অন্যভুবনের সাথী

dukhopakhi

Well-Known Member
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
115
Messages
1,101
Reaction score
134
Points
1,213
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
*****অন্যভুবনের সাথী*****

মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু






দিনটা খুব ব্যস্ত গেছে জুইয়ের । অনেককিছু গোছানোর ছিলো । এত ব্যস্ততার পরে বাসায় ফিরে তড়িঘড়ি গোসল করেই খাবার টেবিলে । মায়ের কড়া নির্দেশ একমাত্র অসুস্থ না হলে সবাইকে সন্ধ্যা সাতটায় খাবার টেবিলে থাকতেই হবে । সবাই বলতে মা বাবা আর সে নিজে । অল্প বয়সে মাঝে মাঝে নিয়মটাকে অত্যাচার মনে হোতো । কিন্তু এখন বেশ উপভোগ করে এই পারিবারিক রাতের খাবার । বাবার মজার মজার গল্প-কৌতুক, নিজের সারাদিনের কাহিনী, মায়ের কপট ঝগড়া এসব করতে করতে প্রায়ই খাবার টেবিলে ঘণ্টাখানিক সময় যায় ...চমৎকার সময় । আজকে খাবার টেবিলে মায়ের মুখটা বেশ মলিন লাগে ...

‘কি ব্যাপার মন খারাপ কেনো ?’ বাবা জিজ্ঞেস করেন ।
“অফিসের নতুন ম্যানেজার আবারো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন ।“ মা উত্তর দেয় ।
‘কি হয়েছিলো ?’
“আরে আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে জো-জোর নতুন গানটা শুনছিলাম । উনি মনে হয় কয়েকবার ইন্টারকমে কল দিয়েছিলেন । আমি শুনতে পারি নাই । উনি আমার ডেস্কের সামনে এসে সবার সামনেই বললেন – ‘অফিসতো গান শোনার জায়গা না’ । বলো কেমন লাগে?“ মায়ের কথা শুনে জুইয়ের মনে হয় ম্যানেজারতো অন্যায় কিছু বলেন নাই । কিন্তু এটা বলা ঠিক হবে না । তাই চুপ থাকে ।
‘তোমাদের নতুন ম্যানেজার একটু বাড়াবাড়ি করছে । তাছাড়া তোমার ডিপার্টমেন্টে তোমার পারফর্মেন্স সবচাইতে ভালো ।‘ বাবা খুব সহানুভুতির স্বরে বলেন ।
“তাইতো ভাবছি হায়ার ম্যানেজমেন্টের কাছে বলবো কিনা ?”
‘এখনই বোলো না । তাছাড়া এখন এসব নিয়ে আমাদের ভাবার সময় কোথায় । জুই মামনির তিন সপ্তাহ পরে বিয়ে । এত এত ভাগ্যবান আমরা ।‘ সাথে সাথে আলাপের মোড় ঘুরে যায় । বাবাটা সব সময়ই কি চমৎকারভাবে পরিবেশটা ঠিক করে দেয় । মনে মনে বাবাকে একটা ধন্যবাদ দেয় জুই ।

গত বেশ কিছুদিন ধরে সে যে অসম্ভব ভাগ্যবতী সেই কথাটা হাজারবার শুনেছে জুই । সবচাইতে বেশী বলে তার বন্ধু এলিনা ...
“তুই হইলি আমাদের মাঝে সব চাইতে গাধী । তোর নামটাও কেমন মান্ধাতা আমলের । তোর তেমন কোনো গুনও নাই । আর তোর কপালেই এমন জুটলো ...” গলায় অনেকখানি ঈর্ষা নিয়ে বলে এলিনা । এই ঈর্ষাটুকু খুব ভালো লাগে জুইয়ের । টের পায় অন্য বন্ধুরাও একইরকম ঈর্ষান্বিত । কিন্তু এলিনার মত প্রকাশ করে না । জুই নিজেও রোমাঞ্চিত । কিন্তু কোথায় যেনো প্রবল শংকাও আছে । কি জানি কি হয়...
“জুই, সর্বনাশ হয়ে গেছে ।“ মায়ের চিৎকারে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে জুইয়ের । দৌড়ে মায়ের রুমে যায় জুই ।
-কি হয়েছে মা ? প্রবল আতংক নিয়ে জিজ্ঞেস করে জুই ।
“দেখ কি টকটকে লাল তোর বিয়ের ড্রেস । এটা পড়লেতো তোকে রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের মত লাগবে । অথচ অর্ডার শীটে পরিষ্কার এটাই বলা হয়েছে । বুঝতে পারছি না এত বড় ভুল কিভাবে হলো । এখনতো নতুন করে সব কিছু করার সময়ও নাই ।“ শুনে চুপ করে থাকে জুই । কাজটা আসলে জুঁইয়েরই । এই ড্রেসটাই পছন্দ ছিলো জুঁইয়ের । কিন্তু মার আবার এটা পছন্দ ছিলো না । বাবার পছন্দ আবার সব সময়ই মায়ের সাথে একদম মিলে যায় । তাই অর্ডার করার সময় জুই কিছু বলতে পারে নাই । কিন্তু পরে বদল করে দিয়েছে । ভয়ে মাকে জানায় নাই ।
-থাক না মা । এখন আর বদল করার দরকার নাই । তোমার ড্রেসটা ঠিকমতো এসেছে তো ?
“ভালো কথা মনে করেছিস । ঐটাতো খুলিই নাই ।“ এরপর মায়ের বাক্সটা খোলা হলো । সেখানে বোতাম ডার্ক পিঙ্ক এর বদলে লাইট পিঙ্ক এর মতো মহা ভুল বের হলো । সেই নিয়েই মা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গেলেন । জুই হাফ ছেড়ে বাচলো ।

বিয়ের সপ্তাহখানেক আগেই বাবা সব কিছু ম্যানেজ করে ফেললেন । মানে যেখানে যতটুকু ত্রুটি ছিলো । সবকিছুই মায়ের পছন্দমতো হলো । এমনকি বাবা নিজের যে স্যুটটা বানালেন সেটাও মায়ের ভীষণ পছন্দ হলো । বাবা সবসময়ই এমন । তাইতো বাবাকে ভীষণ ভালো লাগে জুইয়ের । বিয়েরদিন সবশেষে জুই যখন বিদায় নেবে মা তখন ভীষণ কান্না করছে ... জুইয়েরও মন ভীষণ ভীষণ খারাপ, বাবা তখন জুইকে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো ‘কিছু ভাবিস না জুই । আমি তোর মায়ের যত্ন নেবো । আমরা ভালো থাকবো ।‘ ঠিক ঐসময়ে যেনো এই কথাগুলোই শুনতে চেয়েছিলো জুই । বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মনটা ভরে গেলো জুইয়ের ।

বাসররাতে ঘরে ঢুকেই ভয়ে বিকট চিৎকার করে জুই । বিছানার পাশের টেবিলে একটা তেলাপোকা দেখে । কারো বাসায় যে ঐ পোকা থাকতে পারে সে ধারনাই ছিলো না জুইয়ের ।
-প্লিজ জহীর ওটাকে মারো ।
“ওটাতো তোমার কোনো ক্ষতি করছে না । থাকুক না বেটা আমাদের বাসর রাতের সাক্ষী হয়ে ।“ হাসতে হাসতে বলে জহীর । শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না জুই । কোনো স্বাভাবিক মানুষ কি এই কথা বলতে পারে ।
-প্লিজ মারো । দেখো আমার হাত কেমন কাপছে ভয়ে । অনুনয়ের স্বরে বলে জুই ।
“তাইতো দেখছি । তবে বেটাকে মারতে পারবো না । এখন মারতে গেলেই বেটা বলবে ‘কাপুরুষ কোথাকার । আমি জানি তুই হিংসা কইরা আমাকে মারতাছিস । কারন তোর বউ আমারে ডরায় । তোরে না ।‘ “ বলে নিজের রসিকতায় নিজেই শিশুর মত হাসে জহীর । তারপর জানালা খুলে অনেক কষ্টে বিদায় করে তেলাপোকাটাকে । তারপর বিছানায় বসতে বসতে বলে তোমাকে আর একটা জোকস বলি জুই ..
মফিজ গেছে ডাক্তারের কাছে । তো লাইনে দাঁড়িয়ে আছে । কিছুক্ষণ পর এক লোক চেম্বার থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলো-
আপনি কাঁদছেন কেন ? মফিজ জিজ্ঞেস করলো
ডাক্তারটা অনেক হারামি । সে বলল হাতের রক্ত টেস্ট করবে । এই বলে হাতের আঙ্গুলটাই কেটে ফেললো ।
মফিজ কথা শুনে দিলো এক দৌড় । পেছন থেকে ওই লোক বলল - আপনি দৌড়াচ্ছেন কেন?
আমিতো পেসাব পরীক্ষা করতে এসেছি । ডাক্তার যদি ...মফিজ দৌড়াতে দৌড়াতেই উত্তর দিলো । বলতে বলতে নিজের কৌতুকে নিজেই শিশুর মত হাসতে থাকে জহীর । কৌতুকটা ভালো না লাগলেও জহীরের হাসিটা সুন্দর লাগে জুইয়ের ।

পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেই জুই দেখে জহীর বিচিত্র ভঙ্গীতে ঘুমিয়ে আছে । মাথা , শরীর, হাত পা নিয়ে কেমন একটা ষড়ভুজ তৈরী হয়েছে । ঘুমন্ত মুখটা কেমন বাচ্চা ছেলের মত । মায়াময় মুখ । কিন্তু বালিশে চোখ যেতেই কেমন অস্বস্তি হলো জুইয়ের । মুখের লালায় মনে হয় বালিশটা ভিজে গেছে । এমনিতেই একটু বেশী পরিষ্কার পরিছন্নতা পছন্দ করে জুই । অনেকের কাছেই তা শুচিবায়ু রোগ । কপালে জুটলো মুখের লালায় বালিশ ভেজানো স্বামী । হায়রে মহা ভাগ্যবতী । জুই নিজেকেই একটু উপহাস করে ।

কয়েকদিন পরেই এক অনুষ্ঠানে যেতে হলো জুইকে । জহীরসহ । জহীর খুব শখ করে একটা শাড়ী কিনে এনেছিলো । কিন্তু জুই ঐ পোষাকে ভীষণ অনভ্যস্ত । তাই পড়লো না । জহীর মুখে কিছু বললো না । কিন্তু মুখটা কালো করে রাখলো । অনুষ্ঠানে একটু পর জুই যখন বললো - আমার আর ভালো লাগছে না । চলো বাসায় চলো । উত্তরে জহীর নির্বিকারভাবে বললো “আমার ভীষণ ভালো লাগছে । তোমার ভালো না লাগলে একা বাসায় চলে যাও ।“ কেমন কান্না পেয়ে গেলো জুইয়ের । বাবাকে সারাজীবনেও মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে দেখে নাই জুই ।

পরেরদিন সকালেও আরো খারাপ লাগা ঘীরে ধরলো জুইকে । অথচ কারণটা খুব তুচ্ছ । জহীরের পড়ার রুমটা একটু গুছিয়ে দিয়েছে জুই । জহীর অবশ্য নিষেধ করেছিলো । কিন্তু জুই যে চোখের সামনে অগোছালো কিছু দেখতে পারে না । সেটা নিয়েই কড়া কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলো জহীর । একটু পরেই অবশ্য জুইয়ের খুব পছন্দের কফি নিয়ে এসে এমনভাবে গল্প শুরু করলো জহীর যেনো একটু আগে কিছুই হয় নাই ।


এর কয়েকদিন পরেই জুই যখন ঐ শাড়ীটা অনেক কষ্ট করে পরে আর এক অনুষ্ঠানে গেলো সে কি খুশী জহীরের । ছ্যাবলার মত এক বন্ধুকে বললো “আমার বউটা দারুণ সুন্দরী না ?“ একটু বিরক্ত হলো জুই । আবার ভালও লাগলো । একটু পর সবাইকে একটু বাড়ির সামনে মাঠে যেতে বললেন হোস্ট । মাঠটা সামান্য দুরে । এই সামান্য দূরত্বটুকুই অনেক মনে হলো জুইয়ের । উঁচু জুতা নিয়ে শাড়ী সামলে কিভাবে এই অসামান্য দূরত্বটুকু পার হবে সেই টেনশনে পরে গেলো জুই । এমন সময় জহীর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো “হাটতে কষ্ট হবে ।“ জুই মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়ালো । হঠাৎ জহীর জোরে জোরে বললো “আমার বউ এর হেটে যেতে কষ্ট হবে । তাই আমি ওকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি । তোমরা মুখ টিপে হাসো ...ঢং দেখে বাচি না...যা খুশী বলতে কিংবা ভাবতে পারো ।“ বলেই সত্যি সত্যি জুইকে সবার সামনে পাজাকোলা করে নিয়ে হাটতে লাগলো জহীর । লজ্জা আর ভালোলাগাতে শিহরিত হয়ে গেলো জুই ।

আগের কথা –
২৪২৭ সাল । গ্যালাক্সি ৭১ এর ছায়াবীথি নামক এক গ্রহে জুইয়ের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা । পৃথিবীর মানুষ ঠিক পৃথিবীর মত এই গ্রহটার সন্ধান পায় প্রায় তিনশ বছর আগে । এরও কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় মনুষ্য বসতি । আরো দুই দশক পরে কিছু আধাপাগল নেতা পৃথিবীতে শুরু করে দেয় পারমাণবিক যুদ্ধ । ধ্বংস হয়ে যায় পৃথিবীর মানুষ । তবে ধ্বংস হবার আগেই অনেক অনেক মানুষ আসতে পারে ছায়বিথী গ্রহে । আবারো এগিয়ে যায় মানব সভ্যতা । ভিন্ন ভুবনে । কিন্তু কিছুদিন পরেই আবিস্কার হয় এই গ্রহে কোনো বিচিত্র কারনে মানুষের ওয়াই ক্রোমোজম নষ্ট হয়ে যায় । তাই ছায়াবীথি গ্রহে কোনো ছেলে শিশু জন্মগ্রহন করে না ।

ছায়াবীথি গ্রহে শেষ পুরুষ মারা যায় ২১০ বছর আগে । এরপরেও মানব সভ্যতা এগিয়ে যায় । স্পার্ম ব্যাংকতো আছেই । বিজ্ঞানের সাহায্যে তৈরী হয় হিউমানয়েড । অবিকল মানুষের মত । পুরুষ মানুষের মত । প্রতিটা মেয়ে শিশুর জন্মের সাথে সাথে একটা হিউমানয়েড তৈরী করা হয় সঙ্গী হিসাবে । প্রতিটা হিউমানয়েড আবার আলাদা । যেমন প্রতিটা নারী আলাদা । প্রতিটা হিউমানয়েড তৈরী হয় নারীর পছন্দ, অপছন্দ রুচি-অরুচি সব কিছু বিচার করে । এই হিউমানয়েডকে নিয়েই ছায়াবীথির নারীরা সুখে শান্তিতে সংসার করে ।

প্রায় ১০ বছর আগে হঠাৎ আবিস্কার হয় পৃথিবীর বাংলাদেশ নামক স্থানে এখনও একদল মানুষ টিকে আছে । এমনিতেই স্থানটা নদীবিধৌত । নিউক্লিয়ার বিষক্রিয়াতে অনেক অনেক মানুষ মারা গেলেও কিছু টিকে গেলো । আর অন্য স্থানের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি তেজস্ক্রিয়তাও স্বাভাবিক হয়ে গেলো । তবে সেখানে জীবন অনেক পিছিয়ে, টেকনোলজিও তেমন উন্নত হয় নাই । না হওয়ার পিছনে কারন দুইটা । একেতো নিজেদের বাচিয়ে রাখবার জন্যই যুদ্ধ করতে হয়েছে । আর অন্য কারন হলো এখানের মানুষগুলো যেনো একটু কেমন । গান শুনে চোখের পানি ফেলে ...পাখির ডাক শুনে উদাস হয়ে যায় ।

এমনিতেই এদের জনসংখ্যা কম । তাদের মাঝে আবার পুরুষ অনেক বেশী । তাই ছায়াবীথির উন্নত মানুষেরা আর পৃথিবীর মানুষেরা মিলে ঠিক করলো, প্রতিবছর এক হাজার ছায়াবিথীর নারী বিয়ে করতে পারবে পৃথিবীর পুরুষকে । লটারীর মাধ্যমে নারী এবং পুরুষ ঠিক হবে । লটারীটা পৃথিবীতে অতটা সাড়া না ফেললেও ছায়াবীথিতে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে । ছায়াবীথির প্রতিটা তরুণী এখন স্বপ্ন দেখে এই লটারী জেতার । জুই লটারীতে জিতেই পৃথিবীতে এসেছে ।

পরিশিস্ট –
তিন মাস পর । জুই আবার ছায়াবিথীতে এসেছে । বাবা মার কাছে । এটাই নিয়ম । তিনমাস পরে প্রতিটা নারী ছায়াবিথীতে একবার ফিরবে । সে যদি আর পৃথিবীতে ফিরে যেতে না চায় তাহলে তাকে আর যেতে হবে না । ব্যবস্থাটা রাখা হয়েছে এই কারনে যে ছায়াবীথির উন্নত বলতে গেলে প্রায় নির্ভুল সমাজ থেকে একজনের পৃথিবীর হাজারো সমস্যাবহুল, জটিল মানুষের সমাজে খাপ খাওয়ানো কঠিন হতে পারে । তবে গত দশ বছরে একজনও ছায়াবীথিতে থেকে যায় নাই ।

জুইয়ের সব বন্ধুরা এসেছে । জুই নিজের পারসোনাল ভিডিও ডায়েরীটা অন করলো । পর্দা জুড়ে পৃথিবীর ছবি আসলো । কি অদ্ভুত সবুজ, মাঝে আকাবাকা নদী । কি সুন্দর । এরপরে সবাই দেখলো জহীরের বাড়ি । বাসর রাতের খুনশুটি, পরের ঝগড়া । জুই খেয়াল করলো সবার চোখ কেমন স্বপ্নাতুর । অনুষ্ঠানে জহীর যখন জুইকে পাজাকোলা করে তুলছে তখন এলিনা শব্দ করেই কেদে বলতে লাগলো – ইসশ কি সুন্দর ...কি মিষ্টি । বাকি সবার চোখের কোনায়ও জল চকচক করতে লাগলো ।


ভিডিও ডায়েরীটা অফ করলো জুই ।
“এটা কি ?” সামনের একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে বললো এলিনা ।
-জহীরের উপহার । ইচ্ছা করে খুলি নাই । ভাবলাম তোদের সবার সামনে খুলবো । জুই উত্তর দেয় । সবাই হৈ হৈ করে উঠে । ধীরে ধীরে প্যাকেটটা খোলে জুই । ভেবেছিলো নিশ্চয় কোনো দামী গয়না হবে । কিন্তু ভিতর থেকে বের হলো কয়েকটা জুই ফুল আর একটা চিঠি । মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো জুইয়ের ।
“ইসশশ হাতে লেখা চিঠি । আমি জীবনেও হাতে লেখা চিঠি দেখি নাই । তাড়াতাড়ি খুলে পড় ।“ এলিনা অস্থির হয়ে যায় । চিঠিটা খুলতেই হয় জুইয়ের । গোটা গোটা অক্ষরে খুব ছোট চিঠি ...

অতিপ্রিয় জুই,
কথাটা কি ঠিক হলো । জুইতো আমার প্রিয় হতে পারে না । জুই কেনো কোনো ফুলই আমার প্রিয় হতে পারে না । তুমিতো জানোই ফুলে আমার ভীষণ এলার্জি আছে । তুমি যাবার সময় জিজ্ঞেস করেছিলে আমার মুখটা একটু ফোলা ফোলা কেনো । তখন বলি নাই । কারণটা হলো তোমার জন্য নিজের হাতে এই জুই ফুল তুলতে বাগানে গিয়েছিলাম । দেরী করে গিয়েছি কারন ফোলাটা যাতে বেশী বোঝা না যায় । ইচ্ছা করলে অন্য কাউকে দিয়ে ফুলগুলো আনাতে পারতাম । কিন্তু এই কষ্টটুকু পেতে যে খুব ভালো লাগলো আমার ।

তুমি এত সুন্দর আবার এত আহ্লাদী, এত গোছালো... বিরক্তিকর, এত মিষ্টি আবার এত একগুয়ে । মিঠু নামে আমার এক কবি বন্ধু আছে । ওর কাছে থেকে একটা কবিতা লিখে এনেছিলাম তোমার এই চিঠিতে লিখবো বলে । কিযে একটা সুন্দর কবিতা লিখেছে ও । কিন্তু তোমার এই চিঠিতে লিখতে ইচ্ছে হলো না । আমি একজন খুতবহুল পৃথিবীর পুরুষ । কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা নিখাদ, নিখুত রাখতে চাই । তাই...

তাড়াতাড়ি ফিরে আসো প্রিয় । অপেক্ষায় আছি ।

নিজের অজান্তেই এবার জুইয়ের চোখেও জল চিকচিক করে । অন্যভুবনের সাথীর জন্য ।
 
Back
Top