কন্যা দিবস ও কিছু কথা

dukhopakhi

Well-Known Member
Community Member
1K Post
Joined
Dec 22, 2024
Threads
115
Messages
1,101
Reaction score
134
Points
1,213
Age
40
Location
Dhaka, Bangladesh
Gender
Male
কন্যা দিবস ও কিছু কথা

মূল লেখকঃ ডা. আফতাব হোসেন




“…কান নিয়েছে চিলে,
চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে”।

কবি শামসুর রহমান আজ বেঁচে থাকলে ফেসবুক নিয়েও হয়তো এমন কিছু লিখতেন। ফেসবুক এমন একটা জায়গা, যেখানে একটা কিছু প্রকাশ পেলে যাচাই বাছাই না করে সবাই তার পিছনে ছুটতে থাকে।

আজ ২৭ সেপ্টেম্বর। দেখলাম, অনেকেই নিজ কন্যার ছবি আপলোড করে কন্যা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। গতকাল (২৬ সেপ্টেম্বর) ও কন্যা দিবসের পোস্ট দেখেছি। মানে কী ? কন্যা দিবস কয়টা ? গুগোল বিবির ঝুলিতে হাত দিয়ে দেখলাম, কন্যা দিবস একটাই। সেটা সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার। সে হিসেবে এই বছর দিনটি পড়ে ২৫ সেপ্টেম্বর। আমেরিকা, কানাডা, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, সব দেশে দিনটি ২৫ সেপ্টেম্বরই পালিত হয়েছে। যদিও জাতিসংঘ রেজুলিউশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শিশু কন্যা দিবস ১১ অক্টোবর, যা কন্যা দিবস থেকে আলাদা।

কন্যা সন্তানদের প্রতি লিঙ্গ বৈষম্য বোধহয় এখনও ইন্ডিয়াতে সব চাইতে বেশি হয়। এই বৈষম্য দূর করতে ও মানুষের ভেতর সচেতনতা জাগাতে ২০০৭ সালে ইন্ডিয়াতেই প্রথম এই দিনটি পালন শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে পশ্চিমা দেশগুলোও দিনটি পালন করা শুরু করে।

তাহলে কন্যা দিবসের তারিখের এই ভিন্নতা কেন ? ক্রেডিটটা আসলে জুকার বাবুর। ফেসবুকে আপনি কিছু লিখলে তিনি আবার ঘটা করে প্রতি বছর মনে করিয়ে দেন। ২০২১ সালে কন্যা দিবস ছিল ২৬ সেপ্টেম্বর ও ২০২০ সালে ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। জুকার বাবু কাউকে ২৬ তারিখ, কাউকে ২৭ তারিখ সেটা মনে করিয়ে দিলেন। ফলে কেউ ২৬ তারিখ, কেউ ২৭ তারিখ কন্যা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করল। বাকিরাও চিলের পিছনে ছুটতে শুরু করল। কেউ একবার দেখার প্রয়োজন মনে করল না, আসলে দিবসটা কোন তারিখ ?

যদিও আমার কন্যা সন্তান নেই। তবুও আমার মনে হয়, একটি কন্যা সন্তান এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ উপহার। একটি মেয়েই তার মায়া, মমতা, যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে পুরো পরিবারটিকে আগলে রাখে। সেই কন্যা সন্তানের গুরুত্ব বোঝাতে যে দিবসটির উদ্ভব হয়েছিল, সেই দিনটিতে শুধু ফেসবুকে মেয়ের ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেই দিবসটি পালন করা হয় না।

দিনটি আপনার কন্যার সাথে কাটান। তাঁকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান। সুন্দর কিছু উপহার দিন। সে যে আপনার / আপনাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কেউ, সেটা তাকে অনুধাবন করার সুযোগ দিন।

আপনার কন্যা সন্তান যেন বুঝতে পারে, পুত্র সন্তানের চাইতে তার গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। বরং সমান কিংবা বেশি। পুত্র সন্তানের মতো সমান গুরুত্ব দিয়ে তাকে লেখা পড়া শেখান। ছোটবেলা থেকেই তুমি অবলা, তুমি দুর্বল, বলে তাকে মানসিক ভাবে দুর্বল করে দেবেন না। ছেলে সন্তানের মতো মেয়ে সন্তানকেও আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করুন।

“পরের ধন” ভেবে আগে ভাগেই বিয়ে দিয়ে পর করে দেবেন না। তাকে স্বাবলম্বী করে তুলুন, যাতে পরের ঘরে গিয়ে তাকে সারা জীবন পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে না থাকতে হয়। প্রয়োজনে নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারে।

শুধু বায়বীয় মাধ্যমে একদিন ছবি দিয়েই দিনটি শেষ করবেন না। বাস্তবে এমন কিছু করুন, যাতে দিনটি তার সার্থকতা খুঁজে পায়।
 
Back
Top