- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 115
- Messages
- 1,101
- Reaction score
- 134
- Points
- 1,213
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****এবিসি শো*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
দর্শক, শ্রোতা মণ্ডলী আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ এ,বি,সি – আবু বকর চন্দন শোতে । আজ আমার জন্য একটি বিশেষ বিশেষ দিন । আজ এই অনুষ্ঠানের তিন বছর পূর্তি । এই তিন বছরে আপনাদের ভালোবাসায় ধন্য হয়েছে এই অনুষ্ঠান । ইউটিউবে আমাদের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা তিন মিলিয়ন, প্রতিটা এপিসোড ফেসবুক লাইভ হয় ৫০ হাজার । এই সময়ে আমাদের এই অনুষ্ঠান হয়তো দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচাইতে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ।
তবে এসব কারণে আমি আজ উত্তেজিত না । আমি গ্রামের ছেলে । অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আজ আমি একজন শিল্পপতি । যদিও আজকাল এই অনুষ্ঠানের কারণে কেউ আমাকে আর শিল্পপতি হিসাবে চেনে না । চেনে মোটিভেশনাল কথক হিসাবে । আমার শৈশব কৈশোরের দারিদ্র, পড়াশুনা, জীবন সংগ্রাম সব অনেক অনেকবার আপনাদেরকে বলা হয়েছে । এমনকি সানিয়ার সাথে আমার প্রেম পরিনয় নিয়েও আপনাদের সাথে কথা বলেছি । বলা কথা গুলো আবার বলছি কেনো । বলছি এই কারণে যে আসলে আমি কতটা উত্তেজিত সেটা বোঝাবার জন্য ।
“সবাই মানুষ হয়েই জন্মায় তারপরও সারাজীবন কেনো শুনতে হয় মানুষ হও”?
কিংবা
“মাঠে একশত অভুক্ত গরু ছেড়ে দিলে সব গরু পেট পুরে ঘাস খাবে । আবার একশ জন অভুক্ত মানুষকে খাবার ভর্তি এক ঘরে ছেড়ে দিলে সবাই যদি নিজের খাবারেই মনোযোগ দেয় তাহলে ঐ ঘরেও আসলে সব গরু । কিন্তু ঐ একশ জন মানুষের মাঝে যদি একজনও থাকে যে চিন্তা করে সবাই খাবার পেলো কিনা তাহলে আবার একশ জনই মানুষ হয়ে যায় ।“
এই কথাগুলোও আপনাদের জানা । অনেকবার বলেছি । আমার প্রিয় স্যারের কথা । যিনি আমার সবচাইতে বড় অনুপ্রেরনা । আপনারা এও জানেন স্যারের সাথে আমার যোগাযোগ নাই । বহু চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনোভাবেই স্যারের হদিস বের করতে পারি নাই । অবশেষে স্যারের দেখা পেয়েছি ।
এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কেনো আমি এত উত্তেজিত । আমি ঠিক করেছি আমার খুশী আমি আপনাদের সবার সাথে ভাগ করে নেবো । স্যারের সাথে কথা বলবো আপনাদেরই সামনে, এবং সব সময়ের মত লাইভ, আন এডিটেড ।
-কেমন আছেন স্যার ?
-বুড়ো বয়সে যতটুকু ভালো থাকা যায় আছি ।
-স্যার আপনার বয়স হয়তো হয়েছে আমি কিন্তু এখনো দেখছি সেই স্বপ্নাতুর চোখ, শুনছি সেই নিখাদ কণ্ঠস্বর ।
-চন্দন, জানি আজকাল সবই বিক্রি হয় তাই বলে আমার ছানি পড়া ঘোলা চোখ, ভঙ্গুর কণ্ঠও বিক্রি করবি ।
-স্যার, আপনার অনেক কথাই তখনো বুঝতাম না এখনো হয়তো বুঝবো না । আমার দর্শকরা জানে এই গল্প . তাও আপনার সামনে আর একবার বলছি । এক শুক্রবার , দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়া করে একটু শুয়েছি । হঠাৎ করে ছেলেবেলার কথা মনে হলো । কোথা থেকে কোথায় এসেছি সেই কথা মনে হলো, এবং বিশেষ করে আপনার কথা মনে হলো । এসব কথা আগেও মনে হয়েছে, মনে হলেই কেমন যেনো একটু খালি খালি লাগে, কোথায় যেনো একটা অপূর্ণতা । সেদিন আমার বউ সানিয়াকে বললাম । ঐ তখন এরকম একটা অনুষ্ঠানের কথা বলে । সেই থেকেই এই অনুষ্ঠানের জন্ম । স্যার, আমার অনুষ্ঠান কি দেখেছেন আগে ?
-হ্যা, সবগুলো ।
-ওহ মাই গড, ওহ মাই গড, সত্যি স্যার ?
-চন্দন তুই জানিস, আমি মিথ্যা বলি না ।
-না না স্যার, তার জন্য না আমি আসলে বিশ্বাস করতে পারছি না । কেমন লাগে স্যার এই অনুষ্ঠান? সবাই নাকি প্রেরণা পায় ।
-তাই নাকি ? হবে হয়তো । নতুন যুগ, অনেক কিছুই তো আমি বুঝি না ।
-স্যার, পুরোনো দিনের গল্প হবে আপনার সাথে । তার আগে ছোট একটা প্রশ্ন । এই অনুষ্ঠান নিয়ে । এই অনুষ্ঠানের বিশেষ কি আপনার মনে আছে যদি একটু বলতেন ।
-বলেছি না সব গুলোই দেখেছি । ঐ যে একটা পর্ব করলি না । ঘুষ দিস তাও তোকে কেউ কাজ দেয় না । তারপর এক মহৎ লোক তোকে কোনো রকম ঘুষ ছাড়া বড় এক কাজ দেয় ।
-ইনক্রিডেবল, ওহ মাই গড । ওইটা ছিলো প্রথম ব্রেক । এই অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার শুরু ।
-তুই আজকাল চমৎকার ইংরেজী বলিস চন্দন । ওই অনুষ্ঠানেও এরকম একটা শব্দ বলেছিলি । টোকেন মানি । ব্যাপারটা কি রে ?
-ওইটা স্যার কাজ পাবার জন্য অল্প কিছু টাকা দিতে হয় । একটা সিস্টেম আর কি ।
-ও আচ্ছা । তারপরে উবার চালক তোর লাখ খানেক টাকা ভর্তি ব্যাগ ফেরত দিলো ।
-স্যার, হোয়াট এন ইন্সপায়েরেশনাল স্টোরি । ওই পর্বের ভিউয়ার ছিলো ৭ মিলিয়ন ।
-তারপর আর একটা পর্ব, এটা মনে হয় অল্প কয়েকদিন আগেই দেখেছি । একজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানো ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে কয়েকজনের সমস্ত শিক্ষার খরচ নিজে দিয়ে দেন ।
-জি স্যার, আর একজন গ্রেট ম্যান । আপনি স্যার সব কিছুই মনে রেখেছেন । আমার কি যে আনন্দ লাগছে । স্যার কয়েকদিন আগেই এক পত্রিকা আমাকে নিয়ে ফিচার করেছে, হেডিং ছিলো ‘নিরাশার সৈকতে আশার বাতিঘর’ । সেখানেও স্যার আপনার কথা বলেছি । আমি যে আজকের আমি সে তো স্যার আপনার শিক্ষার কারণেই ।
-চন্দন আমি আসলে একজন ব্যর্থ শিক্ষক ।
-কি যে বলেন স্যার ।
-না রে সত্যি তাই । তোর মনে আছে তোর হাতের লেখার খাতায় লিখতি ‘সদা সত্য কথা বলিবে’ , ‘সৎ পথে চলিবে’ ।
-মনে নাই আবার । আপনার কারণেই আমার হাতের লেখা মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর ।
-হাতের লেখা সুন্দর করার জন্যই শুধু ওইসব লেখাতাম না রে চন্দন । সত্য কথা বলা সাধারণ মানুষের নিয়ম, এর মাঝে কোনো মহত্ব নাই রে বাবা । সৎ থাকাও সাধারণ মনুষ্যত্ব । এটাও বিশাল কোনো কাজ না ।
-স্যার, আপনার কথা আগেও বুঝতে কষ্ট হতো, এখনো হচ্ছে ।
-তুই কেনো, আজকাল সবারই আমার কথা বুঝতে কষ্ট হয় । আমারও অনেক কিছু বুঝতে কষ্ট হয় । এই যেমন টোকেন মানি দিয়ে কাজ পেতে হবে কেনো । তোর ওই মহান অফিসার সরকার থেকে বেতন পাচ্ছে না ? উবার চালকও তো টাকা ফেরত দেবেই । কারণ ওইটা তার টাকা না । আর শিক্ষকই বা কেনো প্রাইভেট পড়াবেন । চল্লিশ বছর শিক্ষকতা করেছি । কই আমি তো প্রাইভেট পড়াই নাই । তোকেই তো কতদিন স্কুলের পরেও ক্লাসে বসেই অঙ্ক দেখিয়ে দিয়েছি ।
-স্যার ওটা ছিলো আপনাদের সময় । এখন তো স্যার ভিন্ন সময় ।
-কি জানি বাবা । মানুষ তো এখনো বাঁচার জন্য খায় । খায় না ? আমার ভয় আজ থেকে দশ বছর পরে হয়তো তোর অনুষ্ঠানেই দুইজন মহান ব্যক্তিকে নিয়ে আসবি যারা বলবে তাদের হাতে পিস্তল ছিলো তারপরও তারা একজন দুর্বল লোকের কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেয় নাই । কিংবা তিনজন তরুণ এসে তোর ভাষায় ইন্সপায়ারেশনাল স্টোরি বলবে, রাতের আধারে সুন্দরী তরুণীকে একা পেয়েও তারা কিছুই করে নাই ।
-কি যে বলেন স্যার, এমন হবে কেনো ।
-না হোক সেই দোয়াই করি । লক্ষণ কিন্তু সেরকমই । তোর অনুষ্ঠানেই আর একটা ইংরেজি শব্দ শুনেছি, ‘মরাল কম্পাস’ অর্থ ঠিক পুরো বুঝি নাই তবে আমি পুরোনো একটা বাংলা শব্দ জানি, নৈতিকতা বোধ । সেটার মান মনে হয় এখন অনেক অনেক নীচুতে ।
-স্যার, আপনার সব কথার অর্থ বুঝতে পারবো না জানতাম । এখন দর্শকদের উদ্দেশ্য কিছু বলেন ।
-দর্শকরা আমার ছাত্র না । তাই তাদের জন্য আমার কিছু বলার নাই । তোকে বলার আছে । অনেক পুরোনো কথা । মানুষ হ । আর হ্যা মানুষ হওয়াটা একটা যাত্রার মত । সবাই হয়তো গন্তব্যে পৌছাতে পারবে না । তবে যাত্রাটা যেনো ভুল রাস্তায় না হয় সেই খেয়াল রাখিস ।