- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 115
- Messages
- 1,101
- Reaction score
- 134
- Points
- 1,213
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****মায়ের কাছে চিঠি*****
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মূল লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
মা,
আই হ্যাভ নো আদার অপশন মা । আই হ্যাভ নো আদার ওয়ে । ওহ তুমি তো আবার তোমার সাথে ইংরেজি বলা পছন্দ করো না । ইট ইজ নরমাল ফর ইউ । ধ্যেত আবার ইংরেজি লিখে ফেললাম । আচ্ছা এখন থেকে বাংলাতেই লেখার চেষ্টা করবো । সময় লাগবে অনেক, লাগুক আমার তো কোনো তাড়া নেই ।
যা লিখছিলাম, ইংরেজিতে ফট ফট করে কথা বলা অপছন্দ করা তোমার জন্য স্বাভাবিক । বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী, সময় পেলেই মুখের সামনে গল্পের বই ধরে বসে থাকতে, রবীন্দ্রনাথ হলো তোমারই ভাষায় হৃদয়ের পয়গম্বর । কতদিন আমার ঘুম ভেঙ্গেছে তোমার গলায় রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে । তুমি জানো না, কোনোদিন বলি নাই সেসব দিনে ঘুম ভাঙ্গার পরেও আমি ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকতাম । গানের কথাগুলো যে খুব ভালো বুঝতাম এমন না, কিন্তু সুর তোমার গলা সব কিছু মিলিয়ে এত ভালো লাগতো । বিছানা ছেড়ে উঠতাম না, কারণ আমি ওঠা মানেই তোমার গানের সমাপ্তি । বিকজ আই ওয়াজ অলওয়েজ ইয়োর ফার্স্ট প্রায়োরিটি । এই লাইনটা বাংলাতে লিখতে ইচ্ছা করলো না । গান ছেড়ে দিলে কেনো মা ? উত্তরটা জানি, আর জানি বলেই কষ্টটা আরো বেশী লাগে । শুনেছি আমার জন্মের পরে আমার নাম নিয়েও সবার সাথে সমস্যা হয়েছিলো । কেউ রাখতে চেয়েছিলো জামি আর কেউ রাখতে চেয়েছিলো রোমেল । তুমি নাকি বলেছিলে, আমার ছেলে বাঙ্গালী ছেলে তার একটা সুন্দর অর্থের বাংলা নাম হবে না । সেভাবেই আমার নাম হয়ে গেলো দীপন । একটু বড় হলেই জানতে পারি যার অর্থ হলো আলোকিত করা ।
অথচ কি আশ্চর্য সেই তুমিই একরকম জোর করেই আমাকে শহরের সেরা এবং দামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছো । ক্লাস সিক্সে যখন এই স্কুলে ভর্তি করার সময় আসলো তখন ছোট ফুঁপি বলেছিলো, ভাবী ঐ স্কুলে তো সব বড় লোকের ছেলেরা পড়ে, ছেলেগুলো শুনেছি অনেক পাজি হয়, আমাদের দীপন তো খুব ঠাণ্ডা ছেলে, তাছাড়া খরচও নাকি অনেক ।
জবাবে কাঠ কাঠ গলায় তুমি উত্তর দিয়েছিলে, আমার ছেলের ভবিষ্যৎ আমাকে দেখতেই হবে । বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ে কি হবে সে আমার জানা আছে । আর আমার ছেলের পড়ার খরচ নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না এমনকি তোমার ভাইকেও ভাবতে হবে না । স্পষ্ট মনে আছে মুখ কালো করে ছোট ফুঁপি চলে গিয়েছিলো । এটা অবশ্য নতুন কিছু না, এমনিতে সবার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করলেও আমার ব্যাপার আসলেই তুমি কেমন যেনো হয়ে যেতে । তখন তুমি চরম স্বার্থপর, নিষ্ঠুর ব্যবহার করতে দ্বিধা করতে না । এসব ছেলেবেলায় না বুঝতে পারলেও এখন বুঝতে পারি । আমাকে নিয়ে দাদির সাথে হওয়া অনেক ঝগড়ার একটা এখনো মনে আছে ।
আমি তখন স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি । তারও বছরখানেক আগেই তুমি তোমার চাকুরিটা ছেড়ে দিয়েছো । ফুপির কাছে শুনেছি তখন আমার ছোট খাটো অসুখ-বিশুখ নাকি থাকতো, তুমি ভাবতে আমার যত্ন ঠিকমতো হচ্ছে না বলেই এমন হচ্ছে । ব্যস ছেলের যত্ন নেয়ার জন্য ধুম করে চাকুরীটা ছেড়ে দিলে । কোন কথায় কোন কথা লেখা শুরু করলাম । যাহোক স্কুল থেকে তুমিই আমাকে নিয়ে আসতে । স্কুল থেকে আসার পরে হাত মুখ ধুয়েই তোমার প্রথম কাজ ছিলো আমাকে কিছু খাওয়ানো । সেদিন তোমার শরীরটা খুব একটা ভালো ছিলো না । দাদি তোমাকে বললো, বৌমা তোমার জ্বর তো মনে হয় একটু বাড়ছে, দীপনকে আমিই খাওয়াইয়া দেই । তুমি আপত্তি করলে না কিংবা আপত্তি করার মত শারীরিক জোর তোমার ছিলো না । দাদি আমাকে খাইয়ে দিলো । সেদিন বিকেলেই আমার পেট খারাপ হলো । তুমি মুখ শক্ত করে দাদিকে জিজ্ঞেস করলে
-মা, দীপনকে কি খেতে দিয়েছিলেন ?
-কেনো ডিম পোচ আর পাউরুটি । দুপুরে তো মুরগির মাংস আর পুই শাক খেলো ।
-মা আপনি জানেন দীপনের কাঁচা কুসুমে সমস্যা হয়, তাই আমি সব সময় বয়েল্ড এগ খাওয়াই । আর শাক তো ওর পেটে সহ্যই হয় না ।
-তুমি বৌমা দীপনকে নিয়ে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করো । আমিও পাঁচ ছেলেমেয়ের মা ছিলাম । তাদেরকে তো বড় করেছি ।
-মা আপনার ছেলেমেয়েদের আপনার মত করে বড় করেছেন । আমি আমার ছেলেকে আমার মত করে বড় করতে চাই । আপনি সাহায্য করতে না পারেন বাঁধা দিয়েন না ।
কঠিন মুখ করে কথাগুলো বলে তুমি আমাকে সাথে নিয়েই তোমার ঘরে চলে গেলে । তখনো দাদাভাই বেঁচে আছেন । রাতে বাবা অফিস থেকে ফেরার পরে এই নিয়ে আর একদফা হয়ে গেলো । বাবা আমার সামনেই তোমাকে বোঝাবার চেষ্টা করতেই তুমি বললে, আমি আমার ছেলের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবো না দরকার হলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো ।
সেই বাড়ি অবশ্য তুমি ঠিকই ছেড়েছিলে এবং যথারীতি তার কারণও ছিলাম আমি । অথচ এর কয়েকদিন আগেই সারা বাড়িতে তোমার সে কি প্রশংসা । ছোট ফুঁপির বিয়ে ছিলো কয়েকদিন আগে । বিয়ের সমস্ত কাজ তো করলেই নিজের গয়নার একটা বড় অংশ দিয়ে দিলে ছোট ফুঁপিকে । কি কারণে যেনো তখন টাকার সংকট ছিলো । তোমার দেয়া গয়নার কারণেই বাবা, চাচা, দাদা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে । কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই তুমি পণ করলে আমাকে নিয়ে ঐ বাসায় আর থাকবেই না । কারণটা কিন্তু খুব বেশী কিছু ছিলো না । ছোট চাচার ঘরে তখন কিছু ব্যায়ামের জিনিষ পত্র ছিলো । অসাবধানে তারই একটা আমার পায়ে পড়ে পা থেতলে গেছিলো । ব্যস এতেই তুমি ধনুক ভাঙ্গা পণ করে বসলে । বাবা বাধ্য হয়েই মাস খানেকের মধ্যে তোমাকে আর আমাকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠলো ।
তোমার কথা তো অনেক লিখলাম, এবার নিজের কথা বলি । তোমার কারণেই খুব ছেলেবেলাতেই জেনে যাই যে আমি খুব দামী । ইংরেজিতে যাকে বলে “প্রেসাস চাইল্ড” । কোনো খেলনা কিংবা খাবার সব কিছুতেই ছিলো আমার প্রথম অধিকার । বাসায় অন্য কোনো শিশু না থাকাতে প্রথম দিকে তেমন সমস্যা হয় নাই । কিন্তু মেজো চাচার মেয়ে জন্মাবার পরে টুকটাক সমস্যা শুরু হলো । তবে সেটাও বেশিদিন সহ্য করতে হয় নাই । কারণ তখন তো আমরা আলাদা বাসায় থাকা শুরু করেছি । স্কুলে আমার কোনোকালেই খুব ভালো বন্ধু ছিলো না, হয় নাই, ঠিক দরকার মনে করি নাই । কারণ আমার জন্য সর্বদা তুমি তো ছিলেই । বন্ধু বলো, অভিভাবক বলো তুমি সর্বদা আমাকে ঘিরে রাখতে ।
তাছাড়া এখন ঠিক ঠিক বুঝতে পারি আমি আসলে ভীতু চরিত্রের । আর ছিলাম প্রবল অসামাজিক । নিজেকে নিয়েই ছিলো নিজের জগত । বাবা, চাচাদের মুখে যখন বন্ধুদের নিয়ে মজার মজার গল্প শুনতাম সেটাকে অন্য গ্রহের গল্প বলে মনে হতো । কারণ আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি সেখানে কম বেশি সবাই আত্মকেন্দ্রিক । সবাই আমার মত হয় বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান অথবা আর একজন ভাই কিংবা বোন আছে । সবার আর্থিক কোনো সমস্যা নাই । স্কুলে তারপরও সবাই একসাথে খেলাধুলা করে আর সেভাবেই কিছুটা বন্ধুত্ব তৈরী হয় । কিন্তু আমার জন্য সেপথ ও বন্ধ করে দিয়েছিলে তুমি । একদিন ফুটবল খেলতে গিয়ে পা মচকালো । ব্যস আমার খেলাধুলা বন্ধ করে দিলে । তবে আজকাল আমার বয়সী ছেলেরা খুব বেশি তো আর মাঠে গিয়ে খেলে না । আমরা অধিকাংশই তো প্লে স্টেশনের মেসি হয়েই খুশি থাকি ।
যে কোনো সমস্যা শুধু তোমার কাছে বলাই ছিলো আমার কাজ । স্কুলের ছেলেরা আমাকে “ফার্মের মুর্গি” কিংবা “ফিডার দীপন” বলে টিজ করে, তোমাকে একটু কাঁদো কাঁদো মুখে বলি । পরেরদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় তোমার যুদ্ধ । ক্লাস টিচার থেকে শুরু করে প্রিন্সিপ্যাল এমনকি ক্লাসের ছেলেদের বাবা মায়ের সাথে গিয়ে পর্যন্ত দেখা করে নিশ্চিত করো যেনো আমাকে আর এই সমস্যার মুখোমুখি হতে না হয় । ছেলেরা আড়ালে এসব নিয়ে হাসাহাসি করে কিন্তু সামনে আর কেউ বলে না । আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যায় । আমার এতটুকু জীবনে শুধু পড়াশুনা ছাড়া আর কোনো সমস্যার সমাধান আমি নিজে করি নাই ।
সত্যি বলছি মা আমার নিজের এই জীবন নিয়ে সুখীই ছিলাম । কিন্তু হঠাৎ করেই সব পাল্টে গেলো । এভাবে যে সব পাল্টে যেতে পারে আমি চিন্তাও করতে পারি নাই । ক্লাসের মাঝে হঠাৎ প্রিন্সিপ্যাল এসে বললেন, তুমি বাসায় যাও । আমি তেমন কিছু ভাবি নাই কারণ এর আগেও এরকম বেশ কয়েকবার হয়েছে । কোনো জরুরী দরকারে তুমি আমাকে স্কুল থেকে আগেই নিয়ে এসেছো । গাড়ির কাছে এসে দেখি পিছনের সিটে তুমি নাই । এরকম শেষ কবে হয়েছে আমার মনে নাই । ড্রাইভার আংকেলকে জিজ্ঞেস করলে ছোট করে বলেন, ঘরে চলেন । বাড়ি এসে দেখি বাড়িভর্তি মানুষজন, সবাই কেমন অদ্ভুত চোখে আমাকে দেখছে । ফুঁপি, চাচা, দাদি এমনকি বাবাও । কেউ কাছে এসে কিছু বলছে না । অনেক অনেকক্ষণ পরে বাবা এসে জড়িয়ে ধরে বললো, তোর মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে । আশ্চর্য কি জানো মা, আমি কথাটা ঠিক বুঝতে পারি নাই । বরং বাবার স্পর্শটুকু উপভোগ করছিলাম । গত কয়েক বছরে মনে হয় বাবা আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে নাই । বাবা ব্যস্ত সেটা একটা কারণ, তার চাইতেও বড় কারণ আমার চারিদিকে ছিলো তোমার বলয় । তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারো সেটা আমার ভাবনারও অতীত ছিলো । তোমার ঘরে সাদা কাপড়ে ঢাকা তোমাকে দেখেও মনে হচ্ছিলো এসব সব স্বপ্নে হচ্ছে । ছোট চাচা বলছিলেন, হঠাৎ হার্ট এটাক একেবারেই আকস্মিক মৃত্যু । আমার মনে হচ্ছিলো এই কথাগুলোও স্বপ্নের মধ্যে ভেসে আসছে । আশে পাশের সবগুলো চোখ আমার উপরে নিবন্ধ । আমি যেনো বিশাল এম্পিথিয়েটারের একমাত্র অভিনেতা । কিন্তু বিশ্বাস করো মা আমি এক ফোঁটা কাঁদি নি তখন । আমার কেবল মনে হচ্ছিলো তুমি এখনি উঠে বলবে, দীপন হাত মুখ ধুয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি ।
তোমার কাছে আমি তো সব সময়ই ছিলাম টপ প্রায়োরিটি । আমার জন্য তুমি কত কিছু ছেড়েছো, চাকুরি, গান, আত্মীয় স্বজন । সেই আমাকে ছেড়ে তুমি কিভাবে চলে গেলে মা ?!
এরপরেই শুরু হলো আমার দুর্বিষহ জীবন । দাদি, ফুঁপি এর পরে খালা কত যত্ন করে খাবার তৈরী করে কিন্তু আমি খেতেই পারি না । আমি ঝাল খেতে পারি না, এরা অল্প বলে যে ঝাল দেয় তাতেই আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে । মাছ আমার খুব পছন্দের খাবার, কিন্তু কাটা বেছে দেবে কে ? তাই মাছ খাওয়া আর হয় না । স্কুলের মিস বিনা কারণে বকা দেন, আগে নিশ্চিত ছিলাম তোমাকে বললেই হবে, এখন আমি কাকে বলি । অনিক আমাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো সেদিন । আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে থেকেছি ।
এর মাঝে বাবা আবার বিয়ে করলো দুই মাস আগে । বাবা অবশ্য আপত্তি করেছিলো, বলেছিলো দীপনের মা মারা গেলো মাত্র সাত মাস । জবাবে ফুঁপি জোর গলায় বলে উঠলো, ভাবী অনেক আগে থেকেই ছিলো শুধু দীপনের মা, অন্য কিছু না । বাবা আর আপত্তি করলো না । ফুঁপি অবশ্য আমার মত নিয়েছে । বাবা আমার কাছে অনেক দূরের মানুষ । তোমার অবর্তমানে বাবা অবশ্য চেষ্টা করেছে দূরত্ব কমাবার । কিন্তু আমি যেমন বাবার তেমন কিছু জানি না বাবাও তেমন তার ১৬ বছরের ছেলের তেমন কিছু জানে না । তাই আমরা দুই কক্ষপথের দুই গ্রহ হয়েই থাকি ।
বাবার নতুন বৌ কেমন আমি জানি না । সে কয়েকবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে । আমি এমনিতেই একটু চুপচাপ । তাকে কি ডাকবো, আপনি না তুমি বলবো এসব জটিলতায় আর কথাই বলি না । সে কি বুঝেছে জানি না, সেও এখন আমাকে এড়িয়ে চলে ।
তবে আমার এই চিঠিটা তার আর বাবার কাজে লাগলেও লাগতে পারে । অনেক রাত হয়ে গেছে, আমি অবশ্য সব প্রস্ততি নিয়েই চিঠিটা লিখতে বসেছি । আজকের কথা বলেই চিঠি শেষ করি । আজকে বিদ্যুৎ এর জন্মদিন ছিলো । আমার বন্ধু যদি কাউকে বলা যায় সে হলো বিদ্যুৎ । আমার মতই বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান । বাবা মায়ের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো । পার্থক্য শুধু ওর মা চাকুরিজীবি । ধ্যেত তোমাকে এসব লিখছি কেনো । তুমি তো ওর সব কিছুই জানো । গত জন্মদিনে তুমি সহই তো ওদের বাসায় গিয়েছিলাম । অবশ্য তোমাকে ছাড়া আমি কোথাও গিয়েছি এমন তো মনেই পড়ে না ।
আজকের পার্টিটা অনেক বড় ছিলো । স্কুলের অনেকে তো ছিলোই, সাথে বিদ্যুৎ এর বেশ কিছু কাজিন এবং তাদের বন্ধু বান্ধবরাও ছিলো । এর মধ্যে মাইশাও ছিলো । মাইশা বিদ্যুৎ এর কাজিন, খুব নরম একটা মেয়ে । তোমার মনে আছে গত জন্মদিনে ও একটা গান গেয়েছিলো, তোমারও খুব ভালো লেগেছিলো । সব বললেও তোমাকে এটা বলি নাই মাইশাকে আমারও খুব ভালো লাগে । আমার সাথে দেখা হয়েছে অবশ্য আজকে নিয়ে মাত্র তিনবার । আমি তো খুব কম কথা বলি, মাইশা কিভাবে যেনো আমার কম কথাগুলোই বুঝে যায় ।
আজকে অনিক ও ছিলো । তুমি তো জানোই অনিক বেশ পপুলার । আর ও আমাকে একেবারেই পছন্দ করে না । কারণও অবশ্য আছে । অনিকের সিগারেট খাওয়া, স্কুল ফাঁকি দেয়া সব আমি তোমাকে বলে দিতাম । আর তুমিও সেসব অনিকের মা কে বলে দিতে । তোমাকে নিষেধ করেছিলাম । কিন্তু তোমার তো ঐ এক কথা তুমি এসব বলে দিয়েছো আমার ভালোর জন্যই । যাহোক আজকে প্রথম থেকেই অনিক আমার পিছু লেগে ছিলো । দেখা হতেই প্রথমে বললো কিরে “ফিডার দীপন” কেমন আছিস । আমি তখন মাইশার সাথে কথা বলছিলাম । আমার ভীষণ রাগ হয়েছিলো । কিন্তু কিছু বলতে পারি নাই । কিন্তু কেক কাটার সময় সবাই একসাথে জড়ো হয়েছি তখন অনিক যা করলো... । কেক কাটা শেষ হতেই অনিক বলে তোরা কি জানোস দীপন একটা হাঁফ লেডিস । পাশে থেকে সুমন ফোড়ন কাটে “হাঁফ লেডিস” মানে কি ? দাঁড়া “হাঁফ লেডিস” মানে কি বোঝাবার আগে দীপন কেমনে হাটে সেইটা দেখাই । বলে সবার সামনে অনিক অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে । সেখানে অন্তত জনা বিশেক ছেলে মেয়ে । সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে । সব চাইতে কষ্টের ব্যাপার হলো মাইশার মুখেও হাসি ছিলো । রাগে,ক্ষোভে, লজ্জায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম । সারাক্ষণ তোমার কথা মনে হচ্ছিলো । তুমি কোথায় মা ? তুমি থাকলে অনিক কখনোই এমন সাহস করতো না । আরো দশ পনের মিনিট অনিক আমাকে নিয়ে ক্যারিকেচার করতেই থাকে । ঠিক ঐ সময়েই আমি আমার গন্তব্য বুঝে যাই ।
আমাদের ইংলিশ মিস একদিন বলেছিলো, মানুষ আসলে প্রকৃতির সন্তান । সবাই হয়তো, কিন্তু আমি কখনোই প্রকৃতির সন্তান না, কখনো ছিলাম না, কখনো হতেও পারবো না । আমি শুধুই তোমার সন্তান মা ।
তোমার দীপন