ্বংস হয়। তাই বিভিন্ন রাজ্য এবং দূরবর্তী অঞ্চল থেকে মানুষেরা এখানে একসাথে আসেন, সাত দিন ধরে তারা খাওয়া থেকে বিরত থাকেন, এবং পরে তাদের জীবন শেষ করেন।
কিছু মানুষ আছে যারা তপস্যা অনুশীলন করেন, তারা দলবেঁধে মাঝখানে একটি উচু স্তম্ভ স্থাপন করেন, সূর্য অস্তমিত হতে চলে তখনই তারা স্তম্ভে উঠে যান; তারপর এক হাত এবং এক পা দিয়ে স্তম্ভে আঁকড়ে ধরে অন্য পা এবং হাত দিয়ে শরীরকে বাইরের দিকে প্রসারিত করে রাখে, তাদের চোখ সূর্যের দিকে স্থির থাকে, এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে তাদের মাথা ডানদিকে ঘুরাতে থাকেন, যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন তারা নেমে আসেন। বহু তপস্বী আছেন যারা এই আচার অনুশীলন করেন, এইভাবে তারা জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে বাঁচার আশা করেন, অনেকেই আছেন যারা কয়েক দশক ধরে এই অগ্নিপরীক্ষা চালিয়ে যান।
রেফারেন্স: Xuan Zang (Hiuen Tsiang), Buddhist Records of the Western World, Book V
#সংগৃহীত
মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি আসলে একটি আদিম সংস্কৃতিতে (কুড়মালি, জনজাতি, তপশীলি, জৈন) ভারতীয় সৌর বছরের শেষ দিন।
তখনও লেখার চল হয়নি, মানুষ শুধুমাত্র আকাশে সূর্যের অবস্থান, ও রাতে তারামন্ডলের আগমন দেখে সৌর বছরের শেষ-শুরু বুঝত, উচুঁ কোন স্থানে আমাদের পূর্বপুরুষরা দুটো পাথর পুঁতে রাখত, আর যেদিন সূর্য সেই পাথর দুটো ঠিক মাঝে অস্ত যেত, সেদিন হত বছরের শেষ, এটাই পরে মকর সংক্রান্তি হয়। তবে পৃথিবীর "অয়ন চলন বা precessional motion এর কারণে মহাজাগতিক ঘটনা ও নতুন বছরের দিন অনেকটা সরে গেছে।
সৌরবর্ষ গণনার এই রকম পাথর ঘড়ি পুরো ভারত জুড়ে আছে, যেমন একটা ঝাড়খন্ডের হাজারিবাগের কাছে পকড়ি বলে একটা জায়গায় আছে।
মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি আসলে একটি আদিম সংস্কৃতিতে (কুড়মালি, জনজাতি, তপশীলি, জৈন) ভারতীয় সৌর বছরের শেষ দিন। আদি ভারতীয় ক্যালেন্ডারে মাঘ ছিল বছরের প্রথম মাস, বছরের প্রথম দিন ভোরে স্নান দিয়ে শুরু হয়, বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়, যেগুলোকে পৌষমেলা, মাঘমেলা বলা হয়, এই স্মৃতিতেই পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে নূতন বছর হিসাবে উৎসব পালন করা হয়।
কুম্ভমেলা এমনই একটা মেলা থেকেই শুরু।
আমরা যে বৈশাখ মাসে নববর্ষ পালন করি, সেটা অনেক পরে হয়।
হিউয়েন সাঙ লিখেছেন.......
রাজধানীর পূর্ব দিকে দুই নদীর সঙ্গমের মাঝখানে ১০ লি সমান মনোরম উচ্চভূমি, পুরোটাই সূক্ষ্ম বালি দিয়ে ঢাকা। (লি হল প্রাচীন চীনের দূরত্বের একক, প্রায় ৫০০ মিটার) এখানে প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত রাজা এবং ধনী বণিকরা দান বিতরণ করেন, একে “মহাদান মেলা” বলা হয়।
বর্তমান রাজা শিলাদিত্য (হর্ষবর্ধন) তাঁর পাঁচ বছরের সঞ্চিত সম্পদ এখানে পাঁচদিনে বিতরণ করেন।
প্রথম দিন তিনি একটি খুব সুন্দর বুদ্ধের মূর্তি সজ্জিত করেন, তারপর ভগবান বুদ্ধকে সবচেয়ে বহুমূল্য রত্নটি অর্পণ করেন, এর পরের দিন তিনি আবাসিক মঠের শ্রমণ ও ব্রাহ্মণদেরকে দাতব্য অর্পণ করেন; পরে দূর থেকে আসা পুরোহিতদেরকে, এরপরে বিশিষ্ট প্রতিভাসম্পন্ন পুরুষদেরকে, পরবর্তীতে অন্য ধর্মীয়দেরও দান দেন; সবশেষে বিধবা, শোকাহত, অনাথ, পরিত্যক্ত ও দরিদ্রদের দান দেন।
এইভাবে রাজা শিলাদিত্য তাঁর কোষাগার এবং শস্যভান্ডার নিঃশেষ করে দান করেন। শেষে তিনি তাঁর মাথার রত্নখচিত মুকুট এবং গলার রত্নখচিত হারগুলি দিয়ে দেন।
মহাদান মেলার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি কোন অনুশোচনা দেখাননা, শেষ করার পর তিনি আনন্দে কেঁদে ওঠেন এবং বলেন "ভাল হয়েছে, আমার সব অচল সম্পদ এখন সচল হয়ে মানুষের কাজে লাগবে”।
এরপর বিভিন্ন রাজ্যের শাসকরা রাজাকে তাঁদের গহনা ও পোশাক উপহার দেয়, যাতে রাজার কোষাগার আবার পূর্ণ হয়ে যায়। দানস্থলের পূর্বদিকে, দুই নদীর সঙ্গমস্থলে প্রতিদিন শত শত মানুষ স্নান করেন, অনেকেই শীতে মারা যান! এই দেশের মানুষ মনে করেন, যে স্বর্গে জন্ম নিতে হলে একটি চালও না খেয়ে উপবাস করতে হবে, এবং তারপর মহাসঙ্গমের জলে ডুব দিতে হবে, তারা বলেন এই জলে স্নান করলে সব পাপ ধুয়ে যায়, এবং ধ্বংস হয়। তাই বিভিন্ন রাজ্য এবং দূরবর্তী অঞ্চল থেকে মানুষেরা এখানে একসাথে আসেন, সাত দিন ধরে তারা খাওয়া থেকে বিরত থাকেন, এবং পরে তাদের জীবন শেষ করেন।
কিছু মানুষ আছে যারা তপস্যা অনুশীলন করেন, তারা দলবেঁধে মাঝখানে একটি উচু স্তম্ভ স্থাপন করেন, সূর্য অস্তমিত হতে চলে তখনই তারা স্তম্ভে উঠে যান; তারপর এক হাত এবং এক পা দিয়ে স্তম্ভে আঁকড়ে ধরে অন্য পা এবং হাত দিয়ে শরীরকে বাইরের দিকে প্রসারিত করে রাখে, তাদের চোখ সূর্যের দিকে স্থির থাকে, এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে তাদের মাথা ডানদিকে ঘুরাতে থাকেন, যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন তারা নেমে আসেন। বহু তপস্বী আছেন যারা এই আচার অনুশীলন করেন, এইভাবে তারা জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে বাঁচার আশা করেন, অনেকেই আছেন যারা কয়েক দশক ধরে এই অগ্নিপরীক্ষা চালিয়ে যান।
রেফারেন্স: Xuan Zang (Hiuen Tsiang), Buddhist Records of the Western World, Book V
#সংগৃহীত