- Joined
- Dec 22, 2024
- Threads
- 115
- Messages
- 1,101
- Reaction score
- 134
- Points
- 1,213
- Age
- 40
- Location
- Dhaka, Bangladesh
- Gender
- Male
*****সিদ্ধি*****
মূল লেখকঃ হায়দার আলী
মূল লেখকঃ হায়দার আলী
মনা পাগলার বয়স আশির উপরে। পড়নে তার ময়লা ছেঁড়া কালচিটে লাল রঙের মার্কিন কাপড়ের ধূতি। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুলের জট আর চোয়াল ভর্তি জট ওয়ালা দাঁড়ি। এ জীবনে তার কোন সংগি সাথি নেই, মাথার উকুন গুলো ছাড়া। শরীরময় তার তল্পিতল্পা। আছে অনেক দরকারি জিনিস। সবচেয়ে বেশী দরকারি হচ্ছে সিদ্ধি’র কল্কি আর এক প্যাকেট ন্যাপথালিন। এগুলো সব সময় তার সঙ্গেই থাকে। এসব নিয়েই সারাদিন তার শহরময় ঘুরাফেরা। মনা পাগলার এই ভবঘুরে জীবন প্রায় চার যুগের।
মইনূল হোসেন তিনবারের মেট্রিক ফেইল। সে গ্রামের এক টগবগে যুবক। মেট্রিক পাশের সার্টিফিকেট তার কপালে না জুটলেও জ্ঞান গরিমায় সে সকলের সেরা। গ্রামের মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল কৃষক পরিবারে তার জন্ম। বাংলার পাশাপাশি কোরআন শিক্ষায়ও সে ছিল দক্ষ এবং পারদর্শি।
তিন বার মেট্রিক ফেইল করার পর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার। জীবনের দুর্বার গতি চলতে চলতে কোথায় যেন এসে আটকে গেছে, কোন এক বেদনার বালু চরে । গৃহস্থালি কাজে তার আর গুরুত্ব নেই। এদিকে লেখাপড়াও বন্ধ। অলস মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে শয়তান আর মনের আকাশে হতাশার অশুভ ছায়া। ঘরে আর মন বসেনা মইনূলের। কর্মহীন উতলা মন তার হারিয়ে যেতে চায় কোন এক অজানা দূরে, বহুদূরে।
পৌষ মাস। দর্গা বাবার মাজারে হপ্তাব্যাপি মেলা বসেছে। এই মেলা নতুন কিছু নয়। শৈশব থেকেই সে দেখে আসছে এই মেলা। মেলা বলতে সে ঘুড়ি, লাটাই, খেলনা আর মিঠাই এসবই বুঝে। কিন্তু যার কেরামতির জন্য এই মেলার আয়োজন, লাল সালু কাপড়ে ঢাকা দর্গা বাবার মাজার আর মাজারকে ঘীরে লম্বা চুলের ভক্তদের বিষয়ে কখনো সে ভেবে দেখেনি কোন দিন। আজ তার খুব মন চাচ্ছে। দেখতে যাবে কি হয় সেখানে? রাতের আঁধারে ঢুলুঢুলু জলসাঘরে? তাই কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ছুটে চলে সে সেই ভাবের জগতে।
রাত গভীর। মেলার বেচাকেনা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। মোমের আলোও নিবে গেছে। ভক্তরা বৃত্তাকারে বসেছে। মইনুলও বসেছে তাদের সাথে। …হু … হু আর মুহুর্মুহু জিকিরের ধ্বনি ছাড়া আর কিছুই শুনা যাচ্ছেনা। কল্কির ধোঁয়া, শীতের কুয়াশা আর নিশি রাতের ঘন কালো আঁধার মিলে মিশে একাকার। টানের পরে টান দিয়ে ভক্তদের হাত বদল হচ্ছে সিদ্ধির কল্কি। পর্যায়ক্রমে মইনুলের হাতেও কল্কি আসে। সে ভয়ে ভয়ে কল্কিতে টান দেয়। মাথাটা কেমন যেন করে। এ এক নতুন অনুভূতি, নতুন জগত। খুব বেশী খারাপও লাগছেনা। এভাবেই রাত্রি দ্বি-প্রহর পেরিয়ে হয় নিঝুম রাত্রি। এই নিঝুম অন্ধকারেই মইনুল বেছে নেই তার জীবনের আগামীর গতিপথ।
মনা পাগলার জীবনে অনেক শীত দেখেছে। এবারের শীত সব শীতকে ছাড়িয়ে যাবে মনে হচ্ছে। কেমন যেন সহ্য করতে পারছেনা। খাওয়া খাদ্যের অভাব সে খুব বেশী অনুভব করেনা। সন্ধার পরে কেউ না কেউ তবারক বা শিরনি নিয়ে আসে। আজ এসেছে ঝোলা খিচুড়ি।
খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে। গাঁজার স্টক ফুরিয়ে গেছে। অভ্যাসগত কল্কিতে বিড়ির সোগা আর আগুন দিয়ে কয়েক টান দেই। এতেই তার সিদ্ধির সাধন হয়। এখন ঘুমানোর সময়। খিচুড়ি দিয়ে পেট ঠান্ডা হয়েছে। হাতের তালুতে একটা ন্যাপথালিন বৃদ্ধাংগুলের ডলায় গুড়াগুড়া করে মাথা এবং দাড়িতে মেখে নিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে জটের উকুন গুলোও ঘুমিয়ে যাবে। কিন্তু মইনুল ঘুমাতে পারছেনা। শীতে তার বৃদ্ধ শরীর থরথর করে কাঁপছে। মনে হচ্ছে জীবনের এই পরন্ত সময়ে আজ সে খুব অসহায়। এই দুর্দিনে একটা কম্বল তার খুব দরকার। সে ভাবছে, কেউ কি আছে, যে তাকে দিতে পারে একটি শীতের কম্বল???