- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 115
- Messages
- 1,101
- Reaction score
- 134
- Points
- 1,213
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****চক্র*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
সকালে অফিসে ঢুকেই একটু বাড়তি উত্তেজনা টের পায় সোহেল । পাশের টেবিলের সহকর্মী রাশেদকে জিজ্ঞাসা করতেই বলে ‘কোন দুনিয়ায় থাকেন ভাই । কালকে ব্রিজ ভাইঙ্গা পড়ছে । ৭ জন নিহত । সারারাত ধইরা সব চ্যানেলেইতো এই খবর । একটু পর নাকি মন্ত্রী আইবো । ‘ ইদানীং খেলা ছাড়া টিভি দেখাই হয় না সোহেলের । দেখার মত কিছু আছে বলেও মনে হয় না । ত্রিশ মিনিটের বিজ্ঞাপন সহ্য করে ২৫ মিনিটের একটা নাটক দেখা । তাও যদি সেরকম মানের হোতো । কিছুদিন মধ্যরাতে টক শো দেখেছে । প্রথমদিকে ভালোই লাগতো । পরে দেখে সব জ্ঞানী দলকানা গাধার দলের চিল্লাচিল্লি । রাত জেগে দেখার কোনো মানেই হয় না । তাই নিজের অফিসেরই এতবড় খবরের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানতে পারে নাই সোহেল । তবে ব্যাপার নতুন না । আগেও এরকম হয়েছে । এখন কি হবে জানে সোহেল । তদন্ত কমিটি হবে । সব দোষ হবে ঠিকাদার কোম্পানির । ঠিকাদার কোম্পানি কালো তালিকাভুক্ত হবে । আর ঠিকাদার কোম্পানির মালিক নতুন কোম্পানি খুলে আবার ভেঙ্গে যাওয়া ব্রিজ মেরামতের কাজ করবে । একই চিত্রনাট্য । মাঝে মাঝে শুধু কুশীলব বদল হয় ।
অফিসের চেয়ারে বসার কিছুক্ষণ পরেই হাশেম সাহেবকে আসতে দেখে খুশী হয় সোহেল । ঠিকাদারি ব্যবসায় নতুন এসেছে হাশেম সাহেব । এরাই সোহেলের মত সামান্য একাউন্টস ক্লার্ককে কিছু খাতির যত্ন করে । কিছুদিন পরেই এদের আর পাত্তাই পাওয়া যায় না । চেক নিয়ে যায় অফিসের কর্মচারী । সেইসব কর্মচারীদের ভাবও থাকে আলাদা । ‘তাড়াতাড়ি চেকটা দেনতো । ব্যাঙ্কে জমা দিয়েই সাইটে যাইতে হবে ।‘ এমনভাবে বলে যে সোহেলও যেনো তার কর্মচারী । সূর্যের চাইতে বালির গরম বেশীই থাকে । তাই বেশী কথা না বলে চেক দিয়ে দেয় ...দিতে হয় । তবে সময় এবং নিয়মমতো টাকাটা ঠিকই পেয়ে যায় সোহেল । অন্য সবার মত ।
‘ভাই উপর থেকে বললো বিল নাকি একাউণ্টসে চইলা আসছে । বিলটা একটু তাড়াতাড়ি দরকার । নাইলে পরের কাজটা ধরতে পারছি না ।‘ হাশেম সাহেব মৃদু কন্ঠে বলেন ।
‘ভাই উপরের লোকতো বিল ছাইরাই বাঁচে । তাদেরতো আর অডিটের ঝামেলা সামলাইতে হয় না । সরকারী টাকা কত যায়গায় কত প্যাচ আছে । তাই একটু সময় লাগবে ।‘ একটু গম্ভীরভাবেই বলে সোহেল ।
‘ভাই এই সপ্তাহের মধ্যে আমার বিলটা পেতেই হবে ।‘ বলে সাদা কাগজের একটা প্যাকেট টেবিলে রাখে হাশেম সাহেব ।
‘বসেন বসেন । চা খান । দেখি কি করতে পারি ।‘ একটু আগের গাম্ভীর্যকে খারিজ করে কন্ঠে উষ্ণতা নিয়ে আসে সোহেল । চাকুরীর প্রথম দিকে কষ্ট করে করতে হতো এসব । এখন কিরকম যেনো স্বয়ংক্রিয়ভাবে গলার স্বর/ভাব বদল হয়ে যায় । পিওনকে চায়ের কথা বলে উঠে যায় সোহেল । এই টেবিলে সেই টেবিলে ঘোরাঘুরির ভান করে আবার নিজের টেবিলে ফেরত আসে ।
‘কত যে ঝামেলা ভাই । পরশু আসেন মনে হয় দিতে পারবো ।‘ ইচ্ছে করলে আসলে আজকেই দিতে পারতো । তবে তাতে নিজের ওজনটা কমে যেতো । কত কিছুই যে মানুষকে শিখতে হয় ... সোহেল এর মত সাধারন মানুষকেও...
‘ঠিক আছে ভাই । পরশুই আসবো । যাই তাহলে এখন ।‘ বিদায় নেন হাশেম সাহেব । প্যাকেটের টাকাগুলো গুনে দেখে সোহেল । এই সেকশনের বাকী তিনজন আর একাউন্টেন্ট সাহেবকে ভাগ দিতে হবে । তবে তারপরও ভালোই থাকবে । নাহ দিনটা খারাপভাবে শুরু হয় নাই । আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দেয় সোহেল । সাথে দিনের পত্রিকাটা খোলে । প্রথম পৃষ্ঠা খুলতেই মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায় সোহেলের । গতকালকের দুর্ঘটনার ছবি বড় করে । খুব বাচ্চা একটা মেয়ের ছবি আছে । মাথার চুল সামান্য অবিন্যস্ত, চোখ দুটো বোজা ...যেনো দুষ্টুমি করতে করতে বাচ্চা মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে...আহারে...আহা ।
গভীর বিষণ্ণতায় ডুবে যায় সোহেল । পকেটে রাখা টাকার প্যাকেটের ওজন অনেক বেশী মনে হয় । প্যাকেটটা ড্রয়ারে রাখে । চায়ের কাপ হাতে ভাবনায় ডুবে যায় ।
একেবারেই সাধারণ ছেলে সোহেল । ছেলেবেলায় মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে নিয়মিত ডু, ডিড, ডান পরেছে । নিয়মিত হাতের লেখা লিখেছে । প্রথম দিকের ক্লাসে ভালো ছাত্র এবং ভালো ছেলেই বলে পরিচিত ছিলো । কিন্তু একটু উপরের ক্লাসে ওঠার পরেই অনেক কিছুই আর কুলিয়ে উঠতে পারে না । মনে আছে পুরো একটা রাত চেষ্টা করেও কুকুর খরগোসের ১ মিনিটে ৩ লাফ আর ৪ লাফের অংকটা বুঝতে পারে নাই । একজন দেয় ছোট লাফ আর একজন দেয় বড় লাফ । যে আবার ছোট লাফ দেয় সে আবার বেশী দ্রুত । কি জটিলতা । সেই শুরু । তারপরেও অনেক চেষ্টা করেছে সোহেল । লাভ হয় নাই । এস এস সিতে পাইলো জিপিএ ৪.৫৮ । এই রেজাল্ট নিয়ে ভালো কলেজে পড়া সম্ভব না । হয়ও নাই । কলেজে কিছু উড়নচণ্ডী বন্ধু জুটেছিলো । কলিজায় একটু সাহস আর একটু বেশী অমানুষ হলে হয়তো বর্তে যেতে পারতো । অনেকেই যেমন যায় এযুগে ।
এইতো সেদিন শহীদের সাথে দেখা রাস্তায় । নিজের গাড়ীতে করে কোথায় যেনো যাচ্ছিলো । জোর করেই গাড়ীতে উঠিয়ে বাসার কাছে নামিয়ে দিয়ে গেলো । আশ্চর্য শহীদকে অফিসের ঠিক বড় সাহেবের মত লাগছিলো । টাকার মনে হয় নিজস্ব একটা ব্যাক্তিত্ব আছে । যার পকেটে থাকে তার মাঝে আপনাতেই বিকশিত হয় । অথচ মনে আছে শহীদের সাথেই একদিন কলেজের পাশের একটা চাইনিজে খেতে বসেছিলো । সাথে মইনও ছিলো । মইনের জন্মদিন । তাই বিলটা মইনেরই দেওয়ার কথা । খাওয়া শেষে ব্যাগ খুলে মইন দেখে মানিব্যাগ নাই । ভীষণ ঘাবড়ে যায় সোহেল । অথচ শহীদ কেমন নিরুত্তাপ থাকে । ‘তোরা চুপ থাক । আমি দেখতাছি ।‘ বলে শহীদ ।
‘মামু । ব্যবসা কেমন ।‘ ম্যানেজারের সাথে আলাপ শুরু করে শহীদ ।
‘এইতো চলতাছে ।‘ ম্যানেজার উত্তর দেয় ।
‘এত টাকা বানাইতাছেন । ভাইগ্নাগো ভাগ কই । কাটা সামছু কিন্তু আমার চাচা ।‘ নির্বিকারভাবে বলে শহীদ । উত্তরে ম্যানেজার কিছু বলে না । চুপ থাকে ।
‘ঠিক আছে এখনই টাকা দিতে হইবো না । তবে মাঝে মাঝে আমরা আইসা খাবো । মামুর রেস্টুরেন্টে ভাইগ্না খাইবো না তাইলে কে খাইবো ।‘ বলে অবলীলায় বের হয়ে আসে শহীদ । সোহেলও পিছু পিছু যায় । কেউ আটকায় না । সেইরাত সোহেল ঠিকমতো ঘুমাইতে পারে নাই । ভয়ে । পরদিন কলেজে গিয়েই প্রথমে সেই রেস্টুরেন্টে যায় সোহেল । জমানো চারশ টাকা দিয়ে ম্যানেজারকে বলে
‘গতকাল আসলেই আমার কাছে টাকা ছিলো না । আমার কাছে এখন এই চারশ টাকা আছে । বিল বেশী হলে বইলেন বাকীটা পরে আমার বন্ধুদের কাছে থেকে নিয়ে দেবো ।‘ শুনে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে ম্যানেজার ।
‘না না আর লাগবে না ।‘ বিস্ময়ের দৃষ্টিকে দ্রুত করুণার দৃষ্টিতে বদলাতে বদলাতে বলে ম্যানেজার । একই দৃষ্টি দেখে যখন পরে কথাটা শহীদকে বলে সোহেল । ‘তুই এই দুনিয়ায় অচল । তোরে দিয়া কেরানীগিরি ছাড়া আর বেশী কিছু হবে না ।‘
চরম সত্যি কথাটাই সেদিন অবলীলায় বলেছিলো শহীদ । তথৈবচ রেজাল্ট নিয়ে এইচ,এস,সিও উতরে যায় শহীদ । কয়েকটা ভার্সিটিতে চেষ্টা করে । জানতো হবে না । হয়ও না । বাবা বলেছিলো প্রাইভেটে পড় । কিন্তু শহীদ নিজের গন্ডী ততদিনে চিনে ফেলেছে । ভোকাট্টা ঘুড়িও জানে নিজের সীমানা । আর মেধা সাহস কম হলেওতো সোহেল মানুষ । তাই প্রায় প্রৌঢ়ত্বে পৌছানো বাবাকে আর চাপে ফেলতে চায় নাই । সরকারী কলেজে বিকমে ভর্তি হয় । পাশ করতে করতেই বাবা অবসর নেন । কপাল ভালো যে বাবা ঢাকা থেকে একটু দুরে আশকোনায় অনেক আগেই তিন কাঠা জমি কিনেছিলেন । রিটায়ারমেন্টের টাকায় সেখানে একটা ঘর ওঠে । সেই সময়ই কাদের ভাই এই চাকরির খবর দেন । নগদ চার লাখ টাকা দিতে হয় চাকুরিটার জন্য । তারপরও সোহেল খুব কৃতজ্ঞ । এই চাকুরীটা না থাকলে পরিবারটার যে কি অবস্থা হোতো ভাবা যায় না । কিন্তু তারপরও আজকাল মাঝে মাঝেই ভীষণ বিষণ্ণ লাগে । মনে হয় যদি সব ছেড়ে দুরে কোথাও চলে যেতে পারতো ...
‘কি মিয়া ঝিম মাইরা বইসা আছো কেনো ?’ কাদের ভাইয়ের কথায় সম্বিৎ ফিরে আসে সোহেলের । কাদের ভাই এর মাধ্যমেই এই চাকুরী । উনি এই অফিসেই চাকুরী করেন । অন্য সেকশনে এবং দুই ধাপ উপরে । বয়সেরও বেশ ব্যবধান । তারপরও অফিসে এবং অফিসের বাইরে কাদের ভাইয়ের সাথেই একটু মন খুলে কথা বলে সোহেল ।
‘এই ছবিটা দেখছেন কাদের ভাই ।‘
‘হ্যা দেখছিতো ।‘
‘কাদের ভাই, মালয়েশিয়ায় যাইতে যেন কত টাকা লাগে ?’
‘তোমারে আবারো ভুতে ধরছে? ‘ চেয়ারে বসতে বসতে বলে কাদের ভাই ।
‘তোমার ছোট ভাই ব্যবসার টাকাটা উঠাইতে পারছে ?‘
‘নাহ কাদের ভাই । যে লোক লন্ডন থেকে ব্যাগেজে মাল আনতো সেই লাপাত্তা হইয়া গেছে । তিন লাখ টাকা লস ।‘
‘আর তোমার বাবার বুকের ব্যাথা কি কমছে ?’
‘এখন একটু কম । তবে মাঝে মাঝেই বাড়ে । কত স্পেশালিষ্ট দেখাইলাম । গেলেই একগাদা টেস্ট দেয় কাজের কাজ কিছুই হয় না । মা বলতাছে ইন্ডিয়া নিয়া যাইতে ।‘
‘আর তুমি বইসা বইসা ভুতের লগে দোস্তি পাতাইতাছো ।‘ একটু পরিহাসস্বরেই বলেন কাদের ভাই ।
‘ভিক্টিম অফ সারকুমটেন্স বইলা একটা কথা আছে জানো সোহেল । তোমাকে বুঝাইয়া বলি । চায়ের অর্ডার দেও ।‘ আন্তরিকভাবে বলেন কাদের ভাই । এই জন্যই মানুষটাকে ভালো লাগে সোহেলের ।
‘শোনো, তখন মহসিন হলে থাকি । ‘ শুরু করেন কাদের ভাই ।
‘রুমমেট জহিরের সাথে প্রায়ই বিকেলে হয় টিএসসি অথবা নীলক্ষেত/নিউমার্কেট যাই । আড্ডা দিতে । তবে সন্ধ্যার পর পরই ফিরে আসি । হলের ডাইনিং ধরতে । সেদিন নীলক্ষেতে আড্ডা দিয়ে ফেরার পথে হঠাৎ বলাকা সিনেমার দিকে চোখ গেলো । ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ তখনও চলছে । কয়েকদিন ধরেই আলাপ করছিলাম একদিন দেখবো ছবিটা । জহির বললো চল আজই দেখি । আমিও রাজী হয়ে গেলাম । ছবি দেখে নীলক্ষেতে তেহারি খেয়ে প্রায় দশটার দিকে হলে ফিরলাম । হলে ফিরে দেখি জহিরের চাচা বসে আছেন । জহির গ্রামের ছেলে । জহিরের চাচা কি যেনো ব্যবসা করতেন । মাঝে মাঝেই ঢাকায় আসতেন । ঢাকায় আসলে জহিরের জন্য টাকা আর গ্রামের গাছের বেল, আতা কখনো মুড়ির মোয়া নিয়ে আসতেন । ‘কোথায় ছিলা বাবারা । সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি । এখন আর কিভাবে ফিরবো ভাবছি ?’ আমাদের দেখেই বলেন জহিরের চাচা । ‘এখন আর ফিরবেন কিভাবে । আজকে এখানেই থাকেন । সকালে ফিরবেন ।‘ জহির বলে । আগেও দুই তিনবার জহিরের চাচা হলে রাত কাটিয়েছেন । তাই সহজেই রাজী হন । রাত দুইটার দিকে গুলির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে । হল দখলের লড়াই । তখন প্রায়ই হোতো । আমরা ততদিনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি । এসব রাতে বিছানা ছেড়ে রুমের মাঝে মেঝেতে শুতে হয় । সতর্কতা হিসাবে । সেরাতেও তাই করলাম । জহিরের চাচাকে সহ । উনি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছেন । ‘ও জহির গুলি লাগবো নাতো ।‘ একটু পর পরই ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন । আমরা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করি । কিন্তু ওনার ভয় কমে না । ঘণ্টা খানেক পরে উনি আবার বলেন ‘ও জহির আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগতাছে ।‘ আলো জ্বেলে দেখি উনি ঘামে পুরো ভিজে গেছেন । একটু পরেই শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেলো । ঐ গোলাগুলির মাঝেই আমরা চাচাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলাম । কিন্তু লাভ হলো না । চাচা মারা গেলেন ফজরের একটু পরেই । চাচার নাকি আগে থেকেই হৃদরোগ ছিলো ।‘ একটানা গল্পটা বলে একটু চুপ থাকেন কাদের ভাই । ততক্ষণে চাও চলে এসেছে ।
‘আমরা ঐদিন বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না না দেখলে, কিংবা ঐদিনই হল দখলের লড়াই শুরু না হলে হয়তো জহিরের চাচা মারা যেতেন না । তবে এজন্য নিজেদের দোষারোপেরও কোনো মানে নাই । জহিরের চাচা হলেন গিয়ে ভিক্টিম অফ সারকুমটেন্স । ঠিক সেরকমই পত্রিকার পাতার এই অবোধ শিশু, তোমার আমার চাকুরী, তোমার ভাইয়ের অবৈধ ব্যাগেজ ব্যাবসার টাকা লস, তোমার বাবার ঠিকমতো চিকিৎসা না হওয়া সবই ‘ভিক্টিম অফ সারকুমটেন্স’ । ‘ভিক্টিম অফ টাইম’ ও বলতে পারো । এত বেশী চিন্তা কইরো না । এই সময়ে বেশী চিন্তা করলে ‘নাগা সন্যাসী’ হইয়া যাইতে হবে । এখন যাই । বিকালে আবার দেখা হবে ।‘ বলে বিদায় নেন কাদের ভাই ।
কাদের ভাই বিদায় নিতেই মেঝেতে পড়ে থাকা একটা ট্রাভেল ব্যাগ চোখে পরে সোহেলের । কাদের ভাই গল্প করা অবস্থাতেই এক ভদ্রলোককে এখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলো সোহেল । ভদ্রলোকের উপর চোখ পড়ার কারন ভদ্রলোকের গায়ের রং । এতটা ফর্সা লোক খুব কম দেখা যায় । ব্যাগটা নিশ্চয়ই ঐ ভদ্রলোকের । একটু আগেও এখানে ছিলো । হয়তো আশে পাশেই আছে । কোনো কিছু চিন্তা না করেই সোহেল ব্যাগটা নিয়ে বের হয় । দূর থেকেই দেখে ভদ্রলোক অফিসের গেট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন । দৌড় দিয়ে যখন গেটের কাছে আসে সোহেল ভদ্রলোক তখন গাড়ির দরজায় মাত্র হাত দিয়েছেন । তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে সোহেল বলে ‘ব্যাগটা কি আপনার ?’
‘জ্বি আমারইতো । ইসসস কত হেনস্থা যে হোতো ব্যাগটা হারিয়ে গেলে । আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো ।‘ ভদ্রলোক কৃতজ্ঞতার সুরেই বলতে থাকেন । সোহেল মনোযোগ দিয়ে আর শুনে না । অফিসে ফিরতে হবে । সকাল থেকে কোনো কাজই করে নাই । ‘না না ঠিক আছে ।‘ বলে সোহেল দ্রুত আবার অফিসে ঢোকে ।
সেদিন রাতেই বাসার খাবার টেবিলে সোহেল আর মা বসে ।
‘বাবা কই ? ‘ সোহেল মাকে জিজ্ঞেস করে ।
‘শরীর নাকি ভালো না । তাই খাবে না । তোকে যে বললাম ইন্ডিয়া যাবার কথা ।‘
‘ভিসাটা করাইয়া ফেলো । কালকেই রোমেলকে পাঠাইয়ো । রোমেল কই ?’
‘রুমেই আছে মনে হয় । তুই আসার আগেই খেয়ে ফেলছে ।‘ মার উত্তর শুনে চুপ করে যায় সোহেল । ইদানীং রোমেল যতটা পারে এড়িয়ে যায় বড়ভাইকে । টাকাটা লস দেবার পর থেকেই । টাকাটা সোহেলই দিয়েছিলো ছোট ভাইকে । হঠাৎ অনেক আগের এক দিনের কথা মনে হয় সোহেলের । এক বড় লোক আত্মীয়ের জন্মদিনের দাওয়াতে যায় সোহেল । ছোট ভাই রোমেলকে সাথে নিয়ে । কি সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ি । রোমেল চোখ বড় বড় করে সব কিছু দেখতে থাকে । অনুষ্ঠানে রোমেলের বয়সী বাচ্চাই ছিলো বেশী । কিন্তু অতটুকু রোমেলও বোঝে তারা আর রোমেল এক না । তাই ছয় বছরের বড়ো সোহেলের সাথেই লেপ্টে থাকে । কেক কাটা হলে সবাইকে এক পিস করে দেওয়া হয় । এত মজার কেক রোমেল জীবনে আগে খায় নাই । ‘ভাইয়া কেকটা খুব মজা । আর এক পিস কি দিবেরে ভাইয়া?‘ ছোট ভাইয়ের কথা শুনে এত মায়া লেগেছিলো সোহেলের । ‘আমার কাছে একদম ভালো লাগছে না । আমার পিসটা খা ।‘ বলে দিয়ে দিয়েছিলো রোমেলকে । খুব মজা করে খেয়েছিলো রোমেল । এখনও দৃশ্যটা চোখে ভাসে । ফেরার সারাটা পথ ‘ভাইয়া ওদের বাড়িটার দাম কত, গাড়ীটার দাম কত, খেলনা সাইকেলটার দাম কত ?’ এরকম হাজারোটা প্রশ্ন করেছিলো রোমেল । এক পর্যায়ে খুব গম্ভীর হয়ে বলে ‘বড় হলে আমার অনেক টাকা হবে ভাইয়া । তোমাকে ওদের গাড়ীটার চাইতেও অনেক বড় একটা গাড়ী তোকে কিনে দেবো ভাইয়া । বড় হতে আর কত দেরী ভাইয়া ?‘ হায় সেই ছোট ভাই এখন কিছু টাকার জন্য সামনে আসে না ...একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সোহেল ।
খাওয়া শেষে রোমেলের রুমে যায় সোহেল । রোমেল কম্পিউটারে পোকার গেম খেলছে । মনে হয় অনেক টাকা লাভ হচ্ছে । তাই মুখটা হাসি হাসি ... দেখে কেমন মায়া লাগে ।
‘কিরে কি করছিস ?’ সোহেল রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে । রোমেল একটু চমকে যায় । তাড়াতাড়ি খেলাটা বন্ধ করে ।
‘তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া । আর একটা ব্যবসার কথা চিন্তা করতাছি । এইটাতে টাকা পয়সা লাগবে না । তোমার টাকাটা খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দেবো ।‘ রোমেলের কথা শুনেই হঠাৎ রাগ হয় সোহেলের ।
‘এসব ব্যবসার চিন্তা বাদ দিয়া চাকুরীর চিন্তা কর । বিসিএস টা দে । তাহলেই
আমার – আমাদের উপকার হয় ।‘ একটু রুক্ষ ভাবেই বলে সোহেল । বলেই আবার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় । কখনোই মনের ঠিক কথাটা ঠিকভাবে বলতে পারে নাই সোহেল । এসেছিলো ভাইটাকে একটু সাহস দিতে ...অথচ...
সোহেল যখন রোমেলের সাথে কথা বলছে ঠিক একই সময়ে বারিধারায় এশা কথা বলছে তার মামার সাথে ।
‘ব্যাগটা ঠিক কোথায় ফেলে এসেছিলে মনে করতে পারছো না ।‘ এশা মামাকে জিজ্ঞেস করে ।
‘আরে কতবার বলবো । মনে হয় ঐ অফিসের নিচতলায় যেখানে ত্রিশ চল্লিশ জন ক্লার্ক কাজ করে ওখানেই কোথাও হবে ।‘
‘আশ্চর্য তুমি ভদ্রলোকের নাম জিজ্ঞাসা করবে না ।‘
‘আরে সে সুযোগ পেলাম কোথায় । ভদ্রলোকতো ব্যাগটা দিয়েই চলে গেলো । কিন্তু আমি বুঝলাম না এটা এত সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেনো তুই । ব্যাগের মধ্যে ছিলো আমার ব্রিটিশ পাসপোর্ট আর এক হাজার পাউন্ডের ট্রাভেলার্স চেক । এই দুইটা নিয়েই ভদ্রলোকের কোনো লাভ হোতো না । ক্যাশ ছিলো মাত্র একশ পাউন্ড । বাংলাদেশী টাকায় মনে হয় দশ হাজার টাকার মত । এটা কি এতই সিরিয়াস ?‘
‘তুমি বুঝবে না মামা আমার জন্য খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ । কাল কি আমার সাথে আবার ঐ অফিসে যেতে পারবে ?‘
‘কিভাবে যাবো । কাল সকালেইতো চট্টগ্রাম যাচ্ছি । ফিরেই লণ্ডন । একটা কথা বলি । তোর বাবা মা কিন্তু তোর কাজে খুশী না । লন্ডনে গিয়ে পড়াশুনাটাও শুরু করছিস না ।‘
‘ইউনিভার্সিটির সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে মামা । এক দুই বছর পরে গিয়ে পড়লেও অসুবিধা নাই । যেটা শুরু করেছি সেটা একটু দেখতে চাই ।‘
‘কিন্তু তোর বিয়ের ব্যাপারও আছে । তোর মা কিন্তু আমাকে এবার জোর করেই তোকে নিয়ে যেতে বলেছে ।‘
‘প্লিজ মামা । অন্তত একটা বছর দেও আমাকে । মা বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলো ।‘
‘ঠিক আছে দেখি ।‘
পরের দিন সোহেল অফিসের মেঝেতে আবার একটা ব্যাগ পায় । আশ্চর্য আজকাল অফিসে কি সব মনভুলো লোক আসছে । এটা অবশ্য লেডিস ব্যাগ । আগের দিনের মত মালিক কে ছিলো দেখে নাই । তাই ব্যাগটা খুলে । ব্যাগে মেয়েলী জিনিষ কিছুই নাই । শুধু পাঁচ হাজার টাকা আর একটা কার্ড । এশা চৌধুরী নামে এক মেয়ে বা মহিলার কার্ড । ফোন নাম্বার দেওয়া আছে । কোনো কিছু চিন্তা না করেই ফোন করে সোহেল ।
এর নয় দিন পরে । রমনা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে সোহেল আর এশা । সোহেল এখনও কিছুটা হতবিহ্বল । তবে বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে । এদের অনেক অদ্ভুত খেয়াল হয় । সৌভাগ্যের ব্যাপার সেসব বেশী দিন স্থায়ী হয় না । মনে মনে এসব ভাবছে সোহেল ।
‘দেখুন আবারো বলছি । আপনি যা ভাবছেন । যেভাবে ভাবছেন । তা ঠিক না ।‘ সোহেল কথা শুরু করে ।
‘কি ঠিক না ?’ এশা জিজ্ঞেস করে ।
‘আপনার মামার ব্যাগ আমি খুলেও দেখি নাই । আর আপনার ব্যাগে যদি পাঁচ হাজার টাকা না থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা থাকতো তাহলে আমি ফেরত দিতাম না । অতটা সৎ আমি না । ‘
‘পাঁচ হাজার টাকাই বা ফেরত দিলেন কেনো ?’
‘দেখুন আপনি আমার সম্বন্ধে কিছুই জানেন না ।‘
‘কি জানি না ?’
‘আমার আয়ের তিনগুন উপরি নেই মাসে ।‘ মরিয়া হয়ে বলে সোহেল ।
‘এবং সেটা আপনার ডিপার্টমেন্টের সব চাইতে কম । প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেই । গত সাতদিনে আপনার সম্বন্ধে আমি কিছুটা খোজ খবর করেছি । আমার নিজের প্রয়োজনেই । আরো কি জানি শুনবেন । আপনার ভাই ব্যাবসায় লোকসান দিয়েছে, বাবা অসুস্থ এবং আপনি ‘ধ্রুব আকাশ’ ছদ্মনামে পত্রিকায় কবিতা লেখেন ।‘ এশার শেষের কথাটা শুনে বেশ চমকে যায় সোহেল । এই খবরটা খুব অল্প কয়েকজন ছাড়া তেমন কেউ জানে না । একটু ভঁয়ও পায় সোহেল ।
‘ভয় পাবেন না । আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না ।‘ সোহেলের মনের কথাটা যেনো টের পায় এশা ।
‘আপনাকে পুরো ব্যাপারটা বলি । বছরখানেক আগে যশোরের নওয়াপাড়ায় বেড়াতে যাই । সেখানে এক মাটির হাড়ি পাতিলের দোকানে অদ্ভুত সুন্দর কিছু ছবি আকা হাড়ি দেখতে পাই । কে করেছে দোকানীকে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারে না । পরে পাইকারকে ধরি । সে তাচ্ছিল্য করে বলে ‘এইটা রহিমা খালার কাম । মাথা নষ্ট মহিলা । দাম এক পয়সাও বেশী দিই না । তাও করে ।‘ আমি ঠিকানা নিয়ে সেই মাথা নষ্ট মহিলার সাথে দেখা করি । স্বামী পরিত্যক্তা, নিঃসন্তান বয়স্ক মহিলা । কেনো এরকম ছবি আকেন জিজ্ঞেস করলে শুধুই হাসেন । আমি বেশী কথা না বলে তার কাছ থেকে দশটা মাটির হাড়ি কিনি । আচ্ছা খাবারের অর্ডারটা দেই । ‘ বলে একটু থামে এশা ।
‘আমার মামা, চাচা, ফুপু, খালা সবাই দেশের বাইরে থাকে । লন্ডনেই বেশী । কানাডাতেও আছে । বছরে একবার, দুইবার আমি বাইরে যাই ।‘ একটু পর আবার কথা শুরু করে এশা ।
‘এর কিছুদিন পরেই লন্ডন যাই । অনার্স শেষ হওয়াতে একটু বেশী সময়ই থাকি সেবার । কি মনে করে যেনো তিনটা হাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম । আমার এক কাজিনকে দেখাই হাড়িগুলো । সে মুগ্ধ হয়ে যায় । মুগ্ধ হবার মতই ছিলো অগুলো । তার পরামর্শমতো লন্ডনের কিছু হ্যান্ডিক্রাফটের দোকানে যাই । প্রতিটা হাড়ি বিশ পাউন্ডে বিক্রি করি । অথচ কিনেছিলাম মাত্র একশ টাকায় । সেখান থেকেই ব্যবসার বুদ্ধিটা আসে ।‘
‘কিন্তু এরকম ব্যবসাতো আড়ং, কুমুদিনী আরো অনেকেই করছে?’ সোহেল মাঝপথে জিজ্ঞেস করে ।
‘জানতাম আপনি এটা বলবেন । যাদের কথা বললেন এরা বানিজ্যিক ভাবে করে । মানে ডিজাইন অর্ডার করে আর শতে শতে হাজারে হাজারে তৈরী হয় । আমি চাই রহিমা খালার মত মানুষদের খুজে বের করতে । তবে আমি তাদেরকে কোনো অর্ডার দিতে চাই না । মনের আনন্দে তারা যা করবেন আমি তাই উপযুক্ত দাম দিয়ে কিনবো এবং পরে রপ্তানী করবো ।‘
‘বুঝলাম । কিন্তু এর মাঝে আমি কেনো ?’ আবারো প্রশ্ন করে সোহেল ।
‘আমার ব্যবসার মূল ব্যাপারটাই হলো দেশ ঘুরে ঘুরে এরকম ন্যাচারাল আর্টিস্ট খুজে বের করা । আর এসব আর্টিস্টদের সাথে আমি লং টাইম রিলেশান গড়ে তুলতে চাই । মানে হলো তাদের যতটা সম্ভব যত্ন নিতে চাই । দুংখজনক হলেও সত্যি যে একজন মেয়ে হিসাবে সারা দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানো আমার জন্য এখনো কঠিন । তাই আপনার মত সংবেদনশীল, আর্ট বোঝা সৎ একজন লোক আমার দরকার । আগেও দুইজনকে নিয়ে চেষ্টা করেছি । কিছুদিন বাদেই টাকা পয়সা নিয়ে তারা হাওয়া হয়ে গেছে ।‘ একনাগাড়ে কথাগুলো বলে উৎসুক হয়ে চেয়ে থাকে এশা ।
‘মাঝারি বিত্ত, মাঝারি চিত্ত আর উচ্চতর গলা এই হলো দেশের টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত । আমার অবস্থা আরো খারাপ । আমার চিত্ত খুবই নিম্নতর, গলাবাজির অবস্থা আরো খারাপ । তাছাড়া আমার উপর পুরো একটা পরিবার । কিন্তু আপনি যে স্বপ্নটা দেখাচ্ছেন ...’ বলে চুপ করে যায় সোহেল ।
‘ব্যবসাটা আসলেও বেশ ভালো । আপনি এখন যা আয় করেন আমি অনায়াসে তার দ্বিগুন দিতে পারি । কিন্তু আমি আপনাকে অংশীদার হিসাবে চাই । কোনো পুজি লাগবে না । শুধু আপনার একনিষ্ঠ শ্রম আর সততাটুকু লাগবে । মামার ঘটনা শোনার পরে সেই কারনেই আমি ইচ্ছা করে আপনার অফিসে ব্যাগটা ফেলে এসেছিলাম ।‘
‘আমি কি পারবো ? ’ স্বপ্নাতুর চোখে জিজ্ঞেস করে সোহেল ।
‘দেখুন দুর্নীতি, জ্যাম, খাবারে ভেজাল, শিক্ষার করুন অবস্থা এই অশুভ চক্রটার কথা আমরা সবাই জানি । এসব নিয়ে চায়ের টেবিলে বড় বড় কথা বলে একসময় এটাই বলি যে এই দেশে আর থাকা যায় না । কিন্তু একটা শুভ চক্রও কিন্তু আছে । বছরের পর বছর খুব অল্প লাভে কৃষক ফসল ফলাচ্ছে, জেলে মাছ ধরছে , হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে পোশাক শ্রমিক একটা পরিবারের জীবন যাত্রাই বদলে দিচ্ছে । এই শুভ চক্রের কথা আমরা বলিই না অথবা জানিই না । একটু ভাষণের মত বলে ফেললাম মনে হয় । ‘ লজ্জিত ভঙ্গীতে বলে এশা । তাতে এশাকে আরো সুন্দর লাগে ।
‘আপনি ঠিকই বলেছেন । গত চার বছরে একদিনও এই চাকুরীটা করে শান্তি পাই নাই । আমরা একেবারেই একটা নতুন জেনারেশন । আপনার মত স্বপ্ন দেখতে ভয় লাগে । তবে দেখতে চাই । আপাতত অফিস থেকে দুই মাসের ছুটি নেবো । বুঝতেই পারছেন । আমি একা না পুরো পরিবার আছে ।‘
‘ঠিক আছে । কি যে ভালো লাগছে আমার ।‘ উচ্ছসিত হয়ে বলে এশা ।
তারপর খেতে খেতে দুই উচ্ছল তরুন তরুণী শুধু স্বপ্নের কথাই বলতে থাকে ...অনর্গল ...অবিরত ।