ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তফাৎ

WhisperBD

Well-Known Member
Registered
1K Post
Joined
Dec 28, 2024
Threads
107
Messages
1,338
Reaction score
105
Points
63
Age
46
Location
Dhaka
Gender
Male
tE961gg.jpeg


ইতিহাস (History)ও ঐতিহ্য (Heritage/Tradition), এই দুটি শব্দ একে অপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কিন্তু দুটির মধ্যে ভিন্নতা আছে।

ঐতিহ্য হলো এমন কিছু যা ঐতিহাসিক সময় থেকে চলে আসছে। এমন কিছু যা বর্তমানে উপস্থিত, প্রচলিত, প্রযোজ্য কিন্তু তার মূল্যবোধ ঐতিহাসিক সময়, সংস্কৃতি, সংস্কার, ভাষা ইত্যাদির সাথে যুক্ত। আপনি তার ব্যাপারে জানতেও পারেন, নাও জানতে পারেন। কিন্তু তার অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করছেন, বা তা বহন করছেন, তাকে সম্মান দিচ্ছেন।

ইতিহাস হলো ঐতিহ্যর লেখাজোখা। তার তথ্যমূলক বর্ণনা। ঐতিহ্যের অধ্যয়ন। তবে উল্লেখ্য যে, সাধারণ ঘটনা কিন্তু কখনোই ইতিহাসের বিষয়বস্তু হয়না।

পৃথিবীর যে কোনো ঘটনা হলো সময়ের ঐতিহ্য। কিন্তু সেটি, ব্যক্তি, গোষ্ঠি, সমাজ, দেশের পরিপ্রেক্ষিত থেকে ভিন্ন হবে। আজকে যা একটি ঘটনা, সেটি ভবিষ্যতের প্রথা বা মতবাদ এবং পরম্পরা, যা ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত।

একটি সাধারণ উদাহরণে এটি বুঝা যায়।ধরুন, একটি ছোট শিশু জন্ম নিলো। তার মা বাবার কাছে তা একটি ঘটনা। কিন্তু সেই ঘটনা ২৫ বছর পর তাদের কাছে একটি জীবন ইতিহাস। তাদের মনে মাথায় সেই স্মৃতি একটি ঐতিহ্য, বা সেই দিনের ছবি একটি ঐতিহ্য। কিন্তু যখন সেই ঘটনার তথ্যমূলক উদ্ধৃতি তারা করবেন, তখন তা ইতিহাস। সেই মহিলা একটি সোনার হার তৈরী করালেন, আর ৫০ বছর পর নিজের নাতির নতুন বৌকে উপহার স্বরুপ দিয়ে দিলেন। এখন সেই হারটি হলো পারিবারিক বা বংশের ঐতিহ্য। এই হারটি কোন বছরে কোন স্বর্ণকারের কাছে তৈরী করানো হয়েছিলো, সেই সময় সোনা কোন দামে পাওয়া যেত, সেই সময়ে এই ধরণের হার কে অমুক নামে ডাকা হতো, তিনি সেটি অমুক বছরে দিয়েছিলেন, এটি হলো ইতিহাস।

কিন্তু যখন আপনি বৃহত্তর পরিদৃশ্যে দেখবেন, তখন একটি বিশিষ্ট বিষয়ে সাবধান হতে হয়। এটি দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভাবে প্রযোজ্য। কখনো কখনো নিজের কিছু বৈশিষ্টকে গৌরবমন্ডিত করার জন্য কিছু গৌরবগাথা সৃষ্টি হয়। অনেক সময়েই সেই গৌরবগাঁথা সংকলিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু কয়েক দশক পরে সেই সাংস্কৃতিক সংকলিত ঐতিহ্যকে, ইতিহাস বানিয়ে দেওয়া হয়। বলতে পারেন, সেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ঘিরে কাহিনী তৈরী করে দেওয়া হয়। কিন্তু তা হলো রুপ কথা, গাঁথা, পৌরাণিক কাহিনী, লোকগাঁথা ইত্যাদি।

তাই ঐতিহাসিক সময়ের কোনো গল্পের লেখাজোখা ইতিহাস নয়। ঐতিহাসিক সময়ের ‘তথ্যমূলক’ লেখাজোখা ইতিহাস। এই কথার আরেক অর্থ হলো যে কোনো কিছুকে আপনার ঐতিহ্য হওয়ার জন্য, তার বাস্তবিক ইতিহাস হতেই হবে, তা আবশ্যক নয়। তা আপনার ব্যক্তিগত বা সামাজিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার অথবা ভাবনাত্মক মূল্যবোধের কারণে ঐতিহ্য হতে পারে। কিন্তু কোনো বিষয়কে ইতিহাসে স্থান পেতে হলে, তার তথ্য ভিত্তিক ঘটনাক্রম থাকতে হবে। এবং একাধিক সূত্র তার পুষ্টি করবে। অনেক সময় কোনো স্থাপত্য, কলাকৃতি, বা যে কোনো ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুর সাথে কিছুটা ইতিহাস ও কিছুটা লোকগাথা জড়িত থাকে।

যেমন ধরুন, একই কালখন্ডে একটি ঘটনায় দু’টি পক্ষ ছিলো। দুই পক্ষই নিজের নিজের পরিপ্রেক্ষিত থেকে ঘটনাক্রম বর্ণিত করবে। তা নিজের স্বার্থে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু কোনো তৃতীয় তথ্য সূত্র হবে, যা এই দুই পক্ষের মধ্যে কোনো একটি পক্ষের প্রাকৃতিক ভাবে সমর্থন করছে। বা ভিন্ন কোনো বিষয়ের ইতিহাসের সাহায্যেও আপনি জানতে পারবেন যে আপনার এই নির্দিষ্ট বিষয়ে কি হয়েছিলো। তাই পৌরাণিক গাঁথা, গালগল্পকেও ঐতিহ্য বানিয়ে নেওয়া যায়, এবং তার ঐতিহ্য হয়ে যাওয়াকে প্রশ্ন করা যায় না। কিন্তু ইতিহাস হতে হলে সব সময় তথ্যভিত্তিক ভাবে ঘটনাক্রমের লেখাজোখা, হিসাব কিতাব হতে হবে। পরবর্তীকালে কেউ এই ইতিহাসের দ্বারা প্রতিপাদিত মতের পক্ষে থাকবেন, আর কেউ ঐতিহ্যের এবং তার সংশ্লিষ্ট গল্প অথবা নিছক গালগল্পের পক্ষে।

মোটাদাগে এটাই ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে একটা বাহ্যিক ধারণা করা যেতে পারে।

(তথ্যসূত্র: বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহিত, সংকলিত ও পরিমার্জিত)
 
Back
Top