- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 115
- Messages
- 1,101
- Reaction score
- 134
- Points
- 1,213
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****তলার দেশের অতল কথা*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
গল্প লেখার কথা ছিলো, একটা লিখেছিও । সারাদিন বাসায় বসে থাকি, কাজের ফাঁকে ফাঁকে বারবার ফ্রিজ খুলি । ভয়ে ভয়ে ওজন মাপি । নাহ ওজন তো একটুও বাড়ে নাই । শক্তির নিত্যতা সুত্রের মত মনে হয় পুষ্টিরও নিত্যতা সুত্র আছে । তাই বাড়তি পুষ্টির কারণেই গল্পটা নাদুস নুদুস হয়ে গেছে । এতটাই বড় যে জুকার মামা মাইন্ড করতে পারে । তাহলে কি করা, একটা সত্যি গল্পই লিখি । সংগত কারণে গল্পের চরিত্রগুলোর নাম বদলে দিয়েছি ।
একই শিরোনামে আগেও একটা গল্প লিখেছিলাম । তখন একজন প্রশ্ন করেছিলেন তলার দেশ কেনো লিখেছি । কারণটা আসলে খুব সাধারণ । বিশ্ব মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখবেন অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটা একটু নিচের দিকে ঝুলে আছে । সেই জন্যই একে অনেকেই Down Under বলে । সেটারই সহজ অনুবাদ ‘তলার দেশ’ ।
মেলা গীত গাওয়া হয়েছে । এবার আসল গল্পে আসি । আমার দীর্ঘ পেশা জীবনে সবচাইতে বড় সফটওয়্যার প্রজেক্টে কাজ করি তখন । টাকার অংকে যেমন বৃহৎ, লোকবলও অনেক; বিয়াল্লিশ জন । প্রজেক্টটা সরকারী প্রজেক্ট । ওপেন টেন্ডার এর মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠান কাজ পায় । প্রজেক্ট এর সর্বমোট মূল্য এখন আর মনে নাই । কিন্তু বোনাসটা মনে আছে । বলতে গেলে আমাকে সহ আরো অনেককেই মনে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে । ঠিক সময়ে প্রজেক্ট শেষ করতে পারলে ২ মিলিয়ন ডলার বোনাস পাবে প্রতিষ্ঠান । প্রজেক্ট শুরুর পর থেকেই এইটাই হাজারবার শুনতে হয়েছে । সব খানেই মনে হয় আসলের চাইতে সুদ বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয় ।
যাহোক প্রথম প্রজেক্ট ম্যানেজার লিন হাসি খুশী মানুষ । সকালে একবার বোনাসের কথা বলে, বিকালে একবার বোনাসের কথা মনে করিয়ে দেয় । আমরা ঠাট্টা করে বলি, ঐটা তো কোম্পানি পাবে আমরা কি পাবো সেটা বলো । জবাবে রাজনৈতিক নেতার মত নানা প্রতিশ্রুতি দেয় লিন, এবং নেতার মত কথা বলেই সেটা কেউই বিশ্বাস করে না । কিছুদিন পরেই প্রথম ফেজ এর আলফা রিলিজ হবার কথা । লিন এর আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও ডেডলাইন মিস হয় । দুই সপ্তাহ পরেই এক সকালে দেখি নতুন প্রজেক্ট ম্যানেজার । স্কট নাম, লিনের মতই হাসি খুশী লিনের মতই মাথার চুল পাতলা, তবে লিন ছিলো হালকা পাতলা আর স্কট দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশালাকার । মনে মনে ভাবি এই লোক তো ধারে না কাটলেও ভারে কাটার চেষ্টা করবে । প্রথম দিনেই সে মুখ হাসি হাসি করে বলে, আমি এগারো বছর সফটওয়্যার ডেভেলপার ছিলাম এবং আমার অধিকাংশ প্রজেক্টই ব্যর্থ ছিলো । সে হিসাবে আমাকে ব্যর্থ প্রোগ্রামার বলতেই পারো ।
শুনে সবাই হাসে । আমি মনে মনে ভাবি, ব্যর্থ খেলোয়াড় হয় সফল কোচ, ব্যর্থ সমাজ সেবক হয় সফল নেতা এবং ব্যর্থ প্রেমিক হয় সফল স্বামী । বাক্যের শেষ অংশটুকু আমার কথা না, আমার বন্ধুর কথা ...বুঝতেই পারছেন আমারও আপনার মতই একটা সংসার আছে । অতএব, সুতরাং এসব কথা বন্ধুর মুখ দিয়ে বলানোই নিয়ম । এই ব্যর্থতার সুত্র যদি ঠিক থাকে তাহলে স্কটের সফল প্রজেক্ট ম্যানেজার হবারই কথা ।
স্কটের প্রথম কাজটাই তাকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তুললো । সে ঘোষণা দিলো শুক্রবার লাঞ্চের পরে কোনো কাজ হবে না, কোম্পানির খরচে পিজা এবং বিয়ার খাওয়ানো হবে । চাইলে কেউ বাসায়ও চলে যেতে পারে । আমি স্কটের সূক্ষ্ম বুদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । কেনো সূক্ষ্ম বুদ্ধি বলছি তার কারণটা ব্যাখ্যা করি । অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ চাকুরীতে অসুস্থতার জন্য ছুটি দেয়া হয় এবং পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৭০ ভাগ অসুস্থজনিত ছুটি শুক্রবারেই নেয়া হয় । আমিও যেদিন অসুস্থ হই সেদিনটা কিভাবে কিভাবে যেনো শুক্রবারই হয় । আর অস্ট্রেলিয়ার বিয়ার সংস্কৃতি তো জগত বিখ্যাত । এর আগে প্রতি শুক্রবারেই ৪/৫ জন অসুস্থ থাকতো । এরপর থেকে শুক্রবারে আমি ছাড়া আর কেউই অসুস্থ হয় নাই ।
আমি অবশ্য শুক্রবার দুপুরে বাসায় চলে আসতাম । তিতকুটে বিয়ার না হোক পিজা খাবার জন্য হলেও থাকা যেতো । কিন্তু এখানকার কলিগরা বিয়ারের বোতল হাতে যে ধরনের আলাপে মেতে ওঠে তাতে এতকাল পরেও অভ্যস্ত হতে পারি নাই । উদাহরণ দেই । এড এর দুই যমজ মেয়ে, বয়স পনের । এডের সব রসিকতা এই দুই মেয়ের বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে । সেই সব রসিকতার অনেকটাই পদ্মার পলিমাটি দিয়ে তৈরী আমার কান ঠিক নিতে পারে নাই; এখনো পারে না । কি আর করা, আমার তো আর দোষ না, সব দোষ পলিমাটির ।
শুক্রবার দুপুরে অফিস থেকে বের হচ্ছি, পিছনে দেখি ভিন্সও আসছে । ভিন্স অন্য একটা টিমে কাজ করে যাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ খুব কম । ভিন্স বসেও ভিন্ন ফ্লোরে । আমি তিন তলায়, ভিন্স চার তলায় । ফোলা ফোলা গোলগোল চোখ, পরিপাটি পোশাক, শান্ত সমাহিত মুখ, কথা খুব কম বলে ।
-তুমি দুপুরের পার্টিতে থাকবা না । আমি জিজ্ঞেস করি ।
-নাহ । আমি ড্রিংক করি না ।
উত্তর শুনে একটু অবাক হলেও মুখে কিছু বলি না । হেটে হেটে বাস স্টপে আসি । ভিন্স এর বাসার দিকে তিন চারটা বাস রুট । এর মাঝে একটা আমার বাসার দিকেও যায় । ভিন্স অন্য দুইটা বাস ছেড়ে দিয়ে আমার সাথে আমার বাসেই ওঠে । এবং বাসে বসেই শান্ত সমাহিত মুখে চরম আপত্তিকর কথাটা বলে ফেলে ।
-তুমি তো মুসলিম ?
-হ্যা ।
আমি উত্তর দেই ।
-তোমার ধর্ম কিন্তু জিহাদকে সমর্থন করে ।
-মানে ?
-অন্যভাবে নিও না । আমি নিজে ধর্ম খুব ভালোবাসি । নিজের ধর্মের বাইরেও অন্য ধর্ম নিয়ে আমার আগ্রহ আছে । তোমাদের কোরানেই জিহাদের পক্ষে এই এই বলা আছে ।
বলে কোরানের কিছু আয়াতের কথা বলে ভিন্স । আমি ভীষণ বিরক্ত হই । প্রথমত আমি আসলে এসব আয়াত সম্বন্ধে একদমই জানতাম না, তার উপর এসব নিয়ে একজন অমুসলিম কলিগের সাথে আলাপের কোনো মানেই হয় না । তাই আমি এড়িয়ে যেতে চাই । কিন্তু নাছোড়বান্দার মত ভিন্স আমার মতামত জানতে চায় । আর একদিন বলবো বলে সেদিনের মত এড়িয়ে যাই । বাসায় এসে ইন্টারনেট ঘেটে প্রস্তুত হই । পরবর্তী দুই/তিন সপ্তাহ এসব নিয়েই যুক্তি তর্ক হয় ভিন্সের সাথে ।
ইচ্ছা করেই সেসব যুক্তি তর্ক বলছি না । একটা কারণ একজন মুসলিম হিসাবেই অন্য ধর্মের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে । তার চাইতেও বড় কারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে তর্ক করার মত আহাম্মকি দুনিয়ায় খুব কম আছে । ভিন্স এর সাথে নিতান্ত বাধ্য হয়েই অল্প কিছু তর্কে লিপ্ত হতে হয়েছিলো ।
তবে প্রথম দুই/তিন সপ্তাহের পরে আমাদের এ নিয়ে আর কোনো কথা হয় নাই । প্রতি শুক্রবারে নিয়ম করে আমরা দুজন একসাথে অফিস থেকে বের হতাম । হাটা পথে আর বাসে অনেক কথা হতো । এরকম কথায় কথায় জানতে পারি ভিন্স পালক বাবা মায়ের কাছে বড় হয়েছে । ভিন্স এর আসল বাবা মা ছিলো মাদকাসক্ত । তার বয়স যখন দেড় বছর তখন সরকার থেকেই ভিন্সকে তার মা বাবার কাছ থেকে সরিয়ে পালক বাবা মায়ের কাছে দেয়া হয় ।
-তোমার আসল বাবা মায়ের সাথে তোমার কখনো দেখা হয় নাই ।
আমি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করি ।
-হয়েছে, দুইবার । নোংরা লোকজন ।
ভাবলেশহীনভাবে উত্তর দেয় ভিন্স ।
-আমি আমার পালক বাবা মাকেই আসল বাবা মা বলে বিশ্বাস করি । জানো তো বাবা মা কিন্তু আসলে একটা বিশ্বাসেরই নাম । অনেকটা ঈশ্বরের মতই ।
-মানে ?
-মানে তো খুব সহজ । তোমার বাবা মা যে তোমারই বাবা মা সেটা তো আর তুমি পরীক্ষা করে জানো নাই । ছোটবেলা থেকে শুনেছো সেটাই বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছে । আমার পালক বাবা মা না বললে আমারও তো একই বিশ্বাস থাকতো । থাকতো না ?
কথায় কথায় আরো অনেক চমকপ্রদ ব্যাপার জানতে পারি ভিন্স সম্পর্কে । ভিন্স প্রবল ধর্মপরায়ন সেটা আগে থেকেই জানি । কোনো রবিবারেই চার্চে যাওয়া মিস হয় না । ভিন্স এর ছয় ছেলেমেয়ে । ঈশ্বরের নিষেধ বলে সে পরিবার পরিকল্পনায়ও বিশ্বাস করে না । তবে এর চাইতেও অবাক হয়েছি অন্য কারণে । ভিন্স এর ছয় ছেলেমেয়ের কাউকেই টিকা দেয় নাই এবং কেউই স্কুলে যায় না । টিকার ব্যাপারটা নিয়ে কৌতুহলী হয়ে আলাপ করি ।
-তুমি যে টিকা দেও নাই এতে তো তোমার ছেলেমেয়ের অসুখ হতে পারে ।
-দেখো টিকা হয়তো ঐ অসুখটার হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে কিন্তু অন্য অসুখের জন্য দরজা খুলে দেয় ।
-কিন্তু তারপরও এটা তো বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত ।
আমি যুক্তি দেই ।
-দাড়াও তোমাকে কিছু লিঙ্ক দেই । এগুলি পড়ে দেখো ।
মজার ব্যাপার হলো ভিন্সের দেয়া লিংকগুলোতে আসলে কিছু ডাক্তারই টিকার অপকারিতার কথা বলেছে ।
এর মাঝেই অফিসের অনেকের কাছেই ভিন্স একটা মজার চরিত্র । মাঝে মাঝে আমরা কয়েকজন মিলে একসাথে লাঞ্চ করি । ভিন্স উপস্থিত থাকলে সবার লক্ষ্য হয় ভিন্স । সবচাইতে বেশী জ্বালাতন করে টিম ।
-আচ্ছা ভিন্স, তুমি যে বাচ্চাদের স্কুলে দেও না । তুমি নিজে তো স্কুলে গেছো ইউনিতে গেছো । তাহলে ?
টিম প্রশ্ন করে ।
-আমি গিয়েছি বলেই তো খারাপটা জানি ।
-কিন্তু স্কুলে না গেলে শিখবে কিভাবে ?
-কেনো হোম স্কুল । আমার বাচ্চারা নিয়ম করে হোম স্কুলে ক্লাস করে ।
-কিন্তু তারপরও সোস্যাল স্কিল, আরো অনেক কিছু জানার থাকে বাচ্চাদের ।
টিম চেষ্টা করতেই থাকে ভিন্সকে কোণঠাসা করতে । আমরা বাকি কয়জন নীরবে শুনতে থাকি । শুনেছিলাম ধার্মিক লোকেরা ধৈর্যশীল হয় । কিন্তু এতটা জানা ছিলো না । টিম যখন আরো উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে তখন এক পর্যায়ে ভিন্স হার মেনে নেয় ।
-আচ্ছা টিম মেনে নিলাম আমার বাচ্চাদের শিক্ষা ঠিক মতো হচ্ছে না ।
-তাহলে তাদেরকে স্কুলে পাঠাবে তো ?
উল্লসিতভাবে বলে টিম ।
-নাহ । কারণ কুশিক্ষার চাইতে অশিক্ষা ভালো ।
বলে টেবিল থেকে উঠে যায় ভিন্স ।
এক একদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় টিম ।
-তুমি তো এবরশনের বিরুদ্ধে ভিন্স ।
-আমি না ঈশ্বর এর বিরুদ্ধে ।
-ঐ হলো । তোমার মেয়ের বয়স তো এগারো । আর চার পাঁচ বছর পরে তো তোমার মেয়ের বয়ফ্রেন্ড হবে । খবরদার মেয়ের ব্যাগে কন্ডোম রাখতে ভুলে যেও না । এটা পিতা হিসাবে তোমার পবিত্র দায়িত্ব ।
বিশাল রসিকতা করেছে মনে করে হো হো করে হাসে টিম । শান্ত সমাহিত মুখ করে নির্বিকারভাবেই হজম করে ভিন্স ।
এর মাঝেই আমাদের দেশে একটা ঘূর্ণিঝড় হয় । পরদিন ভিন্সকে খুব অস্থির দেখি । আমাকে বলে, সে কিছু করতে চায় । আমি বলি,রেডক্রস কিংবা অন্য কোথাও দান করতে ।
-তুমি জানো রেডক্রসে দেওয়া ১০ ডলারের মাঝে মাত্র ২ ডলার আসল মানুষের কাছে পৌছে । ঈশ্বরের তৈরী এত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে ।
অস্থিরভাবে বলে সে । কয়েকদিন পরে বলে সে কিভাবে যেনো এক হাজার ডলার পাঠাতে পেরেছে ।
দিন যায় । আমেরিকার নির্বাচন সামনে রেখে মাঝে মাঝে রাজনৈতিক আলোচনাও হয় । ভিন্স ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক । সেটা নিয়েও সে অনেক ঠাট্টা হজম করে । এইটা নিয়ে সব চেয়ে বেশী ঠাট্টা করে আমাদের ভারতীয় কলিগ নিহাল । নিহাল কলকাতার ছেলে, প্রবল প্রগতিশীল এবং রবীন্দ্র সংগীতের একনিষ্ঠ ভক্ত । প্রসঙ্গক্রমে বলি এর কিছুকাল পরে জানতে পারি নিহাল মোদীর বিশাল ভক্ত । আমি অবাক হয়ে কারণ জিজ্ঞেস করেছিলাম । নিহালের উত্তরটা আমার এখনো মনে আছে ।
“বাইরের লোকরা যাই মনে করুক, ভারতকে আমরা হিন্দুস্থানই মনে করি আর মোদী সেই হিন্দুস্থানের আসল রক্ষক ।“
আরো দিন যায় । প্রজেক্ট সফলভাবে শেষ হয় । মেইন্টেন্যান্স ফেজ শুরু হয় । তখন অবশ্য লোক কমে যায় অনেক । মাত্র ছয়জন । আমি এবং ভিন্স দুইজনেই থাকি সেই টিমে । এর মাঝে ভিন্স উগান্ডায় যায় চ্যারিটি করতে তিন মাসের অবৈতনিক ছুটি নিয়ে । ভিন্স উগান্ডা থেকে ফেরার কিছুদিন পরেই আমি ঐ চাকুরী ছেড়ে দেই ।
আরো অনেকদিন পরে হঠাৎ একদিন ভিন্সের সাথে দেখা হয় । তখন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল ইলেকশন । অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি তিন বছর পরপর ইলেকশন হয় । টিভি ছাড়া ইলেকশনের খবর আগে থাকতে তেমন পাওয়া যায় না । এইবার নতুন একজনের খবর প্রায়ই টিভিতে আসছে । পলিন হ্যানসন নামের এক মহিলা । মহিলার নীতি একটাই, দেশে যত সমস্য তার একমাত্র কারণ বাইরের লোক । তাই ইমিগ্রেশন বন্ধ, বিশেষ করে মুসলিম ইমিগ্রেশন বন্ধ করলেই অস্ট্রেলিয়ার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।
ইলেকশনের তিন/চারদিন আগে । গাড়ি পার্ক করে ট্রেন স্টেশনের দিকে হাটতে থাকি । স্টেশনে ঢোকার মুখেই ভিন্সের সাথে দেখা । ভোটের প্রচারপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । অবশ্যই পলিন হ্যানসন জন্য । প্রাথমিক কুশলাদির পরে ভিন্স বলে, একটু দাঁড়াও এক কাপ কফি খেয়ে যাও ।
-এখানে কফি পাবে কই ।
-দাঁড়াও একজন ফ্লাস্ক নিয়ে আসছে । তুমি তাকে চেনো । তোমার জন্য একটু চমকই হবে ।
একটু পরেই কফির ফ্লাস্ক নিয়ে যে আসলো তাকে দেখে আসলেও চমকে গেলাম । টিম । তিনজনে মিলে কফি খেলাম ।
বিদায় নেবার সময় টিম বললো, তাহলে ওয়ান ন্যাশনকে (পলিন হ্যানসনের দলের নাম) ভোটটা দিও ।
আমি একটু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এই দলের মেনিফেস্টো যুক্তি দিয়ে মানো নাকি বিশ্বাস দিয়ে মানো ।
অবশ্যই বিশ্বাস থেকে মানি । জোর দিয়ে বলে টিম ।
এই অন্ধ সময়ে দেশে দেশে রাজনীতি এখন এরকম বিশ্বাসই । আর মানুষের বিশ্বাস নিয়ে তর্ক করা স্রেফ আহাম্মকি...