- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 115
- Messages
- 1,101
- Reaction score
- 134
- Points
- 1,213
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****যে কথা বলা হয় নাই ...*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
রিয়াজ
ক্লাস শেষে কলেজের ক্যান্টিনে এসে দেখি কামাল, সোহেল আর সেতু টেবিলের উপর হুমড়ি খেয়ে কি যেন দেখছে ।
-কিরে কি দেখস ? আমি টেবিলে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করি ।
“তুই এইসব বুঝবি না ।“ একটা বিদেশী ম্যাগাজিন ভাজ করতে করতে কামাল বলে ।
-বুঝবো না কেনো ? দেখি ম্যাগাজিনটা ।
“আরে বললামতো তুই বুঝবি না । কারন তুই...তুই ...। তুই খুব ভালো ছাত্র ।“ একটু হোচট খেয়ে কথা শেষ করে কামাল । আমার মনটা খারাপ হয়ে যায় । কামাল ম্যাগাজিনটা দেখতে দিলো না, নাহ কারন সেটা না । আমার বয়স প্রায় আঠারো । কিছুদিন পরে ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা দেবো । এইসব ম্যাগাজিনে কি থাকে সেটা কলেজের প্রথম বছরেই টের পেয়েছি । কামাল এবং আরো কয়েকজন বন্ধুর সুবাদে । কিছু অর্ধ নগ্ন কিংবা নগ্ন নারীর ছবি দেখার মাঝে আমি কোনো বিনোদন পাই না । মনটা আসলে খারাপ হয়েছে কামালের না বলা কথার কারনেই । ‘তুই বুঝবি না কারন তুই একটা হাফ লেডিস ‘...কামাল আসলে এটাই বলতে চেয়েছিলো ।
বন্ধুরা আমাকে হাফ লেডিস বলার কারন অতিরিক্ত ফর্সা গায়ের রং কিংবা পাতলা ঠোট না । এর পিছনে ছোট একটা ইতিহাস আছে । ছেলেবেলায় রাগ, ক্ষোভ, দুংখ, অভিমান সবকিছুই প্রকাশ করতাম কান্না দিয়ে । একটা বয়স পর্যন্ত সব শিশুই তাই করে । বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশু ক্ষোভে চিৎকার করে রাগলে মারামারি করে । যেমন জলিলের সামান্য স্কেলটা না বলে ধরাতে জলিল রেগে আমাকে একটা চড় দিলো । অথচ জলিল যখন আমার খুব পছন্দের পাইলট কলমটা অনেকটা ইচ্ছা করেই ভেঙ্গে ফেললো আমার এত রাগ হলো যে আমি ঝরঝর করে কেদে ফেললাম ।
‘ছেলেটা একটু নরম’ এই বিশেষণ নিয়েই বেশ কিছুকাল গেলো । প্রাইমারী পার হয়ে হাইস্কুলে উঠে গেলাম । সেখানেই আনুর সাথে পরিচয়...বন্ধুত্ব । আনু খুব ভালো ফুটবল খেলে, দুই-তিনজনকে কাটিয়ে অনায়াসে গোল দিতে পারে, স্কুল অ্যাথলেটিক্সে দৌড়ে প্রথম । তবে আনুকে আমার ভালো লাগে অন্য কারনে । আনু খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পারে । আনুর আকা পাখি দেখলে মনে হয় এই বুঝি পাখিটা আকাশে পাখা মেলবে... আকা নৌকার পালে বাতাসকেও অনুভব করা যায়...অন্তত আমার তাই মনে হয় ।
-তুই কিভাবে এত সুন্দর আকস, আমাকে একটু শেখা না । মাঝে মাঝেই আনুকে বলি ।
“ভালো আঁকতে হইলে কিছু মন্ত্র জানতে হয় ।“ রহস্যময় হাসি হেসে উত্তর দিত আনু । ঐ বয়সে আমি আবার এসব খুব বিশ্বাস করতাম । আনু জানতো । এভাবে মাঝে মাঝেই চাপাচাপি করাতে একদিন আনু বলে...
“এই মন্ত্র সকালে সূর্য যখন লাল থাকে তখন পড়তে হয় । পরপর তিনদিন পড়তে হবে । এরপরে যা আঁকবি তাই সুন্দর হবে ।“ এখন বুঝতে পারি আমাকে এড়াবার জন্যই হয়তো বলে আনু । কারন অত ভোরে আমার বাসা থেকে বের হওয়া সম্ভব না । কিন্তু শিখতে যে আমাকে হবেই । তাই কিছুদিনের মধ্যেই উপায় বের করে ফেলি । স্কুলের স্পোর্টস কয়েকদিন পরে । বাসায় প্রাক্টিস এর কথা বলে ফজরের আজানের পর হয়তো বের হওয়া যাবে । আনুকে বললাম । ও নিমরাজি হলো ।
অতএব একদিন পরিকল্পনামতো ফজরের আজানের পরেই বাসা থেকে বের হলাম । ছোট রাস্তায় একটা লোকও নাই, লাইটপোস্টের নীচে একটা কুকুর কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে...আর একটু আগাতে ফজলুর হোটেলের সামনে একটা দুইটা মানুষ দেখি...আর একটু সামনে বড় রাস্তায় বাস, গাড়ী কিংবা একটা রিক্সাও নাই...এই অদ্ভুত অজানা শহরকে প্রথম দেখি । এভাবেই স্কুলের মাঠে পৌছে যাই । কথামতো আনুর আসার কথা একটু পরেই । চারদিক সবে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে । স্কুলের ব্যাগটা শহীদ মিনারের পাশে রেখে বসলাম । আরো একটু পরিষ্কার হয় চারদিক । এতটা যে ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দুগুলো দেখা যায় । আমার খুব খুব ভালো লাগে । অধীর আগ্রহে আনুর জন্য অপেক্ষা করি । পুব দিগন্তে ধীরে ধীরে কুসুমটা জেগে উঠে । আমার একটু টেনশন হতে থাকে । মন্ত্রটা নাকি সূর্য লাল থাকতে থাকতেই পড়তে হবে । আনুরতো এখনো দেখা নাই । এভাবেই সময় যায় । আনুর আর দেখা পাওয়া যায় না । অনেক অনেক পরে আরো অনেকের সাথে আনু আসে স্কুলে ।
-তুই আসলি না কেনো । আমি সেই অন্ধকার থেকে বসে আছি । আনুকে জিজ্ঞেস করি ।
“কি বলিস । সত্যি তুই সেই সকাল থেকে বসে আছিস । তোরা শুনছিস রিয়াজ ভোর পাচটায় স্কুলে এসে বসে আছে আমার কাছে মন্ত্র শেখবার জন্য ।“ আনুর বলার ভঙ্গিতেই সবাই হেসে উঠে । লজ্জায়, ক্ষোভে, অভিমানে আমি দিশাহারা । নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করতে পারি না । বানের জলের মত কান্না দুচোখ উপচিয়ে পরে ।
“আশ্চর্য মেয়ে মানুষের মত কান্না শুরু করলি কেনো ।“ আনু একটু অবাক হওয়া গলায় বলে ।
‘আরে রিয়াজতো একটা হাফ লেডিস ।‘ সাজ্জাদ পাশে থেকে ফোড়ন কেটে বলে ...ব্যস সেই থেকে বন্ধুদের মাঝে আমি হয়ে যাই ‘হাফ লেডিস রিয়াজ‘ ।
রিতা
সকাল থেকে মনটা খারাপ । মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে বসে আছি । বড়মামা এসেছিলো । আমাকে নিয়ে যেতে । মা যেতে দিলো না । এটা সেটা কারন বললেও আসল কারন আমি জানি । আসল কারন হলো তরুণী মেয়ে নিয়ে মায়ের চিরায়ত দুশ্চিন্তা । আমাকে নিয়ে যেটা একটু আগেভাগেই শুরু করেছে মা । গড়ন পুরোটাই আমি পেয়েছি মায়ের । যেমন চেহারায় তেমনি শরীরে । একটু বেশী বাড়-বাড়ন্ত । হাইস্কুলে উঠলাম বালিকা মন আর প্রায় তরুণী শরীর নিয়ে । স্কুলের স্যারদের, পাড়ার চাচাদের এমনকি মসজিদের হুজুরের আদর-স্নেহ বেড়ে গেলো । সবাই ঘাড়ে পিঠে হাত দেওয়া ছাড়া আদর-স্নেহ করতে পারেন না । শরীরজুরে কেমন ঘিনঘিনে অনুভুতি হয় । কিন্তু কাউকে বলতে পারি না । নিজেকে, নিজের শরীরকেই ঘৃনা করি ।
ঐ সময় থেকেই মা আমাকে চোখে চোখে রাখে । যতটা সম্ভব । প্রায় সমবয়সী মামাতো ভাইয়ের সাথে ক্যারাম বোর্ড খেলছি মা কারনে-অকারনে ঘুরে যাবে । অন্য কেউ না বুঝলেও আমি বুঝতাম । সব মেয়েই মনে হয় বুঝতে পারে । কিন্তু এত পাহারায়ও কাজ হয় না । বাবার চাচা, আমার দাদা বাসায় আসেন বেড়াতে । বয়স অনেক হলেও শরীর স্বাস্থ্য ভালো । সেইদিন বিকেলের কথা আমি সারাজীবন ভুলবো না । এত অন্ধকার, এত ঘেন্না লাগছিলো...মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো । মা মনে হয় কিছু বুঝতে পেরেছিলো । সেইরাত মা আমার সাথে ঘুমায় । কিছুই বলে না শুধু পরম মমতায় গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় । আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি না । ফুপিয়ে কেদে ফেলি । মা একটা কথাও বলে না । শুধু শক্ত করে আমাকে ধরে থাকে ।
সময় যায় । বাড়ির বাইরে বের হলেই নানা শব্দ শুনি । গলির ছেলেরা শিষ দেয়, হোটেলের ম্যানেজার তাড়াহুড়া করে ক্যাসেট বদলায় ...’তোমাকে চাই আমি আরো কাছে, চাখভুম চাখভুম চাদনী রাতে কিংবা চোলি ক্যা পিছে কেয়া হ্যায় ।‘ সবচেয়ে বেশী শুনি ‘মাল’ শব্দটা । তবে ততদিনে বান্ধবী, বান্ধবীদের বড় বোন আর এক খালার মাধ্যমে দুইটা জিনিষ জেনে গেছি । একঃ ছোট-বড় হেনস্থা ছাড়া বাংলার কোনো বালিকা নারী হয় না । ক্লাসের সবচাইতে লিকলিকে শিলার গল্প শুনে শিউরে উঠি । ওর তুলনায় আমার হেনস্থা কিছুই না । নিজের শরীরের প্রতি যে ঘৃনা জন্মেছিলো তা চলে যায় । দুইঃ বাবা ভাইয়ের বাইরে দুনিয়ার সব পুরুষ শুয়োর না । এই জানাগুলো খুব গুরুত্বপুর্ন ছিলো ...প্রথমটা নিজের জন্য দ্বিতীয়টা জীবনের জন্য ।
রিয়াজ
ব্যাঙ্গাচি লেজ খসিয়ে তরুণ ব্যাঙ হয় । আমিও আবেগ-অনুভুতি খসিয়ে বড় হলাম । ভুল হলো অনুভুতি চাপা দিয়ে আসলে ...বুকের মাঝে বহমান নদীকে প্রকাশ না করি অস্বীকারতো করতে পারি না । রাগ-ক্ষোভ-দুংখ প্রকাশ না করতে শিখলাম, বন্ধুদের অশ্লীল কৌতুক ভালো না লাগলেও হাসতে শিখলাম এমনকি এক-দুইবার মেয়েদের দেখে শিষ দেবার মত শুয়োরের কাজও শিখলাম । কিন্তু কোনো লাভ হয় না । বন্ধুরা এখনও কখনো প্রকাশ্যে, বেশীরভাগ সময়ে আড়ালে আমাকে হাফ লেডিসই বলে ।
ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা শেষ হয়েছে । বরাবরের মতই ভালো পরীক্ষা দিয়েছি । এখন ব্যস্ত কোচিং আর আড্ডা নিয়ে । আড্ডা অবশ্য কম দেই । অবশ্য ইদানীং আড্ডায় আমার বেশ কিছুটা কদর তৈরী হয়েছে । কারন প্রেমপত্র লিখে দেওয়া । বন্ধুদের অনেকেই দুতরফা...বেশীরভাগই একতরফা প্রেম করে যাচ্ছে । ওদের জন্য মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রেমপত্র লিখি । বন্ধুরা খুব পছন্দ করে । আজকাল অবশ্য আর বেশী মাথা খাটাই না । সেদিন কামালের প্রেমিকা মিলিকে উদ্দেশ্য করে লিখলাম ...
‘মিলি বাড়ি আছো
দুয়ার এটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
মিলি বাড়ি আছো?’...
শক্তির বিখ্যাত কবিতা ‘অবনী বাড়ি আছো’ । শুধু অবনী নামটা মিলি করে দিলাম । জানতাম কামাল গাধাটা বুঝতে পারবে না । একটু চিন্তায় ছিলাম কামালের প্রেমিকাকে নিয়ে । কিন্তু পরেরদিন কামাল এত খুশী, আড্ডার সবাইকে খাওয়ালো, আমার জন্য স্পেশাল চিকেন পেটিস ।
“জানোস দোস্ত ও বলছে এত সুন্দর কবিতা নাকি ও জীবনেও পড়ে নাই ।“ কামাল উচ্ছসিতভাবে বলে ।
-হাট্টিমাটিম টিম এর পরে খুব বেশী কবিতা তোর প্রেমিকা পড়ে নাই ...মনে মনে বলে চিকেন পেটিসে কামড় দেই ।
রিতা
ভেবেছিলাম মা রাগ করবে । কলেজে আজকে নবীনবরন অনুষ্ঠান । শিলা শাড়ি পরে আমাকে নিতে এসেছে । বললো তুইও শাড়ি পর । মা এমনিতেই শাড়ি পরে কোথাও যেতে দেয় না । বাসার অবস্থাও খারাপ । বাবা ব্যবসায় ভালো লস করেছে । ছোট বোন মুন্নিও অসুস্থ । ও অবশ্য প্রায়ই অসুস্থ থাকে । আমার বিশ্বাস লতিফ ডাক্তার আসলে ভুল চিকিৎসা করছে । কিন্তু আমার বিশ্বাসের কিইবা দাম আছে । ভয়ে ভয়ে মায়ের কাছে গেলাম শাড়ি পড়ার অনুমতি চাইতে । আশ্চর্য মা রাজী হয়ে গেলো । মনে খুশীর নাচন নিয়ে রুমে এসে চাচাতো বোনের বিয়েতে পাওয়া কলাপাতা রঙয়ের শাড়িটা পরি । একটু সাজিও । মনে হয় অন্য সময়ের চাইতে একটু বেশী । দেখে শিলা বলে ‘তোর পিছনেতো এমনিতেই লাইন থাকে । আজকে লাইনটা না মিছিল হয়ে যায় ।‘ মার কাছে বলে আসার সময় মাও যেন কেমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকলো ।
বাসা থেকে শিলাকে নিয়ে বের হতেই টের পাই আমার জন্য রিক্সা খুজে দেবার প্রতিযোগিতা । আজকাল সব সময়ই এটা হয় । মিথ্যা বলবো না, এসব ছোটখাটো নৈবদ্য এখন ভালোই লাগে । রাস্তার পাশে আসার আগেই রিক্সা দাঁড়িয়ে যায় । ‘রাজকন্যার জন্য পঙ্খীরাজ রেডি’ ঠাট্টা করে বলে শিলা । আমি কিছু না বলে রিক্সায় উঠে বসি । শিলাও ওঠে । সারাটা পথ শিলা বকবক করে । অন্যদিন বিরক্ত লাগে । আজ কেনো জানি সব কিছু ভালো লাগছে । রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো ছেলেদের শিষ, টিজিং কথা যার আগে পরে ‘মাল’ শব্দটা থাকবেই কেমন বাতাসে মিলিয়ে যায় । অন্যদিনের মত মনে হুল ফোটায় না ।
কলেজে ঢুকে আরো ভালো লাগে । বান্ধবীরা সবাই শাড়ি পরেছে । সবাইকে খুব সুন্দর লাগছে । সেই তুলনায় সহপাঠী ছেলেগুলোকে কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগে । কলকল করতে করতে একগাদা বান্ধবীসহ অডিটোরিয়ামে ঢুকি ।
রিয়াজ
“টাক তিন প্রকার । বুঝছস ।“ অডিটোরিয়ামের একদম পিছন দিকে কয়েকটা চেয়ার নিয়ে আমরা সাতজন বন্ধু বসে আছি । এর মাঝে সেতু বলা শুরু করে । সেতু সব সময়ই মজা করে কথা বলে । আজকে নবীনবরন অনুষ্ঠান । কলেজ ছেড়েছি প্রায় এক বছর । এখন আর কলেজে আসতে আমার ভালো লাগে না । তবে বন্ধুদের খুব আগ্রহ । কারন কামাল, আনু আর মঞ্জুর প্রেমিকা আজ এই অনুষ্ঠানে আসবে । গতকাল ছিলো আমার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা । পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে । মনটা বেশ ভালো । তাই এখানে আসতে বেশী আপত্তি করি নাই ।
-টাকের শ্রেনীবিভাগ কি তোর করা ? আমি জিজ্ঞেস করি সেতুকে ।
“হুমম । ঐযে দেখ হেডু (প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে আমরা হেডু বলি) । মাথার শুরু থেকে পিছন পর্যন্ত অর্ধেক খালি এইটা হইলো দুখটাক । তারপর বাংলার শহীদ স্যারকে দেখ। মাথার মাঝখানে একটা স্টেডিয়াম এইটা হইলো সুখটাক ।“
-দুইরকম হইলো । তিন নম্বরটা কি ?
“আজাদ স্যারের দিকে তাকা । কপালের দুইদিক পরিষ্কার হওয়া শুরু করছে । এইটা হলো তিন নম্বর । নাম টুকটাক । “
সেতুর কথায় সবাই হেসে ওঠে । আমিও হাসতে থাকি । হাসতেই হাসতেই এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখি । অনেকগুলো মেয়ের ভীড়ে একটা সবুজ পরী শান্ত, ঋজু ভঙ্গিতে অডিটোরিয়ামে ঢুকছে । সেতু অনেক সময় মজা করে বান মারার কথা বলে । ব্যাপারটা মনে হয় সত্যি । ঐদিনের অনুষ্ঠানে আমি ঐ সবুজ পরী ছাড়া আর কিছু দেখি নাই...কিছুই না ।
রিতা
ইসসস কিযে সুন্দর একটা দিন গেলো । নবীনবরন অনুষ্ঠানের শুরুতেই সমস্ত ফার্স্ট ইয়ারের পক্ষ থেকে একজন ছেলে আর একজন মেয়েকে একটা স্মারক পুরস্কার দেওয়া হয় । সবার সামনেই লটারী করা হলো । আশ্চর্য মেয়েদের মধ্য থেকে আমার নামই উঠলো । অনেকগুলো মুগ্ধ দৃষ্টি আর কিছু ঈর্ষাকাতর দৃষ্টির সামনে মঞ্চে উঠে পুরস্কার নিলাম । তবে এটা ছিলো চমকের শুরু ।
অনুষ্ঠানের মাঝে ছিলো আসিফ ভাইয়ের গান । উনি এই কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র । এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন । গায়ক হিসাবেও বেশ নামডাক করেছেন । অন্তত আমাদের এই শহরে এক নামে তাকে সবাই চেনে । আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু । আগে মাঝে মাঝে বাসায় আসতেন । কিযে সুন্দর কয়েকটা গান গাইলেন । গান শেষে স্টেজ থেকে সরাসরি একদম আমাদের দঙ্গলের মাঝে আসলেন ।
“তুমি মারুফের বোন রিতা না? “ কি ভীষণ স্মার্টভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ।
-জ্বি । আমি ছোট করে উত্তর দেই ।
“বাহ । তোমাকে এই কলেজে দেখে খুব ভালো লাগছে ।“ আসিফ ভাইয়ের এতটুকু কথার মাঝেই আশে পাশে ফিসফিস শুনতে পাই । হওয়ারই কথা আসিফ ভাই বলতে গেলে ‘হিরো অফ দ্য টাউন’ । আসিফ ভাই ফিরে যেতে যেতে একবার ঘুরে বললেন ...
“তোমাকে সুন্দর লাগছে । খুউউউব । “ এমন সহজ স্বাভাবিক আর এত সুন্দর করে বললেন । আমার পৃথিবী মুহূর্তেই রঙ্গিন হয়ে গেলো । চারপাশে এত চোখ যার অনেকগুলিই প্রিয় বান্ধবীদের । সব চোখজুড়েই ঈর্ষার সাগর । তার চাইতেও অদ্ভুত এই প্রথম মানুষের ঈর্ষাও আমার খুব ভালো লাগে ।
রিয়াজ
মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেলাম । এই শহরেই । আমার খুশী থাকারই কথা । কিন্তু আমার সব খুশী যে এক কলাপাতা রঙয়ের শাড়ির আচলে লুকিয়ে আছে । সেইদিন অনুষ্ঠানের পরে নাম ঠিকানা বের করতে অবশ্য বেশী কষ্ট হয় নাই । আমাদের এই ছোট শহরে হবার কথাও না । রিতার বড় ভাই মারুফ ভাইকেও চিনি । কিন্তু এর বেশী আগাইতে পারি নাই । কলেজে আজকাল প্রায়ই যাই । রিতাকে দেখি এক দঙ্গল মেয়েদের সাথে । রিতাদের বাড়ির একটু দুরে এক চায়ের দোকানেও বিকেলে যাই । হঠাৎ মাঝে মাঝে বিকেলে রিতা বের হয় । ব্যস এতটুকুই ।
রিতা
আজকে আবারো এক অসম্ভব ভালো লাগার দিন । নবীনবরনের পর তিনমাস পার হয়ে গেছে । গত সপ্তাহেই আবার আসিফ ভাইকে কলেজ গেটে দেখি । এক দঙ্গল বান্ধবীদের সাথে ছিলাম । তারপরও আসিফ ভাই এগিয়ে এসে ঠিকই কথা বললেন । স্বভাবসুলভ স্মার্ট ঢঙ্গে । ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন । আসিফ ভাই যে আমার জন্যই কলেজে এসেছেন, তাও বুঝতে পারলাম । কেমন ভালো লাগা, গর্বে উড়ে উড়ে ক্লাসে গেলাম ।
গতকাল শিলার মাধ্যমে আসিফ ভাই খবর পাঠিয়েছেন দেখা করার জন্য । শিলা আসিফ ভাইয়ের কেমন যেন আত্মীয় হয় । সেই থেকে ভয়, উৎকন্ঠা আবার মনের মাঝে রিমঝিম...রাতে ঘুমই হলো না । সকালে কলেজে আসতেই দেখি শিলা অপেক্ষা করছে । দুরু দুরু বুকে শিলার সাথে কলেজের পিছনের বাগানে গেলাম । এই স্থানটা একটু ফাঁকা বলে কলেজের প্রেমিক যুগলরা এখানেই আসে । জিন্সের প্যান্ট, অফ হোয়াইট গেঞ্জি চোখে সানগ্লাস...দূর থেকেই আসিফ ভাইকে স্বপ্নের রাজকুমার মনে হয় । আমি জানি এই শহরের অনেকেরই তাই মনে হয় ।
“তোরা তাহলে কথা বল । আমি যাই ।“ বলেই শিলা চলে যায় । আমার কেমন ঝিম ঝিম করে শরীর । হাটুতে কোনো জোর পাই না ।
“চলো বসি ।“ আসিফ ভাই বলাতে বেচে যাই ।
“শোনো আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না । তোমাকে সেদিন নবীন বরনের দিন দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছে । ঢাকা গিয়েও শুধু তোমার কথা মনে হোতো । তাই ছুটিতে এসেই প্রথম কলেজে গিয়েছি । তুমিতো আবার কলেজে দঙ্গল ছাড়া থাকো না । তাই বলতে পারি নাই ।“ এতটুকু বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসেন আসিফ ভাই । ইসসস...আল্লাহ...মানুষ এত সুন্দর করে হাসতে পারে ।
“কি তুমি যে কিছু বলছো না ।“ বলার পরেও আমি চুপ করে থাকি । কি বলব ? এসব কিভাবে বলতে হয় আমি জানি নাকি ?
“ও তাহলে আমাকে তোমার তেমন পছন্দ না । তাহলে আমি যাই...” বলেই সত্যি সত্যি আসিফ ভাই উঠে পড়ার চেষ্টা করেন । আমার সর্বস্ব হারাবার অনুভুতি হয় । তাড়াতাড়ি আসিফ ভাইয়ের হাত টেনে ধরি । মুখে কিছু বলি না । আসিফ ভাই হাসেন । আহ আমার জগত ভুলানো-নাড়ানো সেই হাসি ।
রিয়াজ
সেদিন বারীর চায়ের দোকানে গিয়ে দেখি সেতু একা ।
“কি মুখ ভোতা কইরা আছস কেনো ?” আমি কাছে যেতেই সেতু বলে ।
-কই নাতো । আমি এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি ।
“না হইলেই ভালো । শোন তুইতো কবিতা লিখস-বুঝস । শোন আমি একটা কবিতা লিখছি ...
শালী হলো বিউটি বউ হলো ডিউটি
শালী হলো পেনশন বউ হলো টেনশন ...
কিরে মুখটা এখনও তোম্বা কইরা রাখছস । তোর হইছেটা কি ?” সেতু ওর মজার কবিতা থামিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে ।
অতএব আমি বলি । এমনিতেও ভেবেছিলাম সেতুকেই বলব । ও এমনিতে সারাক্ষণ মজা করলেও ঐ মনে হয় আমাকে একটু বুঝতে পারে ।
“শেষ পর্যন্ত তুইও ।“ বেশ অবাক হয় সেতু । আমি সামান্য লজ্জা পাই কিছু বলি না ।
“ঠিক আছে একটা কিছু করা যাবে । এখন পুরা কবিতাটা শোন ।
শালী হলো বিউটি বউ হলো ডিউটি...”