- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 115
- Messages
- 1,101
- Reaction score
- 134
- Points
- 1,213
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****অপরাজেয় জীবন*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
“একাই যে দুই সিট নিয়া বইসা আছেন । একটু চাইপা বসেন না ।“
-আপনার গতরতো চিমসানোই । চেষ্টা করেন । এতটুকু জায়গার মধ্যেই বসতে পারবেন ।
দুই বয়স্কা মহিলার এই ধরনের ঝগড়া শুনে আমি বেশ চমকে যাই । পরিবেশটা বলি । আপনিও চমকাবেন । ঢাকার এক স্বনামধন্য হাসপাতাল । ইচ্ছা করেই নামটা বলছি না । বললেই এই হাসপাতাল সম্বন্ধে কিছু কেচ্ছা কাহিনী আপনার মনে পড়বে । আমি তা চাই না । তাছাড়া আমার এই গল্পের জন্য হাসপাতালের নাম একটা অপ্রয়োজনীয় বাহুল্য । ৬০ বছরের বৃদ্ধার প্রেগনেন্সী টেস্টের মতই বাহুল্য । ( এই হাসপাতালের এক ডাক্তার নাকি এক বৃদ্ধাকে সত্যি সত্যি এই টেস্ট দিয়েছেন । পরে জিজ্ঞেস করাতে মধুর হেসে বলেছেন ‘আপনাকেতো দেখতে অনেক অনেক ইয়ং লাগে’ । হাসপাতালের চকচকে পালিশ করা টাইলসের মত ডাক্তারদের রসবোধও বেশ পালিশ করা । মানতেই হবে...)
যাহোক মূল কথায় ফিরি । হাসপাতালের হেমোডায়ালাইসিস বিভাগ । যাদের কিডনী একেবারেই কাজ করছে না বা অল্প কাজ করছে তারাই এখানকার রুগী । মাকে নিয়ে আমি প্রথমবার এসেছি । মনটা খুব বিষণ্ণ । ভেবেছি জীবনের গোধুলিবেলায় দাড়ানো কিছু মানুষ দেখবো এখানে । আসার মিনিট দুই পরেই এরকম একটা ঝগড়া দেখছি । অবাক না হয়ে উপায় কি ?
ডায়ালিসিস শেষ হতে একজন রুগীর কমপক্ষে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে । ভিতরে এক গ্রুপের ডায়ালিসিস চলছে । আমরা বাইরে বেশ কয়েকজন রুগী আত্মীয়-স্বজন সহ অপেক্ষা করছি । দুই বৃদ্ধার ঝগড়া কিভাবে যেনো খুব অল্পতেই শেষ হয়ে যায় । আমি ফাঁকা এক কোনায় দাড়াই । একটু পরেই সুবেশী সুদর্শন এক যুবক হুইল চেয়ারে করে এক বয়স্ক লোককে এনে আমার পাশে রাখে । হুইল চেয়ার মানেই যে রুগীর হাটার সমস্যা তা কিন্তু না । এর মাঝেই তা জেনে গেছি । সুদর্শন যুবক একটু সময় মোবাইল টিপাটিপি করে কোথায় যেনো চলে গেলো ।
“কি করো ?” বয়স্ক ভদ্রলোক ব্যক্তিত্বপূর্ণ গলায় জিজ্ঞেস করেন ।
-জ্বি আমাকে বলছেন । আমি নিশ্চিত হবার চেষ্টা করি ।
“আশে পাশেতো আর কোনো আদম সন্তান নাই । আজকালকার ছেলেরা এত ফালতু কথা বলে ।“ যদিও আমি আজকালকার ছেলে বলতে যে গোষ্ঠীকে বোঝায় তার দলভুক্ত না তাও একটু লজ্জা পেলাম । সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিলাম ।
“কত বছর পরে দেশে আসলে ?” ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করেন ।
-দুই বছর ।
“কেমন দেখছো ?”
-ভালো, বেশ ভালো । নতুন ফ্লাইওভার দেখছি । নতুন মার্কেট । লোকজনের হাতে মনে হয় টাকা পয়সাও আছে । সবকিছু মিলিয়ে মানুষ আগের চাইতে ভালো আছে । আমি উত্তর দেই ।
“হুমম দেশটা গত বিশ ত্রিশ বছরে অনেক উন্নতি করেছে । শুধু কয়েকটা জায়গা ঠিক করতে পারলে আরো উন্নতি হোতো ।“
-হ্যা মনে হয় দুর্নীতি কমাতে পারলে আরো ভালো হোতো । আমি যোগ করি ।
“দুর্নীতি কোনো বড় সমস্যা না । বড় সমস্যা হলো তোমরা ।“
-মানে কি? । আমি থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করি ।
“রাগ কোরো না । তোমাদের মত প্রবাসীরা আসলে দেশের একটা বড় সমস্যা । সৌদী আরব, কুয়েত, আমিরাতের রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া প্রবাসীরা দেশের অমুল্য সম্পদ । কিন্তু তোমার মত অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার প্রবাসীরা দেশের বিরাট ক্ষতি করছে ।“ ভদ্রলোকের কথায় আমি আরো হকচকিয়ে যাই ।
“তোমার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তুমি মানতে পারছো না । যুক্তি দিয়ে বোঝাই তাহলে ।“ ভদ্রলোক শুরু করেন ।
“ধরো তুমি এক কোটি টাকা ঘুষ খেলে । ঐ টাকা দিয়ে কি করবে ?”
-হয়তো জমি কিংবা ফ্ল্যাট কিনবো । আমি ছোট করে উত্তর দেই ।
“হ্যা ফ্লাট কিনবে । তার মানে ঐ ফ্ল্যাট বানাবার জন্য কিছু লোকের কাজ হবে । তারপর ধরো এক হাজার কোটি টাকা ঘুষ খেলে । তখন কি করবে ?“ আমি ভেবে পাই না হাজার কোটি টাকা দিয়ে কি করা যায় । চুপ করে থাকি ।
“টাকাতো আর চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যায় না । তাই যুক্তি বলে তুমি কল কারখানা করবে । সেখানেও লোকজন কাজ করবে । তারমানে যত টাকাই চুরি করো টাকাটা যদি দেশের মধ্যে থাকে তাহলে দেশের উপকার হবেই । ঠিক কি না ?“ যেনো মোক্ষম একটা যুক্তি দিয়েছেন এমনভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন । আমি কিছু বলি না ।
“শোনো কলেজে ইতিহাস পড়ালেও আমার প্রিয় বিষয় অর্থনীতি । দেশে যদি অনেক চোর থাকতো তবে এই চোররাই মিলে দেশের আইন শৃঙ্খলাও ঠিক করে ফেলতো । সমস্যা হচ্ছে সব বড় চোররাই লন্ডন আমেরিকাতে পুজি পাচার করে দিচ্ছে । তাই বলেছি তোমরা না থাকলে দেশের আরো কয়েকগুন উন্নতি হোতো । তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলছি না ।“ শেষ কথাটা সান্ত্বনার মত শোনায় ।
‘ঐতিহাসিক’ অর্থনীতিবিদের কথা শুনে আমার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না । ছয় বছর আগে অপারেশন করে পিত্তথলি ফেলে দেওয়া হয়েছে । তখন কথায় কথায় রেগে যেতাম । অন্তত ঘরের মানুষ তাই বলতো । বলতাম রাগ ক্ষোভ ঘৃণা জমাবার জন্যতো আমার পিত্তথলি নাই । তাই সাথে সাথে উগড়ে দেই । এখন মনে হচ্ছে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা তৈরীই হচ্ছে না । পিত্তথলি না থাকার কারনেই কিনা কে জানে ।
এসব ভাবতে ভাবতেই আমাদের ডাক পরে । ডায়ালাইসিস রুমে । অনেকগুলো বেড সারি করে রাখা । প্রতিটা বেডের পাশে একটা করে মেসিন । মাকে ১৪ নম্বর বেডে দেওয়া হলো । পাশের বেডে এক বৃদ্ধের ডায়ালাইসিস চলছে । পাশে অল্প বয়সী এক মেয়ে । মুখ চোখ বাকা করে একের পর এক সেলফি তুলে যাচ্ছে ।
“তুই কি সারাক্ষণ মোবাইল টেপার জন্য এখানে এসেছিস ।“ বৃদ্ধের কথা শুনতে পাই ।
-কাম অন দাদু আমিতো তোমাকে এটেন্ড করছি । নাতনী ঠোঁট বাকিয়ে উত্তর দেয় ।
“তুইতো আমাকে না মোবাইলকে এটেন্ড করছিস । যা জিজ্ঞেস করে আয় খাবার কখন দিবে । “
ডায়ালাইসিস, রোগীর শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় বস্তুও বের করে দেয় । তাই এই সময়ে রোগী যত বেশী খেতে পারে তত ভালো । হাসপাতাল থেকে তাই খাবার দেওয়া হয় । তবে অধিকাংশ রোগী বাসা থেকেও খাবার নিয়ে আসেন । নাতনী উচ্ছল পায়ে খাবারের খবর আনতে চলে গেলো । এর মাঝে মায়েরও ডায়ালাইসিস শুরু হয়েছে । মাথার পাশে বসে টুকটাক কথা বলছি । আশপাশটাও দেখছি । মেঝে দেয়াল যথেষ্ট পরিষ্কার । মোটামুটি সবাই কাপড়ের জুতা কাভার পরে আছেন । ডাক্তার বিশেষ করে নার্সরা যথেষ্ট আন্তরিক । ভালো লাগে দেখতে । আরো কিছুক্ষণ পরে ছোটবোন আসলে একটু এদিক সেদিক হাটি । বেডে শোয়া এক তরুণকে দেখতে পাই । একটু আশ্চর্য হই । আমার ধারনা ছিলো এই রোগটা শুধুমাত্র বয়স্কদের । পরে অবশ্য এই তরুণের চাইতেও কম বয়সী রোগী দেখেছি ।
সপ্তাহে দুইবার যেতে হোতো ঐ হাসপাতালে । শনিবার আর বুধবার । শনিবার যাবার পরে বুধবার যাওয়া হয় নাই অন্য একটা কাজে । পরের শনিবার আবার গেলাম । এবার তেমন অপেক্ষা করতে হলো না । মায়ের ডায়ালিসিস শুরু হবার বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখি এক বৃদ্ধা একা একাই পাশের বেডে আসলো । একটু অবাক হলাম । এখানে খুব কম সংখ্যক লোকই একা আসে । যারা আসে তাদের বয়স বেশ কম । মায়ের তখন মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে । আমি মায়ের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে । মাথা টিপে একটু আরাম দেবার চেষ্টা করছি ।
“বাজান, কে হয় তোমার ?” পাশের বেড থেকে বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করেন । আন্তরিক উচ্চারনে গ্রামের সরলতা পাওয়া যায় ।
-মা । আমি ছোট করে উত্তর দেই ।
“ এতগুলা রোগী । দেখো সবার সাথেই ছেলে মেয়ে কেউ না কেউ আছে । আমার কপাল দেখো । এইখানে মইরা পইরা থাকলেও কেউ নিতে আসবে না ।“ আক্ষেপের সুরে বলেন বৃদ্ধা । মায়ের তখন ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করা হচ্ছে । বৃদ্ধার কথার চাইতে সেদিকেই বেশী মনোযোগ দেই ।
কিছুটা সময় যায় ।
“বাজান টিসু বক্সটা একটু দিবা ।“ বৃদ্ধা নরম গলায় বলেন । আমি নিঃশব্দে এগিয়ে দেই ।
“কত কষ্ট কইরা পোলা দুইটারে মানুষ করলাম । বড় পোলা বিরাট অফিসার । ছোটটাকে জমি জিরাত বিক্রি কইরা বিদেশ পাঠাইলাম । সে কোনো খোজই নেয় না । “
-আপনি হাসপাতালেও কি একা এসেছেন ? আমি জিজ্ঞেস করি ।
“নাহ বড়টা নামাইয়া দিয়া গেছে । আসলে কি জানো পোলা আমার তত খারাপ না । বউটা খারাপ । বাগেরহাটের মাইয়া । জানো না এরা কেমন হয় । তার উপর আবার চাকরী করে । দেমাগে মাটিতে পা পড়ে না । আরে আমি কি ফকিন্নির ঝি নাকি ? আমার বাপের দেড়শ কানি জমি ছিলো । আমার লগে দেমাগ দেখাস । তোমারে বউএর কিচ্ছা কই । স্যুপ এর বাটিটা একটু কাছে আইনা দেও ।“ আমি দেই । মাকেও একটা চিকেন খাওয়াতে চেষ্টা করি । মা খেতে চায় না । একটু জোর করাতে খায় কিছুটা ।
“শোনো আমারে পাঁচশ টাকার একটা শাড়ী দিয়াও বউ বলবে ‘আমার টাকা দিয়া কিনা দিলাম আম্মা’ । তোরে কে কিনা দিতা বলছে । আমার পোলার টাকা নিয়া যে নিজের বোনের বিয়াতে দুই ভরি গয়না দিলি আমি কিছু বলছি । আরো কাহিনী আছে । দাড়াও খাওনটা একটু শেষ কইরা বলতাছি ।“ মায়ের ডায়ালাইসিস ততক্ষণে শেষ হয় । বৃদ্ধার কাহিনী না শুনেই চলে আসি...আসতে হয় ।
এর পরেও নিয়মিত যাই । অধিকাংশ রোগী একে অপরকে চেনে । একান্ত আপনজনের মত খোজ খবর নেয় । ‘ঐ দুধটা খেয়ে দেখতে আরেন এল্বুমিন বাড়বে ।‘ একজন আর একজনকে উপদেশ দেয় । ‘আন্টি আপনিতো কিছুই খাচ্ছেন না । না খাইলে কিন্তু কষ্ট হবে ।‘ নার্সরাও খুব আন্তরিকতার সাথে বলে । দেখে খুব ভালো লাগে ।
আবার এক শনিবার সেই ইতিহাসের অধ্যাপকের সাথে দেখা হয় । আমরা ঢুকছি আর উনার প্রায় শেষ ।
“কবে ফিরছো ?” সেই ব্যক্তিত্বপুর্ন গলায় জিজ্ঞেস করেন ।
-আছি আরো তিন সপ্তাহ ।
“আমি এখানে আর আসছি না । “
-কোথায় ডায়ালাইসিস করাবেন ? আমি জিজ্ঞেস করি ।
“বাবা এদেশে আর চিকিৎসা করাতে চাচ্ছেন না । ভাইয়া কানাডা থাকে । হেলথ ইন্সুরেন্স এর টাকাটা বাবা যোগাড় করে ফেলেছেন । বাবা পরশুদিন কানাডা চলে যাচ্ছে । “ পাশে দাঁড়ানো সুদর্শন যুবক জবাব দেয় ।
“এদেশে কোনো চিকিৎসা আছে নাকি ? ডাক্তার নার্স সব কসাই । কানাডাতে টাকা পাঠাইয়া দিছি । আমার জন্য দোয়া কোরো ।“ ভদ্রলোক বলেন ।
কয়েকটা কথা জিহ্বার ডগায় চলে এসেছিলো । শেষ মুহূর্তে কোত করে গিলে ফেললাম । শুভকামনা জানিয়েই বিদায় জানালাম ‘ঐতিহাসিক’ অর্থনীতিবিদকে ।
পরের বুধবার সেই বৃদ্ধাকে দেখি । এবারও মায়ের পাশের বেডে । পায়ের কাছে বসা এক যুবককেও দেখি । একমনে পা টিপে যাচ্ছেন ।
-কেমন আছেন খালাম্মা ? আমি জিজ্ঞেস করি । কোনো কারণে বৃদ্ধা ঠিকমতো চিনতে পারেন না । আমিও আর কিছু জিজ্ঞেস করি না । বেশ কিছুক্ষণ পরে বাইরে টয়লেটের সামনে ঐ যুবকের সাথে দেখা হয় ।
“মায়ের সাথে কি আপনার কথা হয়েছে ? “ যুবক আমাকে জিজ্ঞেস করে ।
-জ্বি । আজকের মতই আর একদিন উনি আমার মায়ের পাশের বেডে ছিলেন । আমি উত্তর দেই ।
“অনেক কথা বলেছে নিশ্চয় । “
-না মানে ।
“আরে ভাই আপনি লজ্জা পাচ্ছেন কেনো । এখানের অনেকেই জানে । “
-কি জানে ?
“ আমার মাকে । ভাই আমার চেহারা সুরাত দেইখা বুঝতে পারছেন না এই হাসপাতালের খরচ দেওয়া আমাদের জন্য কত কঠিন । মাঝে মাঝে তাই ডায়ালিসিস মিস হইয়া যায় । তখন মায় উল্টা পাল্টা গল্প বলে । জনে জনে ধইরা বলে । ডাক্তার কয় শরীরে বিষ বাইরা গেলে মানুষ নাকি এরকম করতে পারে । “
-তাই নাকি ?
“জ্বি । আমি ছোট চাকরী করি । মায়ের খরচের জন্য এখন আরো একটা কাজ করি । বউও ছোট চাকরী করে । বউ কিন্তু মায়ের ছোট বোনের মেয়ে । ছোট ভাই মালয়েশিয়ায় আছে । দেশে আসতে পারে না খরচের ভয়ে । ওরে বিয়া দেওয়া দরকার । কিন্তু মায়ের চিকিৎসার যা খরচ । অনেকেই বলে গন স্বাস্থ্যে যাইতে । খরচ অনেক কম । আমার মন সায় দেয় না ভাই । মা তো । চলেন ভিতরে যাই ।“
ভিতরে আসি । মাকে জোর করে ডিম খাওয়াই , ফ্রাইড রাইস খাওয়াই । পাশের বেডের যুবকও তারে মাকে খাওয়ানোতে ব্যস্ত । একটু পরেই দেখি তিন চার বছরের ফুটফুটে একটা মেয়ে নিয়ে এক অল্প বয়সী বউ এসেছে পাশের বেডের কাছে । কেউ না বললেও সম্পর্কটা বুঝতে পারি । যুবক আমার দিকে তাকিয়ে হেসে নিচু গলায় বলে “এইবার মজা দেইখেন ।“
“দাদু আমি আসছি ।“ মিষ্টি রিনরিনে গলায় বলে মেয়েটা । বৃদ্ধা চোখ মেলে তাকিয়েই পান খাওয়া লাল দাত বের করে হেসে ওঠে ।
“আমার যাদু আইছো । আমার সোনা আইছো । “ বলেই শুয়েই প্রায় জড়িয়ে ধরেন শিশুটিকে ।
“ঐ বেটি তোমার কি এই জীবনে আক্কেল হইবো না । এত সুন্দর মেয়েকে কেউ কি কাজল না দিয়া রাস্তায় বের করে । কাজলের কৌটা আনছো ?”
‘জ্বি মা আনছি । ‘ বউটা মুখ টিপে হেসে উত্তর দেয় ।
“বাইর করো । আমিই দিয়া দেই । “ অনেকদিন পরে রুপার কাজলদানি দেখি । বৃদ্ধা খুব যত্ন করে শিশুটির কপালে একটা বড় কালো টিপ দিয়ে দেন । কালো টিপে শিশুটিকে ছোট্ট পরীর মত সুন্দর লাগে ।
“হারামজাদা ভালো কইরা পা টিপ । তোরা যতই চেষ্টা করস নাতনির বিয়া না দিয়া আমি মরতাম না । তগো কোনো বিশ্বাস আছে । গজগজ করতে থাকেন বৃদ্ধা ।“ পায়ের কাছে বসে যুবক অন্য ভুবনের হাসি নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পা টিপতে থাকে ।
পুনশ্চঃ এই নিয়ে পাঁচ রাত । কোনোভাবেই ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না । ভাবলাম অন্য দিকে মন ঘোরাবার জন্য হলেও একটা গল্প লিখি । ভেবেছিলাম হাসির কিছু একটা লিখবো । নিজের অজান্তেই দেখি এই গল্প লেখা শুরু করেছি । খুব চেষ্টা করেছি ব্যক্তিগত আবেগকে না প্রকাশ করতে । গল্পটা শেষ করে দেখি স্ক্রীন কি-বোর্ড সব ঝাপসা লাগছে । এই হাতে যে এখনও মায়ের কপালের ছোয়া ...হায় । প্রিয় পাঠক, গল্প ভালো লাগুক আর না লাগুক আমার মায়ের বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করবেন দয়া করে ।